Tuesday, March 8, 2016

এক গাভীতেই বছরে মিলবে ২৫ বাছুর!

এক গাভীতেই বছরে মিলবে ২৫ বাছুর!






  • ————–
দেশে প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছেন গবেষকরা। টেস্টটিউব বেবির আদলে এবার বছরে একটি গরু থেকেই পাওয়া যাবে ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫টি বাছুর। গরুর মাংস আর দুধের ঘাটতি পূরণে সম্ভাবনার এ নতুন বার্তা দিয়েছেন সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএলআরআই’র গবেষকরা।
দেশে প্রথমবারের মতো একটি গাভী থেকে একযোগে দু’টি বাচ্চা উৎপাদনে সফলতা দেখিয়েছেন সরকারি এ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। ‘ইনভারট্রো অ্যামব্রায়ো প্রোডাকশন’ বা আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষক ডক্টর গৌতম কুমার দেবের নেতৃত্বে একদল গবেষক চার বছরের টানা গবেষণায় নিজেদের সাফল্যের কথা জানান। তাদের এ গবেষণার ফলে গত শনিবার রাতে টেস্টটিউবের মাধ্যমে একটি গাভী থেকে জন্ম নেয় দু’টি বকনা বাছুর। বর্তমানে গাভী ও যমজ বাছুর সুস্থ রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে সূচনা হতে চলেছে নতুন দিগন্তের। গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ডক্টর তালুকদার নূরুন্নাহার। দলে থাকা ড. গৌতম কুমার দেব জানান, প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের বহু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ঘটালেও দেশে প্রথমবারের মতো এ প্রযুক্তির ব্যবহারে সফলতা মেলে।
এ পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদনশীল দাতা গাভীর ডিম্বাশয় থেকে অপরিপক্ক বা বাড়ন্ত ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়। পরে তা গবেষণাগারে পরিপক্ক, নিষিক্তকরণ এবং কালচার করে ব্ল্যাস্টোটিস পর্যায় পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা হয়। সেখান থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দু’টি ভ্রƒণ গাভীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে সেই ভ্রƒণ বড় হয় মাতৃগর্ভে। ড. গৌতম কুমার দেব বলেন, “আমরা দু’টি ভ্রƒণের মাধ্যমে দুটিই সুস্থ ও সবল বকনা বাছুর পেয়েছি।” গবেষণা দলে আরো ছিলেন ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফারহানা আফরোজ, আহসানুল কবির, ফয়জুল হোসেন মিরাজ। আর গাভীতে ভ্রƒণ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিএলআরআই’র গবেষকদের সঙ্গে অংশ নেন প্রাণিবিজ্ঞানী ড. সাহেব আলী।
টেস্টটিউব পদ্ধতির আদলেই আইভিপি পদ্ধতির এ গবেষণা দেশে প্রাণিসম্পদের চিত্রটাই পাল্টে দেবে, এমনটাই বলছেন বিএলআরআই’র প্রথম নারী মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসা গবেষণা কার্যক্রমের নির্দেশক ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তালুকদার নূরুন্নাহার। তিনি জানান, এখন আমাদের লক্ষ্য লাগসই এ জীব প্রযুক্তি প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া। যার মাধ্যমে একটি গাভী থেকেই বছরে বাছুর মিলবে নূন্যতম ২০ থেকে ২৫টি! যা দেশের ক্রমবর্ধমান মাংস ও দুধের ঘাটতি মিটিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে সমৃদ্ধ করবে। নূরুন্নাহার জানান, জীব প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বায়োটেকনোলজি বিভাগ। টেকসই জীব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রান্তিক পর্যায়ে তা সফল ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে আরেকটি সফলতার মাইলফলক অতিক্রম করলো প্রতিষ্ঠানটি।

No comments:

Post a Comment