Thursday, August 6, 2015

ওয়াজ নসিহতে অপরাধ বন্ধ হবে না, এর জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে আল্লাহর হুকুমের বাস্তবায়ন

ওয়াজ নসিহতে অপরাধ বন্ধ হবে না, এর জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে আল্লাহর হুকুমের বাস্তবায়ন

যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লেখা থেকে:

আজকের পৃথিবীতে শত শত নয়, হাজারে হাজারে প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো নানাভাবে মানুষকে অন্যায় থেকে, পাপ থেকে বিরত রাখতে, পুণ্য কাজ বা সওয়াবের কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ব্যস্ত আছে। এই রকমের প্রতিষ্ঠান এসলাম, খ্রীস্ট, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি পৃথিবীর সব ধর্মেরই আছে। এরা সাধ্যমতো চেষ্টাও কোরে চলেছে মানুষকে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে ন্যায় ও পূণ্যে ফিরিয়ে আনতে। পারছে কি? না, দশ বিশ বছর আগের পৃথিবীর অন্যায় অপরাধের অবস্থার সঙ্গে একটা পরিসংখ্যান তুলনা কোরলেই পরিষ্কার হোয়ে যাবে যে ঐসব মহৎ প্রচেষ্টা মানব জাতিকে সমষ্টিগতভাবে উন্নত কোরতে পারে নি, তাদের অন্যায়, অপরাধের সংখ্যা কমাতে পারে নি বরং তা বহু বেড়ে গেছে। দশ বিশ বছর আগের তুলনায় শুধু যে পৃথিবীময় অন্যায়, অপরাধ (চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, খুন জখম ইত্যাদি) দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে তাই নয়, ঐসব মহতি প্রতিষ্ঠানগুলির অবিশ্রান্ত প্রচার সত্ত্বেও মানব জাতি আজ পারমাণবিক আত্মহত্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, আর মাত্র একটি পদক্ষেপ বাকি। কেন ঐসব মহতি প্রতিষ্ঠানগুলির চেষ্টার কোন ফল হোচ্ছে না? যদিও ঐ কাজ কোরতে বহু কোটি টাকা প্রতি বছর খরচ হোচ্ছে? তার কারণ শুধু শিক্ষা দিয়ে, উপদেশ দিয়ে মানুষকে শৃঙ্খলায় আনা যাবে না, যদি শিক্ষা উপদেশের পর তা ভঙ্গ কোরে অপরাধ কোরলে কঠিন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে বা না দেয়া যায়। বর্তমান মোসলেম দুনিয়াতেও অনেক প্রতিষ্ঠান, আনজুমান, জামাত ইত্যাদি আছে যেগুলো মোসলেমদের আরও ভালো ‘মোসলেম’ বানাবার জন্য প্রচার সভা-সমিতি এজতেমা ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি কোরে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন, বহু পরিশ্রম করেন। এরা পণ্ডশ্রম করেন। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলি বহু বছর থেকেই এই কাজ কোরছে, ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির যে সংখ্যা ছিলো এবং যতলোক এগুলোতে শামিল ছিলো আজ তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। কিন্তু একটি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখুন ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে জনসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দেশে শতকরা যতভাগ চুরি, ডাকাতি, খুন, ব্যভিচার ইত্যাদি হোত আজ তার চেয়ে অনেক বেশি হোচ্ছে। একটি বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যেটার প্রচারিত উদ্দেশ্য হোচ্ছে এসলাম ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা দেয়া। বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থেকে ঐ কাজ করেন। এরা জোর দিয়ে প্রকাশ করেন যে তাদের প্রতিষ্ঠান নিছক ‘ধর্মীয়’ সুতরাং অরাজনৈতিক। একটি ‘মোসলেম’ প্রধান দেশে এরা বছরে একবার একত্রিত হন। বলা হয় এদের এই সমাবেশে হজ্বের চেয়েও বেশি লোক হয়। যেখানে ঐ বাৎসরিক সম্মেলন হয় ঐ দেশটাকেই ধরুন উদাহরণ স্বরূপ। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ঐ দেশটাতে জনসংখ্যার অনুপাতে যে অপরাধ হোত আজ তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অপরাধ ঘটছে। শুধু তাই নয় তখন যত রকমের অপরাধ ঘটতো আজ তার চেয়ে অনেক বেশি নতুন নতুন ধরনের অপরাধ যোগ হোয়েছে। তাহোলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কোরে হজ্বের পর পৃথিবীর বৃহত্তম ‘মোসলেম’ সম্মেলন কোরে, এত পরিশ্রম কোরে লাভটা কী হোল? সত্যিকার এসলামের কথা না হয় এখানে বাদই রাখলাম অন্যান্য ধর্মও যেটুকু কোরতে চেষ্টা করে, অর্থাৎ মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত রাখা, সেটুকুও তো তারা কোরতে ব্যর্থ হোয়েছেন। মসজিদ থেকে জুতা চুরিটুকুও তো তারা বন্ধ কোরতে পারেন নি, বরং জুতা চুরি চল্লিশ বছর আগের চেয়ে আজ অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, এখন মসজিদের দরজা ভেঙ্গে মাইক, ফ্যান, ঘড়িও চুরি হোয়ে যায়।
আগেই বোলেছি পণ্ডশ্রম, কিছুই হবে না। এই জন্য হবে না যে, অপরাধ কোরলে তার শাস্তি দেবার শক্তি না থাকলে শুধু ওয়াজ-নসিহত কোরে মানুষকে অপরাধ থেকে ফেরানো যাবে না এবং ঐ শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। কাজেই রাষ্ট্রীয় ভাবে এসলাম প্রতিষ্ঠিত না হোলে সে এসলাম পূর্ণ এসলাম নয়, সেটা হবে আংশিক, কাজেই ব্যর্থ হবে এবং আংশিক এসলাম আল্লাহ গ্রহণ করেন না, কারণ তা শেরক। সামাজিক জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যাপারেও এসলামের নীতি বর্তমানের এসলামের নীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেখানে শেষ নবী (দ:) প্রবর্তিত শেষ এসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে সামাজিক পর্যায়ে ইয়াতীমখানা, আনজুমানে মফিদুল এসলাম, পঙ্গু-আবাস, প্রতিবন্ধী-আবাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কোনই প্রয়োজন হবে না, কারণ, এ সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই মহানবী (দ:) ঐ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন নি। যে ইয়াতীমদের সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তার কোর’আনে বহুবার উল্লেখ কোরেছেন; যে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে বিশ্বনবী (দ:) এতবার বোলেছেন; সেই ইয়াতীমদের জন্য একটি ইয়াতীমখানা তিনি প্রতিষ্ঠা কোরতে পারতেন না? যে বিস্ময়কর মহাকর্মী পৃথিবীতে একটা মহাশক্তি সৃষ্টি কোরলেন তার সামান্য একটি নির্দেশেই তো শত শত ইয়াতীমখানা প্রতিষ্ঠিত হোয়ে যেতো। তিনি তা করেন নি, তা তার সুন্নাহ নয়, কারণ তিনি জানতেন যে, যে রাষ্ট্র তিনি প্রতিষ্ঠা কোরে গেলেন, যে জীবন ব্যবস্থা তিনি চালু কোরে গেলেন তা যদি মানুষ তাদের জীবনে চালু রাখে, বিকৃত না করে তবে ঐ সব জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানের কোনই প্রয়োজন হবে না, রাষ্ট্রই সে দায়িত্ব নেবে।
আজ ‘মোসলেমদের’ আকিদায় রাষ্ট্রের কোন স্থান নেই। ‘ধর্ম’ বোলতে তাদের আকিদা ও খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু ইত্যাদির আকিদার সঙ্গে কোন প্রভেদ নেই। তাদের মতই এদের ‘ধর্ম’ ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ এসলাম, মহানবী (দ:) প্রবর্তিত এসলাম নয়। তার শেখানো এসলাম প্রথমেই আরবের বুকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন। তারপর তার চলে যাবার পর সে এসলাম দুর্বার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্ধেক দুনিয়ার রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিল, এটা সর্বসম্মত ইতিহাস। ঐ সময়ে ঐ এসলামে অন্য কোন মাযহাব ছিলো না, কোন ফেরকা ছিলো না, মসলা-মাসায়েল নিয়ে কোন মতভেদ ছিলো না, কোন পীর মুরীদ ছিলো না, খানকাহ, হুজরা, ছিলো না, মসলা মাসায়েল বিশ্লেষণকারী পুরোহিত যাজকশ্রেণি ছিলো না। ছিলো শুধুমাত্র দীনুল কাইয়্যেমা, সনাতন ধর্ম সেরাতুল মোস্তাকীম। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, সালাত ও যাকাত, এবং ঐ দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীমকে সমস্ত পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির জীবনের প্রতি স্তরে শান্তি আনয়ন করার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, জেহাদ। আর আজ ঐ দীনুল কাইয়্যেমার, সেরাতুল মোস্তাকীমের, সংবিধানের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা আছে, বহু মাযহাব বহু ফেরকায় বিভক্তি আছে, মসলা-মাসায়েল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি আছে, যাজক শ্রেণি আছে, বহু রকম তরিকা আছে, বহু রকম পীর-মুরীদ আছে, খানকাহ আছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এসলাম নেই, ওখানে আল্লাহর ওয়াহদানীয়াত নেই এবং তা করার জেহাদও নেই। সুতরাং এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঐ দুই এসলাম একেবারে ভিন্ন জিনিস, একটা অপরটার বিপরীতমুখী। যেহেতু মহানবীর (দ:) প্রবর্তিত এসলাম এবং বর্তমানের এসলাম ভিন্ন, সুতরাং ঐ ভিন্ন এসলামের উৎপাদিত জাতিগুলিও সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপরীতমুখী। আল্লাহর রসুলের (দ:) এসলাম সৃষ্টি কোরেছিল এক অজেয় দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি, আজকের এসলাম সৃষ্টি করে কাপুরুষ-ভীতু, যারা যুদ্ধের-সংগ্রামের কাছ দিয়েও যায় না। মহানবীর (দ:) এসলাম সৃষ্টি কোরেছিল এক সিংহের জাতি, দীনের সামান্যতম বিপদে হুংকার দিয়ে শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো, আজকের এসলাম সৃষ্টি করে খরগোশ, বিপদের আভাস পাওয়া মাত্র যেগুলি পাগড়ীর লেজ হাওয়ায় উড়িয়ে তীব্রবেগে গর্তের ভেতর লুকায়। বিশ্বনবীর (দ:) এসলাম যে মোসলেম সৃষ্টি কোরেছিল তা সুদূর সিন্ধু দেশে একটি মোসলেম মেয়ের অপমানিত হবার খবর পেয়ে সেখানে মুজাহীদ বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিল, আজকের এসলাম যে ‘মোসলেম’ সৃষ্টি করে তা কয়েক মাইল দূরে তাদের মতই ‘মোসলেম’দের হত্যা করা হোচ্ছে খবর পেয়ে নির্বিকারভাবে ওজু কোরে টাখনুর উপর পাজামা পড়ে মাথায় টুপি দিয়ে হাতে তসবিহ নিয়ে মসজিদে যায়। আল্লাহর রসুল (দ:) তার নবীজীবনের সংগ্রামের অতি প্রাথমিক সময়ে বোলেছিলেন “শীগগিরই সময় আসছে, যখন একা একটি মেয়ে মানুষ সানা থেকে হাদ্রামাউত পর্যন্ত (কয়েকশ’ মাইল) নির্ভয়ে চলাফেরা কোরতে পারবে ।” অর্থাৎ ঐ রকম নিরাপত্তা সৃষ্টি করা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইতিহাস এই যে কিছুদিন পরই তার (দ:) প্রবর্তিত এসলাম আরবের বুকে আল্লাহ’র তওহীদ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কোরে তার ভবিষ্যতবাণীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা কোরেছিল যদিও তখন ঐ এসলামের মোসলেম সংখ্যায় ছিলো মাত্র দু’তিন লাখ। আর আজকের এসলাম উৎপাদন করে যে ‘মোসলেম’ তারা বিশ-ত্রিশ লাখ একত্র হোয়ে এজতেমা করে। তাদের চারিদিকে চলে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ঘুষ, ছিনতাই। ত্রিশ-চল্লিশ লাখ একত্রিত হোয়ে হজ্ব করে আর দুনিয়াময় তাদেরই উপর চলে নির্মম নির্যাতন, যুদ্ধ, রক্তপাত, দেশ থেকে উচ্ছেদ-করণ তবুও তারা টু শব্দটি করার সাহস পায় না। এই সব হাজীদের রাষ্ট্রগুলি শাসিত হয় সেই আইন-কানুন দিয়ে যেগুলো ধ্বংস কোরে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা কোরতে বিশ্বনবী (দ:) প্রেরিত হোয়েছিলেন। বিশ্বনবীর (দ:) প্রবর্তিত এসলাম যে মোসলেম উৎপাদন কোরেছিল সে মোসলেমের আকিদা এই ছিলো যে, তাদের নেতা আল্লাহর রসুলের (দ:) জীবনের উদ্দেশ্য ছিলো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে শেষ এসলাম সমস্ত মানব জাতির উপর কায়েম কোরে পৃথিবীময় শান্তি প্রতিষ্ঠা, আর আজ যে এসলাম প্রচলিত তা যে মোসলেম উৎপাদন করে তাদের আকিদা হোল এই যে আল্লাহ নবী রসুলদের নেতা, তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি যার কোন তুলনা নেই তাকে পাঠানো হোয়েছিল মানুষকে টাখনুর উপর পাজামা পড়ার মত, মাথায় টুপি দেবার মত, দাঁত মাজার মত, কুলুখ নেয়ার মত, ডান পাশে শোয়ার মতো তুচ্ছ ব্যাপার শেখাতে। মানুষের ইতিহাসে বোধহয় কোন জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন করে নি। কাহ্হার আল্লাহও তার শ্রেষ্ঠ ও প্রিয়তম রসুলের (দ:) এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে ছাড়েন নি। তিনি ইউরোপীয়ান খ্রিস্টান জাতিগুলি দিয়ে এদের লাইন কোরে দাঁড় কোরিয়ে মেশিনগান দিয়ে গুলি কোরিয়েছেন, বেয়নেট কোরে, জীবন্ত কবর দিয়ে, পুড়িয়ে, ট্যাংকের তলে পিষে মেরেছেন, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশুরাও বাদ যায় নি। এদের মেয়েদের ইউরোপের আফ্রিকার বেশ্যালয়ে বিক্রি কোরিয়েছেন এবং তারপর মাত্র চারটি ছোট দেশ বাদে মরক্কো, থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত এই বিশাল এলাকার সমস্তটুকুর রাষ্ট্রশক্তি এদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপীয়ান খ্রিস্টান জাতিগুলির হাতে দিয়ে দিয়েছেন এবং তারা এদের সর্বস্ব লুণ্ঠণ ও শোষণ কোরে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নামিয়ে দিয়েছে, গৃহপালিত পশুর মতো এদের নিজেদের কাজে লাগিয়েছে, তাদের জুতা পরিষ্কার কোরিয়েছে।
পৃথিবীর রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কিছুদিন আগে এই তথাকথিত মোসলেম নামের এই জাতি ইউরোপের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু মুক্তি তারা দিয়ে গেলেও এরা মুক্তি নেয়নি। এখনও স্বেচ্ছায় তাদের পূর্ব প্রভূদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতার দাসত্ব কোরছে। আর যারা মহা মোসলেম তারা সেই আগের মতই ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী, যিনি মানব জাতির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তাকে টুপি, পাগড়ী, আর দাড়ি-মোচের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোরে তার চরম অপমান কোরে চলেছেন। এরা যদি আজও সেই পৃথিবী কাঁপানো ব্যক্তিত্বকে তাদের নিজেদের মতো গর্তের ভেতরে লুকানো মেরুদণ্ডহীন খরগোশ মনে কোরে তার অপমান কোরতে থাকেন তবে এরপর আল্লাহর শাস্তি হবে আরো কঠিন, তার প্রতিশোধ হবে আরও ভয়াবহ।
কাজেই শুরুতেই যে কথা বোলতে চেয়েছি তা হোল শুধু ওয়াজ নসিহত কোরে, উপদেশ বিতরণ কোরে, বাণী শুনিয়ে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করা যাবে না। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন কোরে সেই রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবল সকল অবিচার দূর করা সম্ভব। উপদেশবাণী, নীতিকথা শুনে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু ভালো মানুষ তৈরি হোলেও সমষ্টির চাপে, বৃহত্তর শক্তির চাপে ব্যক্তিগত ভাবে আর ভালো থাকা যায় না। কাজেই এসলাম ব্যক্তিগত নয়, জাতীয় ও সমষ্টিক। শুধু আইন প্রয়োগ কোরে, শরিয়াহ্ প্রয়োগ কোরে যেমন শান্তি আনা যায় না ঠিক তেমনই শুধু আধ্যাত্মিক শিক্ষা, নসিহত কোরে, শান্তি আনা যায় না। দুটোই দরকার। এটাই ভারসাম্য, ওয়াসাতা; একদিক শরিয়াহ’র দণ্ডবিধি অন্যদিকে আল্লাহর ভয়ে অন্যায় না করার আত্মিক প্রশিক্ষণ।
[সমস্ত পৃথিবীতে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।

No comments:

Post a Comment