Friday, March 4, 2016

গহীনে (ভাঙনের) শব্দ: জীবনটা যেন হরর মুভি

গহীনে (ভাঙনের) শব্দ: জীবনটা যেন হরর মুভি




..........................................
১. আড়াই মাসের সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করল বাবা
২. কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় গলা টিপে হত্যা
৩. ময়মনসিংহে গলা টিপে হত্যা করে বাবা তার দুই শিশু সন্তানকে
৪. নাইক্ষ্যংছড়িতে পাষন্ড মা ১ সন্তানকে গলা টিপে হত্যা
৫. সকালে বিনা তার সন্তান সামিরকে গলা টিপে হত্যা
৬. যেভাবে দুই সন্তানকে হত্যা করেন মা
৭. ব্রিজ থেকে ফেলে সন্তান হত্যা!
৮. পাবনায় সন্তান ও স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা
৯. বাঞ্ছারামপুরে সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা
১০. স্বামীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা
১১. কলঙ্ক ঢাকতে ৬ তলা থেকে নবজাতককে নিক্ষেপ মায়ের
১২. নিজের সন্তানকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার
...
একজন দাগী অপরাধী কিংবা একজন কুষ্ঠরোগী, যাকে সমাজের সবাই ঘৃণা করে বা দূরে থাকতে চায়, তারও একটি আশ্রয় থাকে। সেই আশ্রয়ের নাম পরিবার। অথচ শিশু দুটির মা জানিয়েছেন, তিনি নিজ হাতে গলা টিপে একে এক দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। কারণ? তাদের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা’। কি নির্মম প্রলাপ!
......
প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই সংবাদ পাই, সদ্যজাত সন্তানকে মা পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিন বা নর্দমায় ফেলে রেখে যাচ্ছেন কিংবা ছাদ থেকে ছুড়ে মারছে। শিশুটির মৃত্যু হওয়ার আগেই কুকুর-বেড়াল তার হাত-পা খুবলে খেতে শুরু করছে। বাবা সন্তানকে হত্যা করছে, কুপিয়ে, বিষ খাইয়ে, শ্বাসরোধ করে ইত্যাদি নানা উপায়ে। ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর খুনোখুনিতো একেবারে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ কোন্ সমাজরে ভাই? পশুও তো এর চেয়ে মানবিক! পশুদের সমাজেও এটা অতি বিরল ঘটনা যে মা-বাবা শিশু শাবককে হত্যা করছে।
.....
জড়বাদী, ভোগনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দুইয়ে মিলে মানুষকে এতটাই লোভী, স্বার্থ পর, আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, ব্যক্তিগত সুখ-সম্ভোগের জন্য রাষ্ট্র কিংবা সমাজের স্বার্থ তো দূরের কথা মানুষ তার পরিবারের স্বার্থও ভুলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে সামাজিক অন্যায় ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জীবনের নির্মম বাস্তবতা তাকে হতাশ, অস্থির, অসামাল করে তুলছে। ফলে সে জিঘাংসা আর ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নিজ সন্তানের মাথায় বাড়ি দিতে যেমন দ্বিধা করছে না, নিজের গলায় দড়ি নিতেও দ্বিতীয়বার ভেবে দেখছে না। জীবনটা যেন হরর মুভি।
............
পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমরা বিশ্বাস করছি যে, বস্তুগত উন্নতিই আমাদের সকল সুখের আধার। আমাদের সরকার রাস্তাঘাট, সেতু, উড়াল সেতু বানিয়ে আত্মতৃপ্তির হাসি হাসছে। আমাদের বাচ্চাগুলো পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। আমাদের মায়েরা স্কুলের গেটের বাইরে বেঞ্চে বসে থেকে মেরুদণ্ড ক্ষয় করে ফেলছে। কিন্তু এই ‘উন্নতি’র দৌড় যে মাকাল ফলের মতো প্রতারণায় পূর্ণ তা কে তাদেরকে বোঝাবে? আমাদের হাজার বছরের বিশ্বাসভিত্তিক জীবনাচরণ, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের ধর্মভিত্তিক নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে কেবল বস্তুগত উন্নতি আমাদের সুখ দিতে পারবে না। তা তাদের মতো কেবল ভোগের উদগ্র বাসনাই বৃদ্ধি করবে, সুখ স্বস্তি শান্তি দেবে না।
.........
হাস্যকর লাগে যখন দেখি আজও আমাদের বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তকরা সেই প্রভু পশ্চিমা পণ্ডিতদের অমুক অমুক বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়েই এই সংকটের সমাধান দিচ্ছেন। যখন আমাদের সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ, নতুন আইনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আফসোস, তারা সমাজের অবক্ষয় রোধ করবেন আইন দিয়ে! সুস্থ মানুষ এমনটা ভাবে কিভাবে? তারা কি শোনেন না যে ভাঙনের শব্দ মানুষের ভিতরে। কথিত বুদ্ধিজীবী আর শাসকদের এই অন্ধত্ব আর মানসিক দাসত্ব যতদিন না ঘুচবে কোনভাবেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।

No comments:

Post a Comment