Wednesday, March 9, 2016

উম্মাহর ভবিষ্যৎ

উম্মাহর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলতে যেয়ে রসুলাল্লাহ (দ.) একদিন বললেন-“শীঘ্রই এমন দিন আসছে যে অন্যান্য জাতিসমূহ এই উম্মাহর বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন করে (খানা পরিবেশন করার পর) একে অন্য সবাইকে খেতে ডাকে।” 
.
তাঁকে প্রশ্ন করা হলো “আমরা কি তখন সংখ্যায় এত নগণ্য থাকবো?” তিনি বললেন, “না, তখন তোমরা সংখ্যায় অগণ্য হবে, কিন্তু হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আল্লাহ তোমাদের শত্রুর মন থেকে তোমাদের সম্পর্কে ভয়-ভীতি উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ের মধ্যে দুর্বলতা নিক্ষেপ করবেন।” 
.
কেউ প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে?” তিনি জবাব দিলেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও মৃত্যুর প্রতি অনীহা।” (হাদীস- সাওবান (রা.) থেকে আবু দাউদ মেশকাত।)
.
ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ইত্যাদি দেশের বিরুদ্ধে পৃথিবীর জাতিগুলিকে কেমন করে ডাকা হয়েছিল স্মরণ করুন। অবশ্য এ কথার মানে এ নয় যে সেসব দেশের মানুষ প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। তারা যেমন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী নয় তেমনি যে সব ‘মুসলিম’ জাতি খ্রীস্টান ও ইহুদীদের পক্ষ হয়ে ইরাককে আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিল সেগুলোও নয়।
.
যে জাতির স্রষ্টা রসুলাল্লাহ স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর (শাহাদাত) জন্য বারবার আকুল আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ হিসেবে পাশ্চাত্য ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেন মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা, সেই জাতি মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে যাবার কারণই হলো পৃথিবীতে, সমাজে বিরাজিত যাবতীয় অন্যায় অশান্তি, যুদ্ধ রক্তপাতের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ছেড়ে বিকল্প হিসাবে নফসের বিরুদ্ধে নিরাপদ সংগ্রামকে গ্রহণ করা এবং নেতার প্রকৃত সুন্নাহ- অন্যায় অশান্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ছেড়ে তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অভ্যাস ইত্যাদির অনুকরন করা। 
.
আদম (আ.) থেকে আজ পর্যন্ত মানব জাতির মধ্যে ছোট বড় যত নেতা জন্মেছেন, কোন নেতাকেই তার জাতি এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন করেছে বলে আমার মনে হয় না, যেমন করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বিপ্লবী নেতাকে, তার বিপ্লবী চরিত্রকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তার ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলিকে আমরা নকল করে চলেছি। 
.
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম ছেড়ে নফসের সঙ্গে নিরাপদ সংগ্রামের আশ্রয় গ্রহণ করার ও তার প্রিয় নবীর অমন চরম অবমূল্যায়নের জন্য আল্লাহ এই জাতিকে চরম শাস্তি দিতেও ছাড়েন নি। 
.
ঐ দুইটি কাজ করার পর তিনি ঐ জাতির শত্রুদের, যারা এই উম্মাহর নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপতো, সেই শত্রুর মন থেকে এদের সম্বন্ধে ভয় তুলে নিলেন, এবং সে ভয় এই জাতির হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর প্রায় সমস্ত জাতিটাকেই শত্রুর ক্রীতদাসে পরিণত করে দিলেন। এই শাস্তি শুধু যে এই দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতেও, তাও বলে দিলেন।
.
এখন সেই জাতিকে কেউ যদি পুনরায় সেই হৃত গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করার সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা করে, এই জাতির অতি মুসলমানেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করেন যে, ঐ ব্যক্তির দাড়ি কতটুকু, পাজামা টাখনুর উপর নাকি টাখনুর নিচে, গোফ ছাটা নাকি বড়, ডান কাতে শোয় না কি বাঁ কাতে শোয়, পাগড়ি, টুপি আছে কিনা, থাকলে সেগুলো কোন রঙের, মাদ্রাসায় পড়েছে কিনা, আরবি উচ্চারণ মাখরাজ-সম্মত কিনা ইত্যাদি। 
.
অন্ধত্ব আর কূপমণ্ডূকতার কী নিদারুণ পরিণতি! প্রকৃতিতে দেখি, মাকড়সার জালে কোনো পতঙ্গ আটকে গেলে তা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ছটফট করতে করতে ওখানেই মারা যায়, ঠিক একই দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা এই জাতির মধ্যে বিরাজিত শত শত মাজহাব ফেরকা নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত অথচ শত্রুর বোমার আঘাতে অহর্নিশি আক্রান্ত জাতির এই বিশৃঙ্খল ফতোয়াবাজদের।
.
তারা তাদের পূর্বসুরীদের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তৈরি করা লক্ষ লক্ষ মাসলা মাসায়েলের মাকড়সার জালে আটকা পড়ে সেই পতঙ্গের মত হাত পা ছুড়ছে, খাবি খাচ্ছে। কোনো একটি বিষয়ে তারা একমত হতে পারেন না। 
.
ওরে মুর্খের দল, তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে তোমাদের দাড়িত্ব আর টুপিত্ব। যতদিন না এই দাড়িত্ব টুপিত্বের ঘেরাটোপ থেকে তোমরা বেরোতে পারবে ততদিন তোদের মুক্তি নেই। নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, দাড়িত্ব মুসলমানিত্ব নয় ওটা মোল্লাত্ব। অর্থাৎ দাড়ি ছাড়াও মোমেন মুসলিম হওয়া যায় কিন্তু মোল্লা হওয়া কখনোই যায় না।

No comments:

Post a Comment