Tuesday, September 8, 2015

আদম সৃষ্টির উদ্দেশ্য

১. পবিত্র কোর’আনে আদম সৃষ্টির ব্যাপারে
আল্লাহ বলেছেন, যখন আমি তাকে পুরোপুরি
সুঠাম করব এবং আমার রূহ থেকে ফুঁকে দেবো
তখন তোমরা সবাই তার সামনে সেজদাবনত
হবে। (সুরা হিজর ২৯)
শিক্ষা: মানুষের মাঝেও যে স্রষ্টা বাস
করেন, মানুষকে অবজ্ঞা করলে, মানুষকে কষ্ট
দিলে, মানুষের বেদনা-যন্ত্রণায় পাশে না
দাঁড়ালে তিনিও যে কষ্ট পান, ব্যথিত হয়ে
থাকেন, তার প্রমাণ আল কোর’আনের এই
আয়াত। পবিত্র কোর’আনের এই আয়াত
অনুযায়ী প্রত্যেক আদম সন্তানের ভেতরে
স্রষ্টার রূহ রয়েছে। সুতরাং মানুষকে
অবহেলা করা মানে স্রষ্টাকে অবহেলা
করা। আর মানুষের কল্যাণে কাজ করাই
হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করা। এ
কারণেই আল্লাহ বলেছেন, “পূর্ব এবং
পশ্চিমদিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে
কোন পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য আছে কেউ
আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর,
মালায়েকদের উপর এবং সমস্ত নবী-
রসুলগণের উপর ঈমান আনবে, আর আল্লাহরই
প্রেমে স¤পদ ব্যয় করবে আÍীয়-স্বজন, এতীম-
মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও দাসমুক্তির
জন্যে (সুরা বাকারা ১৭৭)। শুধু তাই নয়,
তিনি হাদিসে কুদসীতে বলেছেন, ‘আমি
ভগ্নপ্রাণ ব্যক্তিদের সন্নিকটে অবস্থান
করি। অন্যত্র বলেছেন, বিপদগ্রস্তদেরকে
আমার আরশের নিকটবর্তী করে দাও। কারণ
আমি তাদেরকে ভালোবাসি (দায়লামী ও
গাজ্জালী)।
২. ভগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সখা
অর্জুনকে বলছেন, যে সর্ব ভূতে অবস্থিত
নারায়ণকে উপেক্ষা করে মূর্তিতে
নারায়ণের অর্চনা করে, সে ভস্মে ঘৃতাহুতি
দেয়। (৬/৩১)
শিক্ষা: গীতার এই স্লোকটি যেন আল
কোর’আনেরই সমর্থন প্রদান করছে। নারায়ণ
তথা সৃষ্টিকর্তা সকলের ভেতরেই রয়েছেন।
মানুষমাত্রই পরমাÍার অংশ। মানুষের
কল্যাণে, জগতের কল্যাণে প্রবৃত্ত হওয়াই
তাই একজন মানুষের প্রকৃত স্রষ্টাভক্তির
পরিচয় বহন করে।
৩. মহামতি গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভ করার পর
শিষ্যদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “হে
ভিক্ষুগণ, বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখ
ও মঙ্গলের জন্য এমন ধর্ম প্রচার করো, যে
ধর্মের আদি, মধ্য এবং অন্তে কল্যাণ।”
শিক্ষা: খুবই পরিষ্কার। ধ্যান করে দুঃখ
থেকে মুক্তিলাভ নয়, মানুষের সমষ্টিগত
কল্যাণই ছিল মহামতি বুদ্ধের প্রচারিত
ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্য।
৪. আবার ঈসা (আ.) ইহুদিদের প্রার্থনার
দিন শনিবারে শরিয়াতের বিধান লঙ্ঘন
করে অন্ধ, রুগ্ন, খঞ্জকে সুস্থ করে তুলেছেন
(নিউ টেস্টামেন্ট: মার্ক ৩, লুক ১৪)।
শিক্ষা: প্রশ্ন হলো, ঈসা (আ.) বেছে বেছে
এই শনিবারের দিন, যেটা ইহুদিদের
স্যাবাথ ডে ছিল, সেই দিনকেই অন্ধ ও রুগ্ন
ব্যক্তির সেবা করার জন্য গ্রহণ করলেন
কেন? কারণ এটাই যে, ইহুদিরা ধর্মীয়
আনুষ্ঠানিকতাকে মানবকল্যাণের চেয়েও
বেশি প্রয়োজনীয় জ্ঞান করতো। তারা
স্যাবাথের দিন কেবল উপাসনা করেই
কাটাতো, কোনো দুনিয়াদারি তথা রুগ্ন ও
দুস্থ ব্যক্তির সেবা করাকে সেদিন নিষিদ্ধ
কাজ বলে বিবেচনা করা হতো। তাই তিনি
স্যাবাথের দিনই ওই নিয়ম ভঙ্গ করে বুঝিয়ে
দিলেন যে, ধর্মের পরম উদ্দেশ্য হলো
মানবকল্যাণ। বাকি সব আনুষঙ্গিক। অথচ
আনুষ্ঠানিকতাকেই মুখ্য কাজ বিবেচনা
করে যখন মানুষকেই অবহেলার চোখে দেখা
হয় সেটা আর ধর্মকর্ম থাকে না, স্রষ্টার
সাথে সেটা এক প্রকার প্রতারণা হিসেবে
গণ্য হয়।

No comments:

Post a Comment