Wednesday, May 27, 2015

ইসলামবিদ্বেষের মই বেয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান!

ইসলামবিদ্বেষের মই বেয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান!

ব্লগার হত্যাকাণ্ডের তালিকায় এবার যুক্ত হলো অনন্ত বিজয় দাশের নাম। গত মঙ্গলবার সিলেটে নিজ বাসার অদূরে চারজন মুখোশধারী যুবকের উপর্যুপরি চাপাতির কোপে তিনি মারা যান। এ নিয়ে গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে তিনজন ব্লগারকে প্রায় একই কায়দায় হত্যা করা হলো। যদিও প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাগুলোর দায় স্বীকার করে আসছিল ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, ইদানীং আল কায়েদার দায় স্বীকার ও এই উপমহাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার খবরাখবরে পরিস্থিতি অনেকটা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে সচেতন মহলের কপালে। 
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দশকের পর দশক আল-কায়েদা, তালেবান ও তাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরিচালক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইঁদুর-বেড়াল খেলার মধ্যেও শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের আবাসভূমি বাংলাদেশ অনেকাংশেই নিরাপদ ছিল, একেবারেই কিছু ঘটে নি তা নয়, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু দেশটিকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বলার মতো সুযোগ তৈরি হয় নি কখনও। সেই বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। সরকার আপ্রাণ প্রচেষ্ট চালাচ্ছে এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য। কারণ, এই প্রত্যেকটি ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে। রাজনীতিক কারণে কিছুদিন আগেও এ দেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ, র‌্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারেও অনেকে প্রাণ হারিয়েছে যা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বর্তমানে তেমন রাজনীতিক সহিংসতা না থাকলেও ক্রমাগত ব্লগার হত্যাকাণ্ড সরকারকে দুশ্চিন্তার মধ্যে নিপতিত করেছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সরকার আজও মূল সমস্যায় প্রবেশ করতে পারে নি। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধান আসছে না।
সরকারকে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। এই যে খুনগুলো হচ্ছে সেগুলোকে অন্য আর দশটা সাধারণ খুন ভাবলে চলবে না। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে নিহিত বার্তাটি অনুধাবন করতে হবে। দুরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। প্রত্যেকটি খুন হচ্ছে একই কায়দায়, খুব দক্ষ হাতে। হত্যাকারীদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচিও অতি শক্তিশালী। প্রথমে বলা হলো হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। কিন্তু পরবর্তীতে খবর বের হলো- আলকায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা ‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের’ দায় স্বীকার করেছে। খবরটি খুব আশঙ্কাজনক হলেও সরকারকে আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্বিগ্ন হতে দেখি নি। এই খবর শুনে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে নাকি আল কায়েদার অস্তিত্বের প্রমাণ নেই। তিনি কী ধরনের প্রমাণের আশায় বসে আছেন তা পরিষ্কার না হলেও এতটুকু বলা যায় যে, আল কায়েদা থাকার দরকার নেই, আল কায়েদার নেটওয়ার্ক থাকলেই যথেষ্ট। আর যদি ধরেও নেই যে, এই দেশে আল কায়েদার নেটওয়ার্ক নেই বা আল কায়েদাপন্থী কোনো সংগঠনও নেই, তবুও স্বস্তির কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের পরপর তিনটি ব্লগার হত্যাকাণ্ডের দায়ভার আল কায়েদা নিজের ঘাড়ে নিয়েছে এটুকুই যথেষ্ট। এখনই যদি এই হত্যাকাণ্ডগুলো বন্ধ করা না হয় তাহলে এ দেশের ভবিষ্যৎ সুখকর হবে না। 
প্রথমেই বলেছিলাম, সরকার সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারে নি। সেই মূল সমস্যাটা ব্যাখ্যা করা যাক। এটা সকলেই জানেন- রোগ এক জিনিস, লক্ষণ আরেক জিনিস। লক্ষণকে রোগ ভেবে যতই ওষুধ সেবন করা হোক তাতে রোগের উপশম তো ঘটেই না, বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রোগবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা থাকে। ব্লগার হত্যাকাণ্ড, চাপাতির কোপ, আন্তর্জাতিক চাপ, মিডিয়ার সমালোচনা- কোনোটাই মূল সমস্যা নয়, সমস্যার লক্ষণ বা বহিঃপ্রকাশমাত্র। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি ঘটনার জন্ম হয়। প্রথমটি না ঘটলে হয়তো দ্বিতীয়টি ঘটতই না। 

No comments:

Post a Comment