Thursday, August 13, 2015

আল্লাহর মো’জেজা

আল্লাহর মো’জেজা: হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে (এনশা’ল্লাহ)

মো’জেজা কী?
মো’জেজা এসলামের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ যুগে যুগে প্রতিটি মানব সম্প্রদায়ে নবী রসুল প্রেরণ কোরেছেন, তাঁরা এসে আল্লাহকে একমাত্র এলাহ (হুকুমদাতা) হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান কোরেছেন। আল্লাহর এই নবী ও রসুলগণ যখন তাঁদের সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বোলতেন, “আমাকে আল্লাহ নবী কোরে পাঠিয়েছেন”, তখন অধিকাংশ মানুষই তাঁদেরকে বিশ্বাস কোরত না, বোলত, “তুমি যে নবী তার প্রমাণ কি?” মানুষের কাছে নবী হিসাবে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টির জন্য আল্লাহ নবীগণকে কিছু অলৌকিক ঘটনা বা মো’জেজা সংঘটনের ক্ষমতা দান কোরতেন। অলৌকিক এ ঘটনাগুলি আল্লাহই ঘটাতেন, তবে নবীদের মাধ্যমে। অর্থাৎ নবী রসুলগণ যে সত্যিই আল্লাহর তরফ থেকে মনোনীত ও নবুয়্যত প্রাপ্ত ব্যক্তি তা সত্যায়নের জন্য যে অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা তাঁরা আল্লাহর হুকুমে ঘোটিয়ে দেখাতেন সেগুলোই হোচ্ছে মো’জেজা। পবিত্র কোর’আনে মো’জেজা শব্দটিই নেই, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ যে শব্দটি ব্যবহার কোরেছেন তা হোচ্ছে- আয়াহ, অর্থাৎ চিহ্ন (সুরা শুয়ারা-১৫২)। নবীদের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি অলৌকিক ঘটনা হোচ্ছে তাঁদের সত্যতার চিহ্ন। এ চিহ্ন দেখেই মানুষ বুঝতে পারে যে, এ লোকটি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল, নইলে সে যা কোরছে তা কিভাবে কোরছে? একাজ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভবই নয়। সুতরাং সে যা বোলছে তা-ও সত্য, হক।
দুইভাবে সত্য বোঝা যায়, উপলব্ধি করা যায়। (ক) যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান, দলিল প্রমাণ ইত্যাদির মাধ্যমে, (খ) চাক্ষুস অর্থাৎ নিজের চোখে দেখে। সমাজে কিছু লোক আছে যারা তাদের যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান দ্বারা সত্যকে বুঝতে পারে না, তখন মহান আল্লাহ মো’জেজা ঘটান যেন আল্লাহর দেওয়া ঐ বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করার আর কোন কারণ থাকতে না পারে। বিভিন্ন নবীর মো’জেজাগুলি পর্যবেক্ষণ কোরলে আমরা তার মধ্যেও এ বিষয়টি লক্ষ্য কোরতে পারি। তা হোচ্ছে, যে নবীকে আল্লাহ যে সময়ে ও যে সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ কোরেছেন, তাঁকে সেই সময়ের লোকদের বুদ্ধিবৃত্তি ও পারিপার্শ্বিকতা অনুযায়ী মো’জেজা দান কোরেছেন। স্থান কাল পাত্রভেদে মো’জেজার ধরণের মধ্যেও বহু পার্থক্য এসেছে। যেমন মুসা (আ:) এর সময় মিশরে খুব যাদুর প্রচলন ছিলো। তাই মুসা (আ:) এর মো’জেজাও ছিলো যাদুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁকে মো’জেজার মাধ্যমে যাদুকরদের মোকাবেলা কোরতে হোয়েছিল। আমাদের নবীর সময়ে আরবে কাব্যচর্চা খুবই সমৃদ্ধি অর্জন কোরেছিল, তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনকে কোরেছেন ছন্দবদ্ধ ও কাব্যময়। যখন মানুষের যুক্তিবোধ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা কম ছিলো, তখন আল্লাহ যে মো’জেজাগুলি নবীগণকে প্রদান কোরেছেন সেগুলো ছিলো একেবারে প্রত্যক্ষ অর্থাৎ যুক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজন হোত না, চোখে দেখাই যথেষ্ট হোত এবং স্থুল বুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পারা যেতো। যেমন: সালেহ (আ:) এর নির্দেশে পাথর ভেদ কোরে উটের আবির্ভাব হওয়া, পাথর থেকে ঝর্ণা সৃষ্টি হওয়া, ঈসার (আ:) মৃতকে জীবিত করা, মাটির পাখিতে প্রাণ প্রবিষ্ট করা ইত্যাদি। যখন মানুষের যুক্তিবোধ ও চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেল সে সময়ের নবীদের মো’জেজাগুলিও হোয়ে গেলো খানিকটা চিন্তা এবং যুক্তিভিত্তিক। যেমন আমাদের রসুলের শ্রেষ্ঠ মো’জেজা হোচ্ছে আল কোর’আন। কোর’আন যে মানুষের রচনা নয় তা যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগ কোরেই বুঝতে হয়। হাজারটা প্রমাণ দেওয়া যাবে যা দিয়ে বোঝা যায় যে কোর’আন কোন মানুষের তৈরি হোতে পারে না, তবে সবগুলো প্রমাণই বুদ্ধিবৃত্তিক।
একবিংশ শতাব্দীতে মো’জেজার প্রাসঙ্গিকতা
আল্লাহর রসুল বিদায় নেওয়ার পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ে এসলাম বিকৃত হোতে হোতে এখন প্রকৃত এসলামের আর বিকৃত কঙ্কালটি ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। এমন সময় আল্লাহর রহমে এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আবার সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত এসলাম বুঝতে পেরেছেন। তিনি বোলছেন, বর্তমানে সারা দুনিয়ায় এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি চালু আছে সেটি আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়, বরং প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রকৃত এসলামটা কি তাও তিনি মানবজাতির সামনে পেশ কোরেছেন। এখন প্রশ্ন হোল, তাঁর এই কথা সত্য না অসত্য তা আমরা কি কোরে বুঝবো? বর্তমানে চালু থাকা হাজার হাজার এসলামী মতবাদের ভিড়ে তাঁরটাই যে সত্য সে ব্যাপারে কি কোরে নিঃসন্দেহ হবো? এর একমাত্র পথ – আল্লাহ যদি পূর্বের মতো কোন মো’জেজা ঘোটিয়ে জানিয়ে দেন সেক্ষেত্রেই আমরা তা বুঝতে পারবো। কিন্তু আমাদের এমাম নবী রসুল নন যে আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে মো’জেজা ঘটাবেন, তাই এখন কোন বিষয়কে সত্যায়ন করার প্রয়োজন হোলে স্বয়ং আল্লাহর নিজেকেই মো’জেজা প্রদর্শন করা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
তাই গত ২ ফেব্র“য়ারি, ২০০৮ তারিখে হেযবুত তওহীদ ও তাঁর এমামকে সত্যায়ন করার জন্য আল্লাহই মো’জেজা সংঘটিত কোরলেন। গত ১৪০০ বছরে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির অভাবনীয় অগ্রগতি হোয়েছে। তাই এ মো’জেজার ঘটনাটিও সেই অগ্রসর বুদ্ধিবৃত্তির উপযোগী কোরেই আল্লাহ সংঘটন কোরেছেন। এই মো’জেজার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে জানিয়ে দিলেন যে: হেযবুত তওহীদ হক, সত্য; হেযবুত তওহীদের এমাম হক, অর্থাৎ আল্লাহর মনোনীত, এবং এই হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে তাঁর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরবেন।
বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর সেদিনের মো’জেজা
২৪ মহররম ১৪২৯ হেজরী মোতাবেক ২ ফেব্র“য়ারি ২০০৮ ঈসায়ী। এই দিন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোয়েছিল ছাদের ওপর প্যান্ডেল টানিয়ে; ওপরে এবং চারিদিকে কাপড় দিয়ে ঘেরা। অনুষ্ঠানে ২৭৫ জন মোজাহেদ-মোজাহেদা ও ৪৩টির মতো বাচ্চা ও শিশু, যাদের মধ্যে ৩ মাস থেকে ১ বছর বয়সের অন্ততঃ ৩ টি কোলের শিশু থেকে ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়ে উপস্থিত ছিলো। ছাদের ওপর এতগুলি মানুষের স্থান সংকুলানের সমস্যা হোচ্ছিল। এমামুয্যামানের বক্তব্য প্রদানের পূর্ব মুহূর্তে ছাদের পরিবেশ ছিলো খুবই হট্টগোলপূর্ণ। ৪৩টি বাচ্চার চিৎকার, চেঁচামেচি তো আছেই নিকটেই কোন মসজিদ বা ওয়াজ মাহফিল থেকে লাউড স্পিকারের আওয়াজ আসছিলো। বাড়িটি বিশ্বরোড সংলগ্ন হওয়ায় গাড়ির হর্নের ক্রমাগত আওয়াজ তো ছিলোই। কাছেই কোথাও একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারে বাজানো গান-বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বাইরে ছিলো প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহ। প্রচণ্ড বাতাসে প্যান্ডেলের কাপড় পত পত কোরে শব্দ কোরছিল। সেদিন ছিলো ঐ বছরের অন্যতম শীতল দিন। সবার শীতে খুব কষ্ট হোচ্ছিল। এরই মধ্যে এমামুয্যামান সবার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১০ মিনিটের একটি ভাষণ দিলেন, সেই ভাষণ লাউড স্পিকারে শোনানো হোল। যখন এমামুয্যামান তাঁর ভাষণ আরম্ভ কোরলেন তখন পরিবেশ পুরো অন্যরকম হোয়ে গেল। পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে যামানার এমামের ঐ ভাষণের সময় আল্লাহ ন্যূনতম আটটি মো’জেজা ঘটান। এ মো’জেজাগুলির উদ্দেশ্য ছিলো প্রধানত উপস্থিত সকলে যেন এমামুয্যামানের বক্তব্যটি সুস্পষ্টভাবে শুনতে পায়, কারণ ঐ ভাষণেই রোয়েছে হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা। অতি সংক্ষেপে মো’জেজাগুলি হোল:
১) এমামুয্যামানের ভাষণ আরম্ভ হওয়ার মুহূর্ত থেকে চারিদিকে একটি অদ্ভুত পিনপতন নীরবতা, নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মনে হোচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত শব্দ থেমে গেছে। কোথাও সামান্যতম শব্দ নেই, শুধু এমামুয্যামানের বলিষ্ঠ, সুন্দর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে এবং প্রতিটি শব্দ এত পরিষ্কারভাবে শোনা যাচ্ছে যে, পরে অনেকে বোলেছেন তাঁর সামনে বোসে তাঁর কথা কোনও দিন এত পরিষ্কারভাবে শোনা যায় নি। তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোলমাল শুরু হোল।
২) সেখানে ৪৩টি বিভিন্ন বয়সের শিশু ছিলো, যারা একটু আগেও তুমুল হৈ চৈ হট্টগোল কোরছিল। এমামের ভাষণ শুরু হোতেই তারা কি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই চুপ হোয়ে গেলো এবং ১০ মিনিট ধোরে চুপ রোইল। অথচ ৩/৪ টা বাচ্চাকে ২ মিনিট চুপ কোরিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভব ঘটনাই সেদিন ঘোটল।
৩) ঠান্ডা হাওয়া বন্ধ হোয়ে যাওয়া। ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে মিটিং করাই দুঃসাধ্য হোয়ে উঠেছিল। কিন্তু এমামের ভাষণের ঐ ১০ মিনিট শৈত্যপ্রবাহ পর্যন্ত বন্ধ হোয়ে গিয়েছিল। বাতাসের ধাক্কায় প্যান্ডেলের কাপড়ে যে আওয়াজ হোচ্ছিল তখন তাও বন্ধ হোয়ে গিয়েছিল। তখন যে পরিবেশটি তৈরি হোয়েছিল তা ছিলো সকলের জন্য আরামদায়ক।
৪) এমামের ভাষণ আরম্ভের একটু আগে পর্যন্তও অনুষ্ঠানের লাউড স্পিকার তিনটি শব্দ ছিলো অস্পষ্ট, খুব খেয়াল কোরে বুঝতে হোচ্ছিল। তিনটি স্পিকার তিন ধরণের হওয়ায় টিউন করা খুব কঠিন ছিলো, পুরো সাউন্ড সিস্টেমটাই ছিলো প্রায় অকেজো, পুরানো। কিন্তু এমাম কথা বলার সামান্য আগেই হঠাৎ লাউড স্পিকারের শব্দ একদম পরিষ্কার হোয়ে যায়। অনেকে বলেন, ‘আমরা লাউডস্পিকারের যে আওয়াজ শুনেছি তেমন আগে কখনো শুনি নাই, পরেও শুনি নাই।’
৫) অনুষ্ঠানস্থলে মোট ৫২টি মোবাইল ফোন চালু ছিলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশের আমীরগণ, যাদের প্রত্যেকের ফোনে প্রচুর কল আসে। কিন্তু এমামের ভাষণের সময় একটিতেও কোন রিং বাজে নাই, কোন কল আসে নাই।
৬) সময় সংকোচন। এমাম ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ড কথা বোলেছেন, অথচ সকলের কাছে মনে হোয়েছে মাত্র দু-এক মিনিট, সর্বোচ্চ তিন মিনিট।
৭) সবার অখণ্ড মনোযোগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মো’জেজা হোচ্ছে সকলের মনকে আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন কোরে এমামুয্যামানের ভাষণের প্রতি নিবিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন। কেউ বোলেছেন, মনে হোল যেন গভীর পানির মধ্যে বোসে এমামের কথা শুনছি, কেউ বোলেছেন, তখন মনে হোয়েছে পৃথিবীতে কেবল আমি আর এমাম আছি। আগের সবগুলি মো’জেজার একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিলো মোজাহেদেরকে এমামের ভাষণটা শোনানো। এ সময় কারো মনোযোগে যেন সামান্য বিচ্যুতি না ঘটে সেজন্য আল্লাহ পুরো পরিবেশটা এমন কোরে দিয়েছিলেন।
৮) ঘটনার চারমাস পরে আমরা উদ্ঘাটন কোরি যে, এই ভাষণে এমামুয্যামানের কথাগুলির মধ্যে আল্লাহ তিন (৩) সংখ্যার একটি অভূতপূর্ব সমন্বয় সাধন কোরেছেন। ভাষণের অন্তত ৩০টির অধিক বিষয় তিনবার কোরে এসেছে বা ৩ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: এমামুয্যামান শুরুতে দোয়া করেন তিনটি, শেষে দোয়া করেন তিনটি, দোয়া চান তিনটি বিষয়ের জন্য, ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনটি, ভাষণে জান্নাত শব্দটি আছে তিনবার, জাহান্নাম তিনবার, মোট উপস্থিতি ৩১৮ জন ইত্যাদি। ঠিক যেমনভাবে তিনি কোর’আনকে ১৯ সংখ্যা দিয়ে বেঁধেছেন। কোন মানুষের পক্ষে সারাজীবনের সাধনাতেও এটা করা সম্ভব নয়।
এই আটটি মো’জেজার মধ্যে সাতটি মো’জেজা আল্লাহ এমনভাবে ঘটালেন যেগুলি কেবলমাত্র ঐ সময়ে ঐ স্থানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই দেখতে পেলেন, অন্যরা সেটা দেখতে পায় নি। তাহোলে প্রশ্ন আসে, বাকি যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, বা যারা পরবর্তীতে আসবেন তারা কী কোরে ঐ মো’জেজার ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন? তাই তাদের এবং তাদের পরবর্তী সকল মানুষের জন্য আল্লাহ সেখানে একটি মো’জেজা ঘটালেন এমনভাবে যেটি ঐ স্থান-কাল-পাত্রের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, অন্যরাও এটা দেখতে পাবে। এটি আল্লাহ ঘটালেন কোর’আনের সংখ্যা সংক্রান্ত মো’জেজাটির সাথে মিল রেখে। সমস্ত কোর’আনকে আল্লাহ যেভাবে উনিশ সংখ্যার জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন, ঠিক একইভাবে সেদিন এমামের সংক্ষিপ্ত ভাষণটিকে আল্লাহ বাঁধলেন তিন সংখ্যার জাল দিয়ে। উদ্দেশ্যও এক অর্থাৎ সত্যায়ন। এর দ্বারা আল্লাহ এটাই প্রকাশ কোরছেন যে, ‘ঐ ভাষণে যে কথাগুলো বলা হোয়েছে এগুলো যে মানুষটি বোলছেন তাঁর স্বরচিত নয়, এগুলো আমারই (আল্লাহর) কথা এবং তিনি আমারই মনোনীত ব্যক্তি।’
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান করেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত। মো’জেজা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পড়–ন “আল্লাহর মোজেজা: হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা” নামের বইটি।

Monday, August 10, 2015

কি হারালাম আর কি পেলাম?

কি হারালাম আর কি পেলাম?

এস.এম.সামসুল হুদা:
যে সময়ের কথা বোলছি তখন প্রকৃত এসলাম ছিলো না। প্রকৃত এসলাম হারিয়ে গেছে রসুলাল্লাহর দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের ৬০/৭০ বছর পরেই যখন উম্মতে মোহাম্মদী আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ কোরেছে। আমরা বোলছি ১৪শ’ শতকের কথা। মোসলেম জাতির পায়ের নিচে তখন অর্ধেক দুনিয়া। অঢেল সম্পদের উত্তরাধিকার হোয়ে এই জাতিটির শাসকেরা অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মতোই ভোগবিলাসে মত্ত। তবে তারা মোসলেম ছিলেন এ কথা অনস্বীকার্য। কারণ অর্ধ-পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব তখনও আল্লাহর, সেখানে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা তখনও আল্লাহর। এই দীনের প্রভাবে সেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিলো অকল্পনীয় শান্তি। সমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি, অপরাধ প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল। মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ছিলো চূড়ান্ত, মাসের পর মাস আদালতে অপরাধ সংক্রান্ত কোন মামলা আসতো না। মানুষ যাকাত ও সদকার অর্থ নিয়ে পথে পথে ঘুরতো কিন্তু গ্রহণ করার মতো কোন দরিদ্র মানুষ খুঁজে পেত না। একজন যুবতী নারী অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় সম্পূর্ণ একা শত শত মাইলের পথ পাড়ি দিতে পারতো, তার মনে কোনরূপ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। এমন একটি সময়ে পরিব্রাজক ইবনে বতুতা মোসলেম সভ্যতার প্রতিটি শহর পরিভ্রমণ করেন। তার লেখা থেকে সে সময়ের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পরিস্ফুট হোয়ে ওঠে।
খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রায় ৬০০ বছর পরে ১৩৩০ সনের কাছাকাছি সময়। মোসলেমরা ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, হজ্বের উদ্দেশ্যে আরও বিভিন্ন কারণে দূর দূরান্তরে ভ্রমণ কোরতেন। তাদের যাত্রাবিরতি ও বিশ্রামের জন্য পথের বিভিন্ন স্থানে অতিথিশালা (ঈড়হাবহঃ) তৈরা করা হোত। যাদের নিজস্ব পরিবার পরিজন নেই, তারাও এসব অতিথিশালাতে অবস্থান কোরতেন। মক্কার অতিথিশালাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ছিলো রাবি কনভেন্ট। এখানে একটা পানির কূপ ছিলো, যার পানি এত মিষ্টি যে সারা মক্কায় তার কোনো তুলনা পাওয়া যেত না। যাঁরা এখানে থাকতো তাঁরা সবাই ছিলেন আল্লাহর জন্য সর্বত্যাগী মানুষ। হেজাজের মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতো রাবিকে। আমীরের নির্দেশে তায়েফের লোকেরা এটার অধিবাসীদের জন্য ফলমূল সরবরাহ কোরত। যার যে বাগান আছে- সে পাম গাছের হোক বা ডুমুর, আঙুর বা পিচেরই হোক, উৎপাদিত ফলের একটা অংশ তাকে এই অতিথিশালার অধিবাসীদের জন্য পাঠাতে হোত, নিজের উটে করে। তায়েফ থেকে মক্কা দু’ দিনের পথ। কেউ যদি গাফেলতি বা কৃপণতাবশত সময়মত ফল না পাঠাতো তাহোলে তার বাগানের ফলন কমে যেতো। এবং পরের বছর গাছ মরে বাগান উজাড় হোয়ে যেতো। একদিন মক্কার আমীরের কয়েকজন প্রতিনিধি কনভেন্ট পরিদর্শনে এলেন সরকারি ঘোড়ায় করে। ঘোড়াগুলোকে সেই কূপের পানি খাওয়ানো হয়। তার একটু পর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হওয়ায় সমস্ত ঘোড়া মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু কোরল। খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমীর নিজে কনভেন্টে ছুটে আসলেন এবং সেখানকার অধিবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের একজনকে নিয়ে ঘোড়াশালে এলেন। কনভেন্টের ঐ অধিবাসী এসে ঘোড়াগুলির পেটে হাত বুলিয়ে দিতে বমি কোরল পশুগুলো, পেটের পানি বের হোয়ে যেতেই আস্তে আস্তে তারা সুস্থ হোয়ে উঠল।
এই ঘটনার কারণ বর্তমানের এই বস্তুবাদী সভ্যতার যুগে বোঝা খুবই কঠিন, উপলব্ধি করা তো প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। বস্তুতঃ আল্লাহর সত্যদীন যে স্থানে প্রতিষ্ঠিত থাকে সে স্থানের প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আল্লাহর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে। আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী যে শাসক শাসন করেন, সেই শাসককে আল্লাহই পরিচালিত করেন। এই ঘটনার মধ্যে তেমন একটি উদাহরণই পাওয়া যায়। কনভেন্টের অধিবাসীদের জন্য যাদের নিয়মিত ফলমূল পাঠানোর দায়িত্ব তারা যদি না পাঠাতো তাদের বাগানই উজাড় হোয়ে যেত। এটা আল্লাহ কোরতেন, শাসককে কোরতে হোত না। একে বলা হয় আল্লাহর অদৃশ্য প্রশাসন বা Inner Administration. কনভেন্টের কূপে পানি নির্দিষ্ট ছিলো সেখানকার অধিবাসীদের ব্যবহারের জন্য, সরকারি লোকদের ঘোড়ার জন্য নয়। তাই যখন ঘোড়াদেরকে সেই পানি খাওয়ানো হোল সেটা ছিলো একটি অন্যায় কাজ। তাই ঐ পানি পান করার পরে ঘোড়াগুলি অসুস্থ হোয়ে পড়ে। এ সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মক্কার আমীরও বুঝতে পারেন যে তার প্রতিনিধিরা কি ভুল কোরেছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন এবং কনভেন্টের অধিবাসীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারা যখন ঘোড়াগুলির পেটে হাত বুলিয়ে দেন সেগুলির পেট থেকে ঐ পানি বের হোয়ে যায় এবং তারা সুস্থ হোয়ে যায়। মূলতঃ এটা ছিলো আমীরের প্রতিনিধিদের জন্য একটি বড় শিক্ষণীয় বিষয়। সেটা হোচ্ছে: কার কি অধিকার বা হক তা আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট করার পর কেউ যদি সেই হক নষ্ট করে তার ফল তাকে অবশ্যই পোহাতে হবে, অন্যরাও এজন্য ক্ষতির শিকার হবে। যেমন তারা কনভেন্ট অধিবাসীদের অধিকারভুক্ত পানির অপব্যবহারের কারণে কিছু নিরপরাধ প্রাণী কষ্ট পেল।- এ শান্তিময় সুন্দর সমাজ আমরা হারিয়েছি।
আর বিনিময়ে যা পেয়েছি তা হোল:- আল্লাহর সত্যদীনকে প্রত্যাখ্যান কোরে আজকে আমরা দাজ্জালের তৈরি মতবাদ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি গ্রহণ কোরে নিয়েছি। প্রশ্ন হোল আমরা কিসের বিনিময়ে কি পেয়েছি? এইসব তন্ত্রমন্ত্রের গালভরা বুলি আছে কিন্তু তা অনাহারী মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটাতে পারছে না। প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ না খেয়ে আছে। এই তন্ত্রমন্ত্রের প্রদত্ত মানবাধিকার সনদ অতি মানবিক, কিন্তু বাস্তবে দেখি পৃথিবীর কোটি কোটি মোসলেম নামধারী মানুষ গৃহহারা, তাদের জীবনের কোন মূল্য নেই, তাদের মেয়েদের ইজ্জতের কোন মূল্য নেই। এই সব তন্ত্রমন্ত্র মানুষকে স্বাধীনতার নামে দেয় দাসত্বের বেড়ি, অধিকারের নামে দেয় অপমান আর লাঞ্ছনা। অন্যায় আর অশান্তির দাবানলে প্রতি মুহূর্তে অঙ্গার হোচ্ছে মানুষ। জীবন ও সম্পদের ন্যূনতম নিরাপত্তাও মানুষের অবশিষ্ট নেই।
এই যে বিপর্যয় সৃষ্টি হোয়েছে তা আমাদেরই কর্মফল। যখনই মানুষ অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ কোরেছে তখনই জন্ম নিয়েছে অশান্তির। সেই অশান্তি আজ পুরো মানবজাতিকে গ্রাস কোরে নিয়েছে। ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতার প্রভাবে সকল মানুষই আজ অন্যায়ের শিকার, সকলেই তার অধিকার বঞ্চিত, সকলেই ক্ষুব্ধ। এমতাবস্থায় এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হোল, সেই হারানো সত্যদীনকে, স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থাকে আবার ফিরিয়ে আনা। প্রকৃত এসলাম ১৩০০ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার প্রভাব যে কয় শতাব্দী পৃথিবীর বুকে ছিলো তার একটি নিদর্শন একটু আগেই উপস্থাপন কোরলাম। মহাকালের অথৈ সাগরে যেই ধনভাণ্ডারের চাবি আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল, সেই চাবির কথা দূরে থাক ধনভাণ্ডারের অস্তিত্বই আজ মানুষ ভুলে গেছে। ফলে সেই ধনভাণ্ডার উদ্ধারের কোন আশাই আর ছিলো না। এমন সময় মহান আল্লাহ আবার মানবজাতিকে দয়া কোরলেন। তিনি তাঁর সেই হারিয়ে যাওয়া ধনভাণ্ডারের চাবি, তওহীদ মানবজাতির হাতে ফিরিয়ে দিলেন। যাঁর মাধ্যমে তিনি এই বিরাট সুযোগ মানবজাতিকে দান কোরলেন তিনি এই যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। সেই ধনভাণ্ডার হোচ্ছে আল্লাহর সত্যদীন। তিনি হেযবুত তওহীদের কাছে সেই ধনভাণ্ডার রেখে গেছেন। এখন হেযবুত তওহীদ মানবজাতিকে সর্বান্তকরণে আহ্বান কোরছে এই ধনভাণ্ডার গ্রহণ কোরে তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ ও শান্তিময় করার জন্য।

মানুষ দাজ্জালের এবাদত কোরছে

মানুষ দাজ্জালের এবাদত কোরছে

মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর ঘোষণা, আমি জ্বীন এবং এন্সানকে শুধুমাত্র আমার এবাদত করার জন্য সৃষ্টি কোরেছি (সুরা যারিয়াত ৫৬)। এই এবাদত বোলতে প্রায় সবাই সালাহ, সওম প্রভৃতি মনে করে। এই ধারণা সঠিক নয়। সালাহ, সওম ইত্যাদি হোচ্ছে প্রকৃত এবাদতের আনুষাঙ্গিক কাজ। আল্লাহ কোর’আনে এরশাদ কোরেছেন, আমি আল্লাহ, আমি ব্যতীত অন্য কোন এলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাহ কায়েম কর (সুরা ত্বাহা, আয়াত-১৪)। পবিত্র কোর’আনের এই আয়াতে আল্লাহ প্রথমে তাঁর সার্বভৌমত্বের মালিক, নিজেকে মানবজাতির একমাত্র হুকুমদাতা হিসাবে ঘোষণা দিলেন। এলাহ বোলতে বর্তমানে মনে করা হয় উপাস্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। এলাহ হোচ্ছেন সেই সত্তা যার হুকুম শুনতে হবে এবং পালন কোরতে হবে। এক কথায় জীবনের যে কোন অঙ্গনে যেখানে আল্লাহর কোন বক্তব্য আছে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজৈেনতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি যে বিভাগেই হোক না কেন সেখানে আর কারও কোন বক্তব্য গ্রহণ করা যাবে না অর্থাৎ তওহীদ; আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। এরপর এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর এবাদত করার কথা বোললেন এবং পরিশেষে তাঁর স্মরণার্থে সালাহ কায়েমের কথা বোললেন। আলোচ্য আয়াতে এটা পরিষ্কার হোয়ে যাচ্ছে যে এবাদত ও সালাহ অর্থাৎ উপাসনা এক জিনিস নয়। 
তাহোলে এবাদত কি? এবাদত হোচ্ছে যে জিনিসকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হোয়েছে সেই কাজ করাই হোচ্ছে ঐ জিনিসের এবাদত। প্রশ্ন হোল- আল্লাহ আমাদের কি কাজের জন্য সৃষ্টি কোরেছেন? এর উত্তর আমরা পবিত্র কোর’আন থেকেই পাচ্ছি। কোর’আনের সুরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহর ঘোষণা, আমি মানুষকে আমার খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি কোরেছি। খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধির কাজ হোচ্ছে একজনের কাজ তিনি না কোরে তার হোয়ে আরেকজন করা। তাহোলে কোর’আনে আল্লাহ বোললেন তিনি আমাদেরকে খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি কোরেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীতে আল্লাহ নিজে যে কাজটি কোরতেন সেই কাজটি তিনি না কোরে তা আমাদের দিয়ে কোরাবেন। এখন প্রশ্ন হোচ্ছে, আল্লাহর কি কাজ? তিনি কি নামাজ, রোজা করেন? নিশ্চয় না। তাঁর কাজ হোল: তাঁর সৃষ্টজগতকে শাসন করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এ কাজটি নিজে না কোরে মানুষকে দিয়ে করাবেন। তাই তিনি কোর’আনে ঘোষণা কোরেছেন আমি মানুষকে আমার খলিফা হিসাবে সৃষ্টি কোরেছি। তাহোলে এবাদতের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল্লাহ্র খেলাফত করাই হোচ্ছে মানুষের এবাদত। অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া বিধান দিয়ে পৃথিবী শাসন করাই হোচ্ছে খেলাফতের কাজ, কিন্তু মানুষ আজ এই খেলাফতের কাজ কোরছে না অর্থাৎ আল্লাহ্র এবাদত কোরছে না। অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে মূলত: তাঁর এবাদত করার জন্যই সৃষ্টি কোরেছেন। এই মোসলেম নামক জাতিটি আল্লাহর প্রকৃত এবাদত কি তা না জেনে, না বুঝে নামাজ রোজা কোরে ভাবছে খুব এবাদত কোরছি।
প্রকৃতপক্ষে তারা কার এবাদত কোরছে, কার প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত কোরছে? সত্য হোচ্ছে এই যে, মোসলেম নামধারী জনসংখ্যাটিসহ গোটা মানবজাতি এখন দাজ্জালের তৈরি আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অর্থাৎ সামগ্রিক জীবন দাজ্জালের, তথা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার বিধান, মতবাদ অনুযায়ী পরিচালিত কোরছে। সুতরাং মানুষ এখন দাজ্জালেরই এবাদত কোরে চোলেছে।

এখন দাজ্জাল নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী

এখন দাজ্জাল নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী

মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
চৌদ্দশ’ বছর থেকে মোসলেম উম্মাহর ঘরে ঘরে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা চোলে আসছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবৎ বহু এসলামী চিন্তাবিদ, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মের ধ্বজাধারী তথাকথিত আলেম মাওলানারা দাজ্জালকে নিয়ে অনেক বই লিখেছেন, গবেষণা করেছেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ তারা রসুলাল্লাহর দাজ্জাল সম্পর্কিত রূপক বর্ণনাগুলোকেই বাস্তব হিসেবে ধরে নিয়ে এক মহা শক্তিশালী দানবের আশায় বসে আছেন। তাদের এই বিকৃত আকীদার ফলশ্র“তিতে তারা ইতোমধ্যেই পৃথিবীতে আসা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকারী এবং নিজেকে রব দাবিদার দাজ্জালকে চিনতে পারছেন না। তারা বুঝতে পারছেন না যে তাদের অজান্তেই মানবজাতির মহাবিপদের ঘণ্টা বাজিয়ে আজ থেকে ৪৭৬ বছর আগেই দাজ্জালের জন্ম হোয়েছে এবং বর্তমানে সে তার শৈশব-কৈশোর পার হোয়ে যৌবনে উপনীত। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা, এ যামানার এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কোর’আন-হাদিস-বাইবেল, ইতিহাস এবং আধুনিক বিজ্ঞনের আলোকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ কোরেছেন যে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতাই হোল রসুলাল্লাহ বর্ণিত দানব দাজ্জাল। দাজ্জাল সম্পর্কে লেখা যামানার এমামের “দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’!” বইটি পাঠক মহলে ব্যাপক আলোচিত এবং আলোড়িত বিষয়, যা ছিলো ২০০৮ সালের বাংলাদেশের বেস্ট সেলার বই। পাঠকদের ব্যাপক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা বইটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি পত্রিকায় প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এই লেখাটিও উক্ত বই থেকেই সম্পাদিত।]
আল্লাহর রসুল বোলেছেন দাজ্জালের শক্তি, প্রভাব ও প্রতিপত্তি পৃথিবীর সমস্ত মাটি ও পানি (ভূ-ভাগ ও সমুদ্র) আচ্ছন্ন কোরবে। সমস্ত পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ চামড়া দিয়ে জড়ানো একটি বস্তুর মত তার করায়ত্ত হবে। [মুসনাদে আহমদ, হাকীম, দারউন নশুর]
বর্তমানের ইহুদি-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই যে দাজ্জাল এ সিদ্ধান্ত যারা অস্বীকার কোরবেন বা তাতে সন্দেহ কোরবেন তারা মেহেরবানী কোরে আমাদের বোলে দেবেন কি তাহোলে রসুলাল্লাহ তাঁর ঐ হাদিসে ‘দাজ্জাল’ দ্বারা কাকে বোঝাচ্ছেন? সমস্ত পৃথিবীর মাটি ও পানি অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীটাকে আজ কোন্ মহাশক্তি আচ্ছন্ন কোরে আছে? তারা একটু চিন্তা কোরলেই দেখতে পাবেন যে, ঐ শক্তি অবশ্যই পাশ্চাত্যের ঐ ইহুদি-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা। সমস্ত পৃথিবীতে আজ এর শক্তি অপ্রতিরোধ্য। কিছুদিন আগ পর্যন্তও দাজ্জালের দু’টি প্রধান ভাগের মধ্যে দ্বন্দ¦ ছিল, আজ নেই, এখন দাজ্জাল নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী। পৃথিবীর পৃষ্ঠে কোন ভূ-ভাগ, মাটি নেই, কোন সমুদ্র নেই যেখানে এই মহাশক্তি যা ইচ্ছা তা কোরতে না পারে। এই হাদিসটিতে বিশ্বনবী যে উপমা দিয়েছেন তা সত্যই প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে- কোন কিছু দিয়ে (এখানে তিনি চামড়া শব্দ ব্যবহার কোরেছেন) একটা বস্তুকে (এখানে এই পৃথিবীকে) সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে ফেলা, পেঁচিয়ে ফেলা। ইহুদি-খৃষ্টান সভ্যতার যান্ত্রিক শক্তি যেভাবে সমস্ত পৃথিবীটাকে পদানত কোরে রেখেছে তার নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নবী। পৃথিবীর ইতিহাস যতটুকু জানা যায়, তা থেকে বলা যায় যে, অতীতে কখনও পৃথিবীতে এমন একটি মহাশক্তির আবির্ভাব হয় নি যে শক্তি সমস্ত পৃথিবীকে পদানত ও নিয়ন্ত্রণ কোরতে পেরেছে। এটা সম্ভবও ছিলো না। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানবাহন ইত্যাদি এমন ছিলো না যে অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যে কোন স্থানের সাথে যোগযোগ করা যায় বা অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে যাওয়া যায়। ইহুদি-খৃষ্টান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সেটা সম্ভব কোরেছে। আর কোরেছে বোলেই মানব ইতিহাসে এই প্রথম এমন একটি মহাশক্তিধর দৈত্য-দানবের আবির্ভাব হোয়েছে যেটা সমস্ত পৃথিবীকে পদানত কোরেছে।
এক সময় রোমান সাম্রাজ্য পৃথিবীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ শাসন কোরত, অন্য সময় পারসিক শক্তি বিরাট এলাকার অধিপতি ছিলো। তারও আগে বর্তমানের আফগানিস্তান থেকে পূর্বে বোর্ণিও পর্যন্ত বিশাল এলাকা ভারতীয় সভ্যতার অধীনে ছিলো। কিন্তু কোন একক মহাশক্তিই কখনো সমস্ত পৃথিবীতে আধিপত্য কোরতে পারে নি।
তার উম্মতও যে দাজ্জালের পদানত হবে তা এই হাদিসের অর্থের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। তা যদি না হতো তবে তিনি যেভাবে পৃথিবীতে দাজ্জালের আধিপত্য হবে সেখানে না বোলে বোলতেন- আমার উম্মত তাকে স্বীকার বা অনুসরণ কোরবে না, বা ‘আমার উম্মত’ না বোলে বোলতেন- মানবজাতির এক পঞ্চমাংশ (মোসলেম জাতি পৃথিবীর লোকসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ) দাজ্জালকে স্বীকার কোরবে না। তা তিনি বলেন নি এবং তার অর্থ তাঁর উম্মতও দাজ্জালের অধীন হবে। প্রকৃত অবস্থাও তাই।
আল্লাহর রসুল বোলেছেন আরবে এমন কোন স্থান থাকবে না যা দাজ্জালের পদতলে না আসবে বা সেখানে তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি না থাকবে। [বোখারী ও মোসলেম]
এই হাদিসটিতে তিনি নির্দিষ্ট কোরে আরবের কথা, তাঁর মাধ্যমে এসলামের যে শেষ সংস্করণটি আল্লাহ যে দেশে পাঠিয়েছিলেন সেই আরব দেশের কথা বোলছেন। তিনি বোলছেন- সেই আরবও দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা পাবে না, তার পদতলে চোলে যাবে। আরবে যদিও আল্লাহর দেয়া আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি মোটামুটি চালু আছে, অর্থাৎ ও ব্যাপারে দাজ্জালকে স্বীকার করে নাই, কিন্তু অন্যান্য সমস্ত ব্যাপারে আরবের শাসকরা দাজ্জালের অর্থাৎ পাশ্চাত্য শক্তির কাছে নতজানু হোয়ে তার আদেশ নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। শুধুমাত্র আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বিষয়ে আরব নেতারা পাশ্চাত্যের আদেশ-নির্দেশের অধীন এ কথা যারাই ওদের সম্বন্ধে খবর রাখেন তারাই স্বীকার কোরবেন। কারণও আছে। নেতারা, শাসকরা জানেন যে, মহা-শক্তিধর পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরুদ্ধে গেলে তাদের সিংহাসন, আমীরত্ব থাকবে না। দাজ্জাল তাদের সরিয়ে দিয়ে তার পছন্দমত শাসক নিয়োগ কোরবে। কাজেই বিশ্বনবী বোলেছেন সমস্ত পৃথিবীতো বটেই, এমনকি সমস্ত আরবও দাজ্জালের পদানত হবে

স্বর্ণযুগের শিক্ষক বর্তমানে মূর্খ

স্বর্ণযুগের শিক্ষক বর্তমানে মূর্খ

bishesh-kolamরিয়াদুল হাসান:
জ্ঞান বনী আদমের সম্পদ:
স্রষ্টা আদমকে সৃষ্টি কোরে সব জিনিসের নাম শেখালেন (কোর’আন- আল বাকারা ৩১)। এর অর্থ হোল তিনি যা সৃষ্টি কোরেছেন সেই সব জিনিসের ধর্ম, কোন জিনিসের কি কাজ, কেমন কোরে সে জিনিস কাজ কোরে ইত্যাদি, এক কথায় বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি কোরে তিনি তাঁর বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, মানুষকে সেই বিজ্ঞান শেখালেন। এই কথা বোলে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ জাতি সৃষ্টির প্রত্যেক জিনিস সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কোরবে। আজ থেকে হাজার বছর আগে মানুষ যে সব জিনিসের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ কোরেছিল অর্থাৎ নাম জেনেছিলো, আজ তার চেয়ে বহু বেশি জিনিসের সম্বন্ধে জানে- আজ থেকে বহু বছর পর সে আরো বহু জিনিস সম্বন্ধে জানবে। এই জ্ঞান আল্লাহই মানুষকে দান কোরবেন, তবে সেজন্য মানবজাতিকে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা কোরতে হবে। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে তাই জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হোচ্ছে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার। জ্ঞানের এই বিপুল সঞ্চয় এক দিনে সৃষ্টি হয় নি। ধাপে ধাপে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জ্ঞানপিপাসু মনীষীগণের গবেষণার উপর ভিত্তি করেই মানবজাতি আজকের এই অবস্থানে এসেছে। জ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কোরেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার কোরে আছে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী। পাঠাগারের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হোয়ে আছে মোসলেম জাতির জ্ঞানসাধনার ইতিহাস। সে সময় মোসলেম নামক এই জনসংখ্যাটি আজকের মতো সকল জাতির গোলাম ছিলো না, তারা ছিলো শিক্ষকের জাতি, যে জাতির নির্মাণ করা ভিত্তির উপর আজকের প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে। মোসলেম জাতির এই পদস্খলন কেন হোল তা বক্ষ্যমান নিবন্ধের আলোচ্য না হোলেও প্রাসঙ্গিকতার স্বার্থে কিছুটা স্পর্শ কোরে যাচ্ছি।
শিক্ষায় সমৃদ্ধির নেপথ্যে:
যে সময়টার কথা বোলছি তখন শেষ নবীর (দ:) উম্মাহর অবস্থা কি রকম তা মনে রাখা দরকার। নবী (দ:) তাঁর উম্মাহর উপর সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ কোরে চলে গিয়েছিলেন, যে কর্তব্যের কথা মনে রেখে তা সম্পন্ন করার সংগ্রাম ষাট-সত্তর বছর পর্যন্ত চালিয়ে যাবার পর, পৃথিবীর একটা বিরাট অংশের উপর আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থা, দীন প্রতিষ্ঠা কোরে সেখানে শান্তি স্থাপন করার পর হঠাৎ তারা ভুলে গেলেন তাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? তখন যদি তারা উদ্দেশ্য ভুলে না যেতেন, সংগ্রাম চালিয়ে যেতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাকি পৃথিবীও এই জীবন-বিধানের মধ্যে চলে আসতো ও সমস্ত পৃথিবীতে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠিত হতো, নবীর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ইতিহাস এই যে, তা হয় নি। উদ্দেশ্য তারা ভুলে গিয়েছিলেন এবং সংগ্রাম, নবীর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ তারা ত্যাগ কোরেছিলেন এবং পৃথিবীর অন্যান্য রাজা-বাদশা, সম্রাটদের মতো রাজত্ব কোরতে শুরু কোরেছিলেন। আল্লাহ যে এ অপরাধের ক্ষমা করেন নি তা পরবর্তী ইতিহাস। কিন্তু সর্বপ্রধান কর্তব্য ভুলে গেলেও তারা তাদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে যথাসাধ্য কোর’আন ও নবীর (দ:) অন্যান্য সুন্নাহ মোতাবেক চালাতে চেষ্টা করতেন এবং ওর ফল হিসাবে জীবনের নানা দিকে সমৃদ্ধ হোয়ে উঠেছিলেন। ঐ প্রক্রিয়ায় আল্লাহ ও নবীর (দ:) নির্দেশে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণে নিজেদের নিয়োজিত কোরেছিলেন এবং ফলে জ্ঞানে সর্বপ্রকার শাখায় তারা বিপুল উন্নতি কোরেছিলেন এবং এত উন্নতি কোরেছিলেন যে, পৃথিবীর শিক্ষকের আসন দখল কোরে নিয়েছিলেন। তখন ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতো এই উম্মাহর বিদ্যালয়গুলিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য। ইউরোপীয়ানরা এদের কাছ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষা কোরে দেশে ফিরে যেয়ে সেগুলোর চর্চা কোরে উন্নত হোতে আরম্ভ কোরল আর এদিকে এই উম্মাহর ধর্মীয় পণ্ডিতরা ফকিহ মোফাস্সের মোহাদ্দেসরা এই জীবন-বিধানটার বিভিন্ন আদেশ-নিষেধগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে জাতিটাকে বহু মাজহাবে (দলে) ফেরকায় বিভক্ত কোরে শুধু যে এর ঐক্য বিনষ্ট কোরে দুর্বল কোরে দিলেন তাই নয়, সবচেয়ে মারাত্মক, সর্বনাশা মতবাদ প্রচার কোরলেন এই যে, ‘ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান অর্জন আবশ্যকীয় নয়, ফরদ নয়’। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে তাদের দৃষ্টি এত অন্ধ হোয়ে গিয়েছিলো যে, ‘ধর্মীয়’ বোলতে যে কোর’আন-হাদিস বোঝায় সেই কোর’আন-হাদিসেই সর্বরকম জ্ঞানকেই-জ্ঞান বোঝান হোয়েছে এবং কোর’আন-হাদিস নিয়ে অতি বিশ্লেষণ, মতান্তর, তর্কাতর্কি, বাহাসকে শুধু নিষেধ নয় একেবারে কুফরী বলা হোয়েছে তা তারা দেখতে পান নি [হাদিস- আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে মোসলেম, মেশকাত]। উম্মাহর সর্বনাশের যেটুকু বাকি ছিলো, এই মতবাদে সেটুকু সম্পূর্ণ হোয়ে গেলো- অল্প দিনের মধ্যে পৃথিবীর শিক্ষক জাতিটি পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানহীন ও আরও কিছু পরে একেবারে নিরক্ষরে পর্যবসিত হোল।
মানবজাতির জ্ঞানতীর্থ:
বলা হোয়ে থাকে, পৃথিবীর বুকে সভ্যতার আলোকবর্তিকার মূল হোচ্ছে ‘কলম’, তার পরের ধাপ হোচ্ছে গ্রন্থ প্রণয়ন, গ্রন্থাগার নির্মাণ, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি। কোর’আনের প্রথম বাক্যটি হোচ্ছে ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। …যিনি তোমাকে কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।’ আর রসুলাল্লাহ বোলেছেন, ‘যে জ্ঞানার্জন করে তার মৃত্যু নেই’, ‘চীনে গিয়ে হলেও জ্ঞান অনুসন্ধান কর’, ‘প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা অবশ্য কর্তব্য’, ‘সমগ্র রাত্রি এবাদত অপেক্ষা এক ঘণ্টা জ্ঞান চর্চা করা উত্তম’, ‘যে জ্ঞানীকে সম্মান করে সে আমাকে সম্মান করে’, ‘জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র’ প্রভৃতি। নবী (দ:) এর কথার ফলাফল হিসেবে তাঁর জীবদ্দশাতেই আরম্ভ হোয়ে পরবর্তীতেকালে বাগদাদ, মিশরের কায়রো সালেনা ও কর্ডোভায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল।
মহানবীর সাহাবী আলী (রা:) প্রশাসন, বিদ্রোহ দমন প্রভৃতি প্রয়োজনে কর্মব্যস্ত থাকলেও তার চেষ্টায় কুফার জামে মসজিদ জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত হোয়েছিল। দেশ-বিদেশের ছাত্ররা সেখানে ছুটে যেত জ্ঞানার্জনের জন্য। আলী (রা:) স্বয়ং সেখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন (মুজীবর রহমানের লেখা আলী পুস্তকের ৩৬০ পৃষ্ঠা, ছাপা ১৯৬৮)। রসুলাল্লাহর সাহাবী আব্দুল্লাহ এবনে আব্বাস (রা:) যখন পরলোকগমন করেন তখন এক বড় উট বোঝাই বই রেখে গিয়েছিলেন। গবেষকদের চিন্তা কোরতে হবে তখন বই সংগ্রহ করা এ যুগের মতো সহজ ছিলো না, কারণ সবই ছিল হাতের লিখা। (মাওঃ নূর মুহাম্মদ আজমীর ‘হাদিসের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ পুস্তকের ৮১ পৃষ্ঠা, ১৯৬৬)। আরবের বিখ্যাত বক্তাদের সারা জীবনের সমস্ত বক্তৃতাগুলো লিখে নেয়ার মতো লেখক ও প্রেমিকের অভাব ছিলো না। লিখতে লিখতে কাগজ ফুরিয়ে গেলে জুতার চামড়াতে লেখা হোত। তাতেও সঙ্কুলান না হোলে তালুতে লিখতেও ভ্রুক্ষেপ ছিলো না (দ্র: ঐ গ্রন্থ পৃষ্ঠা ৮৫)। সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বক্তার মুখ এবং মস্তিষ্ক নিঃসৃত বাণী লিখে সংগ্রহ কোরেছিলেন আবু আমর ইবনুল আ’লা যা একটি ঘরের ছাদ পর্যন্ত ঠেকে গিয়েছিল। (প্রমাণঃ Encyclopaedia of Islam vol-1, p-127) । খলিফা মামুনের বিরাট গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন মুহাম্মদ এবনে মুসা আল খারেজমি। ইনিই পৃথিবীতে বীজগণিতের জন্মদাতা। তৎকালীন যুগে গ্রন্থাগারিক পদটি পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য ছিলো। তাঁকে অনেক পাণ্ডিত্য এবং স্মরণশক্তির অধিকারী, চরিত্রবান, মিষ্টভাষী ও পরিশ্রমী হোতে হোত। সে সময় পৃথিবীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ। গণিতের শূন্যের (০) জন্মদাতাও তিনি। ‘হিসাব আল জাবাব ওয়াল মুকাবেলা’ গ্রন্থ তাঁর বিরাট অবদান। তিনি বিখ্যাত জ্যোতির্বিদও ছিলেন। (সমরেন্দ্র সেনের লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬, ১৩৬৪)।
আল মুকাদ্দাসি একজন ঐতিহাসিক এবং পর্যটক। তিনি বলেন- আদাদ্ উল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরি কোরেছিলেন, যে অট্টালিকাটির তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিলো না। যা দেখলে নিরক্ষর শিক্ষিত যে কোনো জন মুগ্ধ না হোয়ে পারতো না। ভবনটির ভেতরে অগভীর জলের নহর দিয়ে সাজানো ছিলো, উপরে ছিলো গম্বুজ আর অট্টালিকাটি উদ্যান দিয়ে ঘেরা ছিলো, তৎসংলগ্ন একটি হ্রদ ছিলো। পাঠকদের সুবিধার জন্য একটি কাঠের মাচান বা কাঠের তাক একেবারে নীচে থেকে উপর পর্যন্ত সাজান ছিলো। মেঝেতে কার্পেট সাদৃশ্য বিছানা বিছানো থাকতো। আলোর ব্যবস্থাও ছিলো। সমস্ত পুস্তকের ক্যাটালগ ছিলো। সেটা ছাড়াও সেখানে আরও গ্রন্থাগার ছিলো। (Pinto Ogla প্রণীত The Libraries of the Arabs During the Time of the Abbasids, Islamic Culture, April 1929.) । গ্রন্থ বা পুস্তক সংগ্রহ মোসলেমদের জাতীয় স্বভাবে পরিণত হোয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকতো, কোনো বিদেশী এলেই তাঁর কাছে যে বইপত্রগুলো আছে সেগুলো নিয়ে অজানা তথ্যের বইগুলো সাথে সাথে অনুবাদ কোরে তার কপি তৈরি কোরে তাঁর বই ফেরত দেয়া হতো আর তাঁদের অনিচ্ছা না থাকলে তা কিনে নেয়া হোত।[ দ্র: Guide to the Use of Books and Libraries (Megrow Hill, 1962), c„ôv 12]  ।
এগুলি মোসলেমদের জ্ঞানচর্চার কিছু নমুনা মাত্র। কালের পরিক্রমায় এবং আগ্রাসনকারীদের হস্তক্ষেপে ইতিহাসের যে বিকৃতি হোয়েছে তার কোনো সীমারেখা নেই। কিন্তু তবুও এই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার তথ্যগুলোকে বিলুপ্ত করা যায় নি। আজও এই ইতিহাসগুলো মোসলেমদের প্রকৃত অতীতের নিদর্শন হোয়ে মাথা উঁচু কোরে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে মোসলেমরা ছিলো শিক্ষকের জাতি। আজ যেমন নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে হীনমন্যতায় ডুবে থাকা এই মোসলেম নামধারী জাতির ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের আশায় পাশ্চাত্যে পাড়ি জমায়, তেমনি তৎকালীন সময়ে শুধু ইউরোপ-আমেরিকা নয় বরং সমস্ত পৃথিবীর ছেলেমেয়েরা মোসলেমদের কাছে যেত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। তখন শিক্ষা কোন পণ্য ছিলো না। অধ্যাপকগণ কোন পার্থিব স্বার্থের বশবর্তী না হয়ে মানবতার সেবা করার অভিপ্রায়ে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে মানবজাতির কাছে উপস্থাপন করতেন, তারা বিশ্বাস কোরতেন, তাদের লব্ধ জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর আমানতস্বরূপ। ছাত্ররাও তাদেরকে দেবতুল্য জ্ঞান কোরতেন। শিক্ষকের মর্যাদা ছিলো সকলের ঊর্ধ্বে। তাঁরা সুবিশাল শ্রেণিকক্ষের সম্মুখভাগে মিম্বরের মতো উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতেন এবং ছাত্রদের প্রশ্ন কোরে উত্তর শুনতেন। দেশ-বিদেশের ছাত্রসংখ্যা এত বেশি থাকতো যে উচ্চকণ্ঠের ঘোষক চিৎকার কোরে অধ্যাপকদের কথা জানিয়ে দিতেন।
মূর্খতার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন:
আজ সারা পৃথিবীতেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তথা জ্ঞান একটি পণ্যবিশেষ, আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হোচ্ছে ব্যবসাকেন্দ্র। আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে যারা উচ্চমূল্যে সার্টিফিকেট বিক্রি কোরে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থে পরিণত করা হোয়েছে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্র সেসব দেশে যায় উচ্চশিক্ষা নিতে। এই দেশগুলি ঔপনিবেশিক যুগে যেমন বহুভাবে পৃথিবীকে শোষণ কোরেছে, আজও তেমনি কোরে যাচ্ছে, সঙ্গে যোগ হোয়েছে কিছু অভিনব পদ্ধতি। ইংল্যান্ড আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া কানাডা ইত্যাদি দেশগুলির জাতীয় আয়ের একটি বিরাট অংশ আসে গরীব দেশগুলির ছাত্রদের পকেট থেকে, পাসপোর্ট, ভিসা, টিউশন ফী ইত্যাদি প্রক্রিয়ার ফাঁদে ফেলে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। সেখানে পড়তে গিয়ে পার্ট টাইমে ছাত্ররা হোটেলে পেঁয়াজ কাটে, থালা বাসন ধোয়, ড্রেন পরিষ্কার করে, ট্যাক্সি চালায় আর নিজেদের জীবন ধন্য মনে করে। তারা পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে ডিগ্রি আর নিজ জাতি সম্বন্ধে সীমাহীন হীনম্মন্যতা নিয়ে দেশে ফেরেন, আর সর্বদিকে পশ্চিমা দেশগুলির উৎকর্ষের দিকে চেয়ে ভক্তিতে গদগদচিত্ত হোয়ে থাকেন। নিজ জাতির অতীত ইতিহাস ও আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়ার কী করুণ পরিণাম!
পাঁচটি বিশ্বধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দেশ ও জনসংখ্যার বিচারে ক্ষুদ্রতম হোচ্ছে ইহুদি জাতি। তাদের সঙ্গে মোসলেম জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধোরছি যা দ্বারা মোসলেম জাতির সার্বিক দেউলিয়াত্ম প্রতীয়মান হয়। ২০১৩ সন পর্যন্ত ৮৫৫ জন লোক সারা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে ১৯৩ জন ইহুদি, যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২.৬ ভাগ। অথচ ইহুদির সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.২ ভাগেরও কম। অর্থাৎ বর্তমান জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি ৫০০ জন ইহুদির একজন নোবেল বিজয়ী।
আর মোসলেমদের মধ্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০ জন, যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর মাত্র ১.০ ভাগ। অথচ সারা বিশ্বে মোট মোসলেমের সংখ্যা ১৪০ কোটি। যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। মোসলেমদের মধ্যে ৬ জন শান্তিতে, ২ জন সাহিত্যে, ১জন পদার্থ বিদ্যায়, ১জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ (১৫৩-তম) বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮০,৫১,২০০ (৯৬-তম) কিন্তু ইসরাইলকে ঘিরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের মোট স্থলভাগ ২২৩,৬০৮,২০৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্ব বিবেচনায় ১.৪ কোটি ইহুদির কাছে ১৪০ কোটি মুসলিম হাতের পুতুলের মতো অসহায়। হিসাব করে দেখুন: ১ জন ইহুদি সমান কতজন মোসলেম। (তথ্য: ড. মোহাম্মদ আমীন)।
আল্লাহ ও তাঁর রসুল জ্ঞানার্জনের উপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন তা উপলব্ধি কোরেই তৎকালীন মোসলেম জাতিটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যা বর্তমানের প্রবল প্রতাপ ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জাল গোপন করতে সদা সচেষ্ট। শাসক শ্রেণির এই ইতিহাস ভোলানোর ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে মোসলেম জাতির সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকাংশই হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। যে মোসলেম জাতির গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ওপর ভিত্তি কোরে আধুনিক বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে সেই মোসলেম জাতিকেই আজ বর্বর, অশিক্ষিত, অজ্ঞ, কুসংস্কারচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ জাতি বোলে প্রচার করা হোচ্ছে। শত শত চক্রান্ত, ইতিহাসের বিকৃতি বা বিলুপ্তি সাধন করার পরও আজকে মোসলেম জাতির যেটুকু প্রকৃত ইতিহাস মৃতপ্রায় হোয়ে বেঁচে আছে সেটুকুই মোসলেমদের সোনালী অতীতের প্রতিনিধিত্ব করে।

কে মো’মেন কে কাফের?

কে মো’মেন কে কাফের?

রাকীব আল হাসান:
মো’মেন ও কাফের, অতি পরিচিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি আরবি শব্দ। শব্দ দু’টির মাদ্দা, মাজদার, সিগা, বাব ইত্যাদি জটিল বৈয়াকরণীক প্যাঁচের মধ্যে না গিয়ে সরলভাবে বিশ্লেষণ করাই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য। প্রথমে জানা যাক শব্দ দু’টির শাব্দিক অর্থ। মো’মেন শব্দের আভিধানিক অর্থ- বিশ্বাসী। মো’মেন শব্দটি ঈমান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ বিশ্বাস। কাফের শব্দের আভিধানিক অর্থ- অবিশ্বাসী। যারা কোর’আনের বাংলা অনুবাদ পড়েন তারা নিশ্চয় লক্ষ কোরে থাকবেন যে মো’মেন ও কাফেরের বাংলা অনুবাদ এ দু’টি শব্দেই করা হোয়েছে। যদিও আরও বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। যতটুকু বোঝা গেল শব্দ দু’টি বিপরীত অর্থবোধক। অর্থাৎ একই সাথে কেউ মো’মেন ও কাফের থাকতে পারে না এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই হয় মো’মেন নতুবা কাফের হবেই।
এবার জানা যাক শব্দ দু’টির পারিভাষিক অর্থ। পারিভাষিক অর্থে মো’মেন হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে এসলামের নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস রাখে। আর কাফের হোল ঐ বিষয় গুলিতে যে বিশ্বাস রাখে না।
স্বাভাবিকভাবে আমরা যেটা জানি, কাফের হবার বিশেষ কোনো প্রক্রিয়া নাই। মো’মেন না হওয়া মানেই কাফের হওয়া, সুতরাং মো’মেন হবার একটি প্রক্রিয়া থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি হোল তওহীদে বা কলেমাতে (লা এলাহা এল্লাল্লাহ্- মুহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ) মনে প্রাণে বিশ্বাস করে মুখে তার স্বীকৃতি দেওয়া এবং সেটা কাজে প্রতীয়মান করা। কেউ এই কলেমায় কৃত অঙ্গীকার থেকে সরে গেলে সে আর মো’মেন থাকলো না, মো’মেন থাকলো না মানেই কাফের হোয়ে গেল। সুতরাং এই কলেমাটিকে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কলেমাতে দু’টি বিষয়ে আমাদের সাক্ষ্য দিতে হয়। ১. আল্লাহর উলুহিয়াত (লা এলাহা এল্লাল্লাহ্) এবং ২. মোহাম্মদ (দ:) বিন আব্দুল্লাহ’র রেসালাত (মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ)। আল্লাহর উলুহিয়াত হোচ্ছে জীবনের প্রতিটা অঙ্গনে (ব্যক্তিগত, জাতীয়, আন্তর্জাতিক সকল পর্যায়ে) আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে মানা। অর্থাৎ যেখানেই আল্লাহর কোনো বক্তব্য থাকবে সেখানে আর কারো বক্তব্যের প্রাধান্য না দিয়ে আল্লাহর বক্তব্যের বাস্তবায়ন করতে পারলেই কেবল আল্লাহকে এলাহ্ হিসাবে মানা হোল। আর মোহাম্মদ (দ:) কে আল্লাহর রসুল হিসাবে বিশ্বাস করা হোল তাঁর রেসালাতে বিশ্বাস। মোহাম্মদ (দ:) কে রসুল হিসাবে বিশ্বাস কোরলে ও মেনে নিলে স্বাভাবিক ভাবেই আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দ:) নির্দেশিত পথে চলাও অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে।
এবার মো’মেন ও কাফেরের সংজ্ঞা জেনে নেওয়া যাক। কে মো’মেন এবং কে কাফের তাঁর সংজ্ঞা দেওয়ার এখতিয়ার আল্লাহ ছাড়া আর কারও থাকতে পারে না এবং নেই। আমি এখানে শুধু আল্লাহ পাকের দেওয়া সংজ্ঞা উদ্ধৃত কোরছি। আল্লাহ পাক সুরা হুজরাতের ১৫ নং আয়াতে এরশাদ কোরেছেন, “নিশ্চয় মো’মেন শুধুমাত্র তারা যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে, পরে কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে (সত্যদীন এসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” আল্লাহ এখানে মো’মেনের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা পরিপূর্ণ সংজ্ঞা, এর বাইরে আর কোন সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মো’মেন শব্দটির আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ এবং মো’মেন হবার যে প্রক্রিয়া ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি তার সঠিকতা বিচার কোরব আল্লাহ পাকের দেওয়া সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে।
আল্লাহ পাক প্রথমেই বোলেছেন “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে”। আল্লাহ পাক এখানে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনয়ন বোলতে কলেমার স্বীকৃতি প্রদানের কথা বুঝিয়েছেন অর্থাৎ আল্লাহর উলুহিয়াত ও রসুলের রেসালাতে ঈমান আনার কথা বুঝিয়েছেন। মো’মেন হবার জন্য, এসলামের গণ্ডিতে অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ট। সুতরাং মো’মেন হবার জন্য শর্ত হোচ্ছে আল্লাহকে হুকুমদাতা এবং মোহাম্মদ (দ:) কে রসুল হিসাবে মেনে নেওয়া। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে কোথাও মানা হোচ্ছে না, শুধুমাত্র উপাস্য হিসাবে তাঁর উপাসনা করা হোচ্ছে। আর মো’মেন থাকার জন্য শর্ত হোচ্ছে বিশ্বাস আনয়নের পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করা যাবে না এবং ঐ কলেমা (আল্লাহর উলুহিয়াত ও রসুলের রেসালাত) প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম কোরতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সংগ্রাম কতদিন কোরতে হবে বা কবে থেকে আর সংগ্রামের প্রয়োজন হবে না? এ বিষয়ে আল্লাহ বোলেছেন, “আমি আমার রসুলকে সঠিক পথ প্রদর্শন (হেদায়াহ্) এবং সত্যদিন দিয়ে প্রেরণ কোরলাম এই জন্য যে তিনি যেন একে (এই হেদায়াহ ও সত্যদিনকে) পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জীবন ব্যবস্থার উপর বিজয়ী বা প্রতিষ্ঠিত করেন”- (সুরা আল ফাতাহ্- ২৮, সুরা তওবা- ৩৩ এবং সুরা আস সাফ- ৯)। এটাই যে রসুলের আগমনের উদ্দেশ্য তার সত্যায়ন পাওয়া যায় রসুলের ঘোষণাতেই। তিনি বোলেছেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি মানব জাতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে যে পর্যন্ত না সমস্ত মানুষ আল্লাহকে একমাত্র এলাহ (হুকুম দাতা) এবং আমাকে তাঁর রসুল বোলে মেনে নেয় (হাদিস- আবদাল্লাহ বিন ওমর (রা:) থেকে- বোখারী, মেশকাত)। রসুল (দ:) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে এতটাই সচেতন ছিলেন যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এবং চোলে যাবার সময় এই দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তাঁর হাতে গড়া উম্মাহ’র উপর। তাঁর উম্মাহও দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের মহান নেতার ওফাতের পরপরই সমস্ত কিছু ত্যাগ কোরে সংগ্রামে নেমেছিলেন ফলে মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবী তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়েছিল। এরপর দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা জেহাদ ছেড়ে দিল, যদিও তখনও অর্ধ পৃথিবী এসলামের ছায়াতলে আসা বাকি, অর্থাৎ রসুল (দ:) এর উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ হয় নি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে আল্লাহর দেয়া মো’মেনের সংজ্ঞা থেকে তারা কি বের হোয়ে গেলো না?
বর্তমানে পৃথিবীর এক ইঞ্চি জায়গাতেও আল্লাহকে এলাহ হিসাবে মানা হোচ্ছে না। অর্থাৎ আল্লাহর উলুহিয়াত (সার্বভৌমত্ব) ও মোহাম্মদ (দ:) এর আনীত কেতাব তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত নেই, এক কথায় এসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই। তাহোলে জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা এখনও মো’মেন থাকার প্রধান একটি শর্ত। এ শর্ত পূরণ না করে আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন থাকার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং বর্তমানে মো’মেন হওয়ার দাবিদার ১৬০ কোটির এই বিরাট জনসংখ্যা মোমেন নয়। আর মো’মেন না হওয়ার অর্থই কাফের হওয়া।
আল্লাহ মো’মেনদের সম্পর্কে বোলেছেন, “তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছিলাম (সুরা নূর- ৫৫)।” আবার আল্লাহ বোলেছেন, “যারা ঈমান এনেছে অর্থাৎ মো’মেন হয়েছে তাদের অভিভাবক নিশ্চয় আল্লাহ আর অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) কোনো অভিভাবক নেই।” (সুরা মুহাম্মাদ- ১১)। এখন যারা নিজেদেরকে মো’মেন বলে দাবি করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনাদের হাতে কি এই পৃথিবীর কর্তৃত্ব আছে? রূঢ় বাস্তবতা হোচ্ছে এই যে, পৃথিবীর কর্তৃত্ব তো দূরের কথা আপনারা পৃথিবীর সর্বত্র অন্য সব জাতি দ্বারা পরাজিত, অপমানিত, অবহেলিত, নিগৃহিত এবং প্রতিটি জাতির লাথি খাচ্ছেন, সব জাতি আপনাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখছে, আপনাদের রাষ্ট্রগুলি আক্রমণ কোরে দখল কোরে নিচ্ছে (যদিও প্রকৃত এসলামে ভৌগোলিক জাতিরাষ্ট্রের কোন ধারণা নেই, সুতরাং তা শেরক)। ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র পুরো মোসলেম নামক এই জাতি, আরব অনারব নির্বিশেষে সকলে ভয়ে তাদের পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মো’মেন এর প্রতি আল্লাহর উল্লেখিত অঙ্গীকার থেকে বাস্তবতার দূরত্ব লক্ষ যোজন। সুতরাং যদি আল্লাহ সত্যি অঙ্গীকার রক্ষাকারী হোয়ে থাকেন, তাহোলে আপনারা মো’মেন হোতে পারেন না, এবং মো’মেন না হওয়ার মানেই কাফের হওয়া। আল্লাহ যদি আপনাদের অভিভাবকই হবেন তবে আপনাদের এই করুণ দুর্দশা কেন? আল্লাহ যাদের অভিভাবক নয় তারা কি মো’মেন? নিশ্চয় না।
এবার একটু সত্যিকারের মো’মেনদের সাথে অর্থাৎ রসুলাল্লাহর আসহাবদের সঙ্গে আজকের মো’মেন দাবিদারদের চরিত্র মিলিয়ে দেখি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সর্বোৎকৃষ্ট মো’মেন ছিলেন রসুলাল্লাহ’র আসহাবগণ। তাদের জীবন যাত্রার সাথে আমাদের জীবন যাত্রা একটু মিলিয়ে দেখি। আম্মা খাদীজা (রা:), আবু বকর (রা:), ওমর (রা:), ওসমান (রা:), আলী (রা:), বেলাল (রা:), আম্মার (রা:), আবু ওবায়দা (রা:), খালেদ বিন ওলিদ (রা:) প্রমুখ রসুলাল্লাহর সাহাবীরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতার (দ:) কাছ থেকে এসলাম শিখে তাঁরা সেটিকে অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে সমস্ত দুনিয়াময় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবজাতির সামষ্টিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বাড়ি-ঘর, স্ত্রী, পুত্র, সহায় সম্পত্তি সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে অবশেষে নিজের প্রাণটুকু বিসর্জন দেওয়ার জন্য দুনিয়ার বুকে বহির্গত হোয়ে গিয়েছেন। এই অধিকাংশ সাহাবীর কবর হোয়েছে বিদেশের মাটিতে। তারা এসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ কোরতে গিয়ে পার্থিব বিনিময় নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না বরং তারা অবর্ণনীয় নির্যাতন ও দুঃখ কষ্টের শিকার হোয়েছেন। তারা জান দিয়ে জাতির ঐক্য রক্ষা কোরেছেন, আল্লাহর রসুলের হুকুমের বিপরীতে কোন শক্তির কাছে মাথা নত করেন নি। তাদের এই অতুলনীয় কোরবানির বিনিময়ে আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবীতে আল্লাহ রসুলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। কোন শক্তি দুনিয়াতে ছিল না যে এই জাতির দিকে চোখ তুলে তাকায়। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হোয়েছিলেন। আল্লাহর রসুলের এসলাম যে জাতি গঠন কোরেছিল সে জাতির চরিত্রের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র, তার প্রমাণ জাতির নেতা আল্লাহর রসুল (দ:) সহ সমস্ত জাতির মধ্যে এমন একটা লোকও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যেত না যার শরীরে অস্ত্রের আঘাত নেই। সেই মো’মেনদের অভিভাবক ছিলেন আল্লাহ্, আল্লাহ্ তাদের কাছে ওয়াদা রক্ষা কোরেছিলেন অর্থাৎ কর্তৃত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ কোরেছিলেন আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্র“তির ব্যতিক্রম করেন না।
আমার কথাগুলো হয়তো অনেকের কাছে রূঢ় মনে হোতে পারে, কিন্তু আমি নিরূপায়, আমি যা বোলছি তা সত্যের খাতিরেই আমাকে বোলতে হোচ্ছে, নয়তো আল্লাহর কাছে আমি দায়ী থাকবো। আমি শুধু বলতে চাই আল্লাহর রসুল যে জাতি রেখে গেছেন, সে জাতির সঙ্গে বর্তমানের এই জাতিকে একটু মিলিয়ে দেখুন, তাহোলেই আমাদের আজকের এই হীনতা, এই লাঞ্ছনা, অনৈক্য পরিশেষে ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতার নিকৃষ্ট দাসত্বের কারণ দেখতে পাবেন।
বর্তমানের এসলাম যে জাতি গঠন করে তার চরিত্রের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হোচ্ছে কাপুরুষতা, ছোট বড় সমস্ত রকম সংঘর্ষ, বিপদ আপদ থেকে পলায়নপর মনোবৃত্তি। যে যতো বড় মো’মেন হবার দাবিদার সে তত বেশি কাপুরুষ; অস্ত্রের আঘাত তো দুরের কথা, এদের গায়ে সুঁচের খোঁচারও দাগ নেই। তসবীহ হাতে মসজিদে, খানকায় বোসে থাকে এবং কোন রকম বিপদের আভাষ পেলেই হাওয়ার বেগে ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে যায়। সম্প্রতি আমাদের দেশে একটি ঘটনা ঘোটেছে। আল্লাহ ও রসুলের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল কোরতে গিয়ে পুলিসের ধাওয়া খেয়ে হাজার হাজার মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক এমাম সাহেবরা এমনভাবে পালিয়েছেন যে পালাতে গিয়ে দিশেহারা হোয়ে কয়েকজন ঝাঁপ দিয়েছেন পদ্মানদীতে। এর তিনদিন পরে এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয় (২৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৩- দৈনিক ইত্তেফাক)। আজকে মো’মেন হবার দাবিদার এই জাতি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারা অন্য জাতি গুলির কাছে ফুটবলের মতো লাথি খাচ্ছে; লাঞ্ছনা, অপমান এদের গা সওয়া হোয়ে গেছে। আমরা এটুকু নির্দ্বিধায় বোলতে পারি যে, রসুলাল্লাহর হাতে গড়া সেই জাতি আর আজকের মো’মেনের দাবিদার এই জাতি এক তো নয়ই বরং সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং আজকের এই জাতিকে যদি আপনি মো’মেন বলেন আবশ্যই আপনাকে স্বীকার কোরতে হবে যে, রসুলাল্লাহর হাতে গড়া জাতিটি মো’মেন ছিলো না (নাউযুবিল্লাহ)।
আমি প্রথমেই বলে এসেছি যে মো’মেন ও কাফের বিপরীত শব্দ, যেমন সাদা-কালো, দিন-রাত, জান্নাতি-জাহান্নামী, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি। আপনি জান্নাতি না মানেই আপনি জাহান্নামী, আপনি সত্যবাদী না মানেই মিথ্যাবাদী; ঠিক একইভাবে আপনি মো’মেন না মানেই আপনি কাফের। কাফেরের আল্লাহ প্রদত্ত সংজ্ঞা হোচ্ছে- “যারা আল্লাহর নাজেল করা বিধান (কোর’আন) অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা ও শাসনকার্য পরিচালনা (হুকুম) করে না তারা কাফের।”- (সুরা মায়েদা-৪৪)
পৃথিবীর কোথায় কোর’আন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালিত হোচ্ছে কেউ বোলতে পারেন? পৃথিবীর এক ইঞ্চি জায়গাতেও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ আল্লাহর নিরঙ্কুশ আধিপত্য ও তাঁর নাযেলকৃত বিধান প্রতিষ্ঠিত নেই। তাহোলে আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী (মো’মেন, মোসলেমের দাবিদার) এ জাতি কি কাফের নয়?
কি সাংঘাতিক প্রশ্নের সামনে আপনাদের দাঁড় করালাম! এই উত্তরের মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার পরিচয় আপনি মোমেন না কাফের, আপনি জান্নাতি না জাহান্নামী, আপনার নামাজ, রোজা ইত্যাদি কবুল হয় নাকি ব্যর্থ হয়, সবগুলি প্রশ্নের জবাব।

দাজ্জালকে না চেনার কারণ

দাজ্জালকে না চেনার কারণ

এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে সম্পাদিত:
চৌদ্দশ’ বছর থেকে মোসলেম উম্মাহর ঘরে ঘরে দাজ্জাল সম্বন্ধে আলোচনা চোলে আসছে। আল্লাহর শেষ রসুল মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যেসব কথা বোলে গেছেন, পৃথিবীতে কি কি ঘটনা ঘোটবে সেগুলোর সম্বন্ধে আভাষ ও সরাসরি যা জানিয়ে দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে দাজ্জাল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বিগ্নকর। উদ্বিগ্নকর ও ভীতিপ্রদ এই জন্য যে দাজ্জালের শক্তি, প্রভাব ও প্রতিপত্তি সমগ্র মানবজাতির উপর প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার কোরে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে, সমস্ত মানবজাতিকে বিপথে চালাবার চেষ্টা কোরবে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু সময়ের জন্য দাজ্জাল তার শক্তি ও প্রভাব বিস্তার কোরে গোটা মানবজাতিকেই বিপথে পরিচালিত কোরবে। কাজেই দাজ্জালকে কোনোভাবেই ছোট কোরে দেখার বা অবজ্ঞা করার উপায় নেই।
আলাহর রসুলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে একত্রে নিলে যা দাঁড়ায় তাহোল, দাজ্জাল মানবজাতিকে বোলবে তাকে রব বোলে মেনে নিতে। তার কাছে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো দুইটি জিনিস থাকবে। যারা তাকে রব বোলে মেনে নেবে তাদেরকে সে তার তৈরি জান্নাতে স্থান দেবে আর যারা তাকে রব বোলে মানবে না তাদেরকে সে তার তৈরি জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরবে। তার কাছে রেজেকের বিশাল ভাণ্ডার থাকবে। যারা তাকে রব বোলে মানবে তাকে সে সেখান থেকে দান কোরবে আর যারা তাকে মানবে না তাদেরকে সে তার রেজেকের ভাণ্ডার থেকে দান কোরবে না। দাজ্জালের আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে, মাটির গভীর থেকে সম্পদ উপরে উঠে আসবে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কি হোচ্ছে দাজ্জাল তা দেখতে ও শুনতে পারবে। সমস্ত পৃথিবীর এক ইঞ্চি মাটি বা পানি থাকবে না যা দাজ্জালের প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকবে। দাজ্জালের ফেতনা যে কতখানি ভয়ানক হবে তা বোঝা যায় তখনই যখন রসুলাল্লাহ নিজেই এই দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হোচ্ছে এই এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপারে আমরা কতটুকু সচেতন? বাস্তব অবস্থা হোল এই যে আমরা মোটেও সচেতন নই। আর সচেতন নই বোলেই আমরা বুঝছিনা যে আজ থেকে ৪৭৫ বছর আগেই মানবজাতির মহাবিপদের ঘণ্টা বাজিয়ে মানবতার মহাশত্র“, এবলিসের চূড়ান্ত রূপ দাজ্জালের জন্ম হোয়েছে। বর্তমানে সে তার শৈশব, কৈশোর পার কোরে যৌবনে উপনীত হোয়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত কোরে চোলেছে। আমরা এও বুঝছিনা যে সমস্ত পৃথিবীসহ আমরা মোসলেমরাও দাজ্জালকে রব, প্রভু বোলে স্বীকার কোরে নিয়েছি ও তার পায়ে সাজদায় পোড়ে আছি। হেযবুত তওহীদের এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কোর’আন-হাদিস-বাইবেল এবং বিজ্ঞানের আলোকে ষ্পষ্টভাবে প্রমাণ কোরেছেন যে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতাই হোচ্ছে রসুলাল্লাহ বর্ণিত সেই ভয়ংকর দানব দাজ্জাল। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে দাজ্জালকে আমরা কেউ চিনছিনা কেনো? আমরা তো নিজেদেরকে মো’মেন, মোসলেম, উম্মতে মোহাম্মদী দাবি কোরি, আমাদের মাঝে লক্ষ লক্ষ কোর’আনের হাফেজ, আলেম, মোহাদ্দেস, মোফাসসের রোয়েছেন যারা সারা জীবন ধরে কষ্ট কোরে এসলামের অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে গবেষণা কোরে পাণ্ডিত্য জাহের কোরছেন। আমাদের মাঝে লক্ষ লক্ষ পীর মুরীদ রোয়েছেন, যারা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই তাদের আত্মা পরিষ্কার কোরতে সদা ব্যস্ত থাকেন। তাছাড়াও রোয়েছেন হাজার হাজার আলেম, মাওলানা, মাশায়েখ, মোহাদ্দীস ইত্যাদি ধর্মের ধারক-বাহকরা। তাহোলে এত বড় একটা বিষয়ে তারা নীরব কেনো? তারা কেনো দাজ্জালকে দাজ্জাল বোলে চিনতে পারছেন না? সত্যান্বেষী মনে এই প্রশ্ন আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে দিতে হবে না, স্বয়ং রসুলাল্লাহই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন, “দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবে। শুধু মো’মেন, বিশ্বাসীরাই তা দেখতে এবং পড়তে পারবে; যারা মো’মেন নয় তারা পড়তে পারবে না” [ আবু হোরায়রা (রা:), আবু হোযায়ফা(রা:) এবং আনাস (রা:) থেকে বোখারী ও মোসলেম]
এই হাদিসটি শুধু অর্থবহ এবং আকর্ষণীয়ই নয়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। মো’মেন হোলে লেখাপড়া না জানলেও, নিরক্ষর হোলেও তারা পড়তে পারবেন আর মো’মেন না হোলে শিক্ষিত হোলেও, পণ্ডিত হোলেও দাজ্জালের কপালে কাফের লেখা দেখতে ও পড়তে পারবেন না, এই কথা থেকেই বোঝা যায় যে দাজ্জালের কপালের এই লেখা কাফ, ফে, রে এই অক্ষরগুলো দিয়ে লেখা নয়। মো’মেনরা নিরক্ষর হোলেও ঐ লেখাগুলো দেখতে ও পোড়তে পারবেন। মো’মেন কারা? আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন- শুধু তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে, তারপর আর তাতে কোনো সন্দেহ করে না, এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে; তারাই হোল খাঁটি (সুরা হুজরাত ১৫)।”
এখানে মনে রাখতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করা অর্থ হোল ব্যক্তিগত এবং জাতীয় জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করা এবং জীবনের কোনো অঙ্গনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে না মানা। আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে মেনে নেওয়ার ফলে মোসলেম দাবিদার এই জাতি কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে গেছে, তাদের রব এখন আল্লাহর পরিবর্তে দাজ্জাল। কাজেই বৃহত্তর জীবনে দাজ্জালের কপালের কাফের লেখা অর্থাৎ দাজ্জাল যে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকারী কাফের এরা তা দেখতেও পাননা সুতরাং পড়তেও পারেন না। তাই আমরা দেখি মোসলেম বোলে পরিচিত এই জাতিটির প্রায় সমস্ত মানুষ দাজ্জালকে রব বোলে স্বীকার কোরে নিয়েছে কিন্তু ওদিকে মহা পরহেযগার, মুত্তাকি। এমন কি এই জাতির মধ্যে কয়েকটি দেশ আছে যাদের শীর্ষস্থানীয় নেত্রীদের কপালে সাজদার কালো দাগ আছে কিন্তু তারা দাজ্জালের আশ্রয়ে থেকে, দাজ্জালের কাছে থেকে অস্ত্রসহ সবরকম সাহায্য নিয়ে তাদের দেশের মধ্যে যারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তওহীদ প্রতিষ্ঠা কোরতে চান তাদের বন্দি কোরছেন, নির্যাতন কোরছেন, গুলী কোরে ফাঁসি দিয়ে হত্যা কোরছেন। এর কারণ এসব নেতাসহ মোসলেম বিশ্ব দাজ্জালের শেখানো এই কথা বিশ্বাস কোরে নিয়েছেন যে ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়, সমষ্টিগত নয়, তাই তারা দাজ্জালের কপালে কাফের লেখা দেখতে ও পড়তে পারেন না।

Friday, August 7, 2015

দামি জোব্বার অন্তরালে আরবদের কুৎসিত চেহারা

দামি জোব্বার অন্তরালে আরবদের কুৎসিত চেহারা

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
এসলামী সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের দিক দিয়ে আরব বিশ্ব খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এসলামের শেষ যে সংস্করণ আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার যাত্রা শুরু আরবেই। একটা সময় ছিলো যখন আরবরা ছিল সমস্ত বিশ্বের জন্য মডেল। অর্ধপৃথিবীর নেতৃত্বের ভার ছিল তাদের। এসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছিল আরবরা। তাদেরই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফলে তৎকালীন অর্ধপৃথিবী শান্তিপুরীতে রূপান্তরিত হোয়ে গিয়েছিল। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, সামরিক শক্তিতে তারা ছিল একক পরাশক্তি। তাদের মোকাবেলা করাতো পরের কথা তাদের নাম শুনলেই শত্র“র অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠত। হয়তবা ভাবছেন হঠাৎ আরবদের এত প্রশংসা কেন? না, আমি আরবদের প্রশংসা কোরছিনা। আমি প্রশংসা কোরছি প্রকৃত এসলামের অনুসারীদের যারা নিজেরা আরব হবার কারণে কোন গর্ববোধ কোরত না আবার অনারবদের ঘৃণাও কোরত না। যাদের কাছে বংশ, গোত্র, ভাষা, ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে কোন বিভেদ ছিলো না। যাদের কাছে ভালো মন্দের একটাই মাপকাঠি ছিলো আর তা হল কে কত ভালো মোসলেম। কে কত বেশি আল্লাহকে ভয় করে। যেই জাতির নেতারা খুব অনাড়ম্বর জীবন যাপন কোরতেন। যারা অর্ধ পৃথিবী শাসন কোরেছেন খেজুর পাতার চাটাইয়ে বোসে। যাদের মাঝে না ছিলো স্বজনপ্রীতি, না ছিলো ক্ষমতাপ্রীতি। যারা পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় কোরতেন। তারা এতো কিছু কোরতেন কারণ তারা নিজেদের মো’মেন, মোসলেম, উম্মতে মোহাম্মদী দাবি কোরতেন। আর আজকের যে আরবরা নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী দাবী করে তারা কি কোরছেন? আসুন আজকের আরবদের সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানি।
ইউরোপের বিভিন্ন জাতি যখন মরক্কো থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত এই বিরাট মোসলেম দুনিয়াটা সামরিক শক্তিবলে অধিকার কোরে নেয় তখন আরবের বেশ কিছু জায়গা তাদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলো। তবে এর মানে এই নয় যে তারা যুদ্ধ কোরে নিজেদের রক্ষা কোরেছিল, কারণ নিজেদের কৃতকার্যের ফলে একদা অপরাজেয় সেই যোদ্ধা জাতিটি তখন পৃথিবীর দুর্বলতম শত্র“র বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষা করার জন্য অসমর্থ। বোধ হয় আল্লাহ তাঁর ঘর এবং তাঁর হাবিবের রওযা মোবারকের সম্মানে তা নিজে রক্ষা কোরেছিলেন। ফলে ঐ আরব এলাকাটি পাশ্চাত্যের সরাসরি দাসত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তাই পূর্ব থেকেই এসলামী শরীয়াহর যে আইন-কানুন, শাসন ও দণ্ডবিধি চালু ছিলো খ্রিস্টান শক্তিগুলি তা বোদলিয়ে নিজেদের, গায়রুল্লাহর আইন ও দণ্ডবিধি প্রতিষ্ঠা কোরতে পারে নি। তাই ঐ আরব দেশগুলোতে এসলামের জাতীয় শরীয়াহ ও দণ্ডবিধি আংশিকভাবে কার্যকর আছে কিন্তু ঐ পর্যন্তই। দীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি এ সমস্ত ব্যবস্থা অন্যান্য ভাগের মতোই পরিত্যক্ত হোয়েছে এবং প্রাক এসলামীক যুগের মতো রাজতন্ত্র, বংশতন্ত্র, গোষ্ঠিতন্ত্র ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠা করা হোয়েছে। যেহেতু তারা গোষ্ঠিতন্ত্র, বংশতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরেছে সুতরাং স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেখানে অচল হোয়ে পোড়েছে, কারণ ঐসব তন্ত্রে জাতীয় সম্পদের, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মালিক হোল রাজা বাদশাহরা। আর এসলামে সরকারি কোষাগারের মালিক হলো সমস্ত জাতি। খলিফা শুধু রক্ষক, তত্ত্বাবধানকারী ও এই জীবনব্যবস্থার নিয়মানুসারে ব্যবহারকারী। অর্থাৎ , শুধু দন্ডবিধি ছাড়া এই আরবরা অন্যান্য জাতীয় ব্যাপারে গায়রুল্লাহর অনুসারী অর্থাৎ মোশরেক। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই ভাগটি পৃথিবীর যে অংশে বাস কোরতো তা ছিলো অতি গরীব। মাটির নিচ থেকে তেল বের হওয়ার পর থেকে হঠাৎ ধন-দৌলত ও সম্পদে পৃথিবীর অন্যতম ধনী জাতিতে পরিণত হোয়েছে। এখন এদের সম্পদ রাখবার জায়গা নেই। এই সম্পদ তারা কিভাবে ব্যবহার কোরছে? এর একটা অংশ এরা ব্যয় কোরছে পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে দেশের রাস্তাঘাট, পুল, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, বিরাট বিরাট প্রাসাদ, হোটেল, ফ্লাইওয়ে ইত্যাদি তৈরি কোরে। অঢেল টাকা ব্যয় কোরে এগুলো এমনভাবে তৈরি কোরছে যে, ইউরোপের, আমেরিকার মানুষরাও দেখে আশ্চর্য হোচ্ছে, হিংসা কোরছে। অগুনতি রাজকীয় প্রাসাদ, হোটেল, ইমারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শাদ্দাদ আল্লাহর সঙ্গে নাকি পাল্লা দিয়ে জান্নাত বানিয়েছিলো। সে আজ কবর থেকে উঠে এসে এদের শহর, নগর, পথ-ঘাট, হোটেল আর প্রাসাদগুলি দেখলে বোলবে- আমি আর কি বানিয়েছিলাম। সম্পদের অন্যভাগ তারা ব্যয় কোরছে অবিশ্বাস্য বিলাসিতায়, স্থূল জীবন উপভোগে, ইউরোপে, আমেরিকায়, জাপানে। দৈহিক ভোগে এরা কি পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে তা আমাদের মতো গরীব দেশগুলির মোসলেমরা ধারণাও কোরতে পারবে না, লক্ষ লক্ষ ডলার তাদের কাছে কিছু নয়। তাদের ঐ অঢেল সম্পদের একটা মোটা ভাগ চলে যায় ঐ ইউরোপ, আমেরিকায়, জাপান ইত্যাদি দেশের কাছে, বিলাসিতার সামগ্রীর দাম হিসাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাড়িগুলো কেনে এরাই। শুধু তাই নয়, রোলস, মার্সিডিস, আলফা-রোমিও, সিট্রন, ক্যাডিলাক ইত্যাদি গাড়ি শুধু কিনেই তারা খুশী নয়, এই গাড়িগুলির বাম্পার লাইনিং ইত্যাদি তারা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দেয়। এদের বিলাসিতার বীভৎসতার সম্বন্ধে লিখতে গেলে আলাদা বই হোয়ে যাবে। কাজেই একটা ধারণা দেবার জন্য একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ কোরছি। কিছুদিন আগে তেল সমৃদ্ধ একটি দেশের বাদশাহ অবসর যাপনের জন্য কয়েক দিনের জন্য ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় শহর ‘নীসে’ গিয়েছিলেন। এই শহরে তিনি এর আগেই একটি প্রাসাদ তৈরি কোরেছেন। এতে কামরা আছে একশতটি এবং কামরাগুলি ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান আসবাব দিয়ে সজ্জিত। এই প্রাসাদ তৈরি কোরতে খরচ হোয়েছে মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা (আমাদের টাকার হিসাব)। এই বাদশাহর সোনার পাত মোড়ানো রোলস গাড়িগুলির এক একটি দাম এক কোটি বিশ লাখ টাকা। তার নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য যে বিমানগুলি আছে তার এক একটির দাম সাতচল্লিশ কোটি টাকা। এদের মধ্যে তাসাওয়াফের কিছুমাত্র প্রভাবও থাকলে এরা এমন কদর্য বিলাসিতায় নিজেদের ডুবিয়ে দিতে পারতেন না। নিজেদের অতি উৎকৃষ্ট মোসলেম বোলে মনে কোরলেও এবং তা প্রচার কোরলেও আসলে ইউরোপ, আমেরিকার বস্তুতান্ত্রিকদের সাথে তাদের কার্যতঃ কোন তফাৎ নেই। এরা এই উম্মাহর কেন্দ্র কাবা এবং নেতার (দ:) রওযা মোবারকের হেফাযতকারী হোলেও এই উম্মাহর জন্য তাদের মনে কিছুমাত্র সহানুভূতি নেই। তার প্রমাণ হোচ্ছে এই যে, নিজেদের ঘৃণ্য বিলাসিতার সামগ্রী কিনতে তাদের বিপুল সম্পদ চলে যায় ইউরোপ, আমেরিকা আর জাপানে। তারপরও যে বিরাট সম্পদ তাদের থেকে যায় তা বিনিয়োগ করেন সেই ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত আর জাপানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে, শিল্পে। টাকা জমা রাখেন ঐসব দেশের ব্যাংকেই যা থেকে লাভবান হয় ঐসব অমোসলেম দেশ ও জাতিগুলিই। এসলাম ও মোসলেম জাতির প্রতি তাদের কিছুমাত্র ভালোবাসা যদি থাকতো তবে ঐ বিরাট সম্পদ তারা অমোসলেম দেশগুলিতে বিনিয়োগ না কোরে গরীব মোসলেম ভৌগোলিক রাষ্ট্রগুলিতে বিনিয়োগ কোরতেন। এতে অন্ততঃ পার্থিব দিক দিয়ে এই হতভাগা জাতির কিছু অংশ উপকৃত হোতে পারতো। অন্যান্য অতি দরিদ্র মোসলেম দেশগুলির জন্য তারা কিছু কিছু মাঝে মাঝে খয়রাত করেন যখন কোন দেশে বন্যা, ঝড় বা প্লাবনের মতো প্রাকৃতিক কারণে মহাক্ষতি হয়। এইসব দেশগুলির মানুষকে তারা ডাকেন মিসকীন বোলে। যে ঐক্য ছাড়া শক্তি নেই, জাতির সেই ঐক্য সুদৃঢ় রাখার জন্য রসুলাল্লাহ (দ:) তাঁর জীবনের শেষ জনসমাবেশে বিদায় হজ্বে¡ বোলে গেলেন আরবের মানুষের উপর অনারব মানুষের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই যেমন নেই অ-আরব মানুষের উপর আরবের মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, অর্থাৎ সবাই সমান। মানুষে মানুষে প্রভেদের একটিমাত্র সংজ্ঞা দিয়ে গেলেন, কে কত ভাল মোসলেম। ঐ ‘উৎকৃষ্ট মোসলেমদের’ আজ মহানবীর (দ:) ওসব কথা কিছুই মনে নেই। থাকলেও ওসব কথার কোন গুরূত্ব তারা দেয়না। তারা আরব, সবার শ্রেষ্ঠ এই অহংকারে স্ফীত হোয়ে অন্যকে অনুকম্পার পাত্র মনে কোরছে। অবশ্য এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিকে এড়াতে পারছেনা। এসলাম দীনে ফিতরাত, প্রাকৃতিক আইন, নিয়মের ধর্ম, সেই নিয়ম মোতাবেকই বিপুল সম্পদ ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে বলীয়ান ত্রিশ কোটি আরবের পেটের হালুয়া বের হোয়ে যাচ্ছে এক কোটি ক্ষুদ্র ইসরাইলীদের লাথি খেতে খেতে। তবুও তারা অহংকারী, কারণ বাকি অনারব মোসলেমদের মতো তাদেরও অপমানবোধ লোপ পেয়েছে।
এই আরব দেশ ও আমীরাতগুলির বাদশাহ ও আমীরদের এলাহ হলো তাদের যার যার সিংহাসন ও আমীরত্ব। এই সিংহাসন ও আমীরত্বের নিরাপত্তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের ও ইউরোপের কথায় ও আদেশে উঠেন বসেন, অন্য মোসলেম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন। মুখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লোক দেখানো চিৎকার কোরলেও কার্য্যতঃ ইসরাইলের ক্ষতি হবে এমন কোন কাজ করেন না, ঐক্যবদ্ধ হোয়ে ইসরাইলকে ধ্বংস করেন না, কারণ তা করতে গেলে প্রভু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিরক্ত হবে এবং তাতে তাদের সিংহাসন ও আমীরত্ব হারাতে হোতে পারে। যদি এমন কোন পরিস্থি’তি কখনও হয় যে তাদের সিংহাসন বা আমীরত্ব এবং কাবা ধ্বংস করা এ দু’টোর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে, তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তারা কাবা ধ্বংসকেই বেছে নেবেন।
আশা করি এই আরবদের দামি জোব্বার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা পুরোপুরি না হোলেও কিছুটা আপনাদের সামনে প্রকাশ কোরতে সক্ষম হোয়েছি। এগুলো হল আরবদের অতীত কার্যকলাপ। হয়তবা এই কথাগুলো শুনে তাদের প্রতি আপনাদের মনে ঘৃণা জন্মাতে শুরু কোরেছে, কিন্তু এটা তাদের কাছে তেমন কোন বিষয় নয়। যারা আল্লাহর ঘর কাবাকে তত্ত্বাবধান করে, রসূুুুলের রওযা মোবারককে তত্ত্বাবধান করে সেই তারা যদি আল্লাহর পাঠানো সামষ্টিক জীবনব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ইহুদি খ্রিস্টানদের অনুসরণ কোরতে পারে তাহলে এই সামান্য বিলাসিতা ,অহংকার এতো অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাম্প্রতিক মিশর এবং সিরিয়াতে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ কোরছে তার জন্য এককভাবে দায়ী এই সিংহাসনলোভী মোনাফেকরা। তাদের সামান্য স্বার্থের বেদীতে বলী হোচ্ছে হাজার হাজার মিসরীয়, সিরিয়ান মোসলেমরা। এরা নিজের জাতির লোককে মারার জন্য বিজাতিদের হাতে হাত মিলিয়েছি। এই মোসলেম নামধারী বিশ্বাসঘাতক মোনাফেকরা ইহুদি খ্রিস্টানদের চাপ দিচ্ছে তাদের পার্শ্ববতী রাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলা চালাতে। শুধু তাই নয় , এই হামলায় যে পরিমাণ অস্ত্র এবং অর্থ প্রয়োজন তাও দেবে এই মোনাফেকরা। কারণ সোজা, তাদের সিংহাসন পাকাপোক্ত কোরতে হবে। এতে যদি হাজারটা সিরিয়াতে হামলা চালাতে হয়, লক্ষ লক্ষ মোসলেমকে হত্যা কোরতে হয় তা তারা নির্দ্বিধায় কোরতে প্রস্তুত, কিন্তু সিংহাসন থেকে একচুলও নোড়তে রাজি নন। কারণ এর আগেই বোলে এসেছি তাদের এলাহ হোল যার যার সিংহাসন। আমরা ফেরাউনকে দেখিনি, নমরুদকে দেখিনি, আবু জাহেল-আবু লাহাবকেও দেখি নি তবে তাদের উত্তরসূরীদের দেখছি। আল্লাহ এই নব্য ফেরাউনদের কবল থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।

রসুলাল্লাহর কায়িক শ্রম

রসুলাল্লাহর কায়িক শ্রম

রিয়াদুল হাসান:
রসুলাল্লাহ তাঁর ব্যক্তিগত কাজে একান্ত প্রয়োজন না হলে কারও সাহায্য গ্রহণ করতেন না। তিনি যথাসম্ভব নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন এবং লক্ষ্য রাখতেন যাতে অন্যের উপর বোঝা চাপাতে না হয়। তিনি কোন কাজকেই ছোট মনে করতেন না, বিশেষ করে যে পুরুষোচিত কাজগুলিতে অধিক কষ্ট সহিষ্ণুতা ও কায়িক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় তিনি আগ্রহ সহকারে অংশ নিতেন এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাতে লেগে থাকতেন।
আল্লাহর রসুল নবুওয়াত পূর্ববর্তী যুগে কা’বা ঘর পুনঃনির্মাণে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর চাচা আব্বাস (রা.) এবং অন্যান্যদের সঙ্গে পাথর বহনের কাজ করেছিলেন (বোখারি)। নবুওয়াত-পরবর্তী যুগেও মসজিদ নববী নির্মাণকালে তিনি কায়িক পরিশ্রম করেছিলেন। তাঁর এ অংশগ্রহণ ছিল একজন সাধারণ শ্রমিকের মতো। সাহাবীগণ মসজিদের এক একটি পাথর বহন করতেন এবং উদ্দীপনামূলক কবিতা পাঠ করতেন। রসুলাল্লাহও তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে পাঠ করতেন, “হে আল্লাহ! পরকালের মঙ্গল ছাড়া আর কোনও মঙ্গল নেই। অতএব আনসার ও মোহাজেরদের ক্ষমা করুন” (শিবলী নো’মানীর সীরাতুন্নবী)।
মসজিদে নববী ছাড়াও অন্যান্য মসজিদ নির্মাণে রসুলাল্লাহ অন্যান্য সকলের সাথে কায়িক শ্রম দিয়েছেন। যেমন মসজিদে কু’বা নির্মাণকালে ভারী ভারী পাথর বহন করার একটি সময়ে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তবু তিনি কাজ থামান নি। তাঁর কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেয়ে কয়েকজন সাহাবী ছুটে আসেন এবং আকুল হয়ে বলেন, ‘আমাদের পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হউক! আপনি দয়া করে রেখে দিন, আমরা তা বহন করব।’ তাদের অনুরোধে রসুলাল্লাহ সেই পাথর তাদের বহন করতে দিলেন কিন্তু নিজে গিয়ে আরেকটি সম-ওজনের পাথর বহন করে নিয়ে আসলেন (শিবলী নো’মানী, সীরাতুন্নবী)।
এক সফরে বকরী যবেহ করা হলো এবং তা রান্না করবার জন্য সকলেই নিজ নিজ কাজ বণ্টন করে নিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি জঙ্গল হতে কাঠ কেটে আনবার দায়িত্ব নিচ্ছি’। সাহাবারা ইতস্তত করতে লাগলেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘আমি বৈষম্য পছন্দ করি না’ (শিবলী নু’মানী, সীরাতুন্নবী)।
রসুলাল্লাহ বাড়িতে বা মসজিদে আগত মেহমানদের সেবাযতœ নিজেই করতেন। তাঁর ঘরে সবসময় মেহমান থাকত। এমনকি কোনও অমুসলিম মেহমানের আগমন ঘটলেও তিনি তাদের সেবা-যতেœ কোন ত্র“টি করতেন না। যেমন, আবিসিনিয়ার খ্রিস্টান বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট থেকে একদল প্রতিনিধি আগমন করলে রসুলাল্লাহ তাদেরকে নিজের কাছে রেখে স্বয়ং মেহমানদারির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করলেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, ‘আমরা তাদেরকে খেদমত করতে চাই।’। রসুলাল্লাহ বললেন, ‘এই লোকজন আমার সঙ্গীদেরকে বহু খেদমত করেছে। তাই আমি নিজে তাদের খেদমত করতে চাই ’(কাদী ইয়াদ, আশ-শিফা; শিবলী নু’মানী, সীরাতুন্নবী)।
এক সন্ধ্যায় এক ইহুদি এসে নবীজীর আতিথ্য গ্রহণ করল। নবীজী তাকে ভালভাবে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর রাতে ঘুমানোর জন্যে সবচেয়ে ভালো কম্বলটি তাকে দিলেন। কিন্তু ইহুদির মতলব ছিল খারাপ। সবাই যখন গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন তখন ইহুদি কম্বলে পায়খানা-প্রশ্রাব করে ভোর হওয়ার আগেই পালিয়ে গেল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় ভুলে তলোয়ার ফেলে রেখে গেল। নবীজী ফজরের সময় উঠে অবস্থা দেখে সবই বুঝলেন। কিন্তু কাউকেই কিছু না বলে কম্বল নিজেই পরিষ্কার করে ফেললেন। ইহুদির তলোয়ারটা ভালভাবে রেখে দিলেন। এদিকে বহু দূর যাওয়ার পর ইহুদির খেয়াল হলো সে তলোয়ার ভুল করে ফেলে রেখে গেছে। তখনকার দিনে আরবে একজন মানুষের তলোয়ার ছাড়া চলতো না। ইহুদি অনেকক্ষণ চিন্তা করল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো তলোয়ার ফেরত পাওয়ার জন্যে সে নবীজীর কাছে যাবে। ইহুদি দুরু দুরু বক্ষে নবীজীর কাছে হাজির হলো। নবীজী তাকে দেখে সমবেদনা প্রকাশ করে বললেন, ‘আহা! রাতে তোমার কতই না কষ্ট হয়েছে। কত কষ্ট হলে একজন মানুষ কম্বল নষ্ট করতে পারে। আর সেই লজ্জায় তুমি অন্ধকার থাকতেই চলে গেছ। আর যাওয়ার সময় ভুল করে তোমার তলোয়ারটা ফেলে রেখে গেছ। এই নাও তোমার তলোয়ার।’ নবীজীর ব্যবহারে ইহুদি মুগ্ধ হলো। অনুশোচনা এল তার মাঝে। ইহুদি সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করল।
শুধু মেহমানদের সেবাযতœ করেই তিনি ক্ষান্ত হন নাই, বরং অভিভাবকহীনদের দেখাশুনার দায়িত্বও তিনি নিজের কাজ মনে করে গুরুত্ব সহকারে পালন করতেন। যেমন, মহানবী বলেছেন, “মিসকীন ও স্বামীহীনদের ভরণ-পোষণের জন্য যে ব্যক্তি উপার্জনের প্রচেষ্টা চালায়, সে হল আল্লাহর পথে মোজাহেদের মতো বা ঐ ব্যক্তির মত পুণ্যের অধিকারী সে হবে, যে দিনভর সিয়াম পালন করে এবং রাতভর দাঁড়িয়ে আল্লাহর জন্য সালাহ আদায় করে”(তিরমিযী)। এটা তিনি কাজেও প্রমাণ করেছেন। জুন্নাব ইবন আরুত (রা.) একজন সাহাবী ছিলেন। একবার রসুলাল্লাহ তাঁকে কোন এক যুদ্ধে প্রেরণ করলেন। এজন্য তিনি প্রতিদিন জুন্নাবের ঘরে গমন করে তার পরিবারের জন্য দুধ দোহন করে দিতেন (শিবলী নু’মানী, সীরাতুন্নবী)।
রোগীদের সেবাযতœ করা রসুলাল্লাহর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি নিজে রোগীদের দেখাশুনা করতেন। মুহাম্মদ ইবন নাফে ইবন যুবায়র (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেছেন, আমি মহানবীকে সাঈদ ইবনুল আস (রা)-এর সেবা করতে দেখেছি। তখন আমি দেখলাম তিনি টুকরা কাপড়ের সাহায্যে সাঈদ ইবন আসকে (শরীরে) গরম সেক দিতেছেন (হাকিম আবু শায়খ ইস্পাহানী, আখলাকুন নবী)।
খন্দকের যুদ্ধের সময় মদীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে শহরকে ঘিরে ছয়দিনে দশ হাত গভীর পরিখা খননের কাজ সম্পন্ন হয়। এই খন্দক খননের সময় সাহাবীদের সাথে মহানবীও কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বারাআ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রসুলাল্লাহ (স) খন্দক খননের সময় মাটি উঠাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘ইয়া আল্লাহ্। আপনি না দিলে আমরা হেদায়াত পেতাম না (ইমাম বোখারি)।’ উক্ত রাবী আরেকটি হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘আহযাবের দিন আমি রসুলাল্লাহকে দেখেছি যে, তিনি মাটি বহন করছেন, আর তাঁর পেটের শুভ্রতা মাটি ঢেকে ফেলেছে (বোখারি)।
বদরের যুদ্ধসহ অন্যান্য অনেক যুদ্ধে রসুলাল্লাহ স্বয়ং তরবারি হাতে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আলী (রা.) বলেন, ‘বদর যুদ্ধের দিন আমরা রসুলাল্লাহর পার্শ্বে থাকার চেষ্টা করছিলাম। আর তিনি আমাদের সকলের তুলনায় শত্র“দের বেশি কাছাকাছি পৌঁছে তাদের মোকাবেলা করে যাচ্ছিলেন। বদরের সেই দিন তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতা ছিল অন্য সকলের চেয়ে বেশি (আবু শায়খ ইস্পাহানী, আখলাকুন নবী)’।
এছাড়া মহানবী কোন শিষ্টাচার পরিপন্থী কাজ দেখলে তা বর্জন করবার উপদেশ দিতেন এবং তা শুধরিয়ে দিতেন। আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, মহানবী এক বেদুঈনকে মসজিদে প্রস্রাব করতে দেখলেন। এতে সাহাবীগণ তার প্রতি মারমুখী হলে তিনি বললেন, ‘ওকে শেষ করতে দাও’। সে প্রস্রাব শেষ করলে তিনি নিজে গিয়ে পানি এনে সেখানে ঢেলে দিলেন এবং লোকটিকে বলে দিলেন, মসজিদে প্রস্রাব করা উচিত নয় (বোখারি)।
আরেকদিন মহানবী মসজিদের দেওয়ালে কফ দেখতে পেয়ে কাঁকর দিয়ে তা মুছে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘তোমাদের কেহ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা তার বাম পায়ের নীচে তা ফেলে (বোখারি)।
রসুলাল্লাহর ব্যক্তিগত জীবনের এই সুমহান বৈশিষ্ট্যগুলি তাঁর উম্মাহর জন্য অবশ্যই অনুসরণীয় তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করা এবং এই উদ্দেশ্যেই তিনি আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। এই সংগ্রামকে বাদ দিয়ে কেউ যদি রসুলাল্লাহর ব্যক্তিগত এই আখলাক বা গুণাবলীগুলি অভ্যাস করে তাতে কেউ উম্মতে মোহাম্মদী হতে পারবে না, যে কাজের জন্য তিনি উম্মতে মোহাম্মদী গঠন করেছিলেন সেটা বাস্তবায়ন করেই উম্মতে মোহাম্মদী হওয়া যাবে। পাশাপাশি রসুলাল্লাহ যেহেতু মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ তাই সর্বক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ সমাজকে সমৃদ্ধ, উন্নত, প্রগতিশীল সর্বোপরি শান্তিময় করবে।

তওহীদের প্রকৃত অর্থ

তওহীদের প্রকৃত অর্থ

আদম থেকে শুরু কোরে শেষ নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্যন্ত সকল নবী ও রসুলগণের আহ্বান ছিল ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র প্রতি অর্থাৎ তওহীদের প্রতি। তওহীদ হচ্ছে এমন এক ঘোষণা যা শুরু হয় ‘লা’ শব্দ দিয়ে যার অর্থ হচ্ছে অস্বীকার। আল্লাহ ছাড়া জগতের সকল বিধানদাতা, হুকুমদাতা, সার্বভৌম অস্তিত্বকে অস্বীকার করাই হচ্ছে তওহীদ, এটাই এই দীনের ভিত্তি। এর মর্মার্থ হচ্ছে: জীবনের প্রতিটি বিষয়ে যেখানেই আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য আছে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি যে বিভাগেই হোক না কেন, সেই ব্যাপারে আর কারও কোন বক্তব্য, নির্দেশ মানা যাবে না। তবে যে বিষয়ে আল্লাহ অথবা তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য নেই সে বিষয়ে আমরা স্বাধীনভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। বর্তমান দুনিয়ার কোথাও এই তওহীদ নেই, সর্বত্র আল্লাহকে কেবল উপাস্য বা মা’বুদ হিসাবে মানা হচ্ছে, কিন্তু ইলাহ বা সার্বভৌমত্বের আসনে আল্লাহ নেই। মানুষ নিজেই এখন নিজের ইলাহ। সমগ্র মানবজাতি এখন মানুষের তৈরি করা দীন যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি দ্বারা তাদের জীবন পরিচালিত করছে। অথচ  আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ না মানার অঙ্গীকারই হচ্ছে তওহীদ। মুসলিম জনসংখ্যাটিসহ সমস্ত মানবজাতি সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ কোরে এখন শেরক ও কুফরে ডুবে আছে। আর বর্তমানে আমরা যে ইসলামটি পালন কোরে যাচ্ছি সেটা আল্লাহর রসুলের রেখে যাওয়া ইসলামেরই বিকৃত রূপ, প্রকৃত ইসলাম নয়।

কারা প্রকৃত আলেম ???

কারা প্রকৃত আলেম ???

রাকীব আল হাসান:
আল্লাহর রসুল আখেরী যামানা সম্পর্কে বোলেছেন, এমন সময় আসবে যখন- (১) এসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াত থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের ওপর পতিত হবে। [হযরত আলী (রা:) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]
কেন আলেমরা সর্বনিকৃষ্ট জীব তা অতি সংক্ষেপে তুলে ধোরছি। প্রকৃত আলেম ও প্রতারক আলেম সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অনেক উক্তি কোর’আন ও হাদিসে পাওয়া যায়। প্রকৃত আলেমদেরকে আল্লাহর রসুল নিকৃষ্ট জীব বলেন নি, বোলেছেন প্রতারক আলেমদেরকে। আমরা প্রকৃত আলেম বোলতে বুঝবো আল্লাহর রসুলের আসহাবগণকে যাদেরকে স্বয়ং রসুল নিজে এসলাম শিখিয়ে গেছেন, এসলামের জ্ঞান তাদের চেয়ে বেশি আর কারও থাকা সম্ভব নয়। রসুলের আসহাবগণের পরবর্তীতে যারা আলেম হোতে চান তাদের চরিত্র ও কাজ আসহাবদের মতোই হোতে হবে। তা না হোলে যতো বড় টাইটেলধারীই হোন না কেন, যতো বড় আলখেল্লাধারীই হোন না কেন তারা প্রকৃত আলেম নন। সুতরাং
১। প্রকৃত যারা আলেম তারা কখনও অহঙ্কারী হবেন না, কারণ অহঙ্কার কেবলমাত্র আল্লাহরই সাজে। প্রকৃত আলেমরা তাদের সঞ্চিত জ্ঞানকে খুবই সামান্য মনে কোরবেন এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকবেন। তারা নিজেদেরকে কখনওই আলেম বোলে মনে কোরবেন না, দাবি বা প্রচার করা তো দূরের কথা।
২। তারা আল্লাহর দীন বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরবেন না। এই জ্ঞান অন্যকে দেওয়া তারা নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বোলে মনে কোরবেন। আলী (রা:) কে রসুলাল্লাহ ‘জ্ঞান-নগরীর দ্বার’ বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন। তিনি কি আজকের আলেমদের মতো তাঁর জ্ঞান বিক্রি কোরে জীবিকা নির্বাহ কোরতেন? জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি কুলির কাজ কোরতেন এবং যাঁতার চাক্কি পিষে যবের আটা প্রস্তুত কোরতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাতের রানী মা ফাতেমার (রা:) পবিত্র হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। এই জ্ঞানের দুয়ার আলীকেই (রা:) আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে। তার অনন্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য রসুলাল্লাহ তাঁকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন- সেটা হোল আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ। সুতরাং যিনি দীনের যতো বড় আলেম হবেন তিনি ততো বড় যোদ্ধা হবেন অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষক হবেন।
৩। প্রকৃত আলেম তার জ্ঞানকে মানবতার কল্যাণে নিস্বার্থভাবে প্রচার করে যান। তার শিক্ষায় একটিও বিষয় থাকেনা বা থাকতে পারে না যা আল্লাহ বা তার রসুলের শিক্ষার বিপরীত। আল্লাহ ধর্মব্যবসা হারাম কোরেছেন, দীনের কাজের পার্থিব মূল্য গ্রহণকে তিনি আগুন ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা কোরেছেন। যারা এই কাজ করে তাদেরকে তিনি বোলেছেন পথভ্রষ্ট, অপবিত্র, জাহান্নামী (সুরা বাকারা- ১৭৪)। তাদের পেছনে দাঁড়াতে মোমেনদেরকে নিষেধ কোরেছেন (সুরা ইয়াসীন ২১)। অথচ আজকের সমাজের প্রতিষ্ঠিত আলেমগণ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবেই দীন বিক্রি করাকেই বেছে নিয়েছেন। এরা আল্লাহর কোর’আনের আয়াতের পরিপন্থী কাজ কোরছেন এবং নিজেদের আলেম বলে দাবি করে অর্থের বিনিময়ে নামাজ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন করে, খতম পড়ে, ওয়াজ মাহফিল, খোতবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদেরকেই আল্লাহর রসুল আসমানের নিচে সর্ব নিকৃষ্ট জীব বোলেছেন।
৪। আল্লাহ কোর’আনে বোলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আমার রজ্জুকে ধোরে রাখ। আজ এই নামধারী আলেমরা এসলামকে নানান মাজহাব, ফেরকা, তরীকা, খানকা, পীরের অনুসারী এবং হাজারো ভাগে ভাগ কোরেছেন, সাধারণ মানুষ এই সব মাজহাব ফেরকা আবিষ্কার করে নি। এই কাজ কোরে নামধারী আলেমরা জাতিকে মেরে ফেলেছেন। প্রকৃত আলেমরা কখনই এসলামকে এই ভাবে ধ্বংস কোরতে পারেন না।
৫। বর্তমানের আলেম দাবিদাররা যে মাদ্রাসা থেকে এসলাম শিখে আলেম খেতাব পাচ্ছেন সেই মাদ্রাসাগুলি ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের ফসল। ঔপনিবেশিক যুগে খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা কোরে তওহীদহীন ও সংগ্রামহীন বিকৃত একটি এসলাম তৈরি করে এবং ১৪৬ বছর ধোরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় সেই এসলামটি এই জাতিকে শেখায়। সেই বিকৃত এসলামটি বিক্রি কোরেই খাচ্ছেন এই আলেম-পুরোহিত শ্রেণিটি। সেই আত্মাহীন, ভারসাম্যহীন এসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে পদে পদে ফতোয়া দিয়ে, মতবাদ সৃষ্টি করে, জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে চোলছে এই পরনির্ভরশীল পুরোহিত শ্রেণিটি।
আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোক

দুনিয়া শব্দের সঠিক অর্থ

দুনিয়া শব্দের সঠিক অর্থ

ফয়সল আহমেদ:
আমরা বর্তমানের বিকৃত ইসলামের আলেম সাহেবদের কাছে শুনি যে দুনিয়া খুবই খারাপ জায়গা। তাই দুনিয়ার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আখেরাতের অভিমুখী হতে হবে, চোখ কান বুজে এ দুনিয়ার জীবনকে কোনমতে পার করে দিতে পারলেই মুক্তি। দীন বলতে বোঝানো হচ্ছে ইসলামের ব্যক্তিগত কিছু উপাসনাকে যেমন সালাহ (নামাজ), সওম (রোজা), হজ্জ, যিকির-আজগার ইত্যাদিকে আর দুনিয়া বলতে বোঝানো হচ্ছে এই উপাসনাগুলির বাইরে যাবতীয় কাজকে যেমন ব্যবসা, চাষাবাদ, চাকরি, পড়াশুনা, সামাজিক ও দেশের উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদি। ইসলামের অন্যান্য বিষয়গুলির মতোই ‘দুনিয়া’ শব্দটিও আজ বিপরীত অর্থে ব্যবহার করা হয়। ইসলাম এসেছে সমস্ত দুনিয়াময় শান্তি (ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি) প্রতিষ্ঠা করতে এবং তাও সংগ্রামের মাধ্যমে। যেখানে দুনিয়াতেই একটি জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সেখানে সেই দুনিয়াকেই ত্যাগ বা তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া কী করে অর্থবহ? আল্লাহ কোর’আনে মুমিনদের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি তাদের পৃথিবীর জমিন ও ক্ষমতা দান করবেন, যেমন তিনি পূর্ববর্তী মুমিনদেরও দান করেছিলেন (কোর’আন- সুরা আন-নূর-৫৫)। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়া বলতে বোঝানো হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রসুল এই জাতির, উম্মাহর জন্য যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করে দিয়েছেন সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথে এই পৃথিবীতে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাই দুনিয়া। আল্লাহ দুনিয়াকে প্রত্যাখ্যান করতে বলেন নি, তা বললে তিনি কখনই আমাদের বলতেন না এই দোয়া করতে যে- হে আমাদের পালনকারী! আমাদের এই দুনিয়াকে সুন্দর করে দাও এবং আখেরাতকেও সুন্দর করে দাও (সুরা আল-বাকারা-২০১)।
প্রকৃত মুমিনের কাছে দুনিয়া শব্দের অর্থ ও আকিদা হলো এই যে, সে এই পার্থিব জীবনকে যতটুকু সম্ভব সুন্দর করতে চেষ্টা করবে। এই পৃথিবীতে সে যত কাজ করবে তা যত সম্ভব সুন্দর করে, নিখুঁত করে করতে চেষ্টা করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, যার যে পেশা, বৃত্তি, দায়িত্ব সেগুলোতে সে তার পক্ষে যতদূর সম্ভব সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে করতে চেষ্টা করবে। এটা দুনিয়া নয় দীনদারী। বরং কেউ যদি তার পেশায়, দায়িত্বে গাফেলতি করে, তার কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না করে তবে সেটাই হবে দুনিয়াদারী, গোনাহ। রসুলাল্লাহ বলেছেন- যখন এই দুনিয়ার কাজ করবে তখন এমনভাবে করবে যেন তুমি অমর, চিরঞ্জীব, আর যখন দীনের কাজ করবে তখন এমনভাবে করবে যেন তুমি পরের দিন মারা যাবে। যতক্ষণ একটি মানুষ অন্যকে না ঠকিয়ে, মিথ্যা না বলে সততার সাথে তার পেশা করে যাবে, উপার্জন করবে ততক্ষণ সে ইবাদত করছে, দীনের কাজ করছে। আর যে মুহূর্তে সে কোনো কাজে মিথ্যা বা প্রতারণার আশ্রয় নেবে সেই মুহূর্তে সে দুনিয়ায় পতিত হবে। হালাল উপার্জন দিয়ে ভালোভাবে থাকায়, ভালোভাবে খাওয়া-পরায় ইসলামে বাধা নেই, কোনো নিষেধ নেই। কিন্তু ঐ উপার্জন ঐ সম্পদ যদি তাকে আল্লাহর রাস্তায় কোনো কাজ থেকে বিরত করে, দীনের কাজে ব্যয় করা থেকে বিরত করে তখন তা দুনিয়া। শুধু সম্পদ নয়, এই পৃথিবীর যা কিছু আল্লাহর রাস্তায় বাধা হবে তাই দুনিয়া। সেটা সম্পদ হোক, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন হোক, যাই হোক। ঐ দুনিয়াকে আল্লাহ- রসুল ত্যাগ করতে বলেছেন। শুধু যে ভালোভাবে থাকা, ভালো খাওয়া-পরা তাই নয়, সাজ-সজ্জা, আড়ম্বর, জাঁক-জমক পর্যন্ত আল্লাহ মুসলিমদের নিষিদ্ধ করেন নাই। এই হলো ইসলামে দুনিয়ার সঠিক অর্থ।

যে কারণে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন

যে কারণে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন

নিজাম উদ্দিন:
অসীম এই মহাবিশ্ব আল্লাহ কেন সৃষ্টি করলেন? এবং অসীম সৃষ্টির বুকে পৃথিবী নামক গ্রহে কেনই বা মানুষ নামের প্রাণি সৃষ্টি করলেন? প্রথমেই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলাম। লেখাটির উদ্দেশ্যই হলো এই প্রশ্নটির উত্তর বের করা। কারণ ছোট্ট এই প্রশ্নটির ভেতরেই লুকায়িত রয়েছে অনেক কিছুর জবাব।
মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ ঘোষণা দিলেন যে, মানুষ হলো তাঁর অগণিত সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি (আশরাফুল মাখলুকাত)। কিন্তু আমরা অধিকাংশই জানি না যে, কেন মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ। সূর্যের উদ্দেশ্য হলো- পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখা, উত্তাপ ছড়ানো। গাছের উদ্দেশ্য হলো- ফল দেওয়া, অক্সিজেন সরবরাহ করা ইত্যাদি। একটি ঘড়ির উদ্দেশ্য হলো সঠিক সময় নির্ণয় করা। কাজেই আমরা যে মানুষ, আমাদের পৃথিবীতে আসার নিশ্চয়ই একটি উদ্দেশ্য আছে। অনেকেই মনে করেন আমরা পৃথিবীতে এসেছি অন্যান্য প্রাণির মতো বেঁচে থাকার জন্যই। তবে যেহেতু আখেরাতকে বিশ্বাস করি, আল্লাহকে বিশ্বাস করি, সুতরাং নামাজ-রোজা, জিকির-আসগর, ধ্যান-জ্ঞান ইত্যাদি করে কোনো রকমে জীবনটা পার করে দিলেই জীবনের উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। তারা সবাই মনে করছে উপার্জন, সংসারের ভরণপোষণ করে আর মসজিদে, মন্দিরে, সীনাগগে, প্যাগোডাই প্রার্থনা করে তাদের জীবন পার করে দেওয়াই হচ্ছে তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। এটা করেই তারা জান্নাত বা স্বর্গে যেতে চান। কিন্তু তাদের এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়।
কোর’আনের সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক মালায়েকদেরকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি।’ তারা বললো, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা, গুণকীর্তন ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ তিনি বললেন, নিশ্চয়ই ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।’ সুতরাং আল্লাহ বললেন যে, তিনি মানুষকে তাঁর খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে মানুষের প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে সে আল্লাহর খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি, ইংরেজিতে যাকে বলে Representative.
আমাদের দেশে, বিভিন্ন দেশের এম্বেসি আছে সেখানে যার যার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত থাকেন। আমাদের এই দেশে যখন ব্রিটিশ রাজত্ব ছিল তখন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের পক্ষ থেকে এখানে যিনি দায়িত্ব পালন করতেন অর্থাৎ ভাইসরয় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাজা বা রাণীর খলিফা বা প্রতিনিধি। অর্থাৎ, সরকারের যে কাজ, সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োজিত প্রতিনিধিরও সেই কাজ। ঠিক একইভাবে আল্লাহর যে কাজ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরও সেই একই কাজ। মানুষ যখন পৃথিবীতে আল্লাহর ঐ কাজ সম্পাদন করবে তখনই কেবল তারা আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে সাব্যস্ত হবে। সুতরাং এখন জানা দরকার যে, স্রষ্টার কাজ কী?
আল্লাহ হলেন তাঁর অসীম এই সৃষ্টিজগতের শাসনকর্তা। তিনি তাঁর নিজের তৈরি শৃঙ্খলা, নিয়ম-নীতি মোতাবেক এই মহাসৃষ্টিকে শাসন করছেন। তিনি চাইলেন পৃথিবীতে নিজে শাসন করবেন না, এজন্য মানুষকে তাঁর পক্ষ থেকে খলিফা বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করলেন। অর্থাৎ মানুষের কাজ হলো সে আল্লাহর হোয়ে পৃথিবীতে শাসন করবে। কেমন করে করবে? আল্লাহ যেমন নিজের তৈরি আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি মোতাবেক মহাবিশ্ব শাসন করছেন, তেমনি পৃথিবীর শাসনের জন্য তিনি নিজে শাসন করলে যে আইন-কানুন, নিয়মনীতি দিয়ে শাসন করতেন সেই আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি তাঁর খলিফাকে দিয়ে বললেনÑ এইগুলি অনুযায়ী তোমরা আমার মত করে তোমাদের শাসনকার্য্য পরিচালনা করবে। এটাই হলো তোমাদের এবাদত যে জন্য তোমাদের আমি সৃষ্টি করেছি।
এখন দেখা যাক, যদি আমরা আল্লাহর খেলাফত করি তাহলে আমাদের অর্থাৎ মানবজাতির কী লাভ। আমরা কেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফতের কাজ করব? আল্লাহ যখন খলিফা বা মানুষ সৃষ্টি করেন তখন এবলিস আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে, সে মানুষকে দিয়ে পৃথিবীতে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা করাবে অর্থাৎ অন্যায়, অবিচার, রক্তপাত, যুদ্ধ ইত্যাদি করাবে। আর আল্লাহ বললেন, আমি মানুষকে হেদায়াহ বা সঠিক পথনির্দেশ পাঠাবো যে পথে চোললে সে শান্তিতে থাকবে, ন্যায় ও সুবিচারের মধ্যে থাকবে। এই জন্য আল্লাহর প্রেরিত জীবনব্যবস্থার নাম হচ্ছে ইসলাম, ইসলাম অর্থ শান্তি। যারা আল্লাহর পাঠানো সহজ সরল পথে, সেরাতুল মোস্তাকীমে থাকবে তাদেরকে দিয়ে এবলিস পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করাতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফার কাজই হলো এবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর হুকুম প্রতিষ্ঠা করে সর্ব প্রকার অন্যায়, অবিচার, রক্তা-রক্তির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে সমস্ত দুনিয়ায় সুখ-শান্তি বজায় রাখা।
আমাদের কাছে মহান আল্লাহর অভিপ্রায়ও সেটাই। আল্লাহ চান না যে, আমরা সবাই নামাজি হয়ে যাই, মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ করি, আমরা সকলেই হাজী সাহেব হয়ে যাই বা দাড়ি টুপি আলখেল্লা পরে পাক্কা দরবেশ হয়ে যাই। তিনি এসবের কোনটাই চান না। এগুলি কিছুই আল্লাহর অভিপ্রায় নয়। ওগুলো করার জন্য আল্লাহ তিনি সৃষ্টি করেন নি। ওগুলো করার জন্য অগণিত মালায়েক বা ফেরেশতা রয়েছে। মানুষের জন্য আল্লাহর অভিপ্রায় হলো- আল্লাহ চান তাঁর এই প্রিয় সৃষ্টি আদম যাদেরকে আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছেন, যাদের মধ্যে আল্লাহ তাঁর নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন সেই মানবজাতি যেন সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে। মানুষের এই সুখে থাকা, শান্তিতে থাকাই হলো আল্লাহর অভিপ্রায়। এখন সুখ শান্তিতে থাকার জন্য মানুষকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেটা হলো তাদেরকে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালিত করতে হবে। তবেই মানবজাতি শান্তিতে থাকবে। এটাই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে মানুষের মূল কাজ, মূল দায়িত্ব। একজন ডাক্তারের যেমন কাজ হলো চিকিৎসা করা, একজন শিক্ষকের কাজ হলো ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো তেমনি একজন খলিফার কাজ হলো পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর হুকুম কার্যকরী করা।
অথচ আজ যদি আমরা দুনিয়ার পরিস্থিতির দিকে তাকাই কী দেখবো? আমরা নামাজ, যাকাত, হজ্ব ও রোযা পালন করে মনে করছি আমরা খুব এবাদত করছি। এগুলো কোনটাই আল্লাহর প্রতিনিধির কাজ নয়, খেলাফতের কাজ নয়। কারণ আল্লাহ নিজে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত কিছুই করেন না। তাহলে এগুলো কী? এগুলো হচ্ছেÑ আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের সর্বপ্রকার অঙ্গনের, ভাগের সমাধান ও ব্যবস্থা দেওয়া আছে; আল্লাহ বোলেছেনÑ তোমাদের জন্য দীন আমি সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছি (সুরা মায়েদা-৩)। তাঁর দীনকে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রাখার জন্য ও কখনও এটার ওপর কোন আক্রমণ আসলে তাকে প্রতিহত করার জন্য যে ঐক্য, শৃংখলা, আনুগত্যপূর্ণ ও অন্যায়বিরোধী চরিত্রের মানুষের প্রয়োজন সেই চরিত্রের মানুষ সৃষ্টির জন্য সালাতের বা নামাজের ব্যবস্থা রেখেছেন। অর্থ ও সম্পদের যাতে অসম বণ্টন না হয়, অবিচার না হয় সেজন্য যাকাতের ব্যবস্থা রেখেছেন। সমস্ত পৃথিবীতে দীনের কোথায় কি অবস্থা, কি সমস্যা, কোথায় কি করা প্রয়োজন এবং হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে জীবনের কাজের হিসাব দেবার মহড়া বা Rehearsal এর জন্য বাৎসরিক হজ্বের ব্যবস্থা রেখেছেন। মানুষের আত্মার পরিচ্ছন্নতা উন্নতির জন্য ব্যবস্থা রেখেছেন সাওমের।
এবাদত মনে করে আজ এই বিভ্রান্ত জনসংখ্যা যা করছে তা প্রকৃত এবাদত অর্থাৎ খেলাফতের কাজ নয়; খেলাফতের কাজ অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া দীনকে প্রয়োগ ও কার্য্যকরী রাখার জন্য আল্লাহ যে সমস্ত বিধান দিয়েছেন সেগুলি। প্রকৃত এবাদত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা মোতাবেক তাঁর পক্ষ হোয়ে শাসন করা। সেই এবাদত থেকে এই জনসংখ্যা আজ শুধু লক্ষ কোটি মাইল দুরে নয়, একেবারে বিপরীতমুখী। দাজ্জালের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে এরা আল্লাহর অবাধ্য বা ফাসেকে পরিণত হয়েছে। এবং দাজ্জালের তৈরি জীবন-ব্যবস্থা জীবনে প্রয়োগ করে আল্লাহর উপাসকের বদলে দাজ্জালের উপাসকে পরিণত হয়েছে।
আল্লাহ প্রকৃত ইসলামের সকল ধারণাই বিকৃত হোয়ে কালের আবর্তে হারিয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ আবার যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে আমাদের কাছে সেই প্রকৃত ইসলাম ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমামুয্যামান ছিলেন এক নির্ভিক মহামানব, যিনি এই উপমহাদেশে পন্নী পরিবারে ১৯২৫ সালের ১১ মার্চ টাঙ্গাইলের করটিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সারাটি জীবন সত্যের পথে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। ৮৬ বছরের জীবনে তিনি একটিও মিথ্যা শব্দ উচ্চারণ করেন নি এবং নৈতিক স্খলনের কোন নজির নেই।
যামানার এমাম হাজার বছরের বিকৃত ফেকাহ, তফসির আর ফতোয়ার পাহাড়ের নিচে যে সহজ-সরল, সেরাতুল মোস্তাকীম প্রকৃত ইসলাম চাপা পড়ে রোয়েছে সেই ইসলামকে তার মৌলিক, অনাবিলরূপে উদ্ধার করে মানুষের সামনে উপস্থিত করেছেন। এই ইসলাম মানবজাতির সম্পদ, তাই আমরা সেটি মানবজাতির সামনে প্রকাশ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ঈমানবিহীন আমল অর্থহীন

ঈমানবিহীন আমল অর্থহীন

হেযবুত তওহীদ:
যে কোন আমলের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান। ঈমান ছাড়া আমল অর্থহীন। একজন কাফের, মোশরেক ঈমান আনয়নের পূর্বে যতই আমল করুক এতে তার কোন পুণ্য হয় না। যেমন- আবু জেহেল, আবু লাহাবরাও অনেক ভালো কাজ করেছে কিন্তু তাদের কোনো আমলই কি কাজে আসবে?
এখন এই ঈমান কী? ঈমান হলো- “লা এলাহা এল্লাল্লাহ মোহাম্মদুর রসুলাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল” এই কলেমাতে স্বীকৃতি দেওয়া। অর্থাৎ ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয়, আন্তর্জাতিক এক কথায় জীবনের সর্ব অঙ্গনে যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোন আদেশ, নিষেধ আছে সেখানে আর কারো আদেশ, নিষেধ মানি না- এই স্বীকৃতিই হচ্ছে ঈমান। স্বীকৃতির পরবর্তী কাজ হলো আল্লাহর রাস্তায় জীবন ও সম্পদ দিয়ে এই হুকুম বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তথা জেহাদ। এটিই হলো সর্বপ্রথম এবং প্রধান আমল। এটি ছাড়া মো’মেন হওয়া যায় না। (সুরা হুজরাত-১৫)। যখন জাতীয়, আন্তর্জাতিক জীবনে আল্লাহর হুকুম প্রত্যাখ্যান করে ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের দেওয়া হুকুম বিধান প্রতিষ্ঠিত এবং ফলশ্র“তিতে সমাজ অন্যায়, অবিচারে পরিপূর্ণ তখন সার্বিক জীবনে আল্লাহর হুকুম বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজ থেকে সকল প্রকার অন্যায় অবিচার দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাদ দিয়ে যত আমলই করা হোক তা নিরর্থক হবে। কিন্তু আজ এই নিরর্থক আমলই করা হচ্ছে সর্বত্র। সমগ্র মোসলেম বিশ্বে আজ ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের হুকুম বিধান প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমরা একটা দৃশ্য সর্বত্র দেখতে পাই, শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লাসহ সব জায়গাতেই মানুষ টুপি-পাঞ্জাবী পরে টাখনুর উপর পাজামা তুলে মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছে, কোরবানি করছে, হজ্ব করে আসছে, ওয়াজ-মাহফিল শুনছে, কোর’আন তেলাওয়াত করছে, যিকির-আসগর করছে। অর্থাৎ আমরা বুঝাতে চাইছি আমরা পাক্কা মুসলমান। কিন্তু কিভাবে? এই যে নামাজ পড়ছি, কোর’আন পড়ছি, টুপি পাঞ্জাবী পরছি, কেউ কেউ হজ্ব করে আসছি। আমাদেরকে কে বলে দেবে এই জাতি আল্লাহর হুকুম, বিধান বাদ দেওয়ার কারণে এরা মো’মেনই না মোসলেমই না? এই সরল প্রশ্নের উত্তর কে দেবে যে, তাদেরকে আল্লাহ মো’মেন, মোসলেম এর খাতা থেকে বাদ দিয়েছেন বহু আগে। বর্তমানে আল্লাহর হুকুম প্রত্যাখ্যান করে এই জাতি কার্যত কাফের, জালেম, ফাসেক হয়ে গিয়েছে। (সুরা মায়েদা- ৪৪,৪৫,৪৭)
কাজেই এখন আগে আল্লাহর কলেমা, তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়ে মো’মেন হওয়া জরুরি। তারপরে যত পারা যায় ঐসব আমল। আমরা মুখে দাবি করি মুসলমান, আইন-বিধান, হুকুম মানি এবং অনুসরণ করি ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতা দাজ্জালের। এজন্য আল্লাহ এই জাতির উপর লানৎ দিয়েছেন। এখন এই লানৎ, শাস্তি থেকে পরিত্রাণের একটাই পথ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। সেই প্রকৃত, অনাবিল, শান্তিদায়ক, নিখুঁত, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা কোথায় পাওয়া যাবে?
সেটা আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। আজ সারা পৃথিবীতে যে এসলামটি চর্চা করা হচ্ছে, মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবে, খানকায় যে এসলামটা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেটা আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়। এই এসলাম ১৬০ কোটির এই জনসংখ্যাকে শান্তি দিতে পারে নি, অন্য জাতির গোলামি থেকে রক্ষাও করতে পারে নি। আমরা এমন এক এসলামের কথা বলছি, যে এসলাম সমস্ত মানবজাতিকে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারবে, সমস্ত মানবজাতিকে একটি পরিবারে পরিণত করবে, এনশা’আল্লাহ।

Thursday, August 6, 2015

দোয়া কেন ব্যর্থ হোচ্ছে? (পর্ব-১)

দোয়া কেন ব্যর্থ হোচ্ছে? (পর্ব-১)

মোহাম্মদ আসাদ আলীঃ

হেদায়াহ (সঠিক পথ নির্দেশনা) ও সত্যদ্বীন দিয়ে আল্লাহ আখেরী নবী বিশ্বনবী মোহাম্মদ (স:) কে পাঠিয়েছেন তিনি যেন এটাকে অন্য সমস্ত দ্বীনের, জীবনব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠা করেন। (তওবা, ৩৩, ফাতাহ ২৮, সফ ৯)। এই হেদায়াহ হলো আল্লাহর তওহীদ, আল্লাহর সাবভৌমত্ব, লা এলাহা এল্লাাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া জীবনের সর্ব অঙ্গনে অন্য কারো হুকুম না মানা। আর দ্বীনুল হক (সত্য জীবনব্যবস্থা) হোল ঐ হেদায়াহর উপর প্রতিষ্ঠিত, আইন, বিধান, হারাম-হালাল, বৈধ-অবৈধ, জায়েজ-নাজায়েজ ইত্যাদি। মানুষকে আল্লাহ সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে সৃষ্টি কোরেছেন, তাই তার পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি সামষ্টিক ক্ষেত্র পরিচালনা করার জন্য একটা জীবনব্যবস্থা অতি অবশ্যই প্রয়োজন। এই জীবনব্যবস্থা প্রধানত দু’রকমের হতে পারে- ক) যিনি সৃষ্টি কোরেছেন অর্থাৎ স্রষ্টার দেওয়া, খ) মানুষের নিজের তৈরি এক কথায় সৃষ্টির তৈরি করা।
এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ কোরবে স্রষ্টার, আল্লাহর নাকি মানুষের নিজেদের তৈরি। যদি তারা স্রষ্টার দেওয়া পথ গ্রহণ করে তবে তারা হবে মো’মেন, সেটার ফল হবে দুনিয়াময় শান্তি, ন্যায়, সুবিচার এবং এই জীবনের পরের জীবনে জান্নাত। আর যদি মানুষের তৈরি পথ, ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে এই জীবনে নেমে আসবে অন্যায়, দুঃখ, কষ্ট, অভাব, দাঙ্গা, মারামারি, রক্তপাত- এক কথায় অশান্তি আর পরজীবনে আরও ভয়াবহ শাস্তি জাহান্নাম। যাহোক মহান আল্লাহ আখেরী নবীকে পাঠালেন, এমন একটা জীবনব্যবস্থা দিয়ে যেটা সমস্ত মানব জীবনে কার্যকরী হবে, এই জন্য এসলামের আকীদা উদ্দেশ্য, হলো সমস্ত বনী আদম হবে একটা জাতি। তাদের জীবনব্যবস্থা হবে একটা আল্লাহর দেওয়া দ্বীনুল হক, তাদের অনুসারীদের অনুসরণীয় ব্যক্তি হবেন একজন ‘অর্থাৎ আখেরী নবী (দ:)। এই উদ্দেশ্যে অর্থাৎ মানব জাতির সামগ্রিক জীবনে অন্যায়, সুবিচার, এককথায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী তাঁর আসহাবদের নিয়ে সংগ্রাম শুরু কোরলেন তাঁর জীবদ্দশায় সমস্ত জাজিরাতুল আরবে আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন কায়েম হোল। তিনি এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর সংগ্রাম কোরে এই সত্যদীনকে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব এসে পড়লো তাঁর উম্মাহর উপর। উম্মতে মোহাম্মদী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য অর্থাৎ আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার লক্ষ্যে নিজেদের বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি, স্ত্রী-পুত্র, ক্ষেত-খামার ইতাদি বিসর্জন দিয়ে দুনিয়ার দিকে বেরিয়ে পড়লো। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরল, মোটামুটি ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত চোলল এক অখণ্ড জাতি হোয়ে মানবজীবন থেকে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার দূর কোরে ন্যায় সুবিচার অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এর পরই সংগ্রাম ত্যাগ করা হোল। দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগ কোরে অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরল। এই সংগ্রাম- যেটা করার জন্যই এই উম্মতে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করা হোয়েছিলো এবং যা হোচ্ছে রসুলাল্লাহর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ এবং যা ত্যাগ কোরলে কেউ প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী থাকেন না সেই জেহাদ ত্যাগ করার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো আকীদার বিকৃতি। আর আকীদার বিকৃতি হোলে ঈমানেরও কোন দাম থাকে না। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হলো এই যে, মহানবীর (দ:) পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত ঐ সংগ্রাম ‘জেহাদ’ চলেছিলো এবং তারপর তা বন্ধ করা হয় এবং উমাইয়া খলিফারা নামে খলিফা থেকেও আসলে পৃথিবীর আর দশটা রাজা-বাদশাহর মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করা আরম্ভ করেন। যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তার সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ রসুলকে (দ:) পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, যে আদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য সেই রসুল (দ:) এবং আসহাব (রা:) অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেন, জীবনের সমস্ত কিছু কোরবান কোরে তাদের নেতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে জেহাদ করেন, আহত হন, প্রাণ দেন- সেই আদর্শকে ত্যাগ করার অনিবার্য পরিণতি কি হলো তা ইতিহাস। লক্ষ্যবিচ্যূত হওয়ার যে সব ফল হলো তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক) ঈমানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আকীদা বিকৃত হোয়ে গেলো। (খ) আল্লাহ ও রসুল (দ:) যে কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছিলেন সেই কাজ, দীনের সংবিধান কোর’আন হাদিসের অতি বিশ্লেষণ অর্থাৎ দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি জোরে-শোরে ধুমধামের সাথে আরম্ভ করা হলো। ফলে লক্ষ্যচ্যূত জাতি বহু মাযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে শুধু শক্তিহীন হোয়েই পড়লো না, নিজেরা নিজেরা বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নির্জীব হোয়ে গেলো। (গ) এরপর ভারসাম্যহীন সুফীবাদ এই খণ্ড-বিখণ্ড ও নির্জীব জাতির মধ্যে প্রবেশ কোরে এর বহির্মুখী দৃষ্টি ও চরিত্রকে উল্টো কোরে অন্তর্মুখী কোরে দিলো। এরপর এ জাতি, যে জাতি পৃথিবীর সমস্ত অন্যায়কারী- সমস্ত নির্যাতক- সমস্ত অবিচারক ও অত্যাচারী ব্যবস্থার ত্রাসে পরিণত হোয়েছিলো- জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর শিক্ষক হোয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের দুয়ার পৃথিবীর মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিলো- নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ কোরেছিলো, তা একটি অশিক্ষিত অজ্ঞ, প্রায় পশু পর্যায়ের জনসংখ্যায় পর্যবসিত হোয়ে গেলো এবং পরিণামে ইউরোপের বিভিন্ন খ্রিস্টান জাতিগুলির গোলামে পরিণত হলো।
কয়েকশ’ বছর ঘৃণ্য দাসত্বের পর কিছুদিন থেকে প্রকাশ্যভাবে স্বাধীনতা পেলেও এই জনসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আজও আদর্শগত ও মানসিকভাবে সেই গোলামই আছে অর্থাৎ প্রভুদের তৈরি করা আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি সবই চালু আছে। ফলে গোলামি যুগের চেয়েও এখন বেশিভাবে গোলামি চোলছে।
এখন এই গোলামদের কাজ হোল প্রার্থনা করা
আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিশাল এই শক্তিহীন অক্ষম ব্যর্থ জাতির এখন একমাত্র কাজ হোচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া। এর ধর্মীয় নেতারা, আলেম, মাশায়েখরা এই দোয়া চাওয়াকে বর্তমানে একটি আর্টে, শিল্পে পরিণত কোরে ফেলেছেন। লম্বা সময় ধোরে এরা লম্বা ফর্দ ধোরে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরতে থাকেন, যেন এদের দোয়া মোতাবেক কাজ করার জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কোরে বোসে আছেন। মাঝে মাঝে বিশেষ (ঝঢ়বপরধষ) দোয়া ও মোনাজাতেরও ডাক দেওয়া হয় এবং তাতে এত লম্বা সময় ধোরে মোনাজাত করা হয় যে হাত তুলে রাখতে রাখতে মানুষের হাত ব্যথা হোয়ে যায়। কিছুদিন আগে লাউড স্পিকারে এক ‘ধর্মীয় নেতার’ বাদ ওয়াজ দোয়া শুনছিলাম। তিনি আল্লাহর কাছে লিষ্ট মোতাবেক দফাওয়ারী (ওঃবস নু রঃবস) বিষয় চাইতে লাগলেন। বেশির ভাগ বিষয়ই তাসাওয়াফের ব্যাপারে, তবে ইসরাইল রাষ্ট্রকে ধ্বংস কোরে বাইতুল মোকাদ্দাসকে মোসলেমদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার একটা দফা ছিলো, এবং দুনিয়ার মোসলেমের ঐক্যও একটা দফা ছিলো। ছত্রিশটা দফা গোনার পর আর গোনার ধৈর্য ছিলো না। তবে ওর পরও যতক্ষণ দোয়া চলেছিলো, তাতে মনে হয় মোট কমপক্ষে শ’খানেক বিষয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হোয়েছিলো। অর্থাৎ আল্লাহ- ঐ শ’খানেক বিষয় তুমি আমাদের জন্য কোরে দাও। অজ্ঞানতা ও বিকৃত আকীদার কারণে এরা ভুলে গেছেন যে কোন জিনিসের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না কোরে শুধু তার কাছে চাইলেই তিনি তা দেন না, ওরকম দোয়া তার কাছে পৌঁছে না। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ নবী (দ:) তার হাবিব কে যে কাজের ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সে কাজ সম্পন্ন কোরতে তাকে কি অপরিসীম পরিশ্রম কোরতে হোয়েছে, কত অপমান-বিদ্রুপ-নির্যাতন-পীড়ন সহ্য কোরতে হোয়েছে- যুদ্ধ কোরতে হোয়েছে, কত দিন রাত না খেয়ে কাটাতে হোয়েছে, আহত হোতে হোয়েছে। তিনি ওসব না কোরে বোসে বোসে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরলেই তো পারতেন আমাদের ধর্মীয় নেতাদের মত। আল্লাহর কাছে বিশ্বনবীর (দ:) দোয়াই বড়, না আমাদের আলেম মাশায়েখদের দোয়াই বড়? দোয়াতেই যদি কাজ হতো তবে আল্লাহর কাছে যার দোয়ার চেয়ে গ্রহণযোগ্য আর কারো দোয়া নেই- সেই রসুল (দ:) ঐ অক্লান্ত প্রচেষ্টা (জেহাদ) না কোরে শুধু দোয়াই কোরে গেলেন না কেন সারাজীবন ধরে? তিনি তা করেন নি, কারণ তিনি জানতেন যে প্রচেষ্টা (আমল জেহাদ) ছাড়া দোয়ার কোন দাম আল্লাহর কাছে নেই।
প্রতিপক্ষ শত্র“র বিরুদ্ধে এরা ঐক্যবদ্ধভাবে জানের বাজি রেখে সম্পদ বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করে না। করার সাহসও পায় না। এক জায়গায় একত্রিত হোয়ে আসমানের দিকে হাত তুলে শত্র“র জন্য গজব কামনা করে যেন আল্লাহ গজব দিয়ে শত্র“বাহিনীকে ধ্বংস কোরে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হোল, আল্লাহ এদের দোয়া মোতাবেক শত্র“দের আজাব আর গজব দিয়ে ধ্বংস কোরে দিয়ে এই দুনিয়া কার হাতে তুলে দিবেন? ধর্মব্যবসায়ী, কুপমণ্ডুক আলেম মোল্লাদের কাছে? আত্মার ঘষামাজা নিয়ে ব্যস্ত খানকার গুহাভ্যন্তরে বসে বসে জিন্দেগি পার কোরছেন তাদের কাছে? সামান্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাস কোরে মত, পথ, তরিকা সৃষ্টি কোরে যারা ঐক্যহীন, শৃঙ্খলাহীন, আনুগত্যহীন হোয়ে নিজেরা নিজেরা নিত্য কোন্দলে লিপ্ত তাদের কাছে? আল্লাহ অত বে-হিসাবী নন, কাজেই আল্লাহ তাদের দাবি মোতাবেক শত্র“দের উপর গজব ও লানত না দিয়ে বরং যারা কোন ত্যাগস্বীকার না কোরে, জীবন-সম্পদ নিজের কাছে মজুদ রেখে কাপুরুষের মত অতি সন্তর্পণে সংগ্রাম ত্যাগ কোরে, আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান কোরে ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’, দাজ্জালের তৈরি ব্যবস্থাগুলিকে গ্রহণ কোরে নিয়েছে তাদের উপরই গজব ও লানত দিবেন এবং গত কয়েক শতাব্দী ধোরে দিয়েও চোলেছেন।
আসল কথা হোচ্ছে এই যে, আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এমন কিছু নেই যা তিনি কোরতে পারেন না। কিন্তু তিনি দেখতে চান আমরা কি করি। তার সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে (দ:) তিনি যে কাজে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সেই কাজ কোরতে সেই নবীকে (দ:) তার সারা জীবন ধোরে কি অপরিসীম কষ্ট, কি অক্লান্ত পরিশ্রম, কি নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য কোরতে হোয়েছিলো, তা তার পবিত্র জীবনী যিনি একবারও পড়েছেন তিনি জানেন। আল্লাহর রসুল (দ:) তার জীবনে কতখানি কষ্ট সহ্য কোরেছেন, তা তার একটি কথায় কিছুটা আঁচ করা যায়। তার উম্মাহর মধ্যে যারা জীবনে অত্যন্ত কষ্টে পড়বেন, অসহনীয় দুঃখে যাদের জীবন ভারাক্রান্ত হবে তাদের উদ্দেশ্য কোরে তিনি বোলেছেন তারা যেন তাঁর (দ:) জীবনের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট-বিপদ মনে কোরে নিজেরা মনে সাহস-সান্ত্বনা আনেন। মানব জাতির শ্রেষ্ঠ, আল্লাহর প্রিয় বন্ধুকে যেখানে জীবনভর এত কষ্ট-সংগ্রাম কোরতে হলো, সেখানে আমরা বসে বসে দোয়া কোরেই পার পেয়ে যাবো? আল্লাহ আমাদের লিষ্ট মোতাবেক দোয়ার ফল দিয়ে দেবেন? কখনোই দেবেন না। কারণ এটা আল্লাহর সুন্নাহ নয়। তবে এটাও সত্য যে আল্লাহই তাঁর কাছে দোয়া কোরতে বোলেছেন, সাহায্য চাইতে বোলেছেন- আল্লাহর রসুলও আল্লাহর কাছে দোয়া কোরেছেন। প্রশ্ন হোল:
আল্লাহর রসুল (দ:) কখন দোয়া কোরেছেন?
সেই সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (দ:) দোয়া যে করেন নি তা নয়; তিনি কোরেছেন, কিন্তু যথা সময়ে কোরেছেন অর্থাৎ চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পর, সর্বরকম কোরবানির পর, জান বাজী রাখার পর যখন আমলের আর কিছু বাকি নেই তখন। বদরের যুদ্ধ শুরু হবার ঠিক আগের মুহূর্তে যখন মুজাহিদ আসহাব তাদের প্রাণ আল্লাহর ও রসূলের জন্য কোরবানি করার জন্য তৈরি হোয়ে সারিবদ্ধ হোয়ে দাঁড়িয়েছেন, এখনই যুদ্ধ আরম্ভ হবে, শুধু সেই সময় আল্লাহর হাবিব আল্লাহর কাছে দোয়া কোরলেন তার প্রভুর সাহায্য চেয়ে।
দ্বিতীয় হেজরী সনের ১৭ই রমযান তিনশতের চেয়ে সামান্য অধিক মোজাহেদ অস্ত্রশস্ত্রে সহস্রাধিক মক্কার নগররাষ্ট্রের কাফের সৈন্যকে মোকাবেলা করেন। মোসলেম সৈনিকদের এক পঞ্চমাংশের কিঞ্চিত অধিক লোক লৌহবর্ম পরিহিত ও উটের উপর সওয়ার ছিলেন। অবশিষ্ট মোজাহেদ ছিলেন পদাতিক এবং বর্মহীন। অনেকের কাছেই তলোয়ারও ছিল না। তাদের হাতে ছিল খেজুরের ডাল দিয়ে তৈরি লাঠি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হোচ্ছিল আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য পাগলপারা কিছু মানুষ জেনে বুঝে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে, যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের জীবন্ত ফিরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ কঠিন বিপদের সময় রসুলাল্লাহ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আল্লাহর দরবারে দু’আ কোরলেন : হে আল্লাহ! এ দিকে কোরায়েশরা নিজেদের অহংকারের যাবতীয় আয়োজনসহ উপস্থিত হোয়েছে। তারা তোমার রসুলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য এসেছে। হে আল্লাহ! তুমি তোমার অঙ্গীকার স্মরণ করো। এখন আসুক সেই সাহায্য, যার ওয়াদা তুমি আমার সাথে কোরেছিলে। হে আল্লাহ! আজ যদি এ মুষ্ঠিমেয় লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাহোলে দুনিয়ার বুকে তোমার এবাদত করার মত কেউ থাকবে না। এ সময় আবু বকর (রা:) বোললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কম দোয়া কোরুন। কারণ আল্লাহ আপনাকে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা তিনি অবশ্যই পূরণ কোরবেন।’ দোয়া করার সময় রসুলাল্লাহ (দ:) এতটা আকুল-হৃদয় হোয়ে পড়েন যে তিনি তাঁর তাবুর মধ্যে প্রায় চেতনালুপ্ত হোয়ে যান (ওহী আসার সময় এমনটা হোত)। এরপর তিনি জাগ্রত হোয়ে বলেন, ‘হে আবু বকর! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহর সাহায্য এসে গেছে। এই তো জিব্রাঈল। তিনি ঘোড়ার লাগাম ধোরে আছেন, আর তাঁর ঘোড়ার সামনের দাঁতগুলো ধূলা ময়লাযুক্ত।” (সিরাতুন্নবী (সা:)- ইবনে হিশাম)।
রসুলাল্লাহ যে দোয়া কোরলেন তার পেছনে কি ছিলো? ঐ দোয়ার পেছনে ছিলো আল্লাহর নবীর (দ:) চৌদ্দ বছরের অক্লান্ত সাধনা, সীমাহীন কোরবানি, মাতৃভূমি ত্যাগ কোরে দেশত্যাগী হোয়ে যাওয়া, পবিত্র দেহের রক্তপাত ও আরও বহু কিছু এবং শুধু তার একার নয়। ঐ যে তিনশ’ তের জন ওখানে তাদের প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য সালাতের মত সারিবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ানো ছিলেন তাদেরও প্রত্যেকের পেছনে ছিলো তাদের আদর্শকে, দীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা, বাড়ি-ঘর, স্ত্রী-পুত্র সহায়, সম্বল, ব্যবসা বাণিজ্য এক কথায় পার্থিব সমস্তকিছু নির্দ্বিধায় কোরবানি করা এবং নির্মম নির্যাতন সহ্য করা। প্রচেষ্টার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে শেষ সম্বল প্রাণটুকু দেবার জন্য তৈরি হোয়ে ঐ দোয়া কোরেছিলেন মহানবী (দ:)। ঐ রকম দোয়া আল্লাহ শোনেন, কবুল করেন, যেমন কোরেছিলেন বদরে। কিন্তু প্রচেষ্টা নেই, বিন্দুমাত্র সংগ্রাম নেই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত তুলে দোয়া আছে অমন দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। বদরের ঐ দোয়ার পর সকলে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, অনেকে জান দিয়েছিলেন, আমাদের ধর্মীয় নেতারা দোয়ার পর পোলাও কোর্মা খেতে যান, আর পকেট ভর্তি কোরে টাকা পয়সাও নিয়ে আসেন। ঐ দোয়া ও এই দোয়া আসমান যমীনের তফাৎ। (চোলবে…)
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান করেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।

আল্লাহর মো’জেজা: হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে (এনশা’ল্লাহ)

আল্লাহর মো’জেজা: হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে (এনশা’ল্লাহ)

মো’জেজা কী?
মো’জেজা এসলামের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ যুগে যুগে প্রতিটি মানব সম্প্রদায়ে নবী রসুল প্রেরণ কোরেছেন, তাঁরা এসে আল্লাহকে একমাত্র এলাহ (হুকুমদাতা) হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান কোরেছেন। আল্লাহর এই নবী ও রসুলগণ যখন তাঁদের সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বোলতেন, “আমাকে আল্লাহ নবী কোরে পাঠিয়েছেন”, তখন অধিকাংশ মানুষই তাঁদেরকে বিশ্বাস কোরত না, বোলত, “তুমি যে নবী তার প্রমাণ কি?” মানুষের কাছে নবী হিসাবে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টির জন্য আল্লাহ নবীগণকে কিছু অলৌকিক ঘটনা বা মো’জেজা সংঘটনের ক্ষমতা দান কোরতেন। অলৌকিক এ ঘটনাগুলি আল্লাহই ঘটাতেন, তবে নবীদের মাধ্যমে। অর্থাৎ নবী রসুলগণ যে সত্যিই আল্লাহর তরফ থেকে মনোনীত ও নবুয়্যত প্রাপ্ত ব্যক্তি তা সত্যায়নের জন্য যে অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা তাঁরা আল্লাহর হুকুমে ঘোটিয়ে দেখাতেন সেগুলোই হোচ্ছে মো’জেজা। পবিত্র কোর’আনে মো’জেজা শব্দটিই নেই, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ যে শব্দটি ব্যবহার কোরেছেন তা হোচ্ছে- আয়াহ, অর্থাৎ চিহ্ন (সুরা শুয়ারা-১৫২)। নবীদের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি অলৌকিক ঘটনা হোচ্ছে তাঁদের সত্যতার চিহ্ন। এ চিহ্ন দেখেই মানুষ বুঝতে পারে যে, এ লোকটি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল, নইলে সে যা কোরছে তা কিভাবে কোরছে? একাজ কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভবই নয়। সুতরাং সে যা বোলছে তা-ও সত্য, হক।
দুইভাবে সত্য বোঝা যায়, উপলব্ধি করা যায়। (ক) যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান, দলিল প্রমাণ ইত্যাদির মাধ্যমে, (খ) চাক্ষুস অর্থাৎ নিজের চোখে দেখে। সমাজে কিছু লোক আছে যারা তাদের যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান দ্বারা সত্যকে বুঝতে পারে না, তখন মহান আল্লাহ মো’জেজা ঘটান যেন আল্লাহর দেওয়া ঐ বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করার আর কোন কারণ থাকতে না পারে। বিভিন্ন নবীর মো’জেজাগুলি পর্যবেক্ষণ কোরলে আমরা তার মধ্যেও এ বিষয়টি লক্ষ্য কোরতে পারি। তা হোচ্ছে, যে নবীকে আল্লাহ যে সময়ে ও যে সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ কোরেছেন, তাঁকে সেই সময়ের লোকদের বুদ্ধিবৃত্তি ও পারিপার্শ্বিকতা অনুযায়ী মো’জেজা দান কোরেছেন। স্থান কাল পাত্রভেদে মো’জেজার ধরণের মধ্যেও বহু পার্থক্য এসেছে। যেমন মুসা (আ:) এর সময় মিশরে খুব যাদুর প্রচলন ছিলো। তাই মুসা (আ:) এর মো’জেজাও ছিলো যাদুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁকে মো’জেজার মাধ্যমে যাদুকরদের মোকাবেলা কোরতে হোয়েছিল। আমাদের নবীর সময়ে আরবে কাব্যচর্চা খুবই সমৃদ্ধি অর্জন কোরেছিল, তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনকে কোরেছেন ছন্দবদ্ধ ও কাব্যময়। যখন মানুষের যুক্তিবোধ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা কম ছিলো, তখন আল্লাহ যে মো’জেজাগুলি নবীগণকে প্রদান কোরেছেন সেগুলো ছিলো একেবারে প্রত্যক্ষ অর্থাৎ যুক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজন হোত না, চোখে দেখাই যথেষ্ট হোত এবং স্থুল বুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পারা যেতো। যেমন: সালেহ (আ:) এর নির্দেশে পাথর ভেদ কোরে উটের আবির্ভাব হওয়া, পাথর থেকে ঝর্ণা সৃষ্টি হওয়া, ঈসার (আ:) মৃতকে জীবিত করা, মাটির পাখিতে প্রাণ প্রবিষ্ট করা ইত্যাদি। যখন মানুষের যুক্তিবোধ ও চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেল সে সময়ের নবীদের মো’জেজাগুলিও হোয়ে গেলো খানিকটা চিন্তা এবং যুক্তিভিত্তিক। যেমন আমাদের রসুলের শ্রেষ্ঠ মো’জেজা হোচ্ছে আল কোর’আন। কোর’আন যে মানুষের রচনা নয় তা যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগ কোরেই বুঝতে হয়। হাজারটা প্রমাণ দেওয়া যাবে যা দিয়ে বোঝা যায় যে কোর’আন কোন মানুষের তৈরি হোতে পারে না, তবে সবগুলো প্রমাণই বুদ্ধিবৃত্তিক।
একবিংশ শতাব্দীতে মো’জেজার প্রাসঙ্গিকতা
আল্লাহর রসুল বিদায় নেওয়ার পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ে এসলাম বিকৃত হোতে হোতে এখন প্রকৃত এসলামের আর বিকৃত কঙ্কালটি ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। এমন সময় আল্লাহর রহমে এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আবার সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত এসলাম বুঝতে পেরেছেন। তিনি বোলছেন, বর্তমানে সারা দুনিয়ায় এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি চালু আছে সেটি আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম নয়, বরং প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রকৃত এসলামটা কি তাও তিনি মানবজাতির সামনে পেশ কোরেছেন। এখন প্রশ্ন হোল, তাঁর এই কথা সত্য না অসত্য তা আমরা কি কোরে বুঝবো? বর্তমানে চালু থাকা হাজার হাজার এসলামী মতবাদের ভিড়ে তাঁরটাই যে সত্য সে ব্যাপারে কি কোরে নিঃসন্দেহ হবো? এর একমাত্র পথ – আল্লাহ যদি পূর্বের মতো কোন মো’জেজা ঘোটিয়ে জানিয়ে দেন সেক্ষেত্রেই আমরা তা বুঝতে পারবো। কিন্তু আমাদের এমাম নবী রসুল নন যে আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে মো’জেজা ঘটাবেন, তাই এখন কোন বিষয়কে সত্যায়ন করার প্রয়োজন হোলে স্বয়ং আল্লাহর নিজেকেই মো’জেজা প্রদর্শন করা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
তাই গত ২ ফেব্র“য়ারি, ২০০৮ তারিখে হেযবুত তওহীদ ও তাঁর এমামকে সত্যায়ন করার জন্য আল্লাহই মো’জেজা সংঘটিত কোরলেন। গত ১৪০০ বছরে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির অভাবনীয় অগ্রগতি হোয়েছে। তাই এ মো’জেজার ঘটনাটিও সেই অগ্রসর বুদ্ধিবৃত্তির উপযোগী কোরেই আল্লাহ সংঘটন কোরেছেন। এই মো’জেজার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে জানিয়ে দিলেন যে: হেযবুত তওহীদ হক, সত্য; হেযবুত তওহীদের এমাম হক, অর্থাৎ আল্লাহর মনোনীত, এবং এই হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে তাঁর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরবেন।
বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর সেদিনের মো’জেজা
২৪ মহররম ১৪২৯ হেজরী মোতাবেক ২ ফেব্র“য়ারি ২০০৮ ঈসায়ী। এই দিন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোয়েছিল ছাদের ওপর প্যান্ডেল টানিয়ে; ওপরে এবং চারিদিকে কাপড় দিয়ে ঘেরা। অনুষ্ঠানে ২৭৫ জন মোজাহেদ-মোজাহেদা ও ৪৩টির মতো বাচ্চা ও শিশু, যাদের মধ্যে ৩ মাস থেকে ১ বছর বয়সের অন্ততঃ ৩ টি কোলের শিশু থেকে ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়ে উপস্থিত ছিলো। ছাদের ওপর এতগুলি মানুষের স্থান সংকুলানের সমস্যা হোচ্ছিল। এমামুয্যামানের বক্তব্য প্রদানের পূর্ব মুহূর্তে ছাদের পরিবেশ ছিলো খুবই হট্টগোলপূর্ণ। ৪৩টি বাচ্চার চিৎকার, চেঁচামেচি তো আছেই নিকটেই কোন মসজিদ বা ওয়াজ মাহফিল থেকে লাউড স্পিকারের আওয়াজ আসছিলো। বাড়িটি বিশ্বরোড সংলগ্ন হওয়ায় গাড়ির হর্নের ক্রমাগত আওয়াজ তো ছিলোই। কাছেই কোথাও একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারে বাজানো গান-বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বাইরে ছিলো প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহ। প্রচণ্ড বাতাসে প্যান্ডেলের কাপড় পত পত কোরে শব্দ কোরছিল। সেদিন ছিলো ঐ বছরের অন্যতম শীতল দিন। সবার শীতে খুব কষ্ট হোচ্ছিল। এরই মধ্যে এমামুয্যামান সবার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১০ মিনিটের একটি ভাষণ দিলেন, সেই ভাষণ লাউড স্পিকারে শোনানো হোল। যখন এমামুয্যামান তাঁর ভাষণ আরম্ভ কোরলেন তখন পরিবেশ পুরো অন্যরকম হোয়ে গেল। পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে যামানার এমামের ঐ ভাষণের সময় আল্লাহ ন্যূনতম আটটি মো’জেজা ঘটান। এ মো’জেজাগুলির উদ্দেশ্য ছিলো প্রধানত উপস্থিত সকলে যেন এমামুয্যামানের বক্তব্যটি সুস্পষ্টভাবে শুনতে পায়, কারণ ঐ ভাষণেই রোয়েছে হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা। অতি সংক্ষেপে মো’জেজাগুলি হোল:
১) এমামুয্যামানের ভাষণ আরম্ভ হওয়ার মুহূর্ত থেকে চারিদিকে একটি অদ্ভুত পিনপতন নীরবতা, নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মনে হোচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত শব্দ থেমে গেছে। কোথাও সামান্যতম শব্দ নেই, শুধু এমামুয্যামানের বলিষ্ঠ, সুন্দর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে এবং প্রতিটি শব্দ এত পরিষ্কারভাবে শোনা যাচ্ছে যে, পরে অনেকে বোলেছেন তাঁর সামনে বোসে তাঁর কথা কোনও দিন এত পরিষ্কারভাবে শোনা যায় নি। তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোলমাল শুরু হোল।
২) সেখানে ৪৩টি বিভিন্ন বয়সের শিশু ছিলো, যারা একটু আগেও তুমুল হৈ চৈ হট্টগোল কোরছিল। এমামের ভাষণ শুরু হোতেই তারা কি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই চুপ হোয়ে গেলো এবং ১০ মিনিট ধোরে চুপ রোইল। অথচ ৩/৪ টা বাচ্চাকে ২ মিনিট চুপ কোরিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভব ঘটনাই সেদিন ঘোটল।
৩) ঠান্ডা হাওয়া বন্ধ হোয়ে যাওয়া। ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে মিটিং করাই দুঃসাধ্য হোয়ে উঠেছিল। কিন্তু এমামের ভাষণের ঐ ১০ মিনিট শৈত্যপ্রবাহ পর্যন্ত বন্ধ হোয়ে গিয়েছিল। বাতাসের ধাক্কায় প্যান্ডেলের কাপড়ে যে আওয়াজ হোচ্ছিল তখন তাও বন্ধ হোয়ে গিয়েছিল। তখন যে পরিবেশটি তৈরি হোয়েছিল তা ছিলো সকলের জন্য আরামদায়ক।
৪) এমামের ভাষণ আরম্ভের একটু আগে পর্যন্তও অনুষ্ঠানের লাউড স্পিকার তিনটি শব্দ ছিলো অস্পষ্ট, খুব খেয়াল কোরে বুঝতে হোচ্ছিল। তিনটি স্পিকার তিন ধরণের হওয়ায় টিউন করা খুব কঠিন ছিলো, পুরো সাউন্ড সিস্টেমটাই ছিলো প্রায় অকেজো, পুরানো। কিন্তু এমাম কথা বলার সামান্য আগেই হঠাৎ লাউড স্পিকারের শব্দ একদম পরিষ্কার হোয়ে যায়। অনেকে বলেন, ‘আমরা লাউডস্পিকারের যে আওয়াজ শুনেছি তেমন আগে কখনো শুনি নাই, পরেও শুনি নাই।’
৫) অনুষ্ঠানস্থলে মোট ৫২টি মোবাইল ফোন চালু ছিলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশের আমীরগণ, যাদের প্রত্যেকের ফোনে প্রচুর কল আসে। কিন্তু এমামের ভাষণের সময় একটিতেও কোন রিং বাজে নাই, কোন কল আসে নাই।
৬) সময় সংকোচন। এমাম ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ড কথা বোলেছেন, অথচ সকলের কাছে মনে হোয়েছে মাত্র দু-এক মিনিট, সর্বোচ্চ তিন মিনিট।
৭) সবার অখণ্ড মনোযোগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মো’জেজা হোচ্ছে সকলের মনকে আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন কোরে এমামুয্যামানের ভাষণের প্রতি নিবিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন। কেউ বোলেছেন, মনে হোল যেন গভীর পানির মধ্যে বোসে এমামের কথা শুনছি, কেউ বোলেছেন, তখন মনে হোয়েছে পৃথিবীতে কেবল আমি আর এমাম আছি। আগের সবগুলি মো’জেজার একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিলো মোজাহেদেরকে এমামের ভাষণটা শোনানো। এ সময় কারো মনোযোগে যেন সামান্য বিচ্যুতি না ঘটে সেজন্য আল্লাহ পুরো পরিবেশটা এমন কোরে দিয়েছিলেন।
৮) ঘটনার চারমাস পরে আমরা উদ্ঘাটন কোরি যে, এই ভাষণে এমামুয্যামানের কথাগুলির মধ্যে আল্লাহ তিন (৩) সংখ্যার একটি অভূতপূর্ব সমন্বয় সাধন কোরেছেন। ভাষণের অন্তত ৩০টির অধিক বিষয় তিনবার কোরে এসেছে বা ৩ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: এমামুয্যামান শুরুতে দোয়া করেন তিনটি, শেষে দোয়া করেন তিনটি, দোয়া চান তিনটি বিষয়ের জন্য, ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনটি, ভাষণে জান্নাত শব্দটি আছে তিনবার, জাহান্নাম তিনবার, মোট উপস্থিতি ৩১৮ জন ইত্যাদি। ঠিক যেমনভাবে তিনি কোর’আনকে ১৯ সংখ্যা দিয়ে বেঁধেছেন। কোন মানুষের পক্ষে সারাজীবনের সাধনাতেও এটা করা সম্ভব নয়।
এই আটটি মো’জেজার মধ্যে সাতটি মো’জেজা আল্লাহ এমনভাবে ঘটালেন যেগুলি কেবলমাত্র ঐ সময়ে ঐ স্থানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই দেখতে পেলেন, অন্যরা সেটা দেখতে পায় নি। তাহোলে প্রশ্ন আসে, বাকি যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, বা যারা পরবর্তীতে আসবেন তারা কী কোরে ঐ মো’জেজার ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন? তাই তাদের এবং তাদের পরবর্তী সকল মানুষের জন্য আল্লাহ সেখানে একটি মো’জেজা ঘটালেন এমনভাবে যেটি ঐ স্থান-কাল-পাত্রের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, অন্যরাও এটা দেখতে পাবে। এটি আল্লাহ ঘটালেন কোর’আনের সংখ্যা সংক্রান্ত মো’জেজাটির সাথে মিল রেখে। সমস্ত কোর’আনকে আল্লাহ যেভাবে উনিশ সংখ্যার জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন, ঠিক একইভাবে সেদিন এমামের সংক্ষিপ্ত ভাষণটিকে আল্লাহ বাঁধলেন তিন সংখ্যার জাল দিয়ে। উদ্দেশ্যও এক অর্থাৎ সত্যায়ন। এর দ্বারা আল্লাহ এটাই প্রকাশ কোরছেন যে, ‘ঐ ভাষণে যে কথাগুলো বলা হোয়েছে এগুলো যে মানুষটি বোলছেন তাঁর স্বরচিত নয়, এগুলো আমারই (আল্লাহর) কথা এবং তিনি আমারই মনোনীত ব্যক্তি।’
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান করেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত। মো’জেজা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পড়–ন “আল্লাহর মোজেজা: হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা” নামের বইটি।