Thursday, March 10, 2016

সত্যবাণী: ঐক্যই শক্তির আধার

সত্যবাণী: ঐক্যই শক্তির আধার

রাকীব আল হাসান
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শুধু মুসলিমই নয় বিরাট একটা জনসংখ্যা সনাতন ধর্মের অনুসারীও রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। আমরা বিশ্বাস করি উল্লেখযোগ্য সকল ধর্মই একই স্রষ্টা মহান আল্লাহ পাকের নিকট থেকে আগত। প্রতিটি ধর্মই মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করে, মানবতা ও শান্তির কথা বলে। কাজেই আমরা সকল ধর্মের অনুসারীদের উদ্দেশ্যেই তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু সত্যবাক্য তুলে ধরে আলোচনা করবার চেষ্টা করব এই কলামে। আজ বিভিন্ন ধর্মে ঐক্যের ব্যাপারে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা আলোচনা করব।
আল্লাহ যে সকল নিয়ম দিয়ে তাঁর সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা করেন সেগুলো প্রাকৃতিক এবং চিরন্তন, শাশ্বত (Etarnal) নিয়ম। বাহ্যিক চোখে আমরা অনেকে বস্তুর পরিবর্তন হতে দেখলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ নিয়মগুলোর কখনোই কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন আগুনের ধর্ম হচ্ছে সে সবকিছু পুড়িয়ে দেবে। এটা হাজার বছর আগে যেমন সত্য ছিল তেমনি হাজার বছর পরেও একইরকম থাকবে। আবার পানিকে মুক্ত করে দিলে সে নিু ভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে- এটাও প্রাকৃতিক নিয়ম। আল্লাহ মানবজাতিকে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করার জন্য দয়াপরবশ হয়ে এমনই কতগুলো নিয়ামক দান করেছেন। এর মধ্যে মতভেদ ও বিভক্তি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য তিনি প্রত্যেক নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো জীবনব্যবস্থায় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার হুকুম দিয়েছেন। তিনি কোর’আনে বলেছেন, “আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে (সুরা সওফ-৪), গলিত সীসার দেয়ালে একটি সূঁচ ঢোকার জায়গাও থাকে না। সুরা আল ইমরানের ১০৩নং আয়াতে বলেছেন- ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জু (হেদায়াহ, দীন) ধরে রাখতে, বিচ্ছিন্ন না হতে। যাদের কাজে, কথায় ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন কঠিন শাস্তি, আযাব। কোর’আনের বহু স্থানে তার উল্লেখ রয়েছে। যে সব কাজে ও কথায় উম্মাহর ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে সে সব কাজকে আল্লাহর রসুল সরাসরি কুফর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কেবল শেষ দীনেই নয়, ইতোপূর্বে আল্লাহ যত নবী রসুল পাঠিয়েছেন এবং তাদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন সর্বত্র জাতির ঐক্যের বিষয়ে বিরাট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বাইবেলে যিশু (ঈসা আ.) বলেছেন, “যে রাজ্য আত্মকলহে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, সেই রাজ্য ধ্বংস হয়? আবার কোন পরিবার যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, তবে সেই পরিবারও ভেঙ্গে যায়” (বাইবেল- লূক ১১: ১৭)। এখানেও ঐক্যহীন হতে নিষেধ করা হয়েছে। ঐক্য ছাড়া কোনো অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। প্রকৃতির দিকে তাকালেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐক্যের নিদর্শন।
সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলিতেও ঐক্যের বিষয়ে বলা আছে। যেমন মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে মহাত্মা বিদুর বলেছিলেন, “দৃঢ়বদ্ধমূল অতিমহৎ একমাত্র মহীরুহ সমীরণভরে অনায়াসে মর্দিত ও পতিত হইয়া থাকে, কিন্তু বহু বৃক্ষ একত্র মিলিত ও বদ্ধমূল হইলে অক্লেশে প্রবল বায়ুবেগ সহ্য করিতে পারে; এইরূপ গুণসমন্বিত ব্যক্তিও একাকী হইলে শত্রুগণ তাঁহাকে পরাজয় করা অনায়াসসাধ্য মনে করিয়া থাকে।” সরল বাংলায় বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে যদি বিরাট কোনো বৃক্ষ একাকী দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে প্রবল ঝড়ে সেটা উপড়ে পড়ে যায়। পক্ষান্তরে বহুসংখ্যক বৃক্ষ একত্রিতভাবে থাকলে প্রবল ঝড়েও তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। একইভাবে অতি বড় বীরও একা থাকলে শত্রুরা তাকে পরাজিত করাকে সহজ মনে করে। ঐক্যের শক্তি কত বিরাট তা এই প্রাকৃতিক ঘটনাটির মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
আজ আমাদের দেশের এই ষোল কোটি মানুষ শত সহস্রভাবে বিভক্ত হয়ে আছে। তারা বিচ্ছিন্ন গাছের মতো একাকী ও শক্তিহীন। তাই যে কোনো হালকা ঝড়েও তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়

No comments:

Post a Comment