Sunday, May 31, 2015

মসজিদসমূহে হেদায়াহ থাকবে না এর অর্থ কি ???

মসজিদসমূহে হেদায়াহ থাকবে না

Mashzidমাননীয় এমামুয্যামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
আল্লাহর শেষ রসুল আখেরী যামানা সম্পর্কে বোলেছিলেন, এমন সময় আসবে যখন (১) এসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ এবং লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু তাতে হেদায়াহ থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের উপরই পতিত হবে (হযরত আলী (রা:) থেকে বায়হাকী, মেশকাত)। রসুলাল্লাহর পবিত্র মুখনিঃসৃত এই বাণীগুলো আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হোয়েছে। এর আগে আমরা ‘এসলাম শুধু নাম থাকবে’ ও ‘কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে’ বর্তমানের আলোকে রসুলের এই ভবিষ্যদ্বাণীদু’টোকে আলোকপাত কোরেছিলাম। আজ আমরা আলোচনা কোরব ‘মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না’- এই বিষয়টি নিয়ে।
আল্লাহর রসুলের ভবিষ্যদ্বাণী করা তৃতীয় বিষয়টি হোচ্ছে, মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। প্রথম অংশটির ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ এটা সকলেই জানেন যে, সারা দুনিয়াতে এমন বহু মসজিদ রোয়েছে যার গম্বুজ সোনার তৈরি। আমাদের দেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের অলিতে গলিতে রোয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ, এসব মসজিদে প্রায়ই মুসল্লীদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় চট বিছিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায়। কথা হোচ্ছে, রসুল বোললেন এই মসজিদগুলিতে হেদায়াহ থাকবে না। কী এই হেদায়াহ? প্রচলিত ধারণা হোল, কোনো দুষ্ট প্রকৃতির গোনাহগার লোককে যদি উপদেশ দিয়ে মদ খাওয়া ছাড়ানো যায়, চুরি-ডাকাতি ছাড়ানো যায়, তাকে নামাজী বানানো যায়, রোজা রাখানো যায় তবে আমরা বলি- লোকটা হেদায়াত হোয়েছে। এই ধারণা ভুল, কারণ মানুষ নামাজ পড়তেই মসজিদে যায় অথচ বলা হোচ্ছে সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। তাহোলে রসুলাল্লাহর কথা মোতাবেকই বুঝা গেলো হেদায়াহ একেবারেই অন্য জিনিস। কারণ বর্তমানে যে কাজগুলিকে এবাদত মনে করা হয় যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি, সেগুলি কোরলেই হেদায়াতে থাকা হোল এ ধারণা ভুল। হেদায়াহ অর্থ হোচ্ছে সঠিক দিক নির্দেশনা (Right direction, guidance, orientation) Mঅর্থাৎ আল্লাহ রসুল মানবজাতিকে যে পথ প্রদর্শন কোরেছেন, যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই পথে, সেই দিকে চলাই হোচ্ছে হেদায়াহ। আল্লাহ যে পথে চোলতে আদেশ দিচ্ছেন সেটা হোল সেরাতুল মোস্তাকীম- সহজ, সরল পথ, জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে, সর্ব বিভাগে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন-কানুন, নীতি নির্দেশ অস্বীকার করা এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো খেলাফত না করাÑ এক কথায় তওহীদ; এই সহজ সোজা কথা। আর আজ সারা দুনিয়ার কোথাও আল্লাহকে একমাত্র এলাহ, হুকুমদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক হিসাবে মানা হোচ্ছে না, এমন কি ঐ জাঁকজমকপূর্ণ সোনার গম্বুজওয়ালা মসজিদগুলিতেও এই হেদায়াহ নেই, সেখানেও চোলছে তাগুতের গোলামি।
অথচ আল্লাহর রসুল এবং প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী খেজুর পাতার ছাউনি দেওয়া মাটির মসজিদ থেকে অর্ধপৃথিবী শাসন কোরেছেন, তাঁদের মসজিদসমূহ কোনোই জাঁকজমকপূর্ণ ছিলো না। তবু যে ভূখণ্ডে এই জাতি শাসন কোরেছেন সেখান থেকে সমস্ত অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাত, ক্ষুধা দারিদ্র্য, শোষণ এক কথায় সর্ব প্রকার অন্যায় অশান্তি লুপ্ত হোয়ে গিয়েছিল। অর্ধেক পৃথিবীর কোথাও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী না থাকা সত্ত্বেও সমাজে বোলতে গেলে কোনো অপরাধই ছিলো না। সুন্দরী যুবতী নারী অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ একা পাড়ি দিত, তার মনে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না, রাস্তায় ধন-স¤পদ ফেলে রাখলেও তা খোঁজ কোরে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে বছরের পর বছর কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মতো লোক পাওয়া যেত না। এই পরিবেশ সৃষ্টি হোয়েছিলো, কারণ ঐ জাতি হেদায়াতে ছিলো, তওহীদে ছিলো। তাদের এলাহ, বিধাতা, হুকুমদাতা ছিলেন আল্লাহ।
আর আজ যারা সোনার গম্বুজওয়ালা মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন তাদের কারও এলাহ গণতন্ত্র, কারও রাজতন্ত্র, কারও সমাজতন্ত্র, কেউ সরকারী দলের, কেউ বিরোধীদলের অনুসারী, অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কোথাও নেই। সবাই ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র অর্থাৎ দাজ্জালের সার্বভৌমত্ব মাথায় নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে দৌঁড়ে পাক্কা মুসল্লী হোচ্ছে। এ জন্যই আল্লাহর রসুল বোলেছেন, মসজিদ সমূহ ভর্তি হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। পাঠক, ভেবে দেখেছেন কি, মোসলেম জাতি যদি হেদায়াতেই না থাকে তবে কোথায় রোয়েছে? নিশ্চয়ই হেদায়াতের বিপরীত অর্থাৎ পথভ্রষ্টতায়, যদি সেরাতুল মোস্তাকীমেই না থাকে তবে নিশ্চয়ই রোয়েছে এবলিসের বক্রপথে। এই পথ তাদেরকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে- জান্নাতে, না জাহান্নামে?

দাজ্জালের এক হাতে জান্নাত আরেক হাতে জাহান্নাম

দাজ্জালের এক হাতে জান্নাত আরেক হাতে জাহান্নাম

Dajjal greyমাননীয় এমামুয্যামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
আল্লাহর রসুল বোলেছেন, “দাজ্জালের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো দুটি জিনিস থাকবে। সে যেটাকে জান্নাত বোলবে আসলে সেটা হবে জাহান্নাম, আর সে যেটাকে জাহান্নাম বোলবে সেটা আসলে হবে জান্নাত। তোমরা যদি তার (দাজ্জালের) সময় পাও তবে দাজ্জাল যেটাকে জাহান্নাম বোলবে সেটাতে তোমরা পতিত হয়ো, সেটা তোমাদের জন্য জান্নাত হবে।” (আবু হোরায়রা (রাঃ) এবং আবু হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম)
সময়কাল ১৫৩৭, রাজা অষ্টম হেনরির রাজত্বকাল। খ্রিস্টধর্মে রাষ্ট্রীয় আইন বিধান না থাকায় এর মাধ্যমে সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা ব্যর্থ হওয়ার পর সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে মানুষের হাতে তুলে নেবার মধ্য দিয়েই জন্ম দাজ্জালের। দাজ্জালীয় সভ্যতায় মানুষের দ্বারাই সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি তৈরি কোরে মানব জীবন পরিচালনা আরম্ভ হোল, যার নাম দেয়া হোল ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (Secular Democracy) । এই গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব রোইল মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে। মানুষকে আল্লাহ সামান্য জ্ঞানই দিয়েছেন সেহেতু সে এমন সংবিধান, আইন-কানুন দণ্ডবিধি, অর্থনীতি তৈরি কোরতে পারে না যা নিখুঁত, নির্ভুল ও ত্র“টিহীন, যা মানুষের মধ্যকার সমস্ত অন্যায়, অবিচার দূর কোরে মানুষকে প্রকৃত শান্তি (এসলাম) দিতে পারে। কাজেই ইউরোপের মানুষের তৈরি ত্র“টিপূর্ণ ও ভুল আইন-কানুনের ফলে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে অন্যায় ও অবিচার প্রকট হোয়ে উঠলো। বিশেষ কোরে অর্থনৈতিক জীবনে সুদভিত্তিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করায় সেখানে চরম অবিচার ও অন্যায় আরম্ভ হোয়ে গেলো। মুষ্টিমেয় মানুষ ধনকুবের হোয়ে সীমাহীন প্রাচুর্য ও ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে গেলো আর অধিকাংশ মানুষ শোষিত হোয়ে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নেমে গেলো। স্বাভাবিক নিয়মেই ঐ অর্থনৈতিক অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ইউরোপের মানুষের এক অংশ বিদ্রোহ কোরল ও গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা কোরল। ইউরোপের মানুষের অন্য একটা অংশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অন্যান্য দিকের ব্যর্থতা দেখে সেটা বাদ দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরল। অর্থাৎ গণতন্ত্র থেকে একনায়কতন্ত্র, ধনতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ এগুলো সবই অন্ধকারে হাতড়ানো, এক ব্যবস্থার ব্যর্থতায় অন্য নতুন আরেকটি ব্যবস্থা তৈরি করা কিন্তু মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রকৃতপক্ষে সমষ্টিগত জীবনের ধর্মহীনতা অবলম্বন করার পর থেকে যতো তন্ত্র (-cracy), যতো বাদই (-ism) চালু করার চেষ্টা ইউরোপের মানুষ কোরেছে সবগুলির সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে রোয়েছে। অর্থাৎ রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, এসবগুলিই মানুষের সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধাপ, বিভিন্ন পর্যায় (Phase, step) মাত্র। এই সবগুলি তন্ত্র বা বাদের সমষ্টিই হোচ্ছে এই ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা, দাজ্জাল।
এই দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা পৃথিবীর মানবজাতিকে বোলছে- মানুষের সমষ্টিগত জীবন যাপনের জন্য আমাদের এই ধর্মনিরপেক্ষ প্রণালীই হোচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা এই ব্যবস্থা মেনে নাও, গ্রহণ করো তাহোলে তোমরা স্বর্গসুখে বাস কোরবে। আর যদি আমাদের এই নীতি তোমরা গ্রহণ না করো, তবে তোমরা দারিদ্র্য, ক্ষুুধা অশিক্ষার মধ্যে জাহান্নামের কষ্ট ভোগ কোরতে থাকবে। যারা দাজ্জালের কথায় বিশ্বাস কোরে ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বহীন জীবন-ব্যবস্থা মেনে নেবে তাদের সে গ্রহণ কোরে তার জান্নাতে স্থান দেবে, তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি সর্বতোভাবে সাহায্য কোরবে। আর যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান কোরবে তাদের সে তার বিরাট ধন ভাণ্ডার থেকে কোন অর্থনৈতিক সাহায্য দেবে না, তাদের সে রাজনৈতিক, সামরিকভাবে বিরোধিতা কোরবে অর্থাৎ সে তাদের তার জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরবে।
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা স্বীকার কোরে নেবার ফলে দাজ্জালের জান্নাতে স্থান পাবে তারা দেখবে প্রকৃতপক্ষে তা জাহান্নাম। আর যারা দাজ্জালকে অস্বীকার করার দরুন তার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে দেখবে তারা জান্নাতে আছে। আল্লাহর রসুলের কথা সত্য কিনা যাচাই কোরে দেখা যাক। দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই মানুষের একমাত্র গ্রহণযোগ্য সভ্যতা, জীবন-ব্যবস্থা এই প্রচারণায় বিশ্বাস কোরে যে জনসমষ্টি, জাতি বা দেশ তা গ্রহণ কোরেছে অর্থাৎ দাজ্জালের জান্নাতে, স্বর্গে প্রবেশ কোরেছে অতি শীঘ্রই তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা আসলে নরকে প্রবেশ কোরেছে। কথাটা ভালো কোরে বোঝার জন্য দাজ্জালের উগ্রতম রূপ কমিউনিজমকে বিবেচনায় নেয়া যাক।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও, টেলিভিশনে-এ কথা লক্ষ কোটি বার বলা হোয়েছে যে সাম্যবাদী সমাজে, দেশে থাকা স্বর্গের সুখে থাকার সমান। তারা তাদের সমাজটাকে সর্বদাই স্বর্গ (Paradise) বোলে বাকি পৃথিবীকে সাম্যবাদ গ্রহণ কোরে স্বর্গে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিশ্বনবী ঠিক ঐ জান্নাত অর্থাৎ Paradise শব্দটাই ব্যবহার কোরেছেন। কমিউনিস্ট ব্যবস্থা গ্রহণ ও কার্যকরী করার কিছু পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেকে বাকি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কোরে ফেললো। তার কারণ হোল এই যে, স্বর্গের প্রতিশ্র“তি পেয়ে সেই স্বর্গে প্রবেশ করার পর সেসব দেশের জনসাধারণ অতি শীঘ্রই বুঝতে পারলো যে এ তো স্বর্গ নয়, এ তো নরক। তখন ঐসব দেশের জনসাধারণ তাদের জন্মভূমি থেকে পালিয়ে অজানা দেশে চোলে যাবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এই চেষ্টায় তারা পরিবারের অন্যদের প্রাণও বিপন্ন কোরেছে, সহায়-সম্পদ বিসর্জন তো ছোট কথা। কমিউনিস্ট পূর্ব বার্লিন থেকে পশ্চিম বার্লিনে লোক পালিয়ে যাওয়া বন্ধ কোরতে রাশিয়ানরা কুখ্যাত বার্লিন দেয়াল তৈরি কোরল। তবুও মানুষ পালানো বন্ধ করা যায় না দেখে দেয়ালের ওপর প্রতি পঞ্চাশ গজ অন্তর স্তম্ভ (Watch tower) তৈরি কোরে সেখানে মেশিনগান বসানো হোল। হুকুম দেয়া হোল কাউকে দেয়াল টপকে পালাতে দেখলেই গুলী কোরে হত্যা কোরতে। তবু লোক পালানো বন্ধ হয় না দেখে পরিখা খোড়া হোল, কঁাঁটাতারের বেড়া দেয়া হোল ও নানা রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বসানো হোল পলায়নকারীদের খুঁজে বের কোরে হত্যা বা বন্দী করার জন্য। কিন্তু কিছুতেই- ‘স্বর্গ’ থেকে পালানো বন্ধ করা গেলো না। ১৯৪৯ সন থেকে ১৯৬১ সন পর্যন্ত ২৭ লাখ নর-নারী, শিশু কমিউনিস্ট স্বর্গ থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয় এবং ঐ সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ ঐ পালাবার চেষ্টায় নিহত হয়, বন্দি হয়।
চীনেও ঐ একই ব্যাপার হোয়েছে। মোহভঙ্গের পর হাজার হাজার চীনা তাদের দেশ থেকে বাইরের জগতে পালিয়ে যাবার চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছে, বন্দি হোয়েছে। যুদ্ধে আমেরিকানরা হেরে যাবার পর সম্পূর্ণ ভিয়েতনাম কমিউনিস্টদের হাতে চোলে যাবার পর শুধু দাজ্জালের ‘স্বর্গ’ থেকে পালাবার জন্য মরিয়া হোয়ে যে নৌকায় একশ’ জনের স্থান হবে সে নৌকায় পাঁচ সাতশ’ মানুষ ভর্তি হোয়ে সমুদ্রে ভেসেছে। হাজার হাজার নৌকা জোর বাতাসে, ঝড়ে ডুবে গেছে, হাজার হাজার নৌকা জলদস্যুরা (Pirates) আক্রমণ কোরে লুটে নিয়েছে, মানুষদের হত্যা কোরে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ কোরেছে, তাদের বিদেশে বিক্রি কোরে দিয়েছে।
এ সমস্ত খবর হাজার হাজার বার সমস্ত পৃথিবীর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হোয়েছে, বহু ছবি ওগুলিতে ছাপা হোয়েছে। ভিয়েতনামেও এসব খবর পৌঁছেছে, কিন্তু তাতেও ঐ স্বর্গের অধিবাসীদের ফেরাতে পারে নি। তারপরও তারা স্ত্রী-পুরুষ, নারী ও শিশুদের দিয়ে নৌকা অতিরিক্ত বোঝাই কোরে প্রাণ হাতে নিয়ে অজানা সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হোল- এ কী রকম ‘স্বর্গ’ যে স্বর্গের অধিবাসীরা সেখান থেকে পালানোর জন্য প্রাণ হাতে নেয়, সমুদ্র সাঁতরে পার হবার চেষ্টায় ডুবে মরে, ছোট ছোট নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দেবার চেষ্টা করে, ইলেকট্রিক কাঁটা তারের শক্ খেয়ে মরে, ‘স্বর্গরক্ষীদের’ গুলী খেয়ে মরে!
এসবই প্রমাণ কোরে দিয়েছে মহানবীর সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা। আজ সমস্ত পৃথিবী দাজ্জালের জান্নাত, প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামে পরিণত হোয়ে আছে।
সুতরাং এখন মানবজাতির সর্বপ্রধান কর্তব্য হোল ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’-কে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানবজাতিকে এই ভয়ঙ্কর ফেতনা থেকে উদ্ধার করা। আল্লাহর রহমে হেযবুত তওহীদ এই কাজই কোরছে। দাজ্জালের মানদণ্ডে বিশ্বাসী সামাজিক কাঠামোর নিুতম পর্যায় থেকে শুরু কোরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের অনুসারীগণ চরমভাবে দাজ্জালের অনুসারীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত, নিপীড়িত হোয়েছেন। হাজারো মিথ্যা অভিযোগে তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হোয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হোয়েছে, বহুজনকে নিজ পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ কোরে দেওয়া হোয়েছে, সহায় সম্পত্তি লুট করা হোয়েছে, অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হোয়েছে, একজন পুরুষ ও একজন নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে শহীদ করা হোয়েছে। অর্থাৎ রসুলের কথামত দাজ্জাল তার প্রতিরোধকারীদেরকে তার জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরছে। এটা হেযবুত তওহীদের জন্য অতি বড় সুসংবাদ, কেননা দাজ্জালের জাহান্নামই হবে প্রকৃতপক্ষে জান্নাত।

ব্রিটিশ প্রবর্তিত আত্মাহীন শিক্ষাব্যবস্থায় আমার মাদ্রাসা জীবনের তিক্ত স্মৃতি

ব্রিটিশ প্রবর্তিত আত্মাহীন শিক্ষাব্যবস্থায় আমার মাদ্রাসা জীবনের তিক্ত স্মৃতি

britishরাকীব আল আল হাসান:
বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে কোর’আনের হাফেজ বানাবে। তাই শিক্ষাজীবনের শুরুটা হয় হাফেজিয়া মাদ্রাসার কঠোর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে। এরপর আলিয়া মাদ্রাসায়ও ছাত্রজীবনের বেশ কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়। যে বয়সে গ্রামের শিশুগুলো রোদ-ঝড়-বৃষ্টি এক করে বেড়ায়, ফেরারি চিল হয়ে উড়ে বেড়ায়, ক্লান্তি চূর্ণ করার ছলে স্নেহসিক্ত হতে আসে বড়দের কাছে সেই বয়সে চার দেয়ালের মাঝে আটকা পড়েছি পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখির মতো, স্নেহের পরিবর্তে পেয়েছি যাকে শাসন না বলে নির্যাতন বললেই যথার্থ হয়। যাই হোক, সঙ্গত কারণেই মাদ্রসাশিক্ষিত আলেম-মোল্লাদের সম্পর্কে বেশ পরিষ্কার একটি ধারণা আমার আছে। আজ অনেকগুলি বছর পরেও সেই পেছনের দিনগুলির তিক্ততা আমার চিত্তকে বিষময় করে তোলে।
স্মৃতিখণ্ড:
১. এক সহপাঠিকে একদিন ডুকরে কাঁদতে দেখে কারণ জানতে চাইলে সে তার পিঠ দেখাল। পিঠের ওপর প্রায় বার থেকে পনেরটা স্পষ্ট বেত্রাঘাতের দাগ। সাদা পিঠ একেবারে রক্তীম হয়ে আছে। পিঠে হাত দিতেই চাপা কান্নার আওয়াজটা আরও করুণ আর বাধ ভাঙ্গা হয়ে উঠল। অপরাধ ছিল- টেলিভিশন দেখা।
২. মাঝে-মধ্যেই আমাদের হাতের নখ, চুল, দাড়ি, পকেটে মেসওয়াক ও ঢিলা-কুলুখ আছে কিনা ইত্যাদি চেক করা হতো। চুল, নখ, দাড়ি, মেসওয়াক ইত্যাদির জন্য বেত্রাঘাত ছিল সাধারণ ঘটনা। আমার খুব ভালো মনে আছে মিজান ভাইয়ের কথা। সে দাড়ি শেভ করে কিনা এটা বের করার জন্য রীতিমতো গয়েন্দাগিরি, গবেষণা হয়েছে বিস্তর। অবশেষে প্রমাণ হয়েছে যে সে দাড়ি শেভ করেছে। এর শাস্তি স্বরূপ তাকে নিষ্ঠুর বেত্রাঘাত করে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। এর কিছুদিন পরে তার সাথে আমাদের একবার দেখা হয়েছিল। ক্লিন শেভ করে প্যান্ট শার্ট ইন করে চোখে কালো গ্লাস পরে আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিল, তখন সে স্কুলে পড়ে। তখন সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায়। তাকে দেখে মনে হয়েছিল-
“ওহে বিহঙ্গ/তোর ঐ পাঙ্খা দে না মরে কর্জ
যাই ঐ দূর নীলিমায়”
৩. একজনের অপরাধ ছিল ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে শার্ট গায়ে ছবি তুলেছিল। সাংঘাতিক দণ্ডনীয় অপরাধ। একইসাথে দুইটি অপরাধ করেছে সে, শার্ট গায়ে দিয়েছে এবং ছবি তুলেছে। দুটিই না’জায়েজ। এই অপরাধে তাকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদে সারাটা দুপুর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল এবং শপথ করতে হয়েছিল এমন অপরাধ পুনরায় না করার।
৪. নাসির ভাই নামে একজন সহপাঠি ছিল। সে লজিং বাড়িতে পাপিয়া নামে এক মেয়ের সাথে প্রেম করতো। এই ঘটনা তার সমবয়সী কিছু ছাত্রও জানতো। ব্যাপারটা যখন হাফেজ সাহেবের কানে আসলো তখন মাদ্রাসার বড় হুজুররা বসে তার বিচার করে শাস্তি নির্ধারণ করল। একটা বন্ধ রুমের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষক তাকে বেত দিয়ে প্রহার করে রক্তাক্ত করল। রুম থেকে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় বের করা হলো। তার গায়ের জামা এমন রক্তাক্ত হয়েছিল যে শরীরের সব রক্ত যেন শুষে খেয়েছিল তার ছিন্ন বসন। আমি কখনো ভুলতে পারি না সেই স্মৃতি। সেদিন সংগোপনে মনের মধ্যে অনেক অশ্র“বর্ষণ হয়েছিল, ভয়ে কান্না আটকে রেখেছিলাম।
৫. আমার মাদ্রাসা জীবনে এভাবে রক্তাক্ত হতে দেখেছি তিনজনকে। একজনেরটা বললাম। আর অপর দু’জনের মধ্যে একজনের অপরাধ ছিল বিদায় অনুষ্ঠানের মিষ্টি চুরি করে খাওয়া। এটা ছিল আলিয়া মাদ্রাসার হোস্টেলের ঘটনা, যদিও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি ছিল ষড়যন্ত্রের শিকার। তার নাম রওশন। রওশন ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমাদের বাড়িতে লজিং থাকতেন। তিনি ছিলেন এতিম। খুবই শান্ত মেজাজের মানুষ ছিলেন। অন্য কিছু ছাত্র বিদায় অনুষ্ঠানের মিষ্টি চুরি করে খেয়ে তার ওপর দোষ চাপিয়েছিল। আর এই অপরাধেই তার গায়ের সাদা জামাটি রক্তে লাল হয়েছিল। আমার বাড়ির প্রায় সকলেই তার জন্য কেঁদেছিল।
৬. রক্তাক্ত হওয়ার তৃতীয় ঘটনাটি ছিল সমকামিতার। এই ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটতো, তবে অপরাধীরা যখন বুঝতে পারতো যে হাফেজ সাহেবের কাছে তথ্য পৌঁছেছে তখনই তারা মাদ্রাসা ছেড়ে পালাতো এবং কখনোই তাদের আর দেখা যেত না। এই ব্যক্তিকে পালাতে দেওয়া হয় নি। কিছু ছাত্র তাকে আটকে রেখে পুণ্য কামিয়েছে। আমার ছাত্রজীবনে যতগুলি হেফজখানা এবং আবাসিক মাদ্রাসায় পড়েছি, এই অপরাধটিই সবচেয়ে বেশি দেখেছি। সব সময়ই দেখেছি প্রায় পাঁচ-ছয় জোড়া সমকামী ছিলই। অনেক শিক্ষককেও সমকামী হওয়ার অপরাধে বিতাড়িত হতে হয়েছে বলে শুনেছি।
৭. অধিকাংশ ছাত্রকেই দেখেছি তাদের অভিভাবকের চাপে, তাদের ইচ্ছা পূরণকল্পে মাদ্রাসায় পড়তে। মাদ্রাসার প্রতি, বিশেষ করে মাদ্রাসার কঠোর অনুশাসনের প্রতি তাদের মোটেও শ্রদ্ধাবোধ নেই। এ ছাত্রই যখন বড় হয়ে শিক্ষক হচ্ছে তখন তাদের মাঝে ইসলাম বলতে শুধু দাড়ি, টুপি আর বিকৃত আরবীয় লেবাস ছাড়া আর কিছুই থাকছে না। আমি খুব কমই দেখেছি কোন জনকল্যাণমূলক কাজে মাদ্রাসাশিক্ষিতদের দান করতে, সহযোগিতা করতে। দীনের কাজের বিনিময় নেয়া, সরকারী পরিদর্শক আসলে তাকে ঘুষ দেওয়া, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, মিথ্যা ফতোয়া দেওয়া তাদের কাছে যেন কোন অপরাধই না।
এগুলি আমার হাফিজিয়া ও আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময়ের কিছু স্মৃতি। আমি নিজে না দেখলেও নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে জানি যে কওমী মাদ্রাসার চিত্র আরো ভয়াবহ। মাদ্রাসাশিক্ষিত মোল্লাদের সবচেয়ে বড় একটি বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তারা জোর করে মানুষের উপর ইসলাম চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ চান মানুষকে পরীক্ষা করতে যে মানুষ তার জ্ঞান বুদ্ধি ব্যবহার করে সঠিক কাজ করে নাকি ভুল কাজ করে। এজন্য তিনি এই দীনের নীতি হিসাবে নিয়েছেন যে, এই দীনে কোনো জবরদস্তি নেই (সুরা বাকারা ২৫৬)। জোর করে কিছু করালে তার পরীক্ষা হবে কিভাবে? উপরন্তু এই মোল্লারা সেটা চাপিয়ে দিতে চাইছে সেটাও আল্লাহ রসুলের ইসলাম নয়। প্রকৃত ইসলাম কারও জন্য কষ্ট বয়ে আনতে পারে না। অথচ তাদের কর্তৃত্বের সীমিত গণ্ডির মধ্যে থাকা কিছু দরিদ্র পরিবারের নিরীহ ছাত্রছাত্রীদেরকে তারা যে পরিবেশে থাকতে বাধ্য করছে সেটা অমানবিক বর্বরতা। যেটা থেকে বেরোনোর জন্য সেখানকার ছাত্র নামক বন্দী জীবগুলির আত্মা সবসময় ওষ্ঠাগত হয়ে থাকে। জানি না এই অবিচারের হাত থেকে তারা কবে রক্ষা পাবে? আফগানিস্তানে তালেবানদের মাধ্যমে ঠিক এই ইসলামটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিছুদিন আগে। সেখানে জোর করে দাড়ি রাখানো হতো, হেজাব করানো হতো, নামাজ পড়ানো হতো এছাড়াও অনেক কিছুই জোর করে করানো হতো। অথচ আল্লাহ তাঁর রসুলকে বলছেন, “তুমি তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকো, নিশ্চয় তুমি তো তাদের নিকট একজন উপদেশদাতা মাত্র। তাদের উপর তোমাকে আমি বলপ্রয়োগকারী দারোগা হিসাবে পাঠাই নি।” (সুরা গাশিয়াহ- ২১, ২২)। আফগানিস্তানে যদি কখনো কাউকে হেজাব বাদে বাইরে দেখেছে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে, নামাজ কাযা করার জন্য অমানবিক দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবে এখনও কেবল চোখ আর হাতের কব্জি ছাড়া দেহের আর কোন অংশ উন্মুক্ত থাকলে তাকে ধর্মপুলিসের লাঠিপেটা খেতে হয়। পদে পদে নারী ও পুরুষকে জোর করে ধর্ম মানানো হয়। আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলিতে যে ইসলামটা দেখি সেই একই ইসলাম। পার্থক্য যে সেখানে এটা জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আর আমাদের এখানকার মোল্লারা কাপুরুষতার সীমা অতিক্রম করতে পারে নি দেখে নিজেদের বাঁশবাগানের মধ্যে বাঘ সেজে বসে আছে। সুতরাং এইসব মাদ্রাসায় যা চলছে তা ইসলামের নামে ইউরোপীয় বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মনুসংহিতায় নারীর অধিকার ও মর্যাদা

মনুসংহিতায় নারীর অধিকার ও মর্যাদা

P1030074রিয়াদুল হাসান:
ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ ও গীতার পরই মনুসংহিতার স্থান নির্দেশ করা হয়। ভারতীয় ঋষিদের বিশ্বাস- মনুসংহিতায় সমস্ত বেদের অর্থ নিহিত রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দণ্ডবিধি প্রভৃতির বিচিত্র আধার এই গ্রন্থটি। এ ধরণের ধর্মশাস্ত্র সাধারণত ‘স্মৃতিশাস্ত্র’ নামে অভিহিত এবং এই স্মৃতিশাস্ত্র-প্রণেতাদের মধ্যে মনুই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হয়ে আসছেন। মনুর প্রকৃত পরিচয় নিয়ে আমরা অন্য প্রবন্ধে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি, আজকের প্রসঙ্গ ভিন্ন। কেবল একটি মূল সত্য উল্লেখ করা যেতে পারে। সেটা হচ্ছে, ইতিহাসে ১৪ জন মনুর উল্লেখ পাওয়া যায়। এরমধ্যে বৈবস্বত মনু হচ্ছেন অন্যান্য ধর্মগ্রন্থসহ কোর’আনে বর্ণিত নুহ (আ:)। একটি মহাপ্লাবনে মানবজাতি ধ্বংস হয়ে আবার মনু (আ:) থেকে শুরু হয়েছিল, তাই হিন্দুধর্মশাস্ত্রে মনুকে মানবজাতির আদিপিতা বলে অভিহিত করা হয়। ঋগে¦দে এবং প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে নানা প্রসঙ্গে মনুকে মনুষ্যজাতির জনক আদিপিতা, পুরাতন ঋষি, অগ্নিদেবের সংস্থাপক, অর্থশাস্ত্রের প্রণেতা, কৃতযুগের রাজা প্রভৃতিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদের ঋষি বলছেন- “প্রজাপতি (ব্রহ্মা) মনুকে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং মনুই প্রজাদের মধ্যে তা প্রচার করেন।” তাঁর উপরই আল্লাহ সর্বপ্রথম ধর্মগ্রন্থ নাযেল করেন যার নাম বেদ। বেদের ধারক এবং মনুর অনুসারীরাই বর্তমানে হিন্দু বা সনাতন ধর্মী হিসাবে পরিচিত। অনেকে অভিযোগ করেন, মনুসংহিতা একটি নারীবিরোধী গ্রন্থ। এ প্রসঙ্গে আলোচনার আগে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, পণ্ডিত ও বিদ্বান সমাজ একথা বহুবার স্বীকার করেছেন যে, সনাতন ধর্মশাস্ত্রের একটি গ্রন্থও তার সঠিক অবস্থানে নেই। মনুসংহিতাতেও বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। অনেক সময় স্বার্থান্বেষী পুরোহিতরা নিজেদের পক্ষে ধর্মকে টানার জন্য ঐশী গ্রন্থে বা ঐশী শিক্ষামূলক গ্রন্থে নিজেদের মনগড়া কথাকে ঈশ্বরের বাণী বলে ঢুকিয়ে দেয়। শ্লোক রচনার গঠন রীতির আধুনিকতা ও প্রাচীনতা বিবেচনা করে এই জাল শ্লোকগুলো আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। এই জাতীয় অপকর্মে কোনো ধর্মের পুরোহিতরাই পিছিয়ে নেই। ইসলাম ধর্মের পুরোহিতরা কোর’আনে কিছু পরিবর্তন করতে পারেন নি, কারণ এই মহাগ্রন্থ শেষ ঐশীগ্রন্থ। তাই আল্লাহ নিজে এর সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন (সুরা হিজর ৯)। কিন্তু হাদীস বা ইতিহাস, মাসলা মাসায়েল বা ফেকাহ শাস্ত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নেন নি। সেখানে এই পুরোহিত আলেম ওলামা, মাজহাবের এমাম সাহেবরা তাদের ক্ষুরধার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং দীনের মধ্যে নিজের মনগড়া হাজারো মতবাদ, জাল হাদীস, ইজমা, কেয়াস, ফতোয়া প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। প্রাচীন ধর্মগুলির সকল গ্রন্থই এভাবে বিকৃত হয়ে গেছে। তবুও সেগুলির মধ্যে যে শিক্ষা এখনো সঞ্চিত আছে তা বিচার করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে প্রায় সকল ধর্মই ভিন্ন ভিন্ন ডালে উৎপন্ন একই গাছের ফল। কেবল যে স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ধর্মশাস্ত্রের মধ্যে শ্লোক প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে তা বলা ভুল হয়। অনেক মুনি ঋষি পণ্ডিত মানবতার কল্যাণেও অনেক নীতিবাক্য শাস্ত্রের অঙ্গীভূত করে দিয়েছেন। তারা নিজের নাম, যশ, খ্যাতি চান নি, বরং অন্যের লেখার মধ্যে নিজের শ্রমসাধ্য রচনাগুলিকে প্রবেশ করিয়ে অমরত্বের আনন্দ লাভ করতে চেয়েছেন। এভাবে মহাভারত রামায়ণ প্রভৃতি মহাকাব্য দিনে দিনে বৃহদায়তন হয়ে উঠেছে। আদি মনুসংহিতা শাস্ত্রটি অধ্যয়ন করলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবেন যে, পৃথিবীতে নারীকে মর্যাদা দানে মহর্ষি মনুর প্রচারিত শিক্ষা এতো চমৎকার যে কেবলমাত্র সত্যধর্মেই এমন বিধান থাকা সম্ভব। এমনকি মনুসংহিতার ভাবধারার সাথে খাপ খাওয়াতে হতে হলে অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক নারীবাদীদের চিন্তাধারারও উন্নয়নের প্রয়োজন। আমরা এখন এমন একটি শ্লোক পড়ব যার অর্থ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে নারীরাই হচ্ছে কোন উন্নত সমাজের ভিত্তিস্বরূপ। এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যারা হিন্দুধর্মকে নারী-পীড়ক বলে দোষারোপ করেন, তারা কখনোই এই শ্লোকের উদ্ধৃতি দেন না। এই শ্লোকগুলি মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ে (ধর্মসংস্কার প্রকরণ) উল্লেখিত হয়েছে। আমি কয়েকটি শ্লোকের উদাহরণ দিচ্ছি। পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্তথা। পূজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণকামীপ্সুভিঃ॥ (৩/৫৫) যত্র নার্য্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ॥ (৩/৫৬) শোচন্তি জাময়ো যত্র বিনশ্যন্ত্যাশু তৎ কুলম্। ন শোচন্তি তু যত্রৈতা বর্দ্ধতে তদ্ধি সর্বদা॥ (৩/৫৭) জাময়ো যানি গেহানি শপন্ত্যপ্রতিপূজিতাঃ। তানি কৃত্যাহতানীব বিনশ্যন্তি সমন্ততঃ॥ (৩/৫৮) তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছদাশনৈঃ। ভুতিকামৈর্নরৈর্নিত্যং সৎকারেষুৎসবেষু চ॥ (৩/৫৯) অনুবাদ: ১. বিবাহের সময় বরই কেবল কন্যাকে ধন দেবেন এমন নয়। বিবাহোত্তরকালেও বরের পিতা পিতা, ভাই, পতি বা দেবর সকলেই যদি অতুল কল্যাণরাশির অভিলাষী হয় তাহলে ঐ কন্যাদের মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার, ভোজনাদি ও উপহারাদি দ্বারা সর্বদা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন এবং বস্ত্র-অলঙ্কারাদির দ্বারা ভূষিত করবেন। ২. যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বস্ত্রালঙ্কারাদির দ্বারা সমাদৃত হন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন থাকেন। আর যে বংশে স্ত্রীলোকদের সমাদর নেই সেখানে সমস্ত ক্রিয়া (প্রার্থনা, উপাসনাদি) নিষ্ফল। ৩. যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ৪. আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে। আর যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী, পুত্রবধূ প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা অনাদৃত, অপমানিত হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় ধন-পশু প্রভৃতিসহ সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়। ৫. অতএব যারা ভূতি অর্থাৎ ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা (পতিসম্বন্ধীয় লোকেরা) বিভিন্ন সৎকার্যের অনুষ্ঠানে এবং নানা উৎসবে উত্তম অলঙ্কার, বস্ত্র ও ভোজনাদি দ্বারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন (পূজা) করে প্রীত রাখবে। সুতরাং পরিবারের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য নারীকে সর্বদা সুখী রাখতে হবে – এটাই মহর্ষি মনুর নির্দেশ। পাশাপাশি তিনি স্বামীর মনোরঞ্জন ও প্রীতিলাভের জন্য স্ত্রীলোকদেরকে শোভাজনক বস্ত্র ও আভরণ দ্বারা সুসজ্জিত ও দীপ্তিমতী হয়ে থাকার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন: স্ত্রিয়ান্তু রোচমানায়াং সর্বং তদ্রোচতে কুলম্। তস্যান্ত্বরাচমানায়াং সর্বমেব ন রোচতে। (৩/৬২) অনুবাদ: ভূষণাদির দ্বারা স্ত্রী সুসজ্জিত থাকলে সমস্ত পরিবার (কুল) শোভামণ্ডিত থাকে। আর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যদি রুচি না থাকে তাহলে সমস্ত পরিবার শোভাহীন হয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা মহর্ষী মনুর লিপিবদ্ধ বাণী মনুস্মৃতিকে নারী বিদ্বেষী গ্রন্থ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছেন। ‘মনু’ শব্দ থেকেই মানুষ, মনুষ্যত্ব, মানবতা শব্দের উৎপত্তি। তাই মহর্ষী মনুর বাণীগুলি কেবল নারী বা পুরুষ নয়, মানবতার জয় প্রচার করে। মানবসমাজের প্রাণ হচ্ছে নারী সমাজ। তাদের মাধ্যমেই মানব প্রজাতির বংশধারা, প্রজন্ম রক্ষিত হয়। এজন্য তাদের বিশেষ সম্মান প্রাপ্য। তিনি বলেন: প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ। স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোহস্তি কশ্চন (৯/২৬) অর্থাৎ, স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে বলে তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। এই কারণে স্ত্রীলোকদের সকল সময়ে সম্মান-সহকারে রাখা উচিৎ। বাড়ীতে স্ত্রী আর শ্রী এদের মধ্যে কোন ভেদ নেই। আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ভাগ্যশ্রী বা গৃহলক্ষ্মী বলা হয়। এর একটি কারণ হিসাবে টিকাকার মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন স্ত্রীলোক বাড়িতে না থাকলে কুটুম্ব বা আত্মীয়বর্গের আদর-আপ্যায়ন কিছুই হয় না। পুরুষের ধনৈশ্বর্য থাকলেও যদি ভার্যা না থাকে, তাহলে বাড়ীতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনেরা উপস্থিত হলে গৃহস্বামী নিজে তাদের প্রত্যেককে পান-ভোজনাদির দ্বারা আপ্যায়িত করতে পারেন না। অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উৎস বলে মহর্ষি মনু প্রতিপাদন করেছেন। অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ। এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ ॥ (৯/১০১) অর্থাৎ স্ত্রী এবং পুরুষের শ্রেষ্ঠকর্তব্য সম্বন্ধে এই কথাই সংক্ষেপে বলা যায় যে, মরণকাল পর্যন্ত ভার্যা ও পতি পরস্পর পরস্পরের প্রতি ব্যভিচার অর্থাৎ অন্যায় আচরণ করবে না। এখানে কোন বিশেষ অর্থ না দেখিয়ে সাধারণভাবে ‘অব্যভিচার’ বলা হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা সকল কাজে অব্যভিচার করতে বলা হয়েছে অর্থাৎ কোনো কাজই উভয়ের একজন আর একজনকে ছেড়ে করতে পারবে না। এইজন্য আপন্তম্ব বলেছেন, ‘ধর্ম, অর্থ এবং কাম কোনো কাজেই পত্নীকে লঙ্ঘন করা অর্থাৎ তাকে বাদ দেওয়া যাবে না।’ ধর্ম, অর্থ, কাম এগুলি শ্রেয়ঃ, এই তিনটিকে বলা হয় ত্রিবর্গ। নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে (শ্রুতি) বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য। (মনুসংহিতা ৯/৯৬) বৈদিক ধর্মের এই শিক্ষা থেকেই নারীকে বলা হয় পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী ও সহধর্মিনী। এই শ্লোকটির কথা একবার ভেবে দেখুন। নারী ছাড়া পুরুষ অস¤পূর্ণ একথা ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে। তাই নারী ছাড়া পুরুষের দীন বা ধর্ম সম্পূর্ণ হয় না। তাই আল্লাহর বিধান হচ্ছে গৃহে এবং মসজিদে নারী ও পুরুষ উভয়ে একই সঙ্গে সালাহ কায়েম করবে, একই সঙ্গে হজ্ব করবে, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একই সঙ্গে অংশ নেবে। এবার নারীদের স্বাতন্ত্রের কথায় আসা যাক। স্মর্তব্য, স্বাধীনতা মানে উশৃঙ্খলা নয়, স্বাতন্ত্র্য মানেই ঔদ্ধত্য নয়। অরক্ষিতা গৃহে রুদ্ধাঃ পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ। আত্মনমাত্মনা যাস্তু রক্ষোয়ুস্তাঃ সুরক্ষিতাঃ। (৯/১২) অর্থাৎ যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে অরক্ষিতা (Are not well guarded) থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মক্ষায় তৎপর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা সুরক্ষিতা হয়ে থাকে। সুতরাং স্ত্রীলোকদের গৃহবন্দী করে রাখা ধর্মের উদ্দেশ্য নয় এবং সতীত্ব রক্ষার্থে সেটা অকার্যকর উদ্যোগ। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব মনোভাবের উপর নির্ভরশীল। কিভাবে নারীর চরিত্র দূষিত হয় এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বলা হয়েছে পরবর্তী শ্লোকে। পানং দুর্জনসংসর্গঃ পত্যা চ বিরহোহটনম্। স্বপ্নোহন্যগেহবাসশ্চ নারীসংদূষণানি ষট্॥ (৯/১৩) অর্থাৎ মদ্যপান, দুষ্ট লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো, অসময়ে ঘুমানো এবং আত্মীয় কুটুম্বের বাড়িতে দীর্ঘদিন বাস করা এই ছয়টি বিষয় স্ত্রীলোককে দূষিত করে। নারীদের প্রতি সামাজিক শিষ্টচার ও সম্মান প্রদর্শনের যে রীতিও মনুসংহিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: ১. নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে। (৩/১১৪) ২. বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, øাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য।” (মনুসংহিতা ২/১৩৮) নারী নির্যাতনের দণ্ডবিধান: ১. নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। (৮/৩২৩)। ২. যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (৯/২৩২) ৩. যারা অন্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বা করতে প্রবৃত্ত হয় বা তাদের ব্যভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (৮/৩৫২) ৪. যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে।” (৮/২৭৫) ৩. যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে। (৮/৩৮৯)। ৪. যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা (শাসক) তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন।” (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯) উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ে ইসলামেরও কঠোর দণ্ডবিধি রয়েছে যেগুলি উল্লেখ করলে কলেবর বৃদ্ধি পাবে তাই সেদিকে যাচ্ছি না। আমার উপরোক্ত আলোচনার সারাংশ হচ্ছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনেকেই তাদের ধর্মে প্রবিষ্ট অসীম বিকৃত দেখে ধর্মবিদ্বেষী হয়ে গেছেন। তাদেরকে বুঝতে হবে যে, ভারতবর্ষে আগত সনাতন ধর্মমত পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম যার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এসেছে ইসলাম। মূল ধর্ম একই। অতীতের গ্রন্থ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় নতুন অবতার নতুন গ্রন্থ এনেছেন কিন্তু তারা নতুন কোনো ধর্ম নিয়ে আসেন নি। নতুন ধর্ম সৃষ্টি করেছে মানুষ। একজন মুসলিমের ঈমানের অত্যাবশ্যক অঙ্গ হচ্ছে পূর্বের সকল নবী রসুল ও তাঁদের উপর অবতীর্ণ কেতাবগুলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এই হিসাবে ভারতবর্ষে আগত যেসব অবতার, মহামানব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মাঝে সত্যের আলোকচ্ছটা পরিদৃষ্ট হয় তাদের সকলের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, ভক্তি জ্ঞাপন করা আমাদের কর্তব্য।

পলাশী থেকে একাত্তর: ঐক্যের জয় ও অনৈক্যের পরাজয়ের ইতিহাস

পলাশী থেকে একাত্তর: ঐক্যের জয় ও অনৈক্যের পরাজয়ের ইতিহাস

মোখলেছুর রহমান

এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্যও পড়েছেন, তারাও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায় যা পরবর্তীতে সমস্ত উপমহাদেশকে আচ্ছন্ন করে। উপমহাদেশকে সেই গোলামির গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে  তিন শত বছর। এটা মানুষের স্বভাবজাত একটি বৈশিষ্ট্য, সে একদিকে তার বিজয়ের ইতিহাস নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, অন্যদিকে পরাজয়ের ইতিহাস নিয়ে মাতম করে। কিন্তু ইতিহাস থেকে সে শিক্ষা নেয় খুব কম। আমাদের মত একটি নিস্পৃহ জাতির ক্ষেত্রে এই সত্যটি আরো প্রকট। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাবের পরাজয় এই জাতির জন্য এক বিরাট শিক্ষা। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক পরাজয় থেকে এই জাতি ন্যূনতম শিক্ষাও অর্জন করেনি। পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পেছনে ঐতিহাসিকগণ জাফর আলি খান তথা মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ি করলেও সেটাই একমাত্র ও প্রধান কারণ ছিল না।  এর পেছনে ছিল আরো গভীর ও অন্তর্নিহিত কারণ। ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন তখন নবাবের অধীনে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০,০০০। আর ইংরেজ কর্ণেল রবার্ট ক্লাইভের অধীনে ব্রিটিশ ও এদেশীয় মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩,০০০ সৈন্য। যে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাবের পরাজয় ঘটেছিল বলে উল্লেখ করা হয়, তার অধীনে ছিল ১৬,০০০ সৈন্য যারা নবাব বাহিনীর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধের সময় সেনাপতির হুকুমে নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। এরপরও নবাবের হাতে যে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ছিল, ইংরেজদের পরাজিত করে এদেশ থেকে বিতাড়িত করা ছিল তার জন্য বাম হাতের কাজ। এমনকি মীর জাফর তার অধীনস্ত ১৬,০০০ সৈন্য নিয়ে নবাবের বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তথাপি নবাবের বিজয় হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাংলার নবাব পরাজিত হয়েছেন এবং জীবন দিয়েও প্রিয় জন্মভূমিকে দাসত্বের নির্মম শৃঙ্খলে বন্দি হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন নি। কিন্তু কেন? যেখানে সৈন্যসংখ্যা, অস্ত্রসম্ভার, রসদ, ও বাহন সবকিছু ছিল বিদেশীদের তুলনায় অনেক বেশি, তাছাড়া আপন প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকূলে, তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয়ের কারণ ছিল জাতির অনৈক্য। সেদিন শুধু মীর জাফর নয়, ইয়ার লতিফ, জগৎ শেঠ, রায় দুরলভসহ সিরাজের বেশ কয়েকজন সেনাপতি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সাম্রাজ্যবাদীদের সামান্য প্রলোভনে নিজ মাতৃভূমির সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতার একমাত্র কারণ ছিল নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য, ক্ষমতার কাড়াকাড়ি, হানাহানি। এই অনৈক্য তাদের এতটা দুর্বল করে দিয়েছিল যে মাত্র ৩,০০০ সৈন্যের কাছে পরাজিত হয়েছিল ৫০,০০০ সৈন্যের অধিপতি নবাব। সিরাজ-উদ-দৌলার এই পরাজয় আমাদের জন্য এক বিরাট শিক্ষা। আজ আমরা ১৬ কোটি মানুষের এক বিশাল জাতি। অথচ পৃথিবীতে আমরা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারছি না, বরং অন্যসব জাতির করুণার পাত্র হয়ে আমরা বেঁচে আছি। কারণ নিজেদর মধ্যকার সেই অনৈক্য আমরা আজও জিঁইয়ে রেখেছি। আজও আমাদের নেতা-নেত্রীদের ক্ষমতার কাড়াকাড়ি, স্বার্থ হাসিলের রক্তক্ষয়ী কোন্দ্বলে জাতি ক্ষত-বিক্ষত, খণ্ডিত-বিখণ্ডিত। পশ্চিমা প্রভূদের দেওয়া বিভিন্ন রকমের তন্ত্র-মন্ত্রের উপর ভিত্তি এবং ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাশ্রেণির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৬ কোটির জনসংখ্যার এই জাতিটি আজ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অন্যের রক্ত পানে লিপ্ত। এই অনৈক্য জাতিকে এতটা বিপর্যস্ত করে রেখেছে যে বিদেশি প্রভুদের ঋণ ও অনুদান এক দিনের জন্য বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। অথচ এই বাংলার মাটি এক অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার। এই মাটিতে পুষ্ট হয় না এমন বীজ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। এদেশের আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থান পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় উৎকৃষ্ট। এই উর্বর সোনা ফলানো মাটির পাশাপাশি জালের মতো ছড়ানো যে নদী-নালা আর দক্ষিণে যে সমুদ্র আছে তার মত সুনিপুন বিন্যাস পৃথিবীতে আর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। যে কারণে এই মাটির প্রতি যুগে যুগে বেনিয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। অথচ এই মাটির সন্তানদের আজ বেঁচে থাকার জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় এমন সব জাতির প্রতি যারা কয়েকশ’ বছর আগেও নিজ দেশে খাবার ও সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হত। এই নির্মম সত্য আজ মেনে নিতে হচ্ছে, কারণ আমরা আজও একটি ঐক্যহীন, বিশৃঙ্খল জাতি। সম্রাজ্যবাদীরা চলে যাওয়ার সময় এই জাতি যেন আর কোন দিন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র নামক একটি জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে যায়। তাদের সেই ষড়যন্ত্র জাতি আজও উপলব্ধি করতে পারেনি। তাদের দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে ফলশ্র“তিতে নিজেদের মধ্যে অনৈক্য, মারামারি, হানাহানি করে অস্তিত্বকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আজ সাম্রাজ্যবাদিরা আর আক্রমণ করে, শক্তি খরচ করে আমাদের পরাজিত করার প্রয়োজনবোধ করে না। কারণ ঐক্যহীন এই জাতি নিজ তাগিদেই তাদের চাটুকারিতা ও গোলামি করে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তাদের দারস্থ হয়। অথচ পলাশীর প্রান্তরে আমরা ঐক্যহীনতার যে আত্মঘাতি রূপ দেখেছি, ’৭১ এ  দেখেছি তার বিপরীত দৃশ্য, ঐক্যের বিজয়। অস্ত্রহীন, প্রশিক্ষণহীন, ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর, শারীরিক সামর্থ্যহীন সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যার এই জাতির অল্প কিছু মানুষ বাকিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বিদেশী যালেম শাসকদের কাছ থেকে স্বাথীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল একমাত্র ঐক্যের জোরে। এক, অভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট লক্ষে ঐক্যবদ্ধ সেই জাতিকে কোন সীমাবদ্ধতায় স্তব্ধ করতে পারেনি। পলাশী থেকে একাত্তর, ঐক্যের গৌরবময় বিজয় আর অনৈক্যের গ্লানিময় পরাজয়ের এই অকাট্য দলিল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। আজও যদি ১৬ কোটি মানুষের এই জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করে তবেই রচিত হবে নতুন এক বিজয়ের ইতিহাস। ক্ষুধার্ত, জরাজীর্ণ এই জাতিটিই হয়ে ওঠবে  এক সমৃদ্ধ, প্রভাব বিস্তারকারী, অপরাজেয় জাতি। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যই হতে পারে মুক্তির একমাত্র পথ।

পাশ্চাত্যের ঋণের শিকলে যখন আমরা বন্দী

পাশ্চাত্যের ঋণের শিকলে যখন আমরা বন্দী

মোহাম্মদ আসাদ আলী

এটা ইতিহাস যে, সামরিক ক্ষমতাবলে প্রাচ্যের প্রায় সবক’টি দেশ দখল, শাসন ও শোষণ করার পর যখন পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলো আপাতভাবে প্রাচ্যকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে গেল, তখন ক্ষমতা দিয়ে গেল তাদেরই শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের তাঁবেদার একটি শ্রেণির হাতে যারা শুধু চামড়ার রংটুকু ছাড়া সর্বোতভাবে ছিল পাশ্চাত্যের প্রধিনিধি। অতঃপর এই বাদামী ইংরেজ, কালো ফরাসি আর হলদে ওলন্দাজ স্পেনিশরা তাদের অশিক্ষিত নিরক্ষর জাতিগুলির উপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করলো।  তাদের এই ছড়ি ঘোরানোর ধরন, শাসনপদ্ধতি তারা শিক্ষালাভ করেছিল বিগত প্রভুদের কাছে থেকেই। এখন শুরু হলো নকলের পর্ব। পাশ্চাত্যও এটাই চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল যেন তাদের উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও প্রাচ্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে তাদের অনুসরণ তথা গোলামি করে। আর এই নব্য ক্ষমতাধররা সে পথকেই প্রশস্ত করলো।
প্রাচ্যের এই হীনমন্য নেতৃত্বকে পাশ্চাত্য বঝালো যে, তোমরা অতি গরীব (গরীব কিন্তু তারাই করেছে, তারা অধিকার করার আগে প্রাচ্যের এই দেশগুলি ঐসব ইউরোপীয় দেশগুলির চেয়ে বহু ধনী ছিল, এটা ইতিহাস), এখন তোমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। কারণ মানব জীবনের মুখ্য, মুখ্য কেন, একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে সম্পদ অর্জন কোরে জীবনের উপভোগ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি করতে গেলে আমাদের মতো কল-কারখানা বসাতে হবে। তোমাদের দেশগুলিকে শিল্পায়ন করতে হবে। শিল্পায়ন করতে গেলে টাকার দরকার হবে। তোমাদের তো টাকা নেই। (টাকা তো আমরা এই কয়েক শতাব্দী ধরে শুষে নিয়েছি)। কোন চিন্তা নেই, আমরা অত্যন্ত মহানুভব, টাকা আমরা ধার দেব, তোমরা কল-কারখানা লাগানো শুরু কোরে দাও। পাশ্চাত্যের বিগত প্রভুদের এই মহানুভবতার আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য। উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক অধিকার ছেড়ে আসতে বাধ্য হলেও অর্থনৈতিক আধিপত্য অক্ষুণœ রাখা। সুদখোর মহাজন যেমন মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ধার কর্জ দিয়ে খাতককে ঋণে জর্জরিত কোরে একদিন তার সর্বস্ব নিয়ে নেয় ঠিক সেই উদ্দেশ্য। মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের দাস, প্রাচ্যের নেতৃত্ব পাশ্চাত্যের ঐ প্রস্তাব যে প্রত্যাখ্যান করবে না সে সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারা ঐ প্রস্তাব লুফে নিয়েছিল তা ইতিহাস। শুধু লুফে নেন নি, ইহুদি প্রবর্তিত সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় রাজী হয়ে ঐ ঋণ গ্রহণ করেছেন প্রাচ্যের মুসলিম নেতৃত্ব, যারা নামাজও পড়েন, রোযাও রাখেন, হজ্বও করেন কেউ কেউ পীরের মুরীদ এমনকি অনেকের কপালে সাজদার দাগও হয়ে গেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মেই সে ঋণ প্রাচ্যের দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে নি। বরং দিনের পর দিন নতুন নতুন ঋণের জালে আটকে প্রাচ্যের জাতিগোষ্ঠিগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেন সফল হয়নি তা ব্যাখ্যা কোরছি।
স্বাধীনতা পাবার পর প্রাচ্যের অধিকাংশ দেশগুলির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে ও সেই সব দেশের সামরিক বাহিনীকে শাসনভার হাতে নিয়ে কঠোরতার সাথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। একদিকে চরিত্রহীনতার জন্য কাজে ফাঁকি, কর্মবিমূখতা, ব্যক্তি ও দলগত স্বার্থকে জাতির স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়া ইত্যাদি, অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন ঘন সরকার বদল, আন্দোলন, কথায় কথায় ধর্মঘট ইত্যাদি এই দুই মিলে কোন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, কোন বড় শিল্পায়নকে সুষ্ঠুভাবে কাজে পরিণত করতে দেয়নি। কাজেই বিগত প্রভুদের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঋণ এনে প্রাচ্যের নেতৃত্ব তাদের কাক্সিক্ষত জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে পারে নি, মান আরও নেমে গেছে। মাঝখান থেকে এই দেশগুলির উপর সুদে আসলে যে অংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে তা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। উন্নয়নের ব্যর্থতার জন্য আসল শোধ করা দূরের কথা শুধু সুদটুকুই এই সব দেশ দিতে পারছে না। কাজেই ঋণের অংক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে। বিগত পাশ্চাত্য প্রভুরা যা চেয়েছিল তা পূর্ণমাত্রায় অর্জন করেছে। প্রাচ্যের জাতিগুলির গলায় ঋণের শেকল লাগিয়ে তারা শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয়, অন্যান্য বহুদিক দিয়ে কর্তৃত্ব কোরে চলেছে। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, ঐ অসম্ভব বিরাট অংকের ঋণের বোঝা ঐ নেতাদের ঘাড়ে নয়, ঐ বোঝা আসলে তাদের দেশগুলির জনসাধারণের ঘাড়ে। ঋনের শুধু সুদের একটা অংশ আদায় করার জন্য এই নেতৃত্ব করের উপর কর, খাজনার উপর খাজনা আরোপ কোরে চলেছেন, তা সত্ত্বেও ঋণের বোঝা বেড়ে চলছে। এই সব দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা কিন্তু তারা জানে না। ঐ যে গরীব কৃষক ক্ষেতে হাল দিচ্ছে, সে জানে না যে, যাদের তারা ইউরোপের নকল করা প্রথায় ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করেছে তারা তার প্রতিনিধি হয়ে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার, পাউণ্ড ঋণ নিয়েছে। ঐ যে নিু ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অফিস কর্মচারীরা সকাল- সন্ধা অফিস যাচ্ছেন আসছেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন, সবাই বেখবর যে, তাদের প্রত্যেকের মাথার উপর বিরাট অংকের ঋণ চেপে আছে এবং তা দিতে হবে, আজ হোক আর কাল হোক। আসল বাদ দিন শুধু সুদের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধ করার জন্য জনসাধারণের উপর নতুন নতুন কর ধরা হচ্ছে, পুরানো কর ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আজ একথা পাশ্চাত্যের মহাজন জাতিগুলি ও প্রাচ্যের খাতক জাতিগুলি উভয়ের কাছেই পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে যে, এইসব অর্ধাহারী, অনাহারী প্রায় উলঙ্গ জাতিগুলির আর সাধ্য নেই ঐ বিরাট ঋণ শোধ করার। এতে অবশ্য মহাজন জাতিগুলির ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, তাদের কোন লোকসান হবে না। কারণ ঋণ দেবার সময়ই তারা যেসব শর্ত আরোপ করেছিল এবং গদগদ চিত্তে প্রাচ্যের নেতৃত্ব যে সব শর্ত মেনে নিয়েছিল তার বদৌলতে ইতোমধ্যেই তারা সুদে আসলে ঋণের টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। আজ আসল টাকা না পেলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু কাগজে পত্রে বিরাট টাকা তাদের পাওনা হয়ে আছে, যার ফলে প্রাচ্যের নেতৃত্ব করজোড়ে মহাজনদের সামনে দাঁড়িয়ে দয়া প্রার্থণা করছেন, আরও ঋণ চাইছেন। আরও ঋণ চাইছেন এই জন্য যে, আরও ঋণ না হলে তাদের চলবে না। ঋণ নিয়ে এবং সে ঋণ সদ্ব্যবহার কোরে উন্নতির বদলে অবনতি হবার ফলে এখন এইসব দেশ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য অর্থাৎ ভিক্ষা না নিলে এদের বাজেট করাই অসম্ভব, সুদের একটা আংশিক পরিশোধও অসম্ভব। তাই বাহ্যত টিকে থাকার জন্যই আরও ঋণ, আরও খয়রাত দরকার। নতুন নতুন ঋণ নিয়ে ঐ ঋণের টাকা দিয়েই কিছু কিছু সুদ এরা শোধ করছেন। কিন্তু নতুন ঋণ নতুন সুদের পাহাড় গড়ে উঠছে, যা আসলে যার যার দেশের জনসাধারণের উপর চাপছে। আজ পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যের প্রায় সব কটি দেশের, বিশেষ কোরে মুসলিম দেশগুলির শুধু হাড্ডি-মজ্জা নয়, আত্মা পর্যন্ত দেনাবদ্ধ হয়ে গেছে।
পাশ্চাত্যের ঋণ দেবার প্রস্তাবে এই নেতৃত্ব গদ গদ চিত্তে যে সোনার শেকল নিজেদের গলায় নিলেন এবং যার যার দেশের জনগণের গলায় পরালেন সে শেকল শুধু যে সুদের পর্বত তৈরী কোরে অর্থনৈতিক দাসত্ব চাপিয়ে দিয়েছে তাই নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ঐ শেকল কম প্রভাব বিস্তার করে নি। ঋণাবদ্ধ খাতকের জীবনে মহাজনের প্রভাব কতখানি তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যে সম্পূর্ণভাবে বুঝবে না। মহাজনকে খুশী রাখতে খাতককে কতদূর যেতে হয় তা যে কোন একজন খাতকতে জিজ্ঞাসা করুন। ঋণগ্রস্ত এমন খাতককে বৃদ্ধ মহাজনের মন রক্ষার জন্য কিশোরী মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে হয়েছে অনেক। ঋণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তাই। খাতক রাষ্ট্রগুলিকেও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মহাজন রাষ্ট্রগুলির বহুবিধ ইচ্ছাকে পূরণ করতে হয় তাদের খুশী রাখার জন্য। সেটাই করে যাচ্ছে এই প্রাচ্যের দেশগুলি।

আজ আমরা কার ইবাদত করছি

আজ আমরা কার ইবাদত করছি

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর ঘোষণা, আমি জ্বীন এবং ইন্সানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি (সুরা যারিয়াত ৫৬)। এই ইবাদত বলতে প্রায় সবাই সালাহ, সওম প্রভৃতি মনে করে। এই ধারণা সঠিক নয়। সালাহ, সওম ইত্যাদি হচ্ছে প্রকৃত ইবাদতের আনুষাঙ্গিক কাজ। আল্লাহ কোর’আনে এরশাদ করেছেন, আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাহ কায়েম কর (সুরা ত্বাহা, আয়াত-১৪)। পবিত্র কোর’আনের এই আয়াতে আল্লাহ প্রথমে তাঁর সার্বভৌমত্বের মালিক, নিজেকে মানবজাতির একমাত্র হুকুমদাতা হিসাবে ঘোষণা দিলেন। ইলাহ বলতে বর্তমানে মনে করা হয় উপাস্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। ইলাহ হচ্ছেন সেই সত্তা যার হুকুম শুনতে হবে এবং পালন করতে হবে। এক কথায় জীবনের যে কোন অঙ্গনে যেখানে আল্লাহর কোন বক্তব্য আছে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজৈেনতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি যে বিভাগেই হোক না কেন সেখানে আর কারও কোন বক্তব্য গ্রহণ করা যাবে না অর্থাৎ তওহীদ; আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। এরপর এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর ইবাদত করার কথা বললেন এবং পরিশেষে তাঁর স্মরণার্থে সালাহ কায়েমের কথা বললেন। আলোচ্য আয়াতে এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে ইবাদত ও সালাহ অর্থাৎ উপাসনা এক জিনিস নয়।
তাহলে ইবাদত কী? ইবাদত হচ্ছে যে জিনিসকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজ করাই হচ্ছে ঐ জিনিসের ইবাদত। প্রশ্ন হলো- আল্লাহ আমাদের কি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন? এর উত্তর আমরা পবিত্র কোর’আন থেকেই পাচ্ছি। কোর’আনের সুরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহর ঘোষণা, আমি মানুষকে আমার খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছি। খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে একজনের কাজ তিনি না কোরে তার হয়ে আরেকজন করা। তাহলে কোর’আনে আল্লাহ বললেন তিনি আমাদেরকে খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীতে আল্লাহ নিজে যে কাজটি করতেন সেই কাজটি তিনি না কোরে তা আমাদের দিয়ে করাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর কী কাজ? তিনি কি নামাজ, রোজা করেন? নিশ্চয় না। তাঁর কাজ হলো: তাঁর সৃষ্টজগতকে শাসন করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এ কাজটি নিজে না কোরে মানুষকে দিয়ে করাবেন। তাই তিনি কোর’আনে ঘোষণা করেছেন আমি মানুষকে আমার খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করেছি। তাহলে ইবাদতের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল্লাহ্র খেলাফত করাই হচ্ছে মানুষের ইবাদত। অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া বিধান দিয়ে পৃথিবী শাসন করাই হচ্ছে খেলাফতের কাজ, কিন্তু মানুষ আজ এই খেলাফতের কাজ করছে না অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করছে না। অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে মূলত: তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এই মুসলিম নামক জাতিটি আল্লাহর প্রকৃত ইবাদত কী তা না জেনে, না বুঝে নামাজ রোজা কোরে ভাবছে খুব ইবাদত করছি।
প্রকৃতপক্ষে তারা কার ইবাদত করছে, কার প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত করছে? সত্য হচ্ছে এই যে, মুসলিম নামধারী জনসংখ্যাটিসহ গোটা মানবজাতি এখন ইহুদি-খ্রিস্টানদের তৈরি আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অর্থাৎ সামগ্রিক জীবন পাশ্চাত্যদের, তথা ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতার বিধান, মতবাদ অনুযায়ী পরিচালিত করছে। সুতরাং মানুষ এখন ইহুদি-খিস্টান ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালেরই ইবাদত কোরে চোলেছে।

ভৌগোলিক স্বার্থচিন্তা যেভাবে ঐক্যের অন্তরায়

ভৌগোলিক স্বার্থচিন্তা যেভাবে ঐক্যের অন্তরায়

মোখলেসুর রহমান:

সমষ্টিগত জীবন বা রাষ্ট্র পরিচালনায় খ্রিস্ট ধর্মের ব্যর্থতায় উদ্ভূত সমস্যার ফলে পশ্চিমা সভ্যতা আবিষ্কৃত বিভিন্ন জীবনব্যবস্থা তথা তন্ত্র-মন্ত্র সারা বিশ্বজুড়ে গ্রহণ করার ফলে মানুষের নৈতিকতায় একটি সাঙ্ঘাতিক পরিবর্তন এসেছে। আর তা হলো ভৌগোলিক রাষ্ট্র ধারণা বা যার যার সীমানার স্বার্থ সংরক্ষণ। ফলে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা সীমাবদ্ধ হয়ে গেল একটি সীমার ভেতর। অর্থাৎ একটি ভূ-খণ্ডের মানুষ তাদের নিজস্ব গণ্ডি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই সীমার বাইরে যারা রয়েছে তাদের প্রতি কোন প্রকার দায়বোধকে তারা অস্বীকার করে বসলো। এতে করে ভৌগোলিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করলো। অপরদিকে নিজস্ব ভূ-খণ্ডের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে বাকি রাষ্ট্রের কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে তারা মোটেও ভাবছে না। ব্যাপারটা এমন যে আমাকে সুখে থাকতে হবে, সেটা যদি অন্যের মৃত্যুর মধ্য দিয়েও হয়। স্বাভাবিকভাবেই একেকটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রের এই ধারণা তাদেরকে প্রচণ্ড স্বার্থপর করে তুললো। তাতে করে স্বার্থ উদ্ধারে যাই করা হোক না কেন, তার সবই নীতিগতভাবে সঠিক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। শক্তির জোরে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ, লুণ্ঠন, শক্তিশালী দেশ কর্তৃক দুর্বল দেশের প্রতি চাপিয়ে দেওয়া দাসখত চুক্তি সব কিছুই এর মধ্যে পড়ে। তাই কে কার চাইতে শক্তিশালী হতে পারে এই নিয়ে দেখা দেয় প্রতিযোগিতা। আবার ভিন রাষ্ট্রের আক্রমণে অন্তরায় সৃষ্টি কিংবা ভয় দেখানোর জন্যও তারা প্রতিযোগিতায় নামলো। যার ফলে পৃথিবীতে দেখা দিয়েছে ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্র আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা। এতে করে দেখা যায় সাধারণ জনগণকে না খাইয়ে রেখে হলেও বহু রাষ্ট্র পাল্লা দেওয়ার জন্য মারনাস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। কৃষি, আবহাওয়া, চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে কম অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে অস্ত্র ক্রয় ও নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কারের পেছনে।
এই যে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার পেছনে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে চলা, এটা শেষ পর্যন্ত মানুষকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বা এর শেষ কোথায়? এটা কি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তার সম্মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? মোটেও নয়। এই প্রতিযোগিতা মানুষকে পশুর কাতারে নামিয়ে দিচ্ছে।
অপরদিকে আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখতে পাব আমাদের হয়েছে ভিন্ন রোগ। অন্যরা যেখানে ভৌগোলিক রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজ করে না, তেমনি আমরা জাতীয় ঐক্যহীনতা ও যথার্থ শিক্ষার অভাবে আরো ক্ষুদ্র পর্যায়ে নেমে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে আবদ্ধ হয়ে গেছি। আমরা জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে নিমজ্জিত হয়ে যা-ই করছি তাকেও বৈধ বলে জ্ঞান করা হচ্ছে। সার্বজনীন স্বার্থের পরিবর্তে ভৌগোলিক স্বার্থে আটকে যাওয়ার চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থে নেমে যাওয়ার এই অবস্থাটি আরো মারাত্মক এবং বিপজ্জনক। এতে আগের অবস্থায় যে দ্বন্দ্বটা রাষ্ট্র পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিলো তা এখন ব্যক্তি পর্যায়ে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দায়িত্ববোধও ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে গেছে। তাই অন্যদের তুলনায় আমাদের অবস্থা আরো করুণ, আরো দুঃখজনক। তাই শুধু ব্যক্তিস্বার্থ নয়, আমরা কি পারি না ভৌগোলিক স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে? কেননা আমরা এই পৃথিবীর যে যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমরাতো একই দম্পতি অর্থাৎ আদি পিতা আদম (আঃ) ও আদি মাতা হাওয়া (আঃ) থেকে আগত, সুতরাং সে হিসেবে আমরা সবাই ভাই-বোন, আমাদের প্রত্যেকের অনুভূতিও একই রকম। পৃথিবীর সব জায়গার পরিবেশ একরকম নয়। প্রাকৃতিক সম্পদও সব স্থানে সমপরিমাণে পাওয়া যায় না। সুতরাং আমরা একই পৃথিবীর মানুষ নিজেদের ভাই-বোন মনে করে কি পারি না সমবণ্টন করে মিলে মিশে শান্তিতে বসবাস করতে? পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই কি এ শিক্ষা দেয় না? তাহলে আমরা কোথায় চলেছি? কেনই বা পৃথিবীর বুকে কল্পিত সীমারেখা টেনে বিভক্তি বাড়াচ্ছি? আমরা কি সমষ্টিগত ঐক্যের কথা চিন্তা করতে পারিনা?

পৃথিবী আজ অন্যায় অবিচারে পরিপূর্ণ কেন???

পৃথিবী আজ অন্যায় অবিচারে পরিপূর্ণ কেন?

মো: সাইদুর রহমান:
মানুষ আজ এতটাই আত্মাহীন ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে যে, যে যাকে যেভাবে পারছে প্রতারণা করে, পদপিষ্ঠ করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করছে। মানুষের চারপাশে এমন একটি জিনিসও অবশিষ্ট নেই যাতে মিথ্যা মিশ্রিত নেই। বাতাস, পানি পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে গেছে। ন্যূনতম মনুষ্যত্ব না থাকায় তারা খাদ্যে বিষ মেশাচ্ছে, ঔষধে পর্যন্ত ভেজাল দিচ্ছে। তারা এমন এক দানবে পরিণত হয়েছে যে চার বছরের শিশুও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের ওপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের ওপর শাসকের অবিচারে, সরলের ওপর ধূর্তের প্রতারণায় পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শান্তি রক্ষার জন্য বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করে, বিভিন্ন নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। একটার পর একটা আইন করে, জীবন-ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না হত্যা, ধর্ষণ, বেকারত্ব, রাজনৈতিক হানাহানি, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস ও যুদ্ধের তাণ্ডব। একটি সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না, বরং দিন দিন নতুন নতুন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই অবস্থার কারণ কী?
এর মূল কারণ হচ্ছে স্রষ্টার দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমা সভ্যতা দাজ্জালের চাপিয়ে দেওয়া নীতি-নৈতিকতাহীন বস্তুবাদী সিস্টেম মানুষ তাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়াও ব্রিটিশদের তৈরি ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার কারণেই আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে নানা রকম অনৈক্য আর বিভেদ, ঘোটে চলেছে নানামুখী দাঙ্গা-সংঘাত।
এখন এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
আমাদের সকলের স্রষ্টা এক, একই পিতা-মাতার রক্ত আমাদের সবার দেহে। সকল নবী-রসুল-অবতারগণও এসেছেন সেই এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে। তাই শান্তি পেতে হলে আমাদেরকে স্রষ্টার হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহর হুকুমই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। স্রষ্টার হুকুমের বাস্তবায়ন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদেরকে পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’র চাপিয়ে দেওয়া তন্ত্রমন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, সর্বপ্রকার ধর্মব্যবসা ও ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সকল প্রকার সন্ত্রাস, হানাহানির বিরুদ্ধে এবং ন্যায় ও সত্যের পক্ষে।

ইসলামে জাতীয় জীবনই মুখ্য

ইসলামে জাতীয় জীবনই মুখ্য

রিয়াদুল হাসান:
আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইসলামের অর্থাৎ দীনুল কাইয়্যিমার মর্মবাণী তওহীদ- এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো তৈরি জীবন-বিধান মানি না, স্বীকার করি না। এই সিরাতুল মুস্তাকীম, সহজ-সরল পথ ছেড়ে মহাপণ্ডিতরা দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এই করলেন যে, সহজ-সরল পথটি হয়ে গেল একটি অত্যন্ত দুর্বোধ্য জীবন-ব্যবস্থা, খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলের জটিল জাল। এই জটিল জালে আটকা পড়ে সমস্ত জাতিটাই মাকড়সার জালে আটকা পড়া মাছির মত অসহায়, স্থবির হয়ে গেল। ঐ স্থবিরতার অবশ্যম্ভাবী ফল হয়েছে শত্র“র ঘৃণিত গোলামি ও বর্তমান অবস্থা; যেখানে অজ্ঞানতায়, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় ইসলামের আগের জাহেলিয়াতের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই জাতির ধর্মব্যবসায়ী আলেম সমাজ আজ কুয়োর ব্যাঙ। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তাদের চোখে এরা অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক। আসমানের মত বিরাট উদাত্ত দীনকে এরা তাদের লম্বা কোর্তার পকেটে পুরে মিলাদ পড়ে, বাড়ি বাড়ি দাওয়াত খেয়ে আর সুর করে ওয়াজ করে বেড়ান। তবু যদি তাদের ওয়াজের মধ্যে অন্তত কিছু সার কথা থাকত! তাও নেই, কারণ দীনের মর্মকথা, এর উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এ সবের কিছুই তাদের জানা নেই। আসল দিক অর্থাৎ জাতীয় জীবনের দিকটাকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তি দিকটার সামান্য যে বাহ্যিক অংশকে এরা আকড়ে ধরে আছেন তা পর্যন্ত ভুল। যে দাড়ি রাখাকে এরা দীনের অতি প্রয়োজনীয় কর্তব্য বলে মনে করেন, প্রতি ওয়াজে প্রতি উপদেশে যারা দাড়ির প্রয়োজনীয়তার উপর অনেক সময় নষ্ট করেন সেই দাড়িকেই ধরুন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই দাড়িকে তার নিজের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন, যেটা বাড়তে বাড়তে সারা বুক ছেয়ে যায়। এই দাড়ি এই দীনের দাড়ি নয়। এ দাড়ি ইহুদিদের দাড়ি এবং এ রকম দাড়ি রাখা যে মহনবীর (সা.) নিষেধ তা তারা জানেন না। তাঁর (সা.) নির্দেশিত দাড়ি নিচের ঠোঁটের নিচ থেকে, অর্থাৎ যেখান থেকে দাড়ি গজায় সেখান থেকে একমুষ্ঠি মাত্র, এর বেশি হলেই তা ছেটে ফেলার নিয়ম। ফকীহদেরও অধিকাংশের মত হচ্ছে চার আঙ্গুল লম্বা দাড়ি হচ্ছে শরিয়াহ অনুযায়ী। ইহুদিদের রাব্বাইরা লম্বা আলখেল্লা পড়েন ও মাথায় লম্বা টুপি লাগান, লম্বা দাড়ি তো প্রত্যেকেরই আছে। কাজেই একদল রাব্বাইদের মধ্যে আমাদের একদল ‘ধর্মীয়’ নেতাদের দাঁড় করিয়ে দিলে তাদের আলাদা করে চেনা যাবে না। এই উড়ন্ত দাঁড়ির সঙ্গে তারা যোগ করেন ন্যাড়া মাথা। তারা বলেন, আল্লাহর রসুলকে (সা.) মাথা ন্যাড়া অবস্থায় দেখা গেছে বলে হাদিসে আছে, কাজেই ন্যাড়া করাও সুন্নাহ। এ সিদ্ধান্তও ভুল। মহানবী (সা.) সব সময়ই লম্বা চুল অর্থাৎ আমরা যাকে বাবরী বলি তাই রাখতেন এবং তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে দেখেছেন স্বভাবতঃই। আম্মা আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেছেন, “পবিত্র কানের নিচ থেকে কাঁধ পর্যন্ত” অর্থাৎ সময়ে লম্বা হয়ে পবিত্র কাঁধ পর্যন্ত এসেছে এবং তখন ছেটে ফেললে আবার কানের নিচ পর্যন্ত ছোট হয়েছে। যারা তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন, তারা দেখেছেন হজ্বের সময়- যখন সবাইকে মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হয় হজ্বের আরকান হিসাবে। যেহেতু হজ্বের সময়ই একত্রে বহু সংখ্যক লোক তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন এবং পরে বর্ণনা করেছেন যে, “আমি রসুলাল্লাহকে (সা.) মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছি,” তাই তার মাথা কামানো অবস্থার কথা হাদীসে এবং সীরাতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এটা তার স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নাহ নয়, হজ্বে তো সবাইকে মাথা কামাতে হবে। কিন্তু ঐ বর্ণনা গুলিকে ভিত্তি করে এরা একদিকে মাথা কামিয়ে, অন্যদিকে হাওয়ায় উড়ন্ত বিশাল ইহুদি দাড়ি রেখে এক ভয়াবহ চেহারা সৃষ্টি করেন।
এই দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে এরা যেমন উল্টো করে ফেলেছেন তেমনি এর বাহ্যিক দিকটাও এরা এদের অপরিসীম অজ্ঞতায় উল্টে ফেলেছেন। দাড়ি রাখা, বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এই দীনের বুনিয়াদী কোন ব্যাপার নয় এবং বুনিয়াদী নয় বলেই কোর’আনে আল্লাহ কোথাও দাড়ি বা কাপড়-চোপড় সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেন নি। বরং বলেছেন- আমি মানুষের কাপড়-চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখি না, আমি দেখি মানুষের অন্তর । আসলে এই শেষ দীনে কোন নির্দিষ্ট পোষাক হতে পারে না, কারণ এটা এসেছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য। পৃথিবীর মানুষ প্রচণ্ড গরমের দেশে, প্রচণ্ড শীতের দেশে, নাতিশীতোষ্ণ দেশে, অর্থাৎ সর্বরকম আবহাওয়ায় বাস করে, এদের সবার জন্য এক রকম পোষাক নির্দেশ করা অসম্ভব। তা করলে এ দীন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রযোজ্য হতে পারতো না, সীমিত হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ ও তার রসুল (সা.) তা করেনও নি। বিশ্বনবীর (সা.) সময়ে তার নিজের এবং সাহাবাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও তখনকার আরবের মুশরিক ও কাফেরদের পরিচ্ছদ একই ছিল। বর্তমানেও আরবে মুসলিম আরব, খ্রিষ্টান আরব ও ইহুদি আরবদের একই পোষাক-পরিচ্ছদ। দেখলে বলা যাবে না কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান আর কে ইহুদি।
কোন সন্দেহ নেই, বিশ্বনবী (সা.) তার অনুসারীদের একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যরে দাড়ি রাখতে বলেছেন। কেন বলেছেন? এই জন্য বলেছেন যে, তিনি যে জাতিটি, উম্মাহ সৃষ্টি করলেন তা যেমন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি তেমনি বাইরে থেকে দেখতেও যেন এই উম্মাহর মানুষগুলি সুন্দর হয়। আদিকাল থেকে দাড়ি মানুষের পৌরুষ ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে আছে। সিংহের যেমন কেশর, ময়ূরের যেমন লেজ, হাতির যেমন দাঁত, হরিণের যেমন শিং, তেমনি দাড়ি মানুষের প্রাকৃতিক পৌরুষ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য নষ্ট না করার উদ্দেশ্যেই দাড়ি রাখার নির্দেশ। আরও একটা প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য আছে দাড়ি রাখার নির্দেশের। পূর্ববর্তী ধর্ম, দীন, জীবন-বিধানগুলি বিকৃত হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার ফলে যখন সেগুলির মধ্যে একপেশে আধ্যাত্মবাদ, সন্ন্যাসবাদ ইত্যাদি প্রবল হয়ে দাঁড়ালো তখন তারা মাথার চুল, দাড়ি মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলে কৌপীন পড়ে সংসার ত্যাগ করল। অর্থাৎ দাড়ি-মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলা হলো বৈরাগ্যের চিহ্ন, সংসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার চিহ্ন। কিন্তু মহানবী (সা.) যে উম্মাহ সৃষ্টি করলেন তার উদ্দেশ্য হলো সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে এই দীনের মধ্যে এনে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। তাহলে স্বভাবতঃই এই উম্মাহর সমস্ত কর্মপ্রবাহ সংগ্রামী, প্রকাশ্য ও বহির্মূখী হতে বাধ্য এ কথা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। সুতরাং এই উম্মাহর লোকজনের চেহারাও অবশ্যই সংসার বৈরাগী সন্ন্যাসীর ছাপ থাকবে না এবং ছাপ না রাখার জন্য দাড়ি রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে এই পৃথিবীরই সংসারী লোকজনের মত দেখাবার নির্দেশ। মহানবীর (সা.) সময়ে খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীরা (রাহেব) এক দল দাড়ি-মোচ চুলে কাচি লাগাতো না, ওগুলো ইচ্ছামত বাড়তো, আরেক দল সব কামিয়ে ফেলতো, ইহুদিরা বিরাট বিরাট দাড়ি রাখতো আর বৌদ্ধরা সব কামিয়ে ফেলতো। সবগুলোই ছিল বৈরাগ্য, সংসার ত্যাগের বাহ্যিক প্রকাশ রূপে। এই বৈরাগ্যের মানসিকতার বিরোধিতা করে বিশ্বনবী (সা.) তার নিজের জাতিকে নির্দেশ দিলেন- আমার এই দীনে সন্ন্যাস, বৈরাগ্য নেই (লা রোহবানীয়াতা ফিল ইসলাম)। তোমরা ঐ সব সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ রাখবে এবং ইহুদিদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ ছেটে ছোট করে রাখবে। উদ্দেশ্য হলো ঐ কাজ করে তারা দেখাবে যে তারা সন্ন্যাসী নয়, সংসার বিমুখ নয় বরং ঘোর সংসারী, এই সংসারে এই পৃথিবীতে মানব জীবনে স্রষ্টার দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক আইন, দণ্ডবিধি চালু করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সংগ্রামী জাতি তারা। জাতিকে সুন্দর দেখানো শেখানোর জন্য মহানবী (সা.) নিজে পরিষ্কার সুন্দর কাপড় পড়তেন, দাড়ি-মোচ সুন্দর করে ছেটে রাখতেন। তিনি সফরে গেলেও তার সঙ্গে কাচি, চিরুনি ও আয়না থাকত। একদিন মসজিদে একজন উস্কো-খুস্কো চুলওয়ালা লোককে দেখে তিনি তখনই তাকে নির্দেশ দিলেন মাথার চুল চিরুনী করে সুবিন্যস্ত করার জন্য । বয়স হলে মাথার চুল যখন পেকে যায় সেটাকে রং করা, অর্থাৎ কম বয়সের দেখানো চেষ্টা করা দুনিয়াদারীর মানসিকতা, না বৈরাগ্যের, ধার্মিকতার মানসিকতা? মক্কা জয়ের পর পরই আবু বকর (রা:) তার অতি বৃদ্ধ বাবাকে- যিনি তখনও মুশরিক ছিলেন, সুতরাং মক্কাতেই ছিলেন- মহানবীর (সা.) কাছে নিয়ে এলেন। বাবা তখন এত বৃদ্ধ যে তিনি চোখেও দেখতে পাননা। আবু বকরের (রা:) বাবা বিশ্ব নবীর (সা.) হাতে ইসলাম গ্রহণের পর রসুলাল্লাহ (সা.) তখনই হুকুম দিলেন তার শুভ্র চুল দাড়ি মেহেদী দিয়ে রং করে দিতে এবং তখনই তা করে দেওয়া হলো । একটি অন্ধ, অতি বৃদ্ধের চুল দাড়ি রং করা এবং আজকের ‘ধার্মিক’ মুসলিমদের নানাভাবে বৈরাগ্য প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে সত্যিকার ও পথভ্রষ্ট ইসলামের আকিদার তফাৎ- দু’টি বিপরীতমুখী আকিদা। আজ বিকৃত আকিদার ‘ধার্মিক’রা অনিয়ন্ত্রিত উলোঝুলো দাড়ি উড়িয়ে, মাথা ন্যাড়া করে বিশ্রী কাপড় পড়ে দেখাতে চান যে তাদের মন দুনিয়া বিমুখ হয়ে আল্লাহর দিকে গেছে- ঠিক যেমন করে ঐ খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বোঝায়। অর্থাৎ মহানবী (সা.) যে উদ্দেশ্যে দাড়ি মোচ সুন্দর করে ছেটে রাখতে বলেছেন, অর্থাৎ সুন্দর দেখাতে, তার ঠিক বিপরীত উদ্দেশ্যে।
মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ বিশ্বনবীর (সা.) যে দৈহিক বিবরণ হাদীসে ও ইতিহাসে পাওয়া যায় তা লক্ষ্য করলে আমরা পাই একটি মানুষ- অতি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়া, তাতে সুগন্ধ, খোশবু, আতর লাগানো (সুগন্ধি ও ফুল তার অতি প্রিয় ছিল) যতœ নেয়া মাথার চুল, ঠিক মাথার মাঝখান থেকে সিঁথির দু’পাশ দিয়ে নেমে এসেছে কানের নিচে, কাঁধের একটু উপর পর্যন্ত, সুন্দর করে দাড়ি-মোচ ছাটা, সুন্দর দেখাবার জন্য চোখে সুরমা দেওয়া, মাঝে মাঝে গায়ে ইয়ামেনের প্রসিদ্ধ জোব্বা (Robe)। সব মিলিয়ে যাকে পাচ্ছি, তাকে যারা দেখেছেন তারা প্রভাতে উদিয়মান সূর্যের সাথে, পূর্ণ চন্দ্রের সাথে তুলনা করেছেন, তাকে কি কোনভাবেই একটি দুনিয়া বিমুখ, সংসার বিমুখ বৈরাগী বলা চলে? মোটেই না। কিন্তু বর্তমানের ‘ধার্মিক’দের মানসিকতা তাই- একেবার উল্টো। এদের বাইরেও উল্টো, ভেতরেও উল্টো। ভেতরে উল্টো এই জন্য যে, ঐ বিশ্ব নবীর (সা.) মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধিকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে মানুষের তৈরি এই সব ব্যবস্থার মধ্যে বাস করে কার্যতঃ মুশরিক হয়ে মাথা ন্যাড়া করে, মোছ কামিয়ে, টুপি পাগড়ী মাথায় দিয়ে কাঁধে চেক রুমাল ফেলে, টাখনুর উপর পাজামা পড়ে আর পাঁচবার মসজিদে দৌড়ে এরা আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন এই ভেবে যে, তারা শুধু উম্মতে মোহাম্মদী নন, একেবারে নায়েবে নবী। তুচ্ছ মসলা-মাসায়েল নিয়ে সীমাহীন তর্কাতর্কি বাদানুবাদ করে করে এরা এই জাতির ঐক্য টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন, যে ঐক্য ছাড়া একটা জাতি ধ্বংস হয়ে যায়, এমন কি দুর্বল শত্র“র হাতেও পরাজিত হয়ে যায়। আর তাই গিয়েছিলও। কিন্তু তাতেও বোধোদয় হয় নি, অসীম অজ্ঞতায় তারা আজও ঐ খুঁটিনাটি মসলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে ব্যস্ত।

আজকের এই বিজ্ঞানের সৌধ কারা গড়ে তুলেছিলো?

আজকের এই বিজ্ঞানের সৌধ কারা গড়ে তুলেছিলো?
জ্ঞান দুই ধরনের
1) স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্বলিত জ্ঞান
2)স্রষ্টার অস্তিত্ববিহীন মস্তিষ্কপ্রসুত জ্ঞান।
যাদের মোরা বতমানে বিজ্ঞান বলি (আগে অনেক বিজ্ঞানী ছিলো তাদের জ্ঞান ছিলো স্রষ্টার অস্তিত্ব  অনুযায়ী)
দেখুন বিজ্ঞানীদের নাম-মোসলেম বিজ্ঞানী যাদের ভিত্তিতে গড়া আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের জয়।
1.আল-রাজী(রসায়ন,দশন)
2.আল-বিরুনী (বিজ্ঞান)
3.আল-জাবির এবনে হাইয়ান (রসায়ন শাস্ত্রের জনক)
4.ইবনে রুশদ -(যুক্তিবিদ্যা ও দশন)
5.আবু-আব্দুল্লাহ আল বাত্তানী(জ্যোতির্বিদ,জ্যোতির্বিদ্যা)
6.ইবনে আল হাইসাম-(আলোকবিদ্যা)
7.ইবনে সীনা- (চিকিৎসক দের চিকিৎসক)
8.ইবনে খালদুন-(দশন, ইতিহাস, গনিত)
9.আল ফারগানী- (গনিত,জ্যোতির্বিদ্যা)
10.আল খোয়ারেজমী -(বীজগনিতের আবিষ্কারক)
11.আবু আল নাসির আল ফারাবী -(যুক্তিবিদ্যা,সমাজবিদ্যা)
12.আল নাফিস-(চিকিৎসাবিদ্যা,দশন
এই হলো এসলামি সনযুগের বিজ্ঞানীরা যাদের নাম ইহুদী-খ্রিস্টান রা বদলিয়ে নিজেদের নাম বসিয়েছে। কিন্তু কয়েকটি নাম বাদ দিতে পারেনি অবশ্য। 
এই হলো স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্বলিত জ্ঞান ও ওই জ্ঞানেই জ্ঞানী বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানটাই যে খারাপ এ রকম নয়। কারন আজ দাজ্জাল এই বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে,যেখানে শিশুরা পযন্ত রেহাই পায়না।
আর মোসলেম বিজ্ঞানী রা থাকলে আজ তারা এই কাজ করতে পারতো না কারন মোসলেম রা ভয় করে একমাত্র  আল্লাহ কে।যিনি এই জ্ঞানেরও বিধাতা।
আর দিতীয় জ্ঞান ওই একের জ্ঞান আসার পর শিক্ষা গ্রহন করলো প্লাস স্রষ্ট্রা র অস্তিত্ব সম্বলিত জ্ঞান কে অসীকার করতে লাগলো। যা আজও করে। যার ফলে বতমান দাজ্জাল বিশে শুধু নাস্তিক আর নাস্তিক ,যেন নাস্তিকের আজ বিকল্পই নেই। আত্তাহীন জড়বাদী, পাশ্চাত্যের শিক্ষা যে দিক দিয়ে যাবে সেদিকের আশে পাশের লোক সহ জড়বাদী করে ফেলবে। নাস্তিক করে ছেড়ে দেবে। আজ সব জায়গায় পাশ্চাত্যের শিক্ষা র হৈ রৈ চলছে। যেন কিছুই হইনি।
মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত 
মানে একটা (beliver)/Religious .(কিন্তু দাজ্জালের অনুসারী হয়ে আমাদের কে মারে মোসলেম হয়েও)
আরেকটা (Non beliver) Secular. (দাজ্জালের খাস অনুসারী)
হেযবুত তওহীদ ________
image

এলাহ”*এর অর্থ কিভাবে(মাবুদ)হইলো???

*”এলাহ”*এর অর্থ কিভাবে(মাবুদ)হইলো?
যারা কোর’আন অনুবাদ কোরছে এটা অত্যন্ত ভাল কাজ। কারন
আমরা পড়তে পারতেছি।
অনুবাদ আছে বোলেই আমরা বেদাত কে বেদাত বোলে চিনতেছি।
চিল্লা-ফিল্লা বেদাত সহজেই সনাক্ত করতে পারি।
ধন্যবাদ অনুবাদের জন্য। অনুবাদ, তাফসীর, এরপর ফিকাহ Enough is enough চুলচেরা শুক্ষ্ম বিশ্লেষণ ভালো নয়, বেশি বিশ্লেষণ করেই মতভেদ তেরি হয়,
Example বতমান আলেম সমাজ, হাজার দল, ফেরকা, উপ ফেরকায় বিভক্ত।(আন আম-  159)
শুধু মাত্র এই অরথের কারনেই। নুরানী বাংলা উচ্চারণ কোরানে ,অন্যান্য বহু অনুবাদকের ওই একই মেনিং ,ইংলিশ মেনিং গুলোতেও ওই একই অর্থ।
কিন্তু আমি দেখলাম-
*(বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)*এর যে কোরান ওইটায় অনারা “এলাহ “শব্দের অর্থ “এলাহই “রেখেছেন। অনারা জানেন যদি এলাহই যদি নষ্ট হোয়ে যায় তাইলে আর কোন কিছু কাজে আসবে না। যেমন বতমানে মোসলেম আকিদাবিহীন নামদারী,লেবাসদারী বেদাতে পরিনত হইয়া যায়গায় যায়গায় চিল্লা দিচ্ছে। এবাদত করে, বাস্তবে রাষ্টের আইন মানে দাজ্জালের /ইহুদী-খ্রিস্টান
এর/পাশ্চাত্যের। যাইহোক
সব জায়গায় দেখি “এলাহ” এর অর্থ ভুল দেওয়া হইয়াছে
। এলাহ হইলো সেই সত্তা যার হুকুম শুনতে হইবে জীবনের
প্রতিক্ষেত্রে “ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পযন্ত ” যেখানে অন্য কারো হুকুম মানা যাবেনা। যিনি হুকুম দিবেন তিনি এলাহ। এর অরথ এক কথায় হইবে- হুকুম দাতা( এবাদতও আল্লাহর হুকুম),বিধানদাতা জীবনের সবক্ষেত্রে।
কিন্তু নুরানী কোরানে
ব্যবহার করা হইছে “মাবুদ -উপাস্য ” আল্লাহ
তো হুকুমদাতা (উপাসনা তারই জন্য)
তাইলে হুকুমের মধ্যে পড়লো না?
মাবুদ,এলাহ দুইটি আরবী শব্দ এর অর্থ দুনিয়া উল্টে গেলেও এক হইতে পারেনা। যারা এই ভুল অর্থ করেছেন তাদের পরকালে জবাব দিতে হইবে আল্লাহর কাছে।
কারন আমরা পাঠক। যদি ভুল অর্থ আসে তাইলে আকিদাই পাল্টে যায়। যদি এলাহ অরথ পাল্টে যায় – তাহলে কোরানের সম্পুণ ভাবমূর্তি তা নষ্ট হোয়ে যায়।
কারন এলাহ দিয়া আল্লাহ কালেমা বানাইছেন মাবুদ
দিয়া নয়,এটা মনে রাখতে হইবে।
তাইলে কি আল্লাহ মাবুদ ব্যবহার করতে পারতেন না?
দেখুন মাবুদ কোথায় (সুরা কাফেরুন)
“যদি তাই হয় তাইলে কালেমা হইবে “লা মাবুদ ইল্লাল্লাহ ” অরথ হইলো – “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই” তাহা হইলে রাষ্টের আইন ওইগুলো বতমানে ইহুদী-খ্রিস্টান যেভাবে হুকুম দিচ্ছে ওইভাবে দিবে আল্লাহ হুকুম দিবেন না। কারন আল্লাহ ব্যক্তিগত হইয়া গেছে শুধু এবাদতের জন্য। এই ভুল অর্থ এর জন্য আজকের জাতির এই
অবনতি অন্য জাতির লাথি খায়।পাশ্চাত্যের আইন মানে কোরান বাদে। তারা কি জ্ঞানী যারা এর ভুল অরথ কোরেছেন? তারা মুর্খ ,গন্ড মুর্খ – চুলচেরা মুর্খ।
এই যে কালেমা “এটা কি ছোট জিনিস? কালেমাতে সমস্ত কিছু নিহিত আছে এর অর্থ কি শুধু উপাস্যের মধ্যে উপস্থিত হইলে চলবে? বহু লোক আছে, সরাসরি অনুবাদকারী দের বিশাস করেন যে রকম মোশরেকরা মুতি বিশাস করে।
তাইলে কালেমা কি – লা এলাহা এল্লা’আল্লাহ- মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সঠিক অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা/বিধানদাতা নেই এবং মোহাম্মদ (সা:) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। এই যে আল্লাহ হুকুমদাতা দাতা কিসের? সব কিছুরই
ব্যক্তিগত এবাদত হইতে রাষ্ট্র পযন্ত যিনি হুকুম-বিধান দিবেন
তিনি হলো এলাহ “তাই আল্লাহ বোললেন – এর মধ্যে অন্য হুকুম মানলেই কাফের (মায়েদা 44;45;47)
এই কালেমার হুকুম প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কার উপর পড়লো?
নিঃসন্দেহে রাসুল (স) এর উপরে তাইনা? রাসুলুল্লাহ (স)
চলে গেলে কাদের উপর? যারা উম্মাহ দাবি কোরবে। সেই প্রধান হুকুমটা কি জানতে হইবে না।
“অন্য যত ভুল আইন ব্যবস্থা দুনিয়াময় আছে ওইগুলো ভেংগে দিয়া আমি (আল্লাহ) হুকুম (কোরানের আইন)
দিলাম এইটা প্রতিষ্টিত করো। আল্লাহ নিজে সাক্ষী রইলেন।
(সুরা তাওবা 33;ফাতাহ 28;সফ 9)
আইন কেন প্রতিষ্ঠা কোরবে? অসহায় নারী, অসহায় পুরুষ, শিশু ক্রন্দন কোরে বোলে -হে আল্লাহ আপনি আপনার পক্ষ হইতে একজন অবিভাবক পাঠান, এ জালিম সম্প্রদায় হইতে রক্ষার জন্য। (নেসা 75)
এদিকে আল্লাহ বোললেন -তোমাদের
কি হইলো যে তোমরা অভিযানে বের হওনা? যদি না বের হও তাহলে জেনে রেখ দুনিয়া আখিরাতে বেদানাদায়ক আযাব রয়েছে। (সুরা তাওবা 38-39)

রমজান মাস শুরু কখন?

রমজান মাস শুরু কখন?
মাস শুরু হয় কখন?
৩৬:৩৯ আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে “আর চন্দ্র আমরা উহার জন্য নির্ধারিত
করেছি মনজিলসমূহ। (চাঁদ প্রতিবার উহার মনজিলসমূহ অতিক্রম
করতে থাকে) যতক্ষণ না উহা ফিরে যায় খেজুর গাছের পুরাতন শাখার
মতো দৃশ্যমানরূপে”। এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, যখন চাঁদ খেজুর গাছের
পুরাতন শাখার মত দৃশ্যমানতায় ফিরে যায় তা হচ্ছে চান্দ্র মাসের এক
তারিখ। আর তা হচ্ছে পূর্ণিমা। কারণ খেজুর গাছের পুরাতন
শাখা ডানে বামে দুদিকে পড়ে থাকে এবং তার দৃশ্যরূপ হয় পূর্ণিমার মত
গোল। এছাড়া খেজুর গাছের পুরাতন শাখার মত দৃশ্যমান রূপ
বলতে যদি অমাবস্যার পরবর্তী হেলালকে বুঝানো হয় আর তাই হেলাল
মাসের এক তারিখ হয়, তাহলে প্রশ্ন হল, আহেল্লাকে হজ্জের জন্য
মাওয়াক্বীত বলার পাশাপাশি সিয়ামের জন্যও বলা হয়নি কেন?
সুতরাং শাহর বা মাসের প্রথম তারিখ পূর্ণিমা, সরু চাঁদ নয়।
আসলে শাহর বা মাস শব্দটি কুরআনে সাধারণভাবে যে কোন তারিখ
থেকে ক্রমাগত ৩০ দিনকে বুঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে, আবার
ক্যালেন্ডার মাস যেমন রমাদান মাস অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।
সাধারণভাবে মাস বললে যে কোন তারিখ থেকে ক্রমাগত ৩০
দিনকে বুঝতে হবে আর ক্যালেন্ডার মাস বললে চান্দ্র মাসের
ক্ষেত্রে তা ৩০ দিনও হতে পারে, ২৯ দিনও হতে পারে।
প্রতিটি চান্দ্রবর্ষে ৩৫৪ দিন থাকে এবং ১৮:২৫ আয়াত অনুসারে ৩০০
সৌরবর্ষে ৩০৯ চান্দ্রবর্ষ। সাধারণভাবে মাস হচ্ছে যে কোন তারিখ
থেকে ক্রমাগত ৩০ দিন। আর ক্যালেন্ডার মাস হচ্ছে পূর্ণচন্দ্র চক্র অর্থাৎ
পূর্ণচন্দ্র থেকে পূর্ণচন্দ্র। এর আরো প্রমাণ হচ্ছে যেহেতু লাইলাতুল
কদরে ফেরেশতারা তাদের রবের থেকে সকল নির্দেশ নিয়ে অবতরণ
করে (৯৭:০৪) তাই লাইলাতুল কদর থেকে লাইলাতুল কদর হচ্ছে এক বছর।
অর্থাৎ লাইলাতুল কদর হচ্ছে বছরের প্রথম রাত তথা রমজান মাস
হচ্ছে বছরের প্রথম মাস (৯৭:০১, ০২:১৮৫)। লাইলাতুল কদর হচ্ছে পূর্ণ
শান্তির রাত (৯৭:০৫)। পূর্ণিমার রাত ছাড়া অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত এ
আখ্যা পেতে পারে না। কারণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত থেকে আল্লাহর
কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে (১১৩:০৩)। এখান থেকেও বুঝা যায় যে,
মাস শুরু হবে পূর্ণিমা থেকে।

বুলবুল  আহাম্মেদ

সালাতুল খওপ কি ???

সালাতুল খওপ কি ???
, সালাতুল কসর, আশংকালীন সালাহ এটা যুদ্দের সময় সালাহ নয়। যুদ্ধের আগে শত্রু র আশংকালীন সময়ে এই সালাহ।বা সফরকালীন সালাহ এটা যদি শত্রুর আশংকা থাকে।
» ০০৪. সূরা নিসা » 004.101
যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন নামাযে কিছুটা হ্রাস
করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে,
কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয়
কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
And when you (Muslims) travel in the land, there is no sin on you
if you shorten your Salât (prayer) if you fear that the
disbelievers may attack you, verily, the disbelievers are ever unto
you open enemies.
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺿَﺮَﺑْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺟُﻨَﺎﺡٌ ﺃَﻥ ﺗَﻘْﺼُﺮُﻭﺍْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺇِﻥْ ﺧِﻔْﺘُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﻔْﺘِﻨَﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﺇِﻥَّ
ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﺪُﻭًّﺍ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ
» ০০৪. সূরা নিসা » 004.102
যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন
একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়।
অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন
সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর
তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার
সাথে নেয়। কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক,
যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে। যদি বৃষ্টির
কারণে তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র
পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই
এবং সাথে নিয়ে নাও তোমাদের আত্নরক্ষার অস্ত্র। নিশ্চয় আল্লাহ
কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।
When you (O Messenger Muhammad SAW) are among them, and
lead them in As-Salât (the prayer), let one party of them stand
up [in Salât (prayer)] with you taking their arms with them; when
they finish their prostrations, let them take their positions in the
rear and let the other party come up which has not yet prayed,
and let them pray with you taking all the precautions and bearing
arms. Those who disbelieve wish, if you were negligent of your arms
and your baggage, to attack you in a single rush, but there is no
sin on you if you put away your arms because of the inconvenience
of rain or because you are ill, but take every precaution for
yourselves. Verily, Allâh has prepared a humiliating torment for
the disbelievers.
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛُﻨﺖَ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﻓَﺄَﻗَﻤْﺖَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻓَﻠْﺘَﻘُﻢْ ﻃَﺂﺋِﻔَﺔٌ ﻣِّﻨْﻬُﻢ ﻣَّﻌَﻚَ ﻭَﻟْﻴَﺄْﺧُﺬُﻭﺍْ ﺃَﺳْﻠِﺤَﺘَﻬُﻢْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪُﻭﺍْ ﻓَﻠْﻴَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ
ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺁﺋِﻜُﻢْ ﻭَﻟْﺘَﺄْﺕِ ﻃَﺂﺋِﻔَﺔٌ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻟَﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍْ ﻓَﻠْﻴُﺼَﻠُّﻮﺍْ ﻣَﻌَﻚَ ﻭَﻟْﻴَﺄْﺧُﺬُﻭﺍْ ﺣِﺬْﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺃَﺳْﻠِﺤَﺘَﻬُﻢْ ﻭَﺩَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ
ﻟَﻮْ ﺗَﻐْﻔُﻠُﻮﻥَ ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻠِﺤَﺘِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﺘِﻌَﺘِﻜُﻢْ ﻓَﻴَﻤِﻴﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﻣَّﻴْﻠَﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻭَﻻَ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﻥ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺃَﺫًﻯ ﻣِّﻦ
ﻣَّﻄَﺮٍ ﺃَﻭْ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣَّﺮْﺿَﻰ ﺃَﻥ ﺗَﻀَﻌُﻮﺍْ ﺃَﺳْﻠِﺤَﺘَﻜُﻢْ ﻭَﺧُﺬُﻭﺍْ ﺣِﺬْﺭَﻛُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﺃَﻋَﺪَّ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻣُّﻬِﻴﻨًﺎ
০০৪. সূরা নিসা » 004.103
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও
শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও,
তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
[সালাহ নিদিষ্ট সময়ের জন্য ফরয কেন?)
যুদ্দের সময় কি সালাহ আছে?
সুরা নেসা 104-
তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাত
প্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত
এবং তোমরা আল্লাহর কাছে আশা কর, যা তারা আশা করে না।
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
হেযবুত তওহীদ _____

শহিদ হয় কারা?



শহিদ অমোক, তোমক বলে মিথ্যে বলে অনেকেই,ওই কবর বাসীদের উপর মিথ্যের অপবাদ দেয়। যাতে তাদের কষ্ট আরো বাড়ে।
  তাদের সম্পকে দুটি কথা।
তাই ভাই বলবেন কি … কিসের জন্য মরলে শহিদ হয়? দেখুন বাকারা 154;আলে-এমরান 169)
আল্লাহ বলেন-” আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।”(বাকারা 154)
আবারো আল্লাহ বলেন -” আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত
মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।(আলে-এমরান 169)
Think not of those who are killed in the Way of Allâh as dead. Nay,
they are alive, with their Lord, and they have provision.
ﻭَﻻَ ﺗَﺤْﺴَﺒَﻦَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗُﺘِﻠُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺗًﺎ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳُﺮْﺯَﻗُﻮﻥَ
Wala tahsabanna allatheena qutiloo fee sabeeli Allahi amwatan
bal ahyaon AAinda rabbihim yurzaqoona
‘ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং প্রার্থনা’ যা পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে জীবন বিমুখতা। বরং এর অর্থ ঠিক
উল্টো। এর অর্থ হচ্ছে সোচ্চার ভাবে শক্তভাবে হাল ধরে মিথ্যার
বিরুদ্ধে, সত্যের জন্য যুদ্ধ করা। কারণ সত্যের জন্য যুদ্ধ করাই
হচ্ছে আল্লাহ্র জন্য যুদ্ধ করা। আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধ করার অর্থ ধন-
সম্পদ, আপন-জন, সুখ-সুবিধা, সর্বস্ব ত্যাগ করা, সত্যকে প্রতিষ্ঠার
জন্য সংগ্রাম করা। সত্যের জন্য সংগ্রামে অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার
করতে হয়। এমনও হয় যে সারা জীবনের কর্মফলকে ত্যাগ করতে হয়। ত্যাগ
করতে হয় অর্থ-সম্পদ, মান-সম্মান, যশ-প্রতিপত্তি, সামাজিক
প্রতিষ্ঠা এমনকি অনেক সময় সমাজের চোখে, সাধারণ মানুষের
চোখে নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। তবুও সবকিছুর
পরিবর্তে বান্দা যখন আনন্দ চিত্তে, সন্তুষ্টির সাথে শুধুমাত্র সত্য
প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে, তখন তার এই আপাতঃ ক্ষতি আর
ক্ষতি থাকে না। আধ্যাত্মিক জগতে বান্দা পায় আসল পুরস্কার।
যারা সত্যের জন্য সংগ্রাম করে এই সংগ্রামে যদি তারা নিজেদের
জীবন বিসর্জন দেয় তবুও তা বৃথা যায় না। তারা মানুষের ইতিহাসের
পাতায় অমর হয়ে থাকে। তারা হয় অমর। আর এই
সংগ্রামে বান্দা অর্থ-সম্পদ, মান-সম্মান যা তারা হারায়-
সত্যিকার অর্থে তারা তা হারায় না। পৃথিবীর আর্থিক ক্ষতির
বিনিময়ে আল্লাহ্ বান্দার সম্মুখে আধ্যাত্মিক জগতের দ্বার উন্মুক্ত
করে দেন। আমরা মহামানবদের জীবন থেকে এই শিক্ষা পাই-তাদের
সংগ্রাম তাদের মৃত্যুর পরও অমর হয়ে আছে। তারা মৃত নন। আবার
সত্যের জন্য আত্মত্যাগ মানব সমাজের একটি বিরল দৃষ্টান্ত
হিসেবে থাকতে পারে, যে আত্মত্যাগের দ্বারা মানুষ যুগে যুগে উপকৃত
হয়। ইসলাম এই আত্মনিবেদনকে উৎসাহিত করে।
And say not of those who are killed in the Way of Allâh, ”They are
dead.” Nay, they are living, but you perceive (it) not.
ﻭَﻻَ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍْ ﻟِﻤَﻦْ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀ ﻭَﻟَﻜِﻦ ﻻَّ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
Wala taqooloo liman yuqtalu fee sabeeli Allahi amwatun bal
ahyaon walakin la tashAAuroona
দেশের জন্য বা কোন ব্যক্তির জন্য মরলে কি শহিদ হয়?
তাই বতমানে জিয়ার নামে দোয়ার চেয়ে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হোচ্ছে যা নাকি তার কষ্ট হচ্ছে।  তাই আল্লাহ কি বুঝেন না গোজামিল?  গোজামিল দিয়ে প্রমান করলে কি হয়? শহিদ কি কখনো মরলে পচে হাড্ডি বের হয়?
আজই প্রমানের জন্য জিয়ার কবর খুড়ে তাজা নয়।  সে মাটির সাথে মিশে গেছে।
শহিদ হলে তার মানে তাজা থাকতে হবে কবরে। নইলে কোরানের আয়াত মিথ্যে হয়ে যায় (বাকারা 154;আলে-এমরান 169 দেখুন )
আর মুখের জুড়ে যারা বলে দেশের জন্য শহিদ, তারা শুধু ভুলই করেন না আরো তাদের কবরে আযাব পোছে দেন।আর আল্লাহর আয়াতসমুহ কেও মিথ্যে সাবস্থ্য করেন। তাই সাবধান। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। (আমিন)
কয়েকদিন আগে মাত্র শিয়া রা রাসুলুল্লাহ (দ) সাহাবী হাজার ইবনে আদী (রা) এর মাজারে বোমা মেরে লাশ বের করে ফেলে।  কিন্তু আজও লাশ টা পচে নি।  তাই দেখুন 1400 বছর হয়ে গেছে কিন্তু লাশ পচেনি।
তাই প্লিজ, যারাই আল্লাহর পথে মরেনি তাদের শহিদ বলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাদের রুহের প্রতি কষ্ট আরো বাড়াবেন না। আপনি জানেনা যে কবরে কি কষ্ট হয় তাদের যারা আল্লাহর পথে ছিলোনা।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন ।(আমিন)

বুলবুল আহাম্মেদ

সুন্নাতের নামে গোজামিলে সুন্নাত প্রমানের আশায় কেন এরা?

সুন্নাতের নামে গোজামিলে সুন্নাত প্রমানের আশায় কেন এরা?
===×=====×=====×======×====×==
বতমানে নামদারী আলেম-উলামা রা রাসুলের সুন্নাহ কে ভাগাভাগি করে ফেলেছে।। রাসুলের নামে মিথ্যে সুন্নাহর নামে সুন্নাহর প্রচলন কোরেছে, যা আল্লাহ ও তার রাসুল সুন্নাহই বলেনি।। কিন্তু আজকের আলেম-উলামা দের প্রন্ডিত প্রমানের জন্য সুন্নাতের গোজামিল উদ্ভাবন করে মানুষ গোমরাহ করতেছে।
সুন্নাহ পালনে মহিলা ও পুরুষের কেন ভাগাভাগি)?
—————————
কেন মহিলাদের অধিকার নাই রাসুলের সুন্নাহ পালনে?
কোরান অনুযায়ী মহিলা পুরুষের একই সুন্নাহ, ,আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটা কি পরিবর্তন হওয়ার?
পুরুষের মহিলার সুন্নাহ কোন ভাগাভাগি নেই। কাজ একই কিন্তু এই কাজের, দীন প্রতিষ্ঠার কিছু ভিন্নতা রয়েছে, দায়িত্বের কিছু ভিন্নতা রয়েছে, যেমন পুরুষ সে রাষ্টের খলিফা হতে পারে।। মহিলা হতে পারেনা।। আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে,খলিফা হয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত পুরুষ ই আল্লাহ ও তার রাসুলের আদর্শ মানলো।।। মহিলারা অই কাজে সাথে থেকে সহযোগী হবে মানে সে (মহিলা) সুন্নাহ পালন করলো।।। কারন আপনি যদি রাসুলের সুন্নাহ কে দাড়ি মধ্যে আটকিয়ে রাখেন তাহলে মহিলারা কি সুন্নাহ থেকে আলাদা নয়?
তাই কোন ভাগাভাগি নেই দীনে। । কিছু অভ্যাস গত দিক ছাড়া। যেমন আপনি পানজাবি পড়েন, মেয়েরা পানজাবি পড়েন না। তাইলে রাসুলের সুন্নাহ মানেনা। আজকে যারা মনচুক্তি সুন্নাহ বানিয়ে ভাগাভাগি করেছে।। তাতে শুধু পুরুষ রাই জান্নাতি মেয়েরা জাহান্নামী।
হাজার হাজার হাদিস বানিয়ে নিয়েছে।। রাসুল যেগুলো বলেন নি, সেগুলো বলিয়ে নেওয়াচ্ছে।
মানে মহা বেদাতী। ।।
অনেকেই বলে থাকে মা আয়েশা, মা ফাতেমা,মা খাদিজা এদের সুন্নাহ এরা মানে।।। তাহলে মা গনও কি সুন্নাহ বানানোর অধিকার রাখে?  না রাখেন না। বরং রাসুল যেভাবে সবাইকে বলেছেন তারা সেইভাবে কাজ করে গেছেন।।। তারা ব্যক্তিগত বিষয়ে এতো চুলছেরা বিশ্লেষন কোরতো না আজকের মতো।।। তারা চিন্তা করতো কিভাবে সারা দুনিয়ায় আল্লাহর আইন বিধান হুকুম প্রতিষ্ঠা করা যায়।। এই টা হলো রাসুলের দায়িত্ব, আদর্শ, সুন্নাহ. ,এই জন্য রাসুল আদিষ্ঠ হোয়েছিল (ফাতাহ 28’সফ 9 ,তাওবা 33 দেখুন)
আল্লাহ নিজে বলেছেন তোমরা ভাগাভাগি হইয়োনা, আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে সবাই মিলে ধরো। (আলে-এমরান 103,সফ -4)
এর পরেও কি বলবেন যে এসলামে কোন ভাগাভাগি আছে? সালাহ থেকে শুরু করে সমস্ত কাজে কোন বিভাজন নেই এসলামে। যারা বিভাজন করলো তারা কোরানের আলে-এমরান 103 কেই অসীকার করলো  এবং কাফের হয়ে গেলো। কাফের হোওয়ার পর আর কিছু কবুল হোওয়ার কথা নয়।
আল্লাহ সবাইকে সত্য বুঝার তওফীক দাও। (আমিন)

স্রষ্ট্রার বিধান প্রয়োগে শান্তি তার প্রমাণ কি?

স্রষ্ট্রার বিধান প্রয়োগে শান্তি তার প্রমাণ কি?
প্রশ্ন হোতে পারে যে স্রষ্টার দেওয়া জীবনবিধান মানুষের
সমাজ জীবনে প্রয়োগ ও
কার্য্যকরী করা হোলে জীবনে যে ন্যায়, সুবিচার,
নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হবে তার যুক্তি ও প্রমাণ
কি? যুক্তি স্বয়ং স্রষ্টা দিয়ে দিয়েছেন, যে যুক্তির
বিরুদ্ধে কোন জবাব নেই। তিনি বোলছেন,
‘যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তিনি কি জানেন না?
তিনি সুক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন।’ আর প্রমাণও আছে, তা হোল
ইতিহাস। শেষ নবী মোহাম্মদের (দ:) মাধ্যমে যে শেষ
জীবন বিধান স্রষ্টা প্রেরণ কোরেছিলেন তা মানবজাতির
একাংশ গ্রহণ ও সমষ্টিগত জীবনে কার্য্যকরী করার
ফলে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অংশ অর্থাৎ
নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে কী ফল হোয়েছিল তা ইতিহাস।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ
নিরাপত্তা যাকে বলে তা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। মানুষ
রাতে শোওয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার
প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না, রাস্তায় ধনসম্পদ
ফেলে রাখলেও তা পরে যেয়ে যথাস্থানে পাওয়া যেত,
চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানী প্রায় নির্মূল
হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে মাসের পর মাস কোন অপরাধ
সংক্রান্ত মামলা আসতো না। আর অর্থনৈতিক দিক
থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই
স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাত ও
সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরে বেড়াতো কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক
পাওয়া যেত না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভূমির
অভ্যন্তরে যাকাত দেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতো।
এটি ইতিহাস। মানবরচিত কোন জীবনব্যবস্থাই এর
একটি ভগ্নাংশও মানবজাতিকে উপহার দিতে পারে নাই।

হেযবুত তওহীদ

দাজ্জাল শারীরিক দানব নয় একটি রূপক বর্ণনা



 »দাজ্জাল শারীরিক দানব নয় একটি রূপক বর্ণনা<<
মোহাম্মদ শরীফুল এসলাম (দেশেরপত্র)
চৌদ্দশ’ বছর থেকে মোসলেম উম্মাহর ঘরে ঘরে দাজ্জাল সম্বন্ধে আলোচনা চোলে আসছে। আল্লাহর শেষ রসুল মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যেসব কথা বোলে গেছেন, পৃথিবীতে কি কি ঘটনা ঘোটবে সেগুলি সম্বন্ধে আভাষ ও সরাসরি যা জানিয়ে দিয়েছেন সেগুলির মধ্যে দাজ্জাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীগুলি যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বিগ্নকর। উদ্বিগ্নকর ও ভীতিপ্রদ এই জন্য যে দাজ্জালের শক্তি, প্রভাব ও প্রতিপত্তি সমগ্র মানবজাতির উপর প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার কোরে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে, সমস্ত মানবজাতিকে বিপথে চালাবার চেষ্টা কোরবে। শুধু চেষ্টা নয়, বেশ কিছু সময়ের জন্য দাজ্জাল তার শক্তি ও প্রভাব বিস্তার কোরে গোটা মানবজাতিকেই বিপথে পরিচালিত কোরবে। কাজেই দাজ্জালকে কোনভাবেই ছোট কোরে দেখার বা অবজ্ঞা করার উপায় নেই।আল্লাহর রসুল বোলেছেনÑ আদমের সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এমন কোন বিষয় বা ঘটনা হবে না, যা দাজ্জালের চেয়ে গুরুতর ও সংকটজনক (হাদীস- এমরান বিন হোসায়েন (রাঃ) থেকে মোসলেম)। তিনি এ কথাও বোলেছেন যে- নুহ (আঃ) থেকে নিয়ে কোন নবীই বাদ যান নি যিনি তাঁর উম্মাহকে দাজ্জাল সম্বন্ধে সতর্ক করেন নি (হাদীস- আবু ওবায়দা বিন র্যারাহ (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, বোখারী, মোসলেম ও তিরমিযি)।
শুধু তাই নয়, আল্লাহর নবী নিজে দাজ্জালের সংকট (ফেত্না) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন (হাদীস- আয়েশা (রাঃ) থেকে বোখারী)।চিন্তা করার বিষয় হোচ্ছে, যে ব্যাপারটা মানবজাতির সৃষ্টি থেকে নিয়ে ধ্বংস পর্যন্ত যা কিছু ঘোটবে সে সমস্ত কিছুর চেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ, যে বিষয় সম্বন্ধে নুহ (আঃ) ও তাঁর পরবর্ত্তী প্রত্যেক নবী তাঁর জাতিকে সতর্ক কোরে গেছেন এবং যা থেকে শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীও আল্লাহর কাছে আশ্রয় (পানাহ্) চেয়েছেন সেটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, বিরাট (হাদীসে বিশ্বনবী “আকবর” শব্দ ব্যবহার কোরেছেন) এবং আমরা সে সম্বন্ধে কতটুকু সজাগ ও সচেতন? বাস্তব অবস্থা এই যে আমরা মোটেই সজাগ নই এবং নই বোলেই আমরা বুঝছিনা যে ৪৭৬ বছর আগেই দাজ্জালের জন্ম হোয়েছে এবং সে তার শৈশব, কৈশোর পার হোয়ে বর্ত্তমানে যৌবনে আছে এবং এও বুঝছিনা যে সমস্ত পৃথিবীসহ আমরা মোসলেমরাও দাজ্জালকে রব, প্রভু বোলে স্বীকার কোরে নিয়েছি ও তার পায়ে সাজদায় পোড়ে আছি। প্রকৃত দীন থেকে বিচ্যুত হবার শাস্তি হিসাবে আল্লাহ এই জাতিকে (যেটা নিজেদের মোসলেম বোলে পরিচয় দেয় ও নিজেদের মোসলেম বোলে বিশ্বাস করে) কয়েক শতাব্দীর জন্য ইউরোপের খ্রিস্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত কোরে দিয়েছিলেন এবং ঐ দাসত্বের সময়ে প্রভুদের প্রবর্তিত শিক্ষার ফলে প্রকৃত দীন থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে আছে। কাজেই দাজ্জাল সম্বন্ধে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। এরা আব্রাহাম লিংকনের কয়টা দাঁত ছিলো তা জানেন, শেক্সপিয়ের থেকে অনর্গল আবৃত্তি কোরতে পারেন, কিন্তু আল্লাহর রসুল যে মানবজাতির জীবনে দাজ্জাল নামে এক মহাবিপদ আবির্ভূত হবার ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গিয়েছেন তা তাদের কাছে এক কৌতুকপূর্ণ সংবাদ। এই জাতির যে অংশটা কোরান-হাদীস পড়েন তারা ছাড়া দাজ্জাল সম্বন্ধে কেউ চিন্তা-ভাবনাও করেন না, কোন গুরুত্বও দেন না। ঐ যে অংশটা কোরান-হাদীস নাড়াচাড়া করেন সেই অংশও দাজ্জালকে নিয়ে মাথা ঘামান না, প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল কী তা বুঝতে চেষ্টা করেন না; কারণ তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তারা অপেক্ষায় আছেন যে আখেরী যামানায় বিরাট এক ঘোড়ায় চড়ে এক চক্ষু বিশিষ্ট এক দানব পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে। যে হাদীসগুলিতে রসুলাল্লাহ দাজ্জাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন সেগুলির শাব্দিক অর্থকেই তারা গ্রহণ কোরেছেন, তার বেশী আর তারা তলিয়ে দেখেন নি বা দেখতে পারেন নি। যে ঘটনাটিকে আখেরী নবী আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুতর ও সাংঘাতিক ঘটনা বোলে চিহ্নিত কোরেছেন সেই মহা-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে তারা কোনও গভীর গবেষণা করেন নি।
এই মহা-প্রয়োজনীয় ব্যাপারটাকে বোঝার জন্য যতটুকু শ্রম দিয়েছেন তার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশী শ্রম ও সময় দিয়েছেন দাড়ি-মোছ, টুপি-পাগড়ী, পাজামা, মেসওয়াক, কুলুখ আর বিবি তালাকের মত তুচ্ছ ফতওয়ার বিশ্লেষণে।রসুলাল্লাহ বর্তমানের ইহুদী খ্রিস্টান বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’-কে একটি অতিকায় এবং শক্তিশালী দানব হিসাবে রূপকভাবে (অষষবমড়ৎরপধষষু) বর্ণনা কোরেছেন কারণ, রসুলাল্লাহর সময়ের নিরক্ষর আরবদের যান্ত্রিক সভ্যতার প্রযুক্তিগত কৌশলের ওপর ভিত্তি করা মহা-শক্তিশালী সভ্যতা সম্বন্ধে বোঝাবার চেষ্টা অবশ্যই অর্থহীন হোতো, তাদের পক্ষে তা বোঝা মোটেই সম্ভব ছিলো না। চৌদ্দশ’ বছর আগের নিরক্ষর আরবদের পক্ষে সম্ভব না হোলেও বর্ত্তমানে দাজ্জাল সম্বন্ধে মহানবীর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি যাচাই কোরলে সন্দেহের কোন স্থান থাকে না যে মহাশক্তিধর পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতাই হোচ্ছে আল্লাহর রসুল বর্ণিত সেই নির্দিষ্ট দাজ্জাল।দাজ্জাল সম্বন্ধে মহানবীর হাদীসগুলি প্রধানত দুই রকমের। একটা ভাগ দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের ব্যাপারে, অন্যটি দাজ্জালের পরিচয়জ্ঞাপক। মানবজাতির জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, সর্ববৃহৎ বিপদের সম্বন্ধে মানুষ বেখেয়াল ও নিরুদ্বেগ। যারা ধর্মের ব্যাপারে মহা-আলেম হোয়েছেন ও ধর্মচর্চার মধ্যে ডুবে আছেন তারাও সংকীর্ণ ও প্রায়ান্ধ দৃষ্টির জন্য দেখতে ও বুঝতে সক্ষম হন নি যে দাজ্জালের আবির্ভাব মানবজাতি ধ্বংসকারী নুহের (আঃ) মহাপ্লাবনের চেয়েও, প্রলয়ঙ্করী বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও কেন বড় (আকবর) ঘটনা; কেন মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের (যদি সে ঘটনা সত্য হোয়ে থাকে) চেয়েও সাংঘাতিক, যে যুদ্ধে আঠারো অক্ষৌহিণী অর্থাৎ প্রায় এক কোটি আদম সন্তান নিহত হোয়েছিলো। অন্য ভাগের হাদীসগুলিতে আল্লাহর শেষ রসুল মানবজাতি যেন দাজ্জালকে ঠিকভাবে চিনতে পারে ও সাবধান হয়, দাজ্জালকে প্রত্যাখ্যান করে, তার বিরোধিতা করে, সে জন্য তার পরিচিতির জন্য চিহ্নগুলি বোলেছেন।
কিন্তু তার সময়ের মানুষের শিক্ষার স্বল্পতার জন্য তাঁকে বাধ্য হোয়ে দাজ্জালকে রূপকভাবে বর্ণনা কোরতে হোয়েছে। কিন্তু সে রূপক বর্ণনা আজ পরিষ্কারভাবে ধরা দিয়েছে, যদিও আমাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টির জন্য সে বর্ণনাও আমরা বুঝতে সক্ষম হোচ্ছি না, দাজ্জালকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে ও দাজ্জালের পায়ে সাজদায় পোড়ে থেকেও বুঝতে পারছিনা যে এই সেই বিশ্বনবী বর্ণিত দাজ্জাল, মাসীহ উল কায্যাব।প্রথমেই দাজ্জালের নামটাকে নেয়া যাক। আল্লাহর রসুল একে দাজ্জাল নামে অভিহিত কোরেছেন। কিন্তু এটা কোন নাম নয়, এটা একটা বর্ণনা, অর্থাৎ বিষয়টার বর্ণনা। যেমন এমাম মাহ্দী কোন নাম নয়- বর্ণনা। মাহ্দী অর্থ হেদায়াহ প্রাপ্ত, যিনি সঠিক পথ, হেদায়াহ পেয়েছেন, তাঁর নিজের অন্য নাম থাকবে সবার মত। তেমনি দাজ্জাল শব্দের অর্থ চাকচিক্যময় প্রতারক, যেটা বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ভেতরে কুৎসিত। যেমন মাকাল ফল, দেখতে অতি সুন্দর, মনে হবে খেতেও অতি সুস্বাদু, কিন্তু আসলে খেতে বিস্বাদ, তিক্ত। পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতা বাইরে থেকে দেখতে চাকচিক্যময়, এর প্রযুক্তিগত সাফল্য মানুষকে মুগ্ধ কোরে ফেলে, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, কিন্তু এর প্রভাবাধীন পৃথিবী সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবিচারে, দুঃখে, ক্রন্দনে, অশ্র“তে ভরপুর। বিগত শতাব্দীতে এই ‘সভ্যতা’ দুইটি বিশ্বযুদ্ধ কোরে চৌদ্দ কোটি আদম সন্তান হতাহত কোরেছে এবং তারপর থেকে বিভিন্ন ছোট খাটো যুদ্ধে আরও দুই কোটি মানুষ হত্যা কোরেছে। আহত বিকলাঙ্গের সংখ্যা ঐ মোট সংখ্যার বহুগুণ। বিধবা, সন্তানহারা, গৃহহারা, দেশত্যাগীদের কোন হিসাব নেই। আর এই নতুন শতাব্দীতে শুধু এক ইরাকেই হত্যা কোরেছে দশ লক্ষ মানব। ইরাক ছাড়াও আফগানিস্তানসহ আরও অনেকগুলো দেশে তার এই হত্যাযজ্ঞ আজও চোলছে। এই ‘সভ্যতা’র অধীনস্ত সমস্ত পৃথিবীতে খুন, চুরি, ডাকাতি, হাইজ্যাক, ধর্ষণ, অত্যাচার সীমাহীন এবং প্রতিদিন প্রতি দেশে ধাঁ ধাঁ কোরে বেড়ে চোলেছে। তাই এর নাম দাজ্জাল, চাকচিক্যময়, চোখ ধাঁধানো প্রতারক।আল্লাহর রসুল কর্ত্তৃক বর্ণিত আখেরী যামানার দাজ্জাল কোন দৃশ্যমান (ঠরংরনষব) বা শরীরী (চযুংরপধষ) দানব নয়, তখনকার দিনের মানুষদের বোঝাবার জন্য এটি একটি রূপক (অষষবমড়ৎরপধষ) বর্ণনা যে কথা পেছনে বোলে এসেছি। এর পরও যদি কেউ জোর কোরে বোলতে চান যে, না, এক চক্ষুবিশিষ্ট, বিরাটকায়, জ্বলজ্যান্ত একটি অশ্বারোহী দানবই আসবে, তাহোলে আমার বক্তব্য হোচ্ছে, ধরুন আপনার কথামত এক চক্ষুবিশিষ্ট এক বিশাল দানব পৃথিবীতে উপস্থিত হোল, তার বাহন ঘোড়া বা গাধার দুই কানের ব্যবধানই সত্তর অর্থাৎ বহু সহস্র হাত [আবু হোরায়রা (রা:) থেকে-বায়হাকী, মেশকাত],
তাহোলে কি কারো মনে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকবে যে এটাই রসুল বর্ণিত সেই দাজ্জাল? চোখের সামনে প্রায় পৃথিবীর সমান আয়তনের এক দানবকে দেখে প্রথমেই সকলের মনে প্রশ্ন আসবে, এই বিরাট দানব আসলো কোত্থেকে! তাকে দেখে কেবল মোসলেমরাই নয়, অ-মোসলেমরাও এক মুহূর্ত্তে চিনে ফেলবে যে, এই তো এসলামের নবীর বর্ণিত দানব দাজ্জাল। সকল মানুষেরই তখন আমাদের নবীর উপর এবং এসলামের উপর ঈমান এসে যাবে।দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রসুল বোলেছেন, দাজ্জাল ইহুদী জাতি থেকে উদ্ভূত হবে এবং আমার উম্মতের সত্তর হাজার (অসংখ্য) লোক দাজ্জালের অনুসরণ কোরবে [ইবনে হানবাল (রা:) থেকে মোসলেম]।দাজ্জাল যদি রসুলের বর্ণনা অনুযায়ী সত্যিই জ্যান্ত কোন দানবীয় প্রাণী হয় তাহোলে কি কোরে এমন দানব মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ইহুদী জাতির মধ্য থেকে আসতে পারে? আর মোসলেমরাই কি কোরে আল্লাহকে ছেড়ে একটি দানবকে অনুসরণ কোরতে পারে?তৃতীয়ত, আল্লাহর রসুল বোলেছেন, দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে (অর্থাৎ কপালে) কাফের লেখা থাকবে। শুধু মো’মেন, বিশ্বাসীরাই তা দেখতে এবং পড়তে পারবে; যারা মো’মেন নয়, তারা পড়তে পারবে না [ আবু হোরায়রা (রা:), আবু হোযায়ফা (রা:) এবং আনাস (রা:) থেকে বোখারী ও মোসলেম]।অর্থাৎ কিছু লোক (মো’মেন) দাজ্জালকে কাফের বোলে বুঝতে পারবে আর কিছু লোক (যারা মোমেন নয়) দাজ্জাল যে কাফের তা বুঝতে পারবে না, এবং বুঝতে পারবে না বোলেই বহু সংখ্যক লোক তাকে রব বোলে মেনে নেবে। দাজ্জাল যদি শরীরী কোন দানবই হয় তাহোলে সবাই তাকে প্রথম দর্শনেই দাজ্জাল বোলে চেনার কথা। তারপরও সে কাফের কি কাফের নয় এ নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিমত হওয়া সম্ভব? ধরুণ কোন লোকালয়ে বা জনবহুল স্থানে হঠাৎ একটি বাঘ এসে পড়লো; সেখানের অবস্থাটা কি হবে ভাবুন। ছেলে, বুড়ো, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারবে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা কোরবে, তাই নয় কি? অথচ অকল্পনীয় বিরাট, ভয়ঙ্কর একটি দানব, যার বাহনের এক পা পৃথিবীর এক প্রান্তে আরেক পা পৃথিবীর অপর প্রান্তে, তাকে সামনা সামনি দেখেও কেউ চিনবে- কেউ চিনবে না, কেউ তাকে অনুসরণ কোরবে- কেউ কোরবে না, কেউ তার কপালের কাফের লেখা পড়তে পারবে- কেউ পারবে না এ কি হোতে পারে?তাহোলে আর সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে দাজ্জাল কোন শরীরী বা বস্তুগত দানব নয়, এটি একটি বিরাট দানবীয় শক্তির রূপক বর্ণনা; সেই সাথে এ কথাতেও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে ঐ বিরাট শক্তিটিই হোচ্ছে বর্ত্তমান দুনিয়ার ইহুদী খ্রীস্টান বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতা।
আবার[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান কোরেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা কোরেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।
[যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১৮৫৩৯৯৩২২২, ০১১৯১৩৬৭১১০]

Saturday, May 30, 2015

প্রকৃত মুসলিম কারা ???

মুসলিম তারাই যারা জাতীয় জীবনে আল্লাহর হুকুম মানে

তিনি একজন আরব খ্রিস্টান।তার হাতে ক্রসটি সরিয়ে ফেললে মনে হবে তিনি বুঝি একজন আলামা। তার পরিহিত পোশাকটি আরবিয় ঐতিহ্যের পরিচায়ক, এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি একজন আরব খ্রিস্টান।তার হাতে ক্রসটি সরিয়ে ফেললে মনে হবে তিনি বুঝি একজন আলামা। তার পরিহিত পোশাকটি আরবিয় ঐতিহ্যের পরিচায়ক, এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

Apnader-share-tin-1রিয়াদুল হাসান

আদম (আ:) থেকে শুরু কোরে শেষ নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্যন্ত ইসলামের অর্থাৎ দীনুল কাইয়্যিমার মর্মবাণী তওহীদ- এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো তৈরি জীবন-বিধান মানি না, স্বীকার করি না। এই সিরাতুল মুস্তাকীম, সহজ-সরল পথ ছেড়ে মহাপণ্ডিতরা দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে এই করলেন যে, সহজ-সরল পথটি হয়ে গেল একটি অত্যন্ত দুর্বোধ্য জীবন-ব্যবস্থা, খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলের জটিল জাল। এই জটিল জালে আটকা পড়ে সমস্ত জাতিটাই মাকড়সার জালে আটকা পড়া মাছির মত অসহায়, স্থবির হয়ে গেল। ঐ স্থবিরতার অবশ্যম্ভাবী ফল হয়েছে শত্র“র ঘৃণিত গোলামী ও বর্তমান অবস্থা; যেখানে অজ্ঞানতায়, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় ইসলামের আগের জাহেলিয়াতের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই জাতির ধর্মব্যবসায়ী আলেম সমাজ আজ কুয়োর ব্যাঙ। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তাদের চোখে এরা অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক। আসমানের মত বিরাট উদাত্ত দীনকে এরা তাদের লম্বা কোর্তার পকেটে পুরে মিলাদ পড়ে, বাড়ি বাড়ি দাওয়াত খেয়ে আর সুর কোরে ওয়াজ কোরে বেড়ান। তবু যদি তাদের ওয়াজের মধ্যে অন্তত কিছু সার কথা থাকতো! তাও নেই, কারণ দীনের মর্মকথা, এর উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এ সবের কিছুই তাদের জানা নেই। আসল দিক অর্থাৎ জাতীয় জীবনের দিকটাকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তি দিকটার সামান্য যে বাহ্যিক অংশকে এরা আকড়ে ধরে আছেন তা পর্যন্ত ভুল। যে দাড়ি রাখাকে এরা দীনের অতি প্রয়োজনীয় কর্তব্য বলে মনে করেন, প্রতি ওয়াজে প্রতি উপদেশে যারা দাড়ির প্রয়োজনীয়তার উপর অনেক সময় নষ্ট করেন সেই দাড়িকেই ধরুন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই দাড়িকে তার নিজের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন, যেটা বাড়তে বাড়তে সারা বুক ছেয়ে যায়। এই দাড়ি এই দীনের দাড়ি নয়। এ দাড়ি ইহুদিদের দাড়ি এবং এ রকম দাড়ি রাখা যে মহনবীর (দ:) নিষেধ তা তারা জানেন না। তাঁর (দ:) নির্দেশিত দাড়ি নিচের ঠোঁটের নিচ থেকে, অর্থাৎ যেখান থেকে দাড়ি গজায় সেখান থেকে একমুষ্ঠি মাত্র, এর বেশি হলেই তা ছেটে ফেলার নিয়ম। ফকীহদেরও অধিকাংশের মত হচ্ছে চার আঙ্গুল লম্বা দাড়ি হচ্ছে শরাহ অনুযায়ী। ইহুদিদের রাব্বাইরা লম্বা আলখেল্লা পড়েন ও মাথায় লম্বা টুপি লাগান, লম্বা দাড়ি তো প্রত্যেকেরই আছে। কাজেই একদল রাব্বাইদের মধ্যে আমাদের একদল ‘ধর্মীয়’ নেতাদের দাঁড় করিয়ে দিলে তাদের আলাদা কোরে চেনা যাবে না। এই উড়ন্ত দাঁড়ির সঙ্গে তারা যোগ করেন ন্যাড়া মাথা। তারা বলেন, আল্লাহর রসুলকে (দ:) মাথা ন্যাড়া অবস্থায় দেখা গেছে বলে হাদীসে আছে, কাজেই ন্যাড়া করাও সুন্নাহ। এ সিদ্ধান্তও ভুল। মহানবী (দ:) সব সময়ই লম্বা চুল অর্থাৎ আমরা যাকে বাবরী বলি তাই রাখতেন এবং তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে দেখেছেন স্বভাবতঃই। আম্মা আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেছেন, “পবিত্র কানের নিচ থেকে কাঁধ পর্যন্ত” অর্থাৎ সময়ে লম্বা হয়ে পবিত্র কাঁধ পর্যন্ত এসেছে এবং তখন ছেটে ফেললে আবার কানের নিচ পর্যন্ত ছোট হয়েছে। যারা তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন, তারা দেখেছেন হজ্বের সময়- যখন সবাইকে মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হয় হজ্বের আরকান হিসাবে। যেহেতু হজ্বের সময়ই একত্রে বহু সংখ্যক লোক তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন এবং পরে বর্ণনা করেছেন যে, “আমি রসুলাল্লাহকে (দ:) মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছি,” তাই তার মাথা কামানো অবস্থার কথা হাদিসে এবং সীরাতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এটা তার স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নাহ নয়, হজ্বে তো সবাইকে মাথা কামাতে হবে। কিন্তু ঐ বর্ণনাগুলিকে ভিত্তি কোরে এরা একদিকে মাথা কামিয়ে, অন্যদিকে হাওয়ায় উড়ন্ত বিশাল ইহুদি দাড়ি রেখে এক ভয়াবহ চেহারা সৃষ্টি করেন।
এই দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে এরা যেমন উলটো কোরে ফেলেছেন তেমনি এর বাহ্যিক দিকটাও এরা এদের অপরিসীম অজ্ঞতায় উলটে ফেলেছেন। দাড়ি রাখা, বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এই দীনের বুনিয়াদী কোন ব্যাপার নয় এবং বুনিয়াদী নয় বলেই কোর’আনে আল্লাহ কোথাও দাড়ি বা কাপড়-চোপড় সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেন নি। বরং বলেছেন- আমি মানুষের কাপড়-চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখি না, আমি দেখি মানুষের অন্তর । আসলে এই শেষ দীনে কোন নির্দিষ্ট পোষাক হতে পারে না, কারণ এটা এসেছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য। পৃথিবীর মানুষ প্রচণ্ড গরমের দেশে, প্রচণ্ড শীতের দেশে, নাতিশীতোষ্ণ দেশে, অর্থাৎ সর্বরকম আবহাওয়ায় বাস করে, এদের সবার জন্য এক রকম পোষাক নির্দেশ করা অসম্ভব। তা করলে এ দীন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রযোজ্য হতে পারতো না, সীমিত হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ ও তার রসুল (দ:) তা করেনও নি। বিশ্বনবীর (দ:) সময়ে তার নিজের এবং সাহাবাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও তখনকার আরবের মুশরিক ও কাফেরদের পরিচ্ছদ একই ছিলো। বর্তমানেও আরবে মুসলিম আরব, খ্রিস্টান আরব ও ইহুদি আরবদের একই পোষাক-পরিচ্ছদ। দেখলে বলা যাবে না কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান আর কে ইহুদি।
কোন সন্দেহ নেই, বিশ্বনবী (দ:) তার অনুসারীদের একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের দাড়ি রাখতে বলেছেন। কেন বলেছেন? এই জন্য বলেছেন যে, তিনি যে জাতিটি, উম্মাহ সৃষ্টি কোরলেন তা যেমন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি তেমনি বাইরে থেকে দেখতেও যেন এই উম্মাহর মানুষগুলি সুন্দর হয়। আদিকাল থেকে দাড়ি মানুষের পৌরুষ ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে আছে। সিংহের যেমন কেশর, ময়ূরের যেমন লেজ, হাতির যেমন দাঁত, হরিণের যেমন শিং, তেমনি দাড়ি মানুষের প্রাকৃতিক পৌরুষ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য নষ্ট না করার উদ্দেশ্যেই দাড়ি রাখার নির্দেশ। আরও একটা প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য আছে দাড়ি রাখার নির্দেশের। পূর্ববর্তী ধর্ম, দীন, জীবন-বিধানগুলি বিকৃত হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার ফলে যখন সেগুলির মধ্যে একপেশে আধ্যাত্মবাদ, সন্ন্যাসবাদ ইত্যাদি প্রবল হয়ে দাঁড়ালো তখন তারা মাথার চুল, দাড়ি মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলে কৌপীন পড়ে সংসার ত্যাগ করলো। অর্থাৎ দাড়ি-মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলা হলো বৈরাগ্যের চিহ্ন, সংসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার চিহ্ন। কিন্তু মহানবী (দ:) যে উম্মাহ সৃষ্টি কোরলেন তার উদ্দেশ্য হলো সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে এই দীনের মধ্যে এনে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। তাহলে স্বভাবতঃই এই উম্মাহর সমস্ত কর্মপ্রবাহ সংগ্রামী, প্রকাশ্য ও বহির্মূখী হতে বাধ্য এ কথা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। সুতরাং এই উম্মাহর লোকজনের চেহারাও অবশ্যই সংসার বৈরাগী সন্ন্যাসীর ছাপ থাকবে না এবং ছাপ না রাখার জন্য দাড়ি রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে এই পৃথিবীরই সংসারী লোকজনের মত দেখাবার নির্দেশ। মহানবীর (দ:) সময়ে খ্রিস্টান সন্ন্যাসীরা (রাহেব) এক দল দাড়ি-মোচ চুলে কাচি লাগাতো না, ওগুলো ইচ্ছামত বাড়তো, আরেক দল সব কামিয়ে ফেলতো, ইহুদিরা বিরাট বিরাট দাড়ি রাখতো আর বৌদ্ধরা সব কামিয়ে ফেলতো। সবগুলোই ছিলো বৈরাগ্য, সংসার ত্যাগের বাহ্যিক প্রকাশ রূপে। এই বৈরাগ্যের মানসিকতার বিরোধিতা কোরে বিশ্বনবী (দ:) তার নিজের জাতিকে নির্দেশ দিলেন- আমার এই দীনে সন্ন্যাস, বৈরাগ্য নেই (লা রোহবানীয়াতা ফিল ইসলাম)। তোমরা ঐ সব সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ রাখবে এবং ইহুদিদের বিপরীত করবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ ছেটে ছোট কোরে রাখবে। উদ্দেশ্য হলো ঐ কাজ কোরে তারা দেখাবে যে তারা সন্ন্যাসী নয়, সংসার বিমুখ নয় বরং ঘোর সংসারী, এই সংসারে এই পৃথিবীতে মানব জীবনে স্রষ্টার দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক আইন, দণ্ডবিধি চালু কোরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সংগ্রামী জাতি তারা। জাতিকে সুন্দর দেখানো শেখানোর জন্য মহানবী (দ:) নিজে পরিষ্কার সুন্দর কাপড় পড়তেন, দাড়ি-মোচ সুন্দর কোরে ছেটে রাখতেন। তিনি সফরে গেলেও তার সঙ্গে কাচি, চিরুনী ও আয়না থাকতো। একদিন মসজিদে একজন উস্কো-খুস্কো চুলওয়ালা লোককে দেখে তিনি তখনই তাকে নির্দেশ দিলেন মাথার চুল চিরুনী কোরে সুবিন্যস্ত করার জন্য । বয়স হলে মাথার চুল যখন পেকে যায় সেটাকে রং করা, অর্থাৎ কম বয়সের দেখানো চেষ্টা করা দুনিয়াদারীর মানসিকতা, না বৈরাগ্যের, ধার্মিকতার মানসিকতা? মক্কা জয়ের পর পরই আবু বকর (রা:) তার অতি বৃদ্ধ বাপকে- যিনি তখনও মুশরিক ছিলেন, সুতরাং মক্কাতেই ছিলেন- মহানবীর (দ:) কাছে নিয়ে এলেন। বাপ তখন এত বৃদ্ধ যে তিনি চোখেও দেখতে পাননা। আবু বকরের (রা:) বাপ বিশ্ব নবীর (দ:) হাতে ইসলাম গ্রহণের পর রসুলাল্লাহ (দ:) তখনই হুকুম দিলেন তার শুভ্র চুল দাড়ি মেহেদী দিয়ে রং কোরে দিতে এবং তখনই তা কোরে দেওয়া হলো । একটি অন্ধ, অতি বৃদ্ধের চুল দাড়ি রং করা এবং আজকের ‘ধার্মিক’ মুসলিমদের নানাভাবে বৈরাগ্য প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে সত্যিকার ও পথভ্রষ্ট ইসলামের আকীদার তফাৎ- দু’টি বিপরীতমুখী আকীদা। আজ বিকৃত আকীদার ‘ধার্মিক’রা অনিয়ন্ত্রিত উলোঝুলো দাড়ি উড়িয়ে, মাথা ন্যাড়া কোরে বিশ্রী কাপড় পড়ে দেখাতে চান যে তাদের মন দুনিয়া বিমুখ হয়ে আল্লাহর দিকে গেছে- ঠিক যেমন কোরে ঐ খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বোঝায়। অর্থাৎ মহানবী (দ:) যে উদ্দেশ্যে দাড়ি মোচ সুন্দর কোরে ছেটে রাখতে বলেছেন, অর্থাৎ সুন্দর দেখাতে, তার ঠিক বিপরীত উদ্দেশ্যে।
মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ বিশ্বনবীর (দ:) যে দৈহিক বিবরণ হাদীসে ও ইতিহাসে পাওয়া যায় তা লক্ষ্য করলে আমরা পাই একটি মানুষ- অতি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়া, তাতে সুগন্ধ, খোশবু, আতর লাগানো (সুগন্ধি ও ফুল তার অতি প্রিয় ছিলো) যতœ নেয়া মাথার চুল, ঠিক মাথার মাঝখান থেকে সিঁথির দু’পাশ দিয়ে নেমে এসেছে কানের নিচে, কাঁধের একটু উপর পর্যন্ত, সুন্দর কোরে দাড়ি-মোচ ছাটা, সুন্দর দেখাবার জন্য চোখে সুরমা দেওয়া, মাঝে মাঝে গায়ে ইয়ামেনের প্রসিদ্ধ জোব্বা (Robe)। সব মিলিয়ে যাকে পাচ্ছি, তাকে যারা দেখেছেন তারা প্রভাতে উদিয়মান সূর্যের সাথে, পূর্ণ চন্দ্রের সাথে তুলনা কোরেছেন, তাকে কি কোনভাবেই একটি দুনিয়া বিমুখ, সংসার বিমুখ বৈরাগী বলা চলে? মোটেই না। কিন্তু বর্তমানের ‘ধার্মিক’দের মানসিকতা তাই- একেবার উল্টো। এদের বাইরেও উল্টো, ভেতরেও উল্টো। ভেতরে উল্টো এই জন্য যে, ঐ বিশ্ব নবীর (দ:) মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধিকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে মানুষের তৈরি এই সব ব্যবস্থার মধ্যে বাস কোরে কর্যতঃ মুশরিক হয়ে মাথা ন্যাড়া কোরে, মোছ কামিয়ে, টুপি পাগড়ী মাথায় দিয়ে কাঁধে চেক রুমাল ফেলে, টাখনুর উপর পাজামা পড়ে আর পাঁচবার মসজিদে দৌড়ে এরা আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন এই ভেবে যে, তারা শুধু উম্মতে মোহাম্মদী নন, একেবারে নায়েবে নবী। তুচ্ছ মসলা-মাসায়েল নিয়ে সীমাহীন তর্কাতর্কি বাদানুবাদ কোরে কোরে এরা এই জাতির ঐক্য টুকরো টুকরো কোরে দিয়েছেন, যে ঐক্য ছাড়া একটা জাতি ধ্বংস হয়ে যায়, এমন কি দুর্বল শত্র“র হাতেও পরাজিত হয়ে যায়। আর তাই গিয়েছিলোও। কিন্তু তাতেও বোধোদয় হয় নি, অসীম অজ্ঞতায় তারা আজও ঐ খুঁটিনাটি মসলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে ব্যস্ত।