Thursday, May 21, 2015

মার খাওয়াই কি জনতার নিয়তি???

মার খাওয়াই কি জনতার নিয়তি?



একজন ব্যক্তি যখন মরণাপন্ন হয় তখন তার আপনজনেরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন তাকে বাঁচিয়ে তুলতে। কিন্তু একটি দেশ বা জাতি যখন মরণাপন্ন হয় তখন তাকে রক্ষার দায়িত্ব কে নেবে? মায়ের বিপদে সন্তান যদি এগিয়ে না যায় তাহলে সে সন্তানের আর প্রয়োজন কী?
আমাদের অতীত রক্তাক্ত, বর্তমান অগ্নিদগ্ধ আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। দুইশত বছর আমরা ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম। তারা এ জাতিটিকে নিয়ে হাজারো ষড়যন্ত্রের খেলা খেলেছে, তারা এ জাতির নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাদের সমুদয় সম্পদ হরণ করে যাওয়ার সময় আমাদের হাতে ভিক্ষার থলে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। তারা আমাদের মধ্যে হাজারো বিভক্তি, রাজনীতিক বিরোধ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে যেন আমরা চিরকাল হানাহানি, দাঙ্গা ফাসাদ করতে থাকি, আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি না হয়, আমরা যেন তাদের গোলামি করতে বাধ্য হই, তাদেরই অনুকরণ করি। এইভাবে প্রতিনিয়ত হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হতে হতে আমরা আজ একপ্রকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। মার খেতে খেতে আমাদের পিঠের চামড়া গণ্ডারের মতো হয়ে গেছে। আমরা গুমরে কাঁদি, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে ভয় পাই। আমরা চোখের সামনে অপরাধ হতে দেখলেও বাধা দেই না, ভাবি, ‘এগুলো দেখার দায়িত্ব তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমি কেন খামাখা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাবো।’ আজকে আমাদের যে জাতীয় সংকট, তা এই আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার ফল। এ কারণেই আজ আমাদের চোখের সামনে আপনজনেরা পুড়ে ছাই হচ্ছে, আমরা দেখছি কিন্তু ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে এমন করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য উদ্যোগ নিচ্ছি না। কেন? ষোল কোটি মানুষ কি এই সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম? এখনও যদি আমরা না জাগি তাহলে আমাদের এই ঘুম কালঘুম হয়ে দাঁড়াবে; যেমন কালঘুমে ঘুমিয়েছিল ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান। আজ সে দেশগুলো ধ্বংস¯তূপ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে প্রতিটি মানুষকে, দেশের প্রতিটি রাস্তাঘাট, প্রতিটি ইঞ্চি জমি পাহারা দিয়ে রাখা অসম্ভব। কিন্তু সমাজের মানুষগুলো যদি দেশের ও জাতির নিরাপত্তা দেওয়াকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে তবে সহজেই এটা সম্ভব। এজন্য আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। দুটি দিক থেকে এ জাতির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ভূমিকা রাখা কর্তব্য।

প্রথম কারণ, ধর্মীয় দায়িত্ববোধ:

মোটামুটি আমরা সবাই আল্লাহ ও রসুলকে বিশ্বাস করি পরকালকে বিশ্বাস করি জান্নাতকে বিশ্বাস করি, আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চাই, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমার দায়িত্ব সেটা মানুষের শান্তিময় নিরাপদ জীবনের জন্য সংগ্রাম করা। ধর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারণা নামায, রোযা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম কী? মানুষ হিসাবে আমাদের প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে মানবতা, দয়া। ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি, অর্থাৎ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে কাজ করাই এসলামের মূল কাজ, এটাই এবাদত। এই কাজই করে গেছেন আল্লাহর সকল নবী রসুল ও মো’মেনগণ। এই এবাদত না করলে হাশরের দিন আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। সেদিন আল্লাহ আমাদেরকে বলবেন যে, তোমার চোখের সামনে আমার সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল তুমি কী করেছিলে? কাপুরুষের মতো ঘরে লুকিয়েছিলে, রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছিলে, রোজা রেখেছিলে, আকাশের দিকে হাত তুলে শুধু দোয়া করেছিলে, হজ্ব করেছিলে? আমি কি বলি নি যে, মানুষকে ভালো কাজে আদেশ করা আর খারাপ কাজ থেকে ফেরানোই তোমার মূল কাজ? যাও, তোমার এ নামায রোযাসুদ্ধ আমি তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করলাম। কাজেই এখন আমাদের প্রত্যেকের এবাদত, ধর্মীয় কর্তব্য, ঈমানী দায়িত্ব হলো এই অশান্তি থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করা।

দুই. সামাজিক কর্তব্য:

অনেকে আছেন যারা ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্বাসগতভাবে প্রস্তুত নয়। তাদের প্রতি আমাদের কথা হলো, মানুষের নিরাপত্তাবিধানের জন্য এগিয়ে আসা এই মুহূর্তে আমাদের সামাজিক কর্তব্য। আমরা এই সমাজে বাস করছি, এই সমাজ থেকে প্রতিনিয়ত হাজারো সুবিধা ভোগ করছি। তাই এই সমাজের প্রতি, এ জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি আমরা আজন্ম ঋণে দায়বদ্ধ। আমরা এদেশের আলো বাতাসে, এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অববাহিকায় বেড়ে উঠেছি। এদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হয়েছি, দেশ ও সমাজের সেই ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে। আজকে সমাজ যখন আক্রান্ত তখন তা থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব্। এই দায়িত্বকে যদি আমরা হেলাফেলা করি, তাহলে সেটা আত্মঘাতী ভুল হবে। কারণ জাতি যদিও এখনো একাত্তরের মতো বহিঃশত্র“র দ্বারা আক্রান্ত হয় নি, কিন্তু অভ্যন্তরীণ শত্র“র দ্বারা আক্রান্ত। কার্যত ঘটনা একই। আমাদের দেশের মানুষ আক্রান্ত, সবার নিরাপত্তা বিপন্ন, জনসাধারণের জীবন-জীবিকা ধ্বংসের পথে। আগামীকাল আমি বা আমার সন্তান যে আক্রান্ত হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। অনেক নিষ্পাপ শিশু এই সহিংসতার বলি হচ্ছে প্রতিদিন। কাজেই ধর্মীয় বা সামাজিক যে দৃষ্টিতেই দেখুন না কেন, আমি যদি নিজেকে মানুষ দাবি করি বা এ জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করি তাহলে আমি বসে থাকতে পারি না, আমাকে এগিয়ে আসতেই হবে। স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মানুষের কোনো এবাদতই কবুল হয় না, স্বার্থপর লোকের সমাজে বসবাস করার অধিকার নেই। যে শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সে তো পশু, মানবসমাজে তার বসবাসের যোগ্যতা নেই।
কেউ হয়তো বলবেন, তোমাদের এত কী দায় পড়লো আমাদেরকে উদ্ধার করার জন্য?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হয়, সেই উদ্যোগ আমরা, এমামুয্যামানের অনুসারীরা নিয়েছি। এ দেশটি যদি সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান হয়ে যায়, আমিও বাঁচব না। এক মহাসত্যের টানে আমরা আমাদের বাড়ি ঘর ছেড়েছি বহু আগেই, আজও সাধ্যের সবটুকু ঢেলে চেষ্টা করছি। আমরা মানুষের কাছে আজ পর্যন্ত একটা পয়সাও চাই নি, কারো ক্ষমতায় ভাগ বসাতে চাই নি, ভবিষ্যতেও চাওয়ার সম্ভাবনা নেই, আমরা শুধু বলেছি, আপনাদেরকে অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে এই চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে রাজনীতি হবে শুধুই মানুষের কল্যাণার্থে, এর বিনিময়ে কেউ একটি টাকাও গ্রহণ করতে পারবে না। তেমনি ধর্মের কাজ করেও কোনো বিনিময় নেওয়া চলবে না। কেননা চলমান সংকট স্বার্থের হানাহানির পরিণাম ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এ জাতির বাঁচার উপায় নিয়ে অনেকেই বাগাড়ম্বর করছে, হাজারো উপায় নির্দেশ করছে। তারা রাজনীতিকভাবে কিংবা কূটনীতিকভাবে এটি সমাধানের চেষ্টা করছে। প্রকৃত সত্য হলো সমস্যাটি এখন সে জায়গায় নেই, রাজনীতিক বা কূটনীতিকভাবে এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। কারণ একবার রাজনীতির নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে, এটা বার বার ঘটতে থাকবে এটা এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে পাশ্চাত্যের যে ষড়যন্ত্রমূলক সিস্টেম আমাদের কাঁধে চেপে বসেছে তার মূলনীতিই হচ্ছে উরারফব ্ জঁষব অর্থাৎ ভাগ করে শাসন করো। এখানে সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধীদলের শত্র“তা যেমন অনিবার্য তেমনি জাতির মধ্যে হাজারো রাজনীতিক কোন্দল অনিবার্য। এই অপ-সংস্কৃতির কালসাপকে আমরা দুধ-কলা দিয়ে পুষে চলেছি যদিও এর বিষাক্ত ছোবলে আমাদের সর্বাঙ্গ নীল হয়ে গেছে। এই রাজনীতিক সিস্টেমকে আগলে রেখে মুখে শান্তির বাণী প্রচার কেবল ব্যর্থ পরিহাসই নয়, মানুষের সঙ্গে প্রবঞ্চনা। তাই যদি মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতেই হয়, সেটা হতে হবে সত্যের ভিত্তিতে, কোনো গালভরা বুলি, প্রবঞ্চনামূলক মিথ্যা আশ্বাসের ভিত্তিতে নয়। আমরা সাধারণ মানুষ হিসাবে বলতে পারি, এ জাতি স্বার্থবাজ রাজনীতিকদেরকে ভীষণ ঘৃণা করছে, তারা দিনরাত এ রাজনীতিকদেরকে অভিশাপ দিচ্ছে, তাদের ক্রন্দন আল্লাহর আরশ স্পর্শ করছে। সুতরাং এ অভিশাপ ফলবেই।
এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তির পথ পেয়েছি আমরা অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ। সেটা হলো- ষোল কোটি বাঙালিকে এই অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসাসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হতে হবে। সেটা কীভাবে তা বলে দেওয়ার জন্য আমরা দ্বারে দ্বারে ছুটছি। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে যেভাবে চিকিৎসক প্রাণপণ চেষ্টা করেন আমরা সেভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু যারা মরছে তাদের তো হাত বাড়িয়ে দিতে হবে! এইখানে এসে আমরা মাঝে মধ্যে আশাহত হই, কারণ দেখি আমাদের এই জাতিটির মধ্যে জেগে উঠার, বেঁচে উঠার প্রেরণা নেই, তারা যেন নিঃসাড় হয়ে, নিশ্চুপ হয়ে, দর্শকের ভূমিকা নিয়ে নিয়তিকে বরণ করতেই প্রস্তুত। আবার আশাও পাই, যখন দেখি আমাদের বক্তব্য শুনে এ জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ দু’হাত তুলে সমর্থন দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েই বলছি, শুধু হাত তোলাই যথেষ্ট নয়, এখন বাস্তবে মাঠে নামতে হবে, কার্যকরিভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আপনার কাছেই আছি, প্রায় সব জেলাতেই আমাদের কার্যক্রম আছে।
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি আজ এক শয়তানি ষড়যন্ত্রের শিকার। এই পবিত্র মাটিকে শান্তিময় বাসযোগ্য করা এখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব। আমাদেরকে বুঝতে হবে, জাতি বাঁচলে আমি বাঁচব। জাতি মরলে আমিও মরব। তাই জাতিকে বাঁচাতে হবে নিজের স্বার্থে। আমাদের এই আহ্বানে যাদের মনে বিন্দুমাত্র অনুভূতির সঞ্চার হবে, তারা যোগাযোগ করুন, জাতিকে রক্ষার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়–ন। আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এ জাতি বাঁচবে না।


লিখাটি সংকলন করেছেন 
বুলবুল আহাম্মেদ

No comments:

Post a Comment