Wednesday, February 3, 2016

অন্তসারশূন্য বুলি আউড়িয়ে মানুষকে বেশিদিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায় না

অন্তসারশূন্য বুলি আউড়িয়ে মানুষকে বেশিদিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায় না


অন্তসারশূন্য বুলি আউড়িয়ে মানুষকে বেশিদিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের নরসিংদী জেলা আমীর মাসুদুর রহমান জুয়েল। গতকাল নরসিংদী জেলা সদরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছেন। অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘ভারতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটিকে এখন খারাপ কথা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘স্বাধীনতা’ শব্দ দুটিরও এ অবস্থা হতে পারে।’ তার এই মন্তব্য থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
মাসুদুর রহমান জুয়েল বলেন, প্রায় ছয় দশক ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা করে আসছে ভারত। তারপর আজ এসে দেশটির ১২০ কোটি মানুষ রায় দিচ্ছে- ধর্মনিরপেক্ষতা অচল। কতখানি অচল? যতখানি অচল হলে শব্দটাকেই বাজে শব্দ বলে মনে করা হয়। একইভাবে দেশটিতে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা- এ শব্দগুলোও জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। যারা পৃথিবী স¤পর্কে খবর রাখেন তারা জানেন- আধুনিক পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ইত্যাদি শব্দসমষ্টি কত কার্যকরীভাবে ব্যবহৃত হয়। অথচ এগুলো যে অন্তসারশূন্য শব্দ তা মানুষ ক্রমেই বুঝতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি সারা বিশ্বেই জনগণের সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকার কেড়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা’র মতো কতিপয় শব্দভর্তি ঝুলি। তারপর লক্ষ্য স্থির করে দেওয়া হয়- এগুলো প্রতিষ্ঠা করো, আমাদের মতো উন্নত হতে পারবে, সভ্য হতে পারবে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নামক তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উন্নতির শীর্ষে পৌছানো যে আদৌ সম্ভব নয় সেটা অনেকেই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে।
তিনি সমাজতন্ত্রের উপমা দিয়ে আরও বলেন, সমাজতন্ত্রের উত্থানের প্রাক্কালেও আমরা অনেক নীতিকথা শুনেছি, ভালো ভালো মনোহর স্লোগান শুনেছি, ন্যায়, শান্তি ও সাম্যের বাণী শুনে বিগলিত হয়েছি। কিন্তু আখেরে ওই শব্দগুলো যে কেবল অক্ষরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, প্রকৃত শান্তি ও সাম্য যে আদৌ সমাজতন্ত্রের ত্রীসীমানায় দেখা যায় নি তা তো সকলেরই জানা। তাই সমাজতান্ত্রিক আমলের কথিত স্বর্গসুখ ভোগ করার পর পাবলিক এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল যে, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেনিনের মূর্তি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়, যেটা কিছুদিন পূর্বেও তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ছিল। তারা হাসতে হাসতে সীমানা প্রাচীর ধ্বংস করে, যেটা তারাই নির্মাণ করেছিল একা একা স্বর্গসুখ ভোগ করবে বলে। তারা যখন বুঝল যে, স্বর্গসুখের বদলে তাদেরকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে, তারা প্রতারিত হয়েছে, তখন সমাজতন্ত্রের মনোহর স্লোগানগুলো তাদের কাছে ‘অন্তসারশূন্য শব্দ’ বলেই প্রতীয়মান হয়েছিল এবং আজ সমস্ত পৃথিবীতে সমাজতন্ত্র একটি ব্যর্থ সিস্টেম বলে পরিচিত। একই কারণে অনাগত সময়ে পুঁজিবাদী গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাও যদি ব্যর্থ সিস্টেমের সারিতে নাম লেখায় তাহলে অবাক হব না। প্রকৃতপক্ষে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র কোনোটাই মানুষের প্রকৃত মুক্তির পথ নয়। আর ধর্মনিরপেক্ষতা এক প্রাতিষ্ঠানিক ভন্ডামী মাত্র।

No comments:

Post a Comment