Saturday, July 30, 2016

জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ -মসীহ উর রহমান

জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ -মসীহ উর রহমান


আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ জঙ্গিবাদে আক্রান্ত। আমরা বহু পূর্ব থেকেই এ আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলাম সামরাজ্রবাদী পরাশক্তি এবং স্বার্থান্বেষী একটা গোষ্ঠী ধর্মের নাম ব্যবহার করে যেভাবে সহিংসতা ঘটাচ্ছে তাতে এ দেশেও সিরিয়া ইরাক আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হতে পারে। জঙ্গি ইস্যুকে ব্যবহার করে তারা একটার পর একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিং ও গুলশান হামলাসহ বেশ কিছু নৃশংস ঘটনায় ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা মনে করি এই আক্রমণ শুধু আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নয় বরং সরাসরি ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে। বিশ্বময় জঙ্গিদের কাজের পরিণতিতে বিশ্ববাসীর মনে ইসলাম সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা ও ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। শত শত ইসলামবিদ্বেষী মানুষ ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়েও যে ক্ষতি করতে পারে নি, এই জঙ্গিবাদীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, জবাই করে মানুষ হত্যা করে ইসলামের বহুগুণ বেশি ক্ষতিসাধন করেছে।
আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আল্লাহ রসুলের ইসলাম আর বর্তমানে ইসলামের নামে যেটা চলছে সেটা এক নয়, বরং সম্পূর্ণ বিপরীত। সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে এখন অবশ্যই ইসলামের নামে চলা সকল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আল্লাহ হক, রসুল হক, দীন হক, কেতাব হক, রসুল যে জাতি গঠন করেছিলেন সেই জাতিও হক। সুতরাং সত্যের স্বাভাবিক ফল হবে শান্তি, এজন্য ইসলাম অর্থই শান্তি। কিন্তু আজকে যে ইসলাম আমরা দেখছি তা আমাদের শান্তি দিতে পারছে না কেন? কারণ ইসলামের নামে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মানুষের ঈমানকে ভুল পথে প্রবাহিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করছে, কেউ অপরাজনীতি করছে, কেউ জঙ্গিবাদী কর্মকা- করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে।
আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সেই প্রকৃত ইসলাম সকল জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রতিটি মানুষ নির্বিঘেœ নির্ভয়ে চলাফেরা ও জীবনযাপন করতে পারত। কারো বিশ্বাসের উপর কোনো জবরদস্তি ছিল না। মানুুষের জীবন-সম্পদ ও সম্মানের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর আজ জঙ্গিবাদীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে নৃশংস উপায়ে মানুষ হত্যা করে ত্রাসের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আল্লাহ রসুলের ইসলাম ঐক্যহীন বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, শত্রুকে ভাই বানিয়েছিল আর আজকে ইসলামের নামে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে ঐক্যহীন করা হচ্ছে, ভাইকে শত্রু বানানো হচ্ছে, এক মুসলিম জাতিকে হাজারো মাজহাব ফেরকায় ভাগ করা হচ্ছে। আল্লাহ রসুলের ইসলাম স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গিকৃত প্রাণ মানুষে পরিণত করেছিল, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সোচ্চার মানুষ তৈরি করেছিল। আর এদের ইসলাম সমাজের অন্যায় অশান্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বার্থপরের মতো ব্যক্তিগত জীবন ও আমল নিয়ে ব্যস্ত থাকার শিক্ষা দিচ্ছে।
এই জঙ্গিবাদকে সারা দুনিয়ায় শক্তি দিয়ে মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, শুধু শক্তি দিয়ে হবে না, একটি বিকল্প আদর্শ লাগবে এবং কোর’আন হাদীসের প্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদ যে ভুল তা প্রমাণ করে দিতে হবে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ এগুলো কেন ইসলাম নয় তার যুক্তি-প্রমাণ আমরা জাতির সামনে তুলে ধরছি। আজকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের চিন্তায় দিশাহারা। যদি মানুষের সামনে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরা যায়, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য তুলে ধরা যায়, তাহলে স্বার্থান্বেষী ও জঙ্গিবাদীরা যেমন তাদের ভুল বুঝতে পেরে জেহাদের নামে সন্ত্রাস করার নৈতিক শক্তি হারাবে, তেমনি নতুন করেও কাউকে আর জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না।
এখন যারা ইসলামকে ভালোবাসেন, দেশকে ভালোবাসেন, মানবজাতিকে ভালোবাসেন – জাতির জন্য ক্ষতিকর এই জঙ্গিবাদী ফেতনাকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। আমাদের সবাইকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুটি কারণে সোচ্চার হতে হবে। প্রথমত, ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বস্তুবাদী সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এ পর্যন্ত যতগুলো অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তার মধ্যে জঙ্গিবাদ সবচাইতে সাংঘাতিক অস্ত্র বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই একে প্রতিহত করা আমাদের সকলের ঈমানী কর্তব্য।
দ্বিতীয়ত, দেশের নাগরিক হিসাবে, এই সমাজের সদস্য হিসাবে এটি আমাদের সামাজিক কর্তব্য। একাত্তরে আমরা পাকিস্তানী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে স্বাধীন ভূখ- লাভ করেছি। সা¤্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো চায় নিত্যনতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে সেখানে অস্ত্রব্যবসা করতে। আল্লাহ না করুক, বাংলাদেশে তারা যদি সেটা করতে পারে তাহলে আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না, আমরাও লাখে লাখে মরব আর উদ্বাস্তু হয়ে যাব। তাই এ মাটিকে আমরা আর কারো পদানত হতে দিতে পারি না।
কিন্তু সেই পরিণতি এড়াতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য অনৈক্যের উপরে বিজয়ী হয়, এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। আমরা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ ষোল কোটি মানুষকে সকল ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান করছি। এ কাজে আমাদের কোনো পার্থিব স্বার্থ নেই। আমরা যদি সত্যিকার অর্থেই অতীতের বিভেদ ভুলে, দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি জাতিও রক্ষা পাবে, দেশও রক্ষা পাবে। আসুন আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, যাবতীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক জাতি এক দেশ – ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

No comments:

Post a Comment