Thursday, April 28, 2016

ওদের জীবনে কবে আসবে বসন্ত?

ওদের জীবনে কবে আসবে বসন্ত?


রাকীব আল হাসান
দিনপঞ্জীর শুকনো পাতা দেখে হিসেব মিলালাম বসন্তের আগমন ঘটেছে। ঋতুরাজের সাক্ষাৎ লাভের আশায় বেরিয়েছিলাম রাস্তায়। গ্রামে ফেলে আসা বসন্তের অতীত স্মৃতি মনে মনে ভাবছিলাম- প্রকৃতি দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ।
মনে মনে আবৃত্তি করছিলাম রবিঠাকুরের সেই কবিতার লাইনগুলো-
ফালগুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল,
ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।
চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়,
বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণবায়।
এতো কেবলই স্মৃতিগাঁথা। বাস্তবতা যা দেখলাম তা তো সম্পূর্ণ উল্টো। কোথাও পেলাম না বসন্তের ছোঁয়া। ফুলের সুবাস নেই, আছে নর্দমার দুর্গন্ধ। কোকিলের কুহু কলতান শুনতে পাইনি, কেবলই কর্কশ কাকা ধ্বনি আসছিলো কানে। পলাশ-শিমুলের গাছ কোথায়, বিল্ডিং এর পর বিল্ডিং, সামান্য অক্সিজেন প্রদান করবার মতো সাধারণ বৃক্ষও খুঁজে পাওয়া যায় না। খাচায় বন্দী পাখির মতো কিছু ফুলগাছ দেখেছি বড় বড় বিল্ডিঙের বারান্দায়, ছাদে। খাচায় বন্দী পাখিকে কিছু দিয়ে কি আনন্দিত করা যায়? প্রকৃতি ক্রন্দন করছে মানুষের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য। প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া কোথায়?
দেখলাম বস্তির ছেলেগুলোকে ডাস্টবিনের নোংরা খাবার খেতে, ব্যস্তসমস্ত হয়ে গার্মেন্টস কর্মীদের ছোটাছুটি, দরিদ্র মানুষগুলোর করুণ দৃষ্টি, রিক্সাওয়ালাদের ঘামা শরীর আর খিটখিটে মেজাজ, ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক, খাদ্যের সন্ধানে ছুটেছে ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো, সাথে মানুষও। বসন্ত শব্দটি তাদের কাছে হয়ত অপরিচিত। ফুল আর কোকিলের ডাক তাদের হৃদয় কাড়বে না, তাদের চাই একটুখানি ভাত, এক টুকরো রুটি। গাছে গাছে যদি রুটি ধরত আর কোকিল যদি ভাত ছিটিয়ে বেড়াত তবে হয়ত তারা বসন্তের নামটা জানত ভালোমতোই।
মার্সিডিস গাড়িতে ছুটে চলা মানুষকেও দেখলাম, সাথে কুকুরও। মসজিদ পানে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাওয়া নির্বিকার মুসল্লিদের দেখলাম, বসন্তকে বরণ করতে বাসন্তীরং শাড়ি পরা রমণীদেরও দেখলাম, কপোত-কপোতীদের নির্লজ্জতা দেখলাম— ফুল ফুটুক বা নাই ফুটুক বসন্ত এদের জীবনে সবসময় লেগে থাকে কিন্তু সবার জীবনে বসন্ত কবে আসবে জানি না। আমি বসন্ত খুঁজে পাইনি, আমি যে ক্ষুধার্ত, হাড্ডিসার মানুষগুলো দলে। মার্সিডিস গাড়িতে বসে থাকা সাহেববাবু, মসজিদে ছুটে চলা মুসল্লি, বাসন্তী রং এর পোশাক পরাদের দলে এখনো ভিড়তে পারিনি।

শুধু প্রার্থনা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়

শুধু প্রার্থনা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়


শেখ মনিরুল ইসলাম

পৃথিবী আজ অন্যায়, অবিচার, অশান্তিতে পরিপূর্ণ। এক ইঞ্চি মাটি নেই যেখানে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। এই অশান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য চেষ্টাও করা হচ্ছে। গঠন করা হচ্ছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত শক্তিশালী বাহিনী, খরচ করা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। আবার একদল মানুষ শান্তির জন্য মসজিদ, মন্দির, সিনাগগ, প্যাগোডায় ঢুকছে, প্রার্থনা করছে। কিন্তু শান্তি কি মিলেছে? পরিসংখ্যান বলছে দিন দিন অন্যায়-অবিচার, অশান্তির মাত্রা ধাঁ ধাঁ করে বাড়ছে। কারণ, শুধু প্রার্থনা করে, দোয়া চেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এটা নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লাগবে প্রচেষ্টা, সংগ্রাম। যুগে যুগে মানুষ যখন স্রষ্টার দেওয়া বিধান প্রত্যাখ্যান করে নিজেরাই আইন-কানুন বিধান তৈরি করে সেই মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করেছে তখনই তারা অশান্তিতে পতিত হয়েছে। আর যখন সামগ্রিক জীবন পরিচালনায় মানুষ স্রষ্টার বিধানের আশ্রয় নিয়েছে তখন শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। এটাই মানবজাতির প্রকৃত ইতিহাস। যুগে যুগে এটাই ঘটেছে। রামরাজত্বের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। বলা হয় রামরাজত্বে এতই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, বাঘে ও ছাগে এক ঘাটে জল খেত। রাজ্যের নামই হয়েছিল অযোধ্যা। কারও অধিকারে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করত না। সকলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করত। একই পরিবেশ বিরাজ করছিল আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আরবে, যখন আরবরা শেষ নবীর মাধ্যমে আসা সত্য জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল। অনাবিল শান্তির ধারা বয়ে গিয়েছিল মানবজীবনে। সমাজ থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণ, হানাহানি, রক্তারক্তি, অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার, বৈষম্য ইত্যাদি লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাতের অর্থ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত কিন্তু তা গ্রহণের লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। এমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মানুষ রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না। স্বর্ণালঙ্কার পরিহিতা একজন যুবতী মেয়ে একা শতশত মাইল পথ পাড়ি দিত তার মনে কোনো প্রকার ভয় জাগ্রত হতো না। এমন সমাজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? সেই অভিন্ন পদ্ধতি, তথা স্রষ্টার পাঠানো বিধানের আশ্রয় নেবার ফলে। তাই শান্তি পেতে হলে মানুষকে স্রষ্টার বিধানে ফিরে যেতে হবে।’
শান্তির জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কিন্তু আজ আমরা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-মতবাদে বিভক্ত হয়ে অনৈক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছি। একশত ঐক্যহীন লোকের উপরে মাত্র দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক বিজয়ী হয়। অনৈক্যের প্রধান কারণ ধর্মব্যবাসায়ীরা। তারা ধর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হাজার হাজার মতবাদ, ফেরকা-মজহাব তৈরি করে জাতিকে শত শত ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। এদের তৈরি ফেরকা-মজহাবের জালে আটকা পড়ে জাতি ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? মানুষকে ঐক্যের পথে আহ্বান জানাতে হবে। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানাতে হবে। আজকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে ঐ ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। ১৯৭১ সালে যেমন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যুদ্ধ করেছিল। আজও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হব এই ভিত্তির উপরে যে, আমরা একই পিতা মাতার সন্তান, আমরা একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং সমস্ত মহামানব, অবতার, নবী-রসুল সেই একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছেন। কাজেই আমরা সকল ধর্মের অনুসারীরা প্রকৃতপক্ষে একে অপরের ভাই। এই সূত্রে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আল্লাহর নবীরা প্রকাশ্য কিন্তু জঙ্গিরা গোপন


আল্লাহর নবীরা প্রকাশ্য কিন্তু জঙ্গিরা গোপন



....
জঙ্গিবাদীরা তাদের আদর্শ জনগণের সামনে তুলে ধরেন না কেন? কে তাদেরকে বোঝাবে যে, একজন যোদ্ধার সাথে সন্ত্রাসীর যতটুকু পার্থক্য, আল্লাহর দৃষ্টিতে একজন মোমেনের সাথে একজন জঙ্গির ততটুকুই পার্থক্য? 
.
একটি আদর্শ যতদিন না জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে এবং জনগণ সেটাকে তাদের মুক্তির পথ বলে গ্রহণ করছে ততদিন সেটাকে সশস্ত্র পন্থায় জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়ে লাভ নেই। সেটা সাম্রাজ্যবাদ হবে যেটা হালাকু খান চেঙ্গিস খান করেছেন। সেটা কখনো সভ্যতায় রূপ নেবে না।
.
কিন্তু ইসলাম একটি সভ্যতার নাম, জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। তাই ইসলামে জবরদস্তি করা নিষিদ্ধ এবং নবী সেটা করেন নি। আল্লাহ মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, সে দাসত্ব করা পছন্দ করে না। তিনি মক্কায় যে পরিমাণ সাহাবী পেয়েছিলেন তারা চাইলে সশস্ত্র বিপ্লব ঘটিয়ে হয়তো প্রথম ১৩ বছরেই মক্কা দখল করে নিতে পারতেন। কিন্তু মুখ বুঁজে নির্যাতন, গালিগালাজ সহ্য করেছেন। একটা মানুষকেও হত্যা করেন নি, সহিংসতার পথেই হাটেন নি।
.
তাতে কি ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় নি। হয়েছে এবং গত ১৪০০ বছর ধরে যেভাবেই হোক তার একটা অস্তিত্ব টিকে আছে। কিন্তু হালাকু খানরা ইতিহাসের চোরাবালিতে হারিয়ে গেছেন। যারা এককালে রসুলকে হত্যার জন্য পাগলপারা ছিল তারাই ইসলামের খলিফা ও সেনাপতি হয়েছেন যখন তারা রসুলের আদর্শকে জানতে পেরেছেন। মদীনার মানুষ ইসলামকে জানতে ও বুঝতে পেরে রসুলকে নিজেদের দেশে ডেকে এনেছেন এবং তাকে রাষ্ট্রপ্রধান করেছেন। রসুলাল্লাহ যদি নিরবচ্ছিন্ন প্রচার না চালাতেন এটা কি সম্ভব হতো? তিনি তো নবী হয়েই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সবাইকে ডেকে উচ্চস্বরে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। পূর্ববতী নবীরাও প্রকাশ্যে জনগণের সাথে কাজ করেছেন।
.
আজকে জঙ্গিবাদীরা চোরাগোপ্তা হামলা করে ইসলামের খেদমত করছেন, আল্লাহ-রসুলের বিরুদ্ধতাকারীদের শায়েস্তা করছেন বলে ভাবছেন। তারা কখনোই গণমানুষের সম্মুখে তাদের আদর্শকে উপস্থাপনই করছেন না। গোপন পন্থায় কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে তাদের প্রতি জনগণের মনে একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে যেটা রসুলের জাতির বেলায় ছিল না। জনগণই রসুলকে নিরাপত্তা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। রসুলাল্লাহর নীতি ছিল এমন প্রকাশ্য যে তাঁর ব্যক্তিজীবনের খুটিনাটি বিষয় পর্যন্ত সবাই জানে।
.
পক্ষান্তরে আজকের সময়ের জঙ্গিবাদীরা জনগণকে গোনতেই ধরছেন না, জনগণ তাদেরকে চায় কিনা, ভালোবাসে কি না, তারা যে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই বিধানের প্রতি জনগণের মন অনুকূল কিনা কিছুই তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন না। তারা হালাকু খানের পথে হাটছেন। তারা যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, জনগণকে দাবিয়ে রেখে শাসন করতে চায় যেটা মধ্যপ্রাচ্যে চলছে।

Wednesday, April 27, 2016

নখের কোণা উঠা সমস্যা থেকে মুক্তির সহজ উপায়!

নখের কোণা উঠা সমস্যা থেকে মুক্তির সহজ উপায়!

নখের কোণায় প্রচণ্ড ব্যথা, একটু খেয়াল করতেই দেখলেন যে বেকায়দা ভাবে নখ বৃদ্ধি পেয়েছে আর ঢুকে যাচ্ছ মাংসের ভেতরে। এমন একটা স্থানে যে কেটে ফেলারও কোন উপায় নেই, কেননা তাতে মাংস কাটা পড়বে। এই সমস্যাটিকেই বাংলায় আমরা বলে থাকি “নখের কোণা ওঠা”।
জেনে নিন ব্যথা কমানো ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করার সহজ উপায় –
– হাত বা পা উষ্ণ লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন মিনিট দশেক। যতটা সহ্য করতে পারেন, ততটা গরম পানি নেবেন।
– কাজ শুরুর আগে মেনিকিউর সেট গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন।
– এবার পা/হাত ভালো করে মুছে নিন। মুছে নেয়ার পর নখ কাটুন। বেড়ে ওঠা বাড়তি নখ ও তার আশেপাশে যতটা সম্ভব কেটে ফেলুন।
– এবার রয়ে যাওয়া বাড়তি নখ চিমটার সাহায্যে সামান্য উঁচু করে ধরুন এবং আরেকটি চিমটার সাহায্যে সামান্য একটু তুলো নখের নিচে গুঁজে দিন। খুব সাবধানে কাজটি করুন। এই কাজটি আপনার নখে ব্যথা হতে দেবে না।
– যতদিন নখে বড় না হচ্ছে আর আপনি কেটে যন্ত্রণাদায়ক বাড়তি কোণা বাদ দিতে না পারছেন, ততদিন পর্যন্ত এভাবেই তুলো দিয়ে রাখুন। দিনে ২/১ বার বা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে তুলো বদলে দেবেন।
– যদি ইতিমধ্যেই ইনফেকশন হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান। এই পদ্ধতি অবলম্বন করবেন না।
– হাত/পা সর্বদা পরিষ্কার রাখুন এবং এমন হলে মোজা পরিধান করবেন না।

Tuesday, April 26, 2016

মানুষ সাধারণত কেনো আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয় ???

 মানুষ সাধারণত কেনো আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয় ???



রাষ্ট্র যদি অথর্ব হয়, অপরাধের বিচার সুনিশ্চিত না করতে পারে তখনই মানুষ সাধারণত আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। আমরা সেই পরিস্থিতিটাই মোকাবেলা করছি বর্তমানে। এ জন্যই চোর-ডাকাত ধরতে পারলে সুযোগমত মানুষ তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলছে। অধুনা শুরু হয়েছে চাপাতি দিয়ে কোপানো। অপরাধ ধর্মদ্রোহীতা।
রাষ্ট্রের যদি বিচার করার যোগ্যতা থাকত তবে অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় মানুষ সরকারের কাছে নালিশ জানাত। কিন্তু মানুষ দেখছে এসবের বিচার সরকার করছে না। অপরদিকে যারা রাষ্ট্রের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে তাদেরকেও রাষ্ট্র চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না। রাষ্ট্রের এই হযবরল অবস্থায় জনসাধারণের মনে যে অস্থিতিশীলতা, আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ধ্বংসের আলামত।
এছাড়াও আছে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনশৃংখলা বাহিনীর ভক্ষকে পরিণত হওয়া, বিরোধী মত দমনে অতি তৎপরতা কিন্তু নিজেদের অপরাধ চেপে যাওয়ার মত নানা সমস্যা।
তাসের ঘরের ভিত্তি কতটুকু ভিত্তিহীন তা নিশ্চয় মানুষ মাত্রই জানার কথা। সামান্য বাতাস এলে সেটা ধ্বসে পড়ে। আমাদের রাষ্ট্রেও মানুষের বিভাজন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে যে কোন দিক থেকে একটা আঘাত এলে এটা এখন ধ্বসে পড়বে।
আমি জানি না আঘাতটা ঠিক কোন দিক থেকে আসবে। তবে ভিত্তি যে হারে দুর্বল হয়েছে তাতে আঘাতটা যে কোন দিক থেকে যে কোন সময়ই আসতে পারে। একটা জাতিতে এত মত পথ এবং প্রত্যেকের মধ্যেই উগ্রতা সৃষ্টি হলে সেটার প্রতিক্রিয়া একসময় দেখা দেবেই। এ জন্য রাষ্ট্রকে ন্যায় ও আদর্শের উপর না দাঁড়ালে, শাসককে দলীয় চিন্তার ঊর্দ্ধে না উঠা সম্ভব হলে আসন্ন এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। আমি চোখ বুজে আমার প্রিয় জন্মভূমিটিকে সিরিয়া হতে দেখছি। মৃত্যু দেখছি, ধ্বংস দেখছি। ক্ষুধা দেখছি, কান্না দেখছি। কারো কাছে যদি এটা অতিকল্পনা মনে হয় তবে তাদেরকে অনুরোধ করছি- আপনারা বিভাজনগুলো খেয়াল করুন। বেশিদূর যেতে হবে না। চায়ের দোকানগুলোতে বসুন আর শুধুমাত্র বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতার কমেন্টগুলো পড়ুন। আশা করি আমার বক্তব্যের প্রমাণ পেয়ে যাবেন। বিপদ খুব সন্নিকটে। এড়ানোর সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।

প্রকৃত ইসলামের আকীদা।

আমরা চাই মসজিদের ইমামরা যেন সমাজের কর্ণধার হন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল তারাই হবেন এটাই প্রকৃত ইসলামের আকীদা। সমাজের নেতা আর নামাজের নেতা আলাদা নয়। প্রশাসনিক ও সামাজিক কাজ নির্বাহ করার জন্য তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভাতা পাবেন।
সাধারণ মানুষের প্রদত্ত্ব দানের মুখাপেক্ষী তিনি থাকতে পারেন না, তার উপর আল্লাহর ‍হুকুম কার্যকর করার ক্ষমতা থাকবে। আমরা সেই ইমামত প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি, এমন কি জীবন দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেবরা সেটা বুঝতে চান না, তারা চান এইভাবে দান খয়রাতের উপর তাদের জীবনটা কেটে যাক।
এভাবেই শত শত বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আল্লাহর সত্যদীন, ইসলামের প্রকৃত রূপ কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সেই কাজের দায়বদ্ধতা আলেম সাহেবরা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
আমরা চাই তারা জাগ্রত হোন, নিজেদের মর্যাদা, জাতির মর্যাদা, ইসলামের গৌরব প্রতিষ্ঠা করুন। আমরাও আত্মতৃপ্তি পাবো যে অন্তত আমাদেরকে জাহেলিয়াতের যুগে বাস করতে হচ্ছে না। আল্লাহর দীনের অধীনে মৃত্যুবরণ করছি। www.hezbuttawheed.org

Monday, April 25, 2016

সম্মানিত আলেমদের প্রতি

সম্মানিত আলেমদের প্রতি


পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো তাদের বন্দুকের নিশানা তাক করেছে ইসলাম ও মুসলিমদের দিকে। তারা প্রপাগান্ডা চালিয়ে মুসলিমদেরকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী বলে বিশ্বময় নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। তারা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে একটার পর একটা দেশ দখল করে নিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা করছে, কোটি কোটি নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবা উদ্বাস্তু শিবিরে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়েও চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। মানুষের ঈমানকে ভুলখাতে প্রবাহিত করে মুসলিম জাতির জন্য ক্ষতিকর অনেক কাজই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। মুসলিমপ্রধান এ দেশে যদি মধ্যপ্রাচ্যের মত অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে দেওয়া যায় তাহলে আমাদের দাঁড়ানোর কোনো জায়গা থাকবে না। সমগ্র পৃথিবীতে সংখ্যায় ১৬০ কোটি হয়েও আমরা তাদের ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারছি না কারণ আমরা অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। সমাজ, দেশ, বিশ্বের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। তাছাড়া আমরা এক আল্লাহ এক রসুল এক কোর’আনের অনুসারী হয়েও হাজারো দলে, উপদলে, মাজহাবে, ফেরকায়, রাজনৈতিক মতবাদে বিভক্ত হয়ে আছি। ঐক্যহীন জাতির পরাজয় অনিবার্য, তাই আল্লাহ বার বার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আদেশ করেছেন এবং ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন কাজ করতে নিষেধ করেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হবো কিসের ভিত্তিতে?
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তওহীদের ভিত্তিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামের বিভিন্ন আকিদাগত বিষয় নিয়ে ফেরকা-মাজহাবের আলেমদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও কলেমা তওহীদের ভিত্তিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। তওহীদের মর্মবাণী হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি এক কথায় জীবনের যে অঙ্গনেই হোক যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোনো বক্তব্য থাকবে সে বিষয়ে আমরা আর কারো বক্তব্য গ্রহণ করব না। মুসলিম জাতি বর্তমানে ব্যক্তিগত আমল কমবেশি করলেও জাতীয় সামষ্টিক জীবন পরিচালিত হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতার বিধি বিধান দিয়ে। এভাবে তারা শেরক ও কুফরের মধ্যে ডুবে আছে, পরিণতিতে তাদের জীবন কাটছে ঘোর অশান্তিতে।

Sunday, April 24, 2016

হে মানবজাতি আগে মো’মেন হও পরে আমল কর

হে মানবজাতি আগে মো’মেন হও পরে আমল কর


হেযবুত তওহীদ

আমরা একটা দৃশ্য সর্বত্র দেখতে পাই, শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লাসহ সব জায়গাতেই মানুষ টুপি-পাঞ্জাবী পরে মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছে, ওয়াজ-মাহফিল শুনছে, কোর’আন তেলাওয়াত করছে, যিকির-আসগর করছে। অর্থাৎ আমরা বুঝাতে চাইছি আমরা পাক্কা মুসলমান। কিন্তু কিভাবে? এই যে নামাজ পড়ছি, কোর’আন পড়ছি, টুপি পাঞ্জাবী পরছি, কেউ কেউ হজ্ব করে আসছি। আমাদেরকে কে বলে দেবে এই জাতি আল্লাহর হুকুম, বিধান বাদ দেওয়ার কারণে এরা আর মো’মেনই না, পাক্কা মুসলিমও না? এই সরল প্রশ্নের উত্তর কে দেবে যে, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোর’আনের হুকুম বাদ দিয়ে কী করে পাক্কা মুসলিম দাবি করা যায়? এ জাতি যে দিন থেকে পৃথিবীময় সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাদ দিয়েছে তখনই তাদেরকে আল্লাহ মো’মেন এর খাতা থেকে বাদ দিয়েছেন। অতঃপর অন্য জাতির (এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ জাতির) গোলাম হওয়ার পর মুসলিম থেকেই বহিষ্কার; তাদের তৈরি আইন-বিধান, দ-বিধি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি অর্থাৎ এক কথায় জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার পর চূড়ান্তরূপে কাফের, জালেম, ফাসেক হয়ে যায় (সুরা মায়েদা ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কাজেই এখন আগে আল্লাহর কলেমা, তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়ে মো’মেন হওয়া জরুরি। তারপরে যত পারা যায় ঐসব আমল। আজ দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সন্ত্রাস, আতঙ্ক, হত্যা, ডাকাতি, ঘুষ, দুর্নীতি অর্থাৎ সর্বত্র এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই শ্বাসরুদ্ধকর ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সেই পশ্চিমা প্রভুদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দেওয়া হচ্ছে। একবারের জন্যও এ জাতি চিন্তা করে না যে, আমরা এই যে সংকটে পড়েছি এর মূল কারণ তো আল্লাহর শাস্তি, আল্লাহর লানৎ। আল্লাহ আমাদেরকে এই শাস্তি, অভিশাপ দেওয়ার কারণ: আমরা মুখে দাবি করি মুসলমান, আইন-বিধান, হুকুম মানি এবং অনুসরণ করি ইহুদি খ্রিষ্টান সভ্যতা দাজ্জালের। এখন এই লানৎ, শাস্তি থেকে পরিত্রাণের একটাই পথ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া। সেই প্রকৃত, অনাবিল, শান্তিদায়ক, নিখুঁত, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা কোথায় পাওয়া যাবে?
সেটা আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। আজ সারা পৃথিবীতে যে ইসলামটি চর্চা করা হচ্ছে, মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবে, খানকায় যে ইসলামটা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেটা আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলাম নয়। এই ইসলাম ১৬০ কোটির এই জনসংখ্যাকে শান্তি দিতে পারে নি, অন্য জাতির গোলামি থেকে রক্ষাও করতে পারে নি। আমরা এমন এক ইসলামের কথা বলছি, যে ইসলাম সমস্ত মানবজাতিকে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারবে, সমস্ত মানবজাতিকে একটি পরিবারে পরিণত করবে, ইনশা’আল্লাহ।

সালাহ দীনের স্তম্ভ

সালাহ দীনের স্তম্ভ


আল্লাহর রসুল বিভিন্ন সময়ে তাঁর আসহাবদেরকে ইসলামের প্রকৃত আকিদা বোঝাতে বিভিন্ন ধরনের উপমা বা উদাহরণ ব্যবহার করেছেন। যেমন একটি ঘরের সাথে ইসলামের তুলনা করে তিনি জেহাদ ও সালাতের সম্পর্ক আসহাবদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন- ইসলাম একটি ঘর, সালাহ তার খুঁটি এবং জেহাদ হলো ছাদ [হাদিস- মুয়ায (রা:) থেকে আহমদ, তিরমিযি, এবনে মাজাহ, মেশকাত]। এই উপমাতে রসুলাল্লাহ সালাহ ও জেহাদের সম্পর্ক, এদের উভয়ের প্রয়োজনীয়তা, এমনকি কোনটির প্রাধান্য বেশি (Priority) তা নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। ছাদবিহীন একটি ঘরের কোনই মূল্য নেই, এমন কি সেই ঘর যদি দামি আসবাবপত্র ও গৃহস্থালী সামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত থাকে তবুও তা মূল্যহীন। এর খুঁটিগুলো যদি হীরা দিয়ে তৈরি থাকে তবুও ঘরের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না; এ ঘরে কেউ বাস করতে পারবে না। বর্তমানে মুসলিম নামক এই জাতিটি ইসলামের ভিত্তি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের (তওহীদ) বদলে দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে সার্বিক জীবনে স্বীকার করে নিয়েছে আর ছাদ অর্থাৎ জেহাদ (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম) তাদের কাছে কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়-অসহ্য। এখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হচ্ছে সালাহ বা নামাজ। জান্নাতের প্রকৃত চাবি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে (হাদিস- মু’আজ এবনে জাবাল থেকে আহমদ) ত্যাগ করে এই জাতি নামাজকে জান্নাতের চাবি বানিয়ে নিয়ে সারা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ সুদৃশ্য মসজিদে কেবল শূন্যের উপরই খুঁটি গেঁড়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এ খুঁটিগুলির উদ্দেশ্য কী তাও তারা জানেন না। ছাদ নির্মাণ না করে কেবল খুঁটি গাঁড়া যে কতটা নির্বুদ্ধিতার কাজ তা বোঝার জ্ঞানটুকুও আল্লাহর লা’নতের ফলে এ জাতির মধ্যে অবশিষ্ট নেই। ফলে এই সালাহ মুসলিম জাতির কোনো কাজেই আসছে না; এ সালাহ তাদেরকে সকল জাতির লাথি ও ঘৃণা থেকে রক্ষা করতে পারছে না। ভিত্তি ও ছাদহীন খুঁটি সর্বস্ব এ ঘর (যদিও এমন ঘর অসম্ভব) তাদেরকে কোনই নিরাপত্তা দিতে পারছে না।

শুধু ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর হুকুম মানলেই মো’মেন থাকা যায় না

শুধু ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর হুকুম মানলেই মো’মেন থাকা যায় না


রাকীব আল হাসান

কোন সন্দেহ নেই যে মুসলিম দাবিদার এই জাতিটা ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের দাসে পরিণত হবার পরও বহু লোক আল্লাহ ও তাঁর রসুলে (সা.) পরিপূর্ণ বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু সে বিশ্বাস ছিল ব্যক্তিগতভাবে, জাতিগতভাবে নয়। কারণ জাতিগতভাবে তাদের রাজনৈতিক আর্থ সামাজিক ও শিক্ষাব্যবস্থা তো তখন ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টানদের হাতে এবং তারা ইসলামী ব্যবস্থা বদলে নিজেদের তৈরি ব্যবস্থা এই জাতির জীবনে প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা কেটে ফেলে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে তা বজায় রাখলে আল্লাহর চোখে মুসলিম বা মো’মেন থাকা যায় কিনা এ প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে- না, থাকা যায় না। কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা কি কোর’আনের কিছু অংশ বিশ্বাস কর, আর কিছু অংশ বিশ্বাস কর না? যারা তা করে (অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ সমূহের এক অংশ বিশ্বাস করে না বা তার উপর আমল করে না) তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই পৃথিবীতে অপমান, লাঞ্ছনা এবং কেয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি। তোমরা কী করছ সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখেয়াল নন (সুরা আল বাকারা ৮৫)। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় কী বলেছেন। তাঁর আদেশ নিষেধগুলির কতকগুলি মেনে নেয়া আর কতকগুলিকে না মানার অর্থ আল্লাহকে আংশিকভাবে মানা অর্থাৎ শেরক। তারপর বলছেন এর প্রতিফল শুধু পরকালেই হবে না এই দুনিয়াতেও হবে আর তা হবে অপমান ও হীনতা। আল্লাহ মো’মেনদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উভয় দুনিয়াতে অন্য সবার উপর স্থান ও সম্মান। এ প্রতিশ্রুতি তার কোর’আনের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এখন যদি এই লোকগুলিকে তিনি বলেন, তোমাদের জন্য এই দুনিয়াতে অপমান ও কেয়ামতে কঠিন শাস্তি, শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘শাদীদ’ ভয়ংকর তবে আল্লাহ তাদের নিশ্চয়ই মো’মেন বলে স্বীকার করছেন না। যদিও তাদের ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর আইন-কানুন (শরীয়াহ) তারা পুংখানুপুংখভাবে মেনে চলেন।
আল্লাহ কোর’আনে আরো বলেছেন- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও (কোর’আন, সুরা বাকারা- ২০৮)। আকিদা বিকৃতি হয়ে যাওয়ার ফলে আজ আল্লাহর এই আদেশের অর্থ করা হয় এই যে, ইসলামের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলি পালন কর। আসলে এই আয়াতে আল্লাহ মো’মেনদের অর্থাৎ যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাদের বললেন যে, ইসলামকে অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে সম্পূর্ণ ও পূর্ণভাবে গ্রহণ কর এর কোন একটা অংশকে নয়। ব্যক্তিগত অংশকে বাদ দিয়ে শুধু জাতীয়, রাষ্ট্রীয় অংশটুকু নয়; কিম্বা জাতীয় অংশকে বাদ দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত অংশটুকুও নয়। ঐ কথার পরই তিনি বলছেন- এবং শয়তানের কথামত চলো না। অর্থাৎ ঐ আংশিকভাবে ইসলামে প্রবেশ করলে তা শয়তানের অনুসরণ করা হবে, শয়তানের কথামত চলা হবে। শয়তান তা-ই চায়, কারণ আংশিকভাবে অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে আল্লাহর আইন, বিধান প্রতিষ্ঠা না করে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে তা মেনে চললে সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে না এবং অন্যায়, অশান্তি ও রক্তপাত চলতেই থাকবে। যেমন আজ শুধু পৃথিবীতে নয়, মুসলিম নামের এই জাতিতেও নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ও অন্যান্য খুঁটিনাটি পূর্ণভাবে পালন করা সত্ত্বেও পৃথিবীতে অশান্তির জয়জয়কার, বইছে রক্তের বন্যা। সুতরাং এই জাতি (উম্মাহ) যখন ইউরোপীয়ানদের কাছে যুদ্ধে হেরে যেয়ে তাদের দাসে পরিণত হলো এবং তাদের রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা যখন তাদের বিদেশী প্রভুরা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের তৈরি ব্যবস্থা প্রবর্তন করলো, তখন আর এই জাতি মুসলিমও রইলো না, হয়ে গেল মোশরেক এবং কাফের।
ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টানদের দাসে পরিণত হবার পরও এ জাতির চোখ খুললো না। মনে এ চিন্তাও এলো না যে, একি? আমার তো অন্য জাতির গোলাম হবার কথা নয়। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো এর উল্টো, আমাকেই তো পৃথিবীর সমস্ত জাতির উপর প্রাধান্য দেবার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়ে ছিলেন (সুরা নুর ৫৫)। আমরা যখন মুষ্টিমেয় ছিলাম তখন তো আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে নি। ঐ মুষ্টিমেয় যোদ্ধার কারণে আমরা পৃথিবীর একটা বিরাট অংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় কি হলো? সেই মুষ্টিমেয়র কাছে পরাজিত শত্রু আজ আমাদের জীবন বিধাতা। এসব চিন্তা এ জাতির মনে এলো না কারণ কয়েক শতাব্দী আগেই তাদের আকিদা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। কোর’আন হাদীসে পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ করে প-িতরা এ জাতির এক অংশের আকিদা এই করে দিয়েছিলেন যে, ব্যক্তিগতভাবে খুঁটিনাটি শরীয়াহ পালন করে চললেই “ধর্ম পালন” করা হয় এবং পরকালে জান্নাত লাভ হবে। অন্যদিকে ভারাসাম্যহীন বিকৃত তাসাওয়াফ অনুশীলনকারীরা জাতির অন্য অংশের আকিদা এই করে দিয়েছিলেন যে, দুনিয়াবিমুখ হয়ে নির্জনতা অবলম্বন করে ব্যক্তিগতভাবে আত্মার ঘষামাজা করে পবিত্র হলেই “ধর্ম পালন” করা হয় ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। জাতীয় জীবন কোন্ আইনে চলছে, কার তৈরি দণ্ডবিধিতে (Penal code) আদালতে শাস্তি হচ্ছে তা দেখবার দরকার নেই। এই আকিদা (Attitude, Concept) দৃষ্টিভঙ্গি যে বিশ্বনবীর (সা.) শিক্ষার বিপরীত তা উপলব্ধি করার শক্তি তখন আর এ জাতির ছিল না। কারণ ফতোয়াবাজীর জ্ঞানই যে একমাত্র জ্ঞান, পৃথিবীর অন্যান্য কোন জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, প-িতদের এই শিক্ষার ও ফতোয়ার ফলে এই জাতি একটি মূর্খ জাতিতে পর্যবসিত হয়ে গিয়েছিল, দৃষ্টি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্থানে স্থানে কিছু সংখ্যক লোক বাদে সমস্ত জাতিটাই এই অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারের মধ্যে বসে ভারবাহী পশুর মতো ইউরোপীয়ান প্রভুদের পদসেবা করলো কয়েক শতাব্দী ধরে। এই কয়েক শতাব্দীর দাসত্বের সময়ে এই জাতির একটি বড় অংশ অকৃত্রিম হৃদয়ে তার খ্রিষ্টান প্রভুদের সেবা করেছে। প্রভুরা যখন নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে তখন এরা যার যার প্রভুর পক্ষ নিয়ে লড়েছে ও প্রাণ দিয়েছে। যে মহামূল্যবান প্রাণ শুধুমাত্র পৃথিবীতে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে উৎসর্গ করার কথা সে প্রাণ এরা দিয়েছে ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টান প্রভুদের সাম্রাজ্য বিস্তারের যুদ্ধে, প্রভুদের নিজেদের মধ্যে মারামারিতে। আল্লাহর শাস্তি কী ভয়ংকর!

তোমরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও

তোমরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও


রাকীব আল হাসান

কোনো সন্দেহ নেই যে মুসলিম দাবিদার এই জাতিটা ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের দাসে পরিণত হবার পরও বহু লোক আল্লাহ ও তাঁর রসুলে (সা.) পরিপূর্ণ বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু সে বিশ্বাস ছিল ব্যক্তিগতভাবে, জাতিগতভাবে নয়। কারণ জাতিগতভাবে তাদের রাজনৈতিক আর্থ সামাজিক ও শিক্ষাব্যবস্থা তো তখন ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টানদের হাতে এবং তারা ইসলামী ব্যবস্থা বদলে নিজেদের তৈরি ব্যবস্থা এই জাতির জীবনে প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা কেটে ফেলে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে তা বজায় রাখলে আল্লাহর চোখে মুসলিম বা মুমিন থাকা যায় কিনা এ প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে- না, থাকা যায় না। কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা কি কোর’আনের কিছু অংশ বিশ্বাস কর, আর কিছু অংশ বিশ্বাস কর না? যারা তা করে (অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ সমূহের এক অংশ বিশ্বাস করে না বা তার উপর আমল করে না) তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই পৃথিবীতে অপমান, লাঞ্ছনা এবং কেয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি। তোমরা কী করছ সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখেয়াল নন (সুরা আল বাকারা ৮৫)। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় কী বলেছেন। তাঁর আদেশ নিষেধগুলির কতকগুলি মেনে নেয়া আর কতকগুলিকে না মানার অর্থ আল্লাহকে আংশিকভাবে মানা অর্থাৎ শেরক। তারপর বলছেন এর প্রতিফল শুধু পরকালেই হবে না এই দুনিয়াতেও হবে আর তা হবে অপমান ও হীনতা। আল্লাহ মুমিনদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উভয় দুনিয়াতে অন্য সবার উপর স্থান ও সম্মান। এ প্রতিশ্রুতি তাঁর কোর’আনের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এখন যদি এই লোকগুলিকে তিনি বলেন, তোমাদের জন্য এই দুনিয়াতে অপমান ও কেয়ামতে কঠিন শাস্তি, শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘শাদীদ’ ভয়ংকর তবে আল্লাহ তাদের নিশ্চয়ই মুমিন বলে স্বীকার করছেন না। যদিও তাদের ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর আইন-কানুন (শরীয়াহ) তারা পুংখানুপুংখভাবে মেনে চলেন।
আল্লাহ কোর’আনে আরো বলেছেন- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবিষ্ট হও (কোর’আন, সুরা বাকারা- ২০৮)। আকিদা বিকৃতি হয়ে যাওয়ার ফলে আজ আল্লাহর এই আদেশের অর্থ করা হয় এই যে, ইসলামের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলি পালন কর। আসলে এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের অর্থাৎ যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাদের বললেন যে, ইসলামকে অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে সম্পূর্ণ ও পূর্ণভাবে গ্রহণ কর এর কোনো একটা অংশকে নয়। ব্যক্তিগত অংশকে বাদ দিয়ে শুধু জাতীয়, রাষ্ট্রীয় অংশটুকু নয়; কিম্বা জাতীয় অংশকে বাদ দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত অংশটুকুও নয়। ঐ কথার পরই তিনি বলছেন- এবং শয়তানের কথামত চলো না। অর্থাৎ ঐ আংশিকভাবে ইসলামে প্রবেশ করলে তা শয়তানের অনুসরণ করা হবে, শয়তানের কথামত চলা হবে। শয়তান তা-ই চায়, কারণ আংশিকভাবে অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে আল্লাহর আইন, বিধান প্রতিষ্ঠা না করে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে তা মেনে চললে সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে না এবং অন্যায়, অশান্তি ও রক্তপাত চলতেই থাকবে। যেমন আজ শুধু পৃথিবীতে নয়, মুসলিম নামের এই জাতিতেও নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ও অন্যান্য খুঁটিনাটি পূর্ণভাবে পালন করা সত্ত্বেও পৃথিবীতে অশান্তির জয়জয়কার, বইছে রক্তের বন্যা। সুতরাং এই জাতি (উম্মাহ) যখন ইউরোপীয়ানদের কাছে যুদ্ধে হেরে যেয়ে তাদের দাসে পরিণত হলো এবং তাদের রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা যখন তাদের বিদেশী প্রভুরা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের তৈরি ব্যবস্থা প্রবর্তন করলো, তখন এই জাতি কি আর মুসলিম রইলো?
ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টানদের দাসে পরিণত হবার পরও এ জাতির চোখ খুলল না। মনে এ চিন্তাও এল না যে, একি? আমার তো অন্য জাতির গোলাম হবার কথা নয়। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো এর উল্টো, আমাকেই তো পৃথিবীর সমস্ত জাতির উপর প্রাধান্য দেবার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন (সুরা নুর ৫৫)। আমরা যখন মুষ্টিমেয় ছিলাম তখন তো আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে নি। ঐ মুষ্টিমেয় যোদ্ধার কারণে আমরা পৃথিবীর একটা বিরাট অংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় কী হলো? সেই মুষ্টিমেয়র কাছে পরাজিত শত্রু আজ আমাদের জীবন বিধাতা। এসব চিন্তা এ জাতির মনে এল না কারণ কয়েক শতাব্দী আগেই তাদের আকিদা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। কোর’আন হাদীসে পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ করে প-িতরা এ জাতির এক অংশের আকিদা এই করে দিয়েছিলেন যে, ব্যক্তিগতভাবে খুঁটিনাটি শরীয়াহ পালন করে চললেই “ধর্ম পালন” করা হয় এবং পরকালে জান্নাত লাভ হবে। অন্যদিকে ভারাসাম্যহীন বিকৃত তাসাওয়াফ অনুশীলনকারীরা জাতির অন্য অংশের আকিদা এই করে দিয়েছিলেন যে, দুনিয়াবিমুখ হয়ে নির্জনতা অবলম্বন করে ব্যক্তিগতভাবে আত্মার ঘষামাজা করে পবিত্র হলেই “ধর্ম পালন” করা হয় ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। জাতীয় জীবন কোন্ োআইনে চলছে, কার তৈরি দণ্ডবিধিতে (Penal code) আদালতে শাস্তি হচ্ছে তা দেখবার দরকার নেই। এই আকিদা (Attitude, Concept) দৃষ্টিভঙ্গি যে বিশ্বনবীর (সা.) শিক্ষার বিপরীত তা উপলব্ধি করার শক্তি তখন আর এ জাতির ছিল না। কারণ ফতোয়াবাজীর জ্ঞানই যে একমাত্র জ্ঞান, পৃথিবীর অন্যান্য কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, প-িতদের এই শিক্ষার ও ফতোয়ার ফলে এই জাতি একটি মুর্খ জাতিতে পর্যবসিত হয়ে গিয়েছিল, দৃষ্টি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্থানে স্থানে কিছু সংখ্যক লোক বাদে সমস্ত জাতিটাই এই অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারের মধ্যে বসে ভারবাহী পশুর মতো ইউরোপীয়ান প্রভুদের পদসেবা করলো কয়েক শতাব্দী ধরে। এই কয়েক শতাব্দীর দাসত্বের সময়ে এই জাতির একটি বড় অংশ অকৃত্রিম হৃদয়ে তার খ্রিষ্টান প্রভুদের সেবা করেছে। প্রভুরা যখন নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে তখন এরা যার যার প্রভুর পক্ষ নিয়ে লড়েছে ও প্রাণ দিয়েছে। যে মহামূল্যবান প্রাণ শুধুমাত্র পৃথিবীতে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে উৎসর্গ করার কথা সে প্রাণ এরা দিয়েছে ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টান প্রভুদের সাম্রাজ্য বিস্তারের যুদ্ধে, প্রভুদের নিজেদের মধ্যে মারামারিতে। আল্লাহর শাস্তি কী ভয়ংকর!

ওবাদাহ বিন সামিত (রা.)

ওবাদাহ বিন সামিত (রা.)


কাজী মাহফুজ

খলিফা ওমরের (রা.) শাসনামলে মিশর বিজয়ী সেনানায়ক আমর ইবনুল আস (রা.) রসুলাল্লাহর প্রিয় সাহাবী আবু ওবাদাহ বিন সামেতকে (রা.) মকোকাসের নিকট মুসলিম বাহিনীর দূত হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। তখন মিশর ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অংশ, সেখানে কপটিক খ্রিষ্টান যাজক আর্চ বিশপ মকোকাস শাসন করতেন।
আবু ওবাদাহ (রা.) ছিলেন এমন এক যোদ্ধা যাকে যুদ্ধক্ষেত্রে এক হাজার কাফেরের সমতুল্য বলে মনে করা হতো। তিনি ছিলেন মদিনার খাজরাজ বংশীয় এবং আকাবার বায়াতে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম। রসুলের একদল সর্বত্যাগী সাহাবী যাদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হতো, তারা বাড়ি-ঘরে যেতেন না, মসজিদে নববীতে থাকতেন আর অপেক্ষা করতেন রসুল কখন কী হুকুম দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম বাস্তবায়ন করতেন। আবু ওবাদাহ (রা.) সেই আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রসুলের সঙ্গে থেকে তিনি প্রায় সকল যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এই দুর্ধর্ষ চরিত্রের সর্বত্যাগী সাহাবীকেই সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রা.) রাজদরবারে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজার সামনে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব প্রদান করা। আমর (রা.) বলে দেন ওবাদাহ (রা.) যেন তিন শর্তের বাইরে অন্য কিছুই মিশরীয়দের থেকে গ্রহণ না করেন। ঐ তিন শর্ত হলো-
১) আল্লাহর রসুল সত্য দীন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন- এই দীন মেনে নিয়ে মুসলিম হয়ে যাও, তাহলে তোমরা আমাদের ভাই হয়ে যাবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল এই দীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করেছেন, সে দায়িত্ব তোমাদের ওপরও বর্তাবে।
২) যদি তা গ্রহণ না করো তবে আমাদের বশ্যতা স্বীকার করো, আমরা আল্লাহর দেয়া দীন, কোর’আনের আইন-কানুন, দ-বিধি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করব; তোমরা যার যার ধর্মে থাকবে, আমরা বাধা তো দেবই না বরং সর্বপ্রকারে তোমাদের এবং তোমাদের ধর্মকে নিরাপত্তা দেব; বিনিময়ে তোমাদের যুদ্ধক্ষম লোকেরা বার্ষিক সামান্য একটা কর দেবে, যার নাম জিজিয়া। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, স্ত্রীলোক, রোগগ্রস্ত মানুষ এবং বালক-বালিকা, শিশুগণকে এ কর দিতে হবে না। এর পরও তোমাদের রক্ষার জন্য যুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে যেসব যুদ্ধক্ষম লোক আমাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবে তাদের ঐ জিজিয়া দিতে হবে না।
৩) যদি এই দুই শর্তের কোনোটাই না মেনে নাও তবে যুদ্ধ ছাড়া আর পথ নেই। আমরা তোমাদের আক্রমণ করে পরাজিত করে আল্লাহর দীন, জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।
মুসলিম বাহিনীর প্রতিনিধিগণ আবু ওবাদাহর (রা.) নেতৃত্বে মকোকাসের রাজদরবারে প্রবেশ করলেন। আবু ওবাদাহকে (রা.) দেখেই মকোকাসের যে প্রতিক্রিয়া হলো তা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। তিনি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে উঠলেন: “এই কালোটাকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দাও, তোমাদের মধ্য থেকে অন্য কেউ আমার সাথে কথা বলো।” তখন শেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের মানুষই জ্ঞান করত না। যদিও আবু ওবাদাহ (রা.) কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন না, কিন্তু তার গায়ের রং সাধারণের চেয়ে কালো ছিল।
প্রতিনিধি দলের একজন বললেন Ñ ‘এই কালো মানুষটিই প্রজ্ঞায় ও জ্ঞানে আমাদের মধ্যে অগ্রণী। তিনিই আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, আর তিনিই আমাদের আমীর (আদেশকারী)। তার প্রতিটি কথা ও আদেশই আমরা মান্য করি। আমাদের সেনাপতি তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে হুকুম করেছেন যেন আমরা তার কোনো সিদ্ধান্ত, এমনকি সাধারণ কোনো কথার ব্যাপারেও কোনোরূপ আপত্তি না তুলি।’
মুসলিম প্রতিনিধির এই কথা মকোকাসকে কৌতূহলী করে তুললো। তিনি বললেন: ‘কিন্তু তোমরা কি করে একজন কালো মানুষকে তোমাদের আমীর হিসাবে মেনে নিলে? সে কি হিসাবে তোমাদের অন্তর্ভুক্ত হলো?’
মুসলিম প্রতিনিধি জবাব দিলেন, ‘না। আপনার চোখে তিনি কালো হতে পারেন কিন্তু তিনি পদমর্যাদায়, ঈমানে, বিচারবুদ্ধিতে এবং প্রজ্ঞায় আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমাদের মধ্যে শামিল হতে তার গায়ের রং কোনো বিচার্য বিষয়ই নয়।’
অগত্যা মকোকাস একরাশ ঘৃণা মিশ্রিত চোখে আবু ওবাদাহর (রা.) দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বেশ, তাই হোক। কিন্তু খবরদার কালো মানুষ, আমার সাথে তুমি সংযত হয়ে ভদ্রভাবে কথা বলো। কারণ তোমার গায়ের রঙ আমাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে। তোমার কথাও যদি এমন রুক্ষ হয় তাহলে তা আমার ক্রোধ উদ্রেক করতে পারে।’
ওবাদাহ (রা.) তখন ধীর পদক্ষেপে অন্যদের থেকে এগিয়ে মকোকাসের সামনে গিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “তোমার কথা তো শুনলাম, এবার আমার কথা শোন। আমার সঙ্গীদের মধ্যে আরও এক হাজার কালো মানুষ আছে, যারা প্রত্যেকে দেখতে আমার চেয়েও কালো এবং কুৎসিত। তাদেরকে দেখলে তুমি আমাকে দেখে যতটা না আতঙ্কিত হয়েছ তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত হতে। আমি আমার যৌবন পার করে এসেছি, তারপরেও আল্লাহর রহমে এখনও আমি একাই এক হাজার কাফেরের অন্তরাত্মায় ত্রাস সৃষ্টি করতে পারি; এমনকি তারা যদি আমাকে একযোগেও আক্রমণ করে তবু। এই একই কথা আমার সঙ্গীদের প্রত্যেকের বেলায়ও সমানভাবে খাটে।
“আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের হৃদয়ের আকুলতা আর আল্লাহর রাস্তায় অবিরাম সংগ্রাম করে যাওয়ার নেশা ও তাতে দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকার প্রশিক্ষণ (সবর) আমাদের চরিত্রকে এমনভাবে তৈরি করেছে। আমাদের জেহাদ শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে আমাদের সামনে অবতীর্ণ হয়। সেই জেহাদ আমরা পার্থিব কিছুর আশায় করি না, সম্পদ লাভের জন্যেও করি না। যেটুকু গনিমত আল্লাহ আমাদের জন্য বৈধ করেছেন শুধু তা-ই আমরা গ্রহণ করি। এ থেকে কেউ প্রচুর সোনার মালিক হতে পারে আবার কেউ এক দেরহামের বেশি কিছু নাও পেতে পারে, এটা আমাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ আমরা বেঁচেই আছি শুধু আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার জন্য। আমাদের শুধু পেটের ক্ষুধা নিবারণ আর পরার কাপড়ের চেয়ে বেশি কিছু চাই না। এই দুনিয়ার জীবনের কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই- এর পরের জীবনই আমাদের কাছে সব। এই হচ্ছে আমাদের প্রতি আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ ও আমাদের নবীর হুকুম।”

কলেমার ভুল অর্থ করার ফল

কলেমার ভুল অর্থ করার ফল


এম. আমিনুল ইসলাম

বর্তমানে মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটি কলেমা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কলেমা ইসলামের আত্মা, ভিত্তি, মূলমন্ত্র। এই কলেমা ছাড়া কোনো ইসলাম নেই। এই কলেমা সঠিক অর্থে অন্তরে বিশ্বাস না করে, মুখে প্রচার না করে এবং এর উপর আমল না করে অর্থাৎ একে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্ট, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম না করে কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। পৃথিবীময় কলেমার আজ ভুল অর্থ করা হয়। আজ সর্বত্র শেখানো হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য অর্থাৎ মা’বুদ নাই। কলেমা হচ্ছে – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ইলাহ অর্থ মা’বুদ নয়। ইলাহ হচ্ছেন তিনি সেই সত্তা যার আদেশ শুনতে হবে, মানতে হবে, পালন করতে হবে অর্থাৎ সার্বভৌম। আর উপাস্য, মা’বুদ হচ্ছেন তিনি সেই সত্তা যাকে উপাসনা করা হয়। দু’টো ভিন্ন অর্থ। ইসলামের কলেমার সঠিক অর্থ হচ্ছে শুধু আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে, একমাত্র আদেশদাতা হিসাবে বিশ্বাস করা, মেনে নেওয়া অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য সকল হুকুম বিধান প্রত্যাখ্যান করা।
কলেমার এই ভুল অর্থের পরিণাম হয়েছে এই যে, পৃথিবীর মুসলিম বলে পরিচিত এই জনসংখ্যা অর্থাৎ আমরা আল্লাহকে হুকুমদাতা, আইনদাতা হিসাবে ভুলে গিয়ে তাঁকে শুধু উপাস্য, মা’বুদ বিশ্বাস করে আপ্রাণ তাঁর উপাসনা করে, নামায, যাকাত, হজ্ব, রোযা করে আসমান যমীন ভর্তি করে ফেলছি, কিন্তু আমাদের সমষ্টিগত জীবনে কেউ তাঁর আদেশ, হুকুম শুনি না, পালন করি না। আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা (দীন) কে বাদ দিয়ে আমরা সমষ্টিগত জীবনে ইহুদি খ্রিষ্টানদের তৈরি জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ থেকে অর্থাৎ কলেমা থেকে বের হয়ে কার্যতঃ মুশরিক ও কাফের হয়ে গেছি। আজ জাতীয় জীবনে, সমষ্টিগত জীবনে, রাষ্ট্র্রীয় জীবনে পৃথিবীর কোথাও আল্লাহর আদেশ পালন করা হচ্ছে না, মুসলিম বলে পরিচিত দেশগুলোতেও না। সর্বত্র মানুষের নিজেদের তৈরি এবং পাশ্চাত্য প্রভুদের তৈরি জীবন-ব্যবস্থাকে মেনে নেয়া হয়েছে আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে। এই কাজ করে আমরা কলেমা থেকে, ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছি। আজ পৃথিবীর ‘অতি মুসলিমরা’ নামাযে, রোযায়, হজ্বে, তাহাজ্জুদে, তারাবীতে, দাড়ি, টুপি-পাগড়ীতে, পাজামায়, কোর্তায় নিখুঁত। শুধু একটিমাত্র ব্যাপারে তারা নেই, সেটা হলো তওহীদ, কলেমা–একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে সামগ্রিক জীবনের বিধানদাতা, আদেশদাতা হিসাবে মানি না। যে আংশিক অর্থাৎ ব্যক্তিগত ঈমান (যা প্রকৃতপক্ষে শেরক) তাদের মধ্যে আছে তা আল্লাহ আজও যেমন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে রেখেছেন, হাশরের দিনেও তেমনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।
একেবারে কলেমা থেকে বিচ্যুতি ছাড়াও আল্লাহ তাঁর শেষ নবীর মাধ্যমে যে ইসলাম পৃথিবীর মানুষের জন্য পাঠিয়েছিলেন তা নানা কারণে ক্রমে ক্রমে বিকৃত হয়ে বর্তমানে যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তাতে এই ইসলাম আর সেই ইসলামই নেই। আল্লাহর সেই প্রকৃত ইসলাম যেটা আল্লাহ নবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন যারা সেটা গ্রহণ করল তাদের উপর তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে তারা কঠিন চেষ্টা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রামের মাধ্যমে সেটাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করবে। এই জাতি ৬০/৭০ বছর আল্লাহর আদেশ মোতাবেক সংগ্রাম চালিয়ে অর্ধেক পৃথিবীতে এই সত্যদীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর দুর্ভাগ্যক্রমে আকিদার বিকৃতির কারণে আল্লাহর সাবধানবাণী অগ্রাহ্য করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিত্যাগ করে অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মতো রাজত্ব বাদশাহী উপভোগ করতে আরম্ভ করল। আল্লাহর সাবধানবাণী কখনও মিথ্যা হতে পারে? পারে না। তাই তিনি ইউরোপের খ্রিষ্টান জাতিগুলি দিয়ে মুসলিম জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম বানিয়ে দিলেন। সেই গোলামি আজও চলছে।

Monday, April 18, 2016

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্র


শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্র


রিয়াদুল হাসান
১৮৯৭ সনে ইহুদিবাদের (Zionism) অনুসারী চক্রান্ত বিশারদ ইহুদী নেতাগণ সারা দুনিয়ায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের এক কর্মসূচি বা প্রটোকল চূড়ান্ত করে যে সম্পর্কে বিশ্বরাজনীতি-সচেতন সকলেই জানেন। এই কর্মসূচিগুলিকে একত্রে বই আকারে বলা হয় The Protocols of the Elders of Zion. একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় যে, পাঠকমাত্রই বইখানা পড়ে বিস্ময়ে হতবাক হতে বাধ্য হবেন এবং ঐ পুস্তকে চক্রান্তজালের যে কর্মসূচি পেশ করা হয়েছে তা পাঠ করার সময় পাঠক অনুভব করতে বাধ্য হবেন যে, তিনি নিজেও এ ষড়যন্ত্রের নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে আছেন। গত এক শতকের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, পৃথিবীতে যে কয়টি বড় ধরনের ঘটনা বা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, এবং মানবজাতি যেভাবে জীবনব্যবস্থা দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের জটিল আবর্তে আটকে পড়েছে এর সবই প্রটোকল বইয়ে পূর্ব থেকেই ভবিষ্যদ্বাণীর মতো লিপিবদ্ধ রয়েছে।
ইহুদী শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের প্রটোকলে এতই সুচতুরতা প্রকাশ করেছে যে, তারা গইমদের (অ-ইহুদীদের গইম বলে অভিহিত করা হয়) ‘নির্বোধ’ বলে অভিহিত করে। বইয়ের একটি অধ্যায়ের নামই GENTILES ARE STUPID. কমুনিস্ট আন্দোলনের মূলে যাদের মন-মগজ কাজ করছে তাদের সকলেই ইহুদী। কমুনিজমের জন্মদাতা কার্ল মার্কস মাতাপিতা উভয় দিক থেকেই ইহুদী! লেলিন এবং ট্রটস্কিও ইহুদী বংশেরই সন্তান। লেলিনের দাদা, মা এবং স্ট্যালিনের স্ত্রী ইহুদী ছিলেন।
এখন ইহুদীদের সুদূর প্রসারী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটু বলি। বিশ্বব্যাপী ইহুদীবাদ যাতে করে নির্বিঘেœ পরিচালিত হতে পারে এবং তাদের এই ইহুদীবাদ তত্ত্ব যেন কেউ বুঝতে না পারে আর তাদের অজান্তেই যেন তারা একে সমর্থন করে এই সূত্র মাথায় রেখেই তারা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য পরিকল্পনা করে। তাদের প্রটোকল পুস্তকের Re-education বা “শিক্ষাব্যবস্থার নতুন রূপ” অধ্যায়ে এই বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আমি উল্লেখযোগ্য কিছু অংশের ভাবানুবাদ তুলে ধরছি।
একমাত্র আমাদের ছাড়া দুনিয়ার যাবতীয় সমষ্টিগত শক্তি বিনষ্ট করার জন্য প্রথমেই আমরা সমষ্টির শিক্ষা যেখান থেকে আরম্ভ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক নবতর শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে বীর্যহীন (Emasculate) করে দেব। এ শিক্ষাগারের সকল অধ্যাপক ও কর্মচারীবৃন্দ একটা বিস্তারিত কার্যসূচী অনুসারে নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হবেন। এবং কখনও এক চুল পরিমাণও (Iota) এদিক সেদিক নড়াচড়া করবেন না। বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে তাদের নিয়োগ করা হবে এবং তারা সরকারের উপর পরিপূর্ণরূপে নির্ভরশীল হবে।
রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন-কানুন ও রাজনীতি সংক্রান্ত অপরাপর প্রয়োজনীয় বিষয়াবলীকে আমরা পাঠ্য তালিকার বহির্ভূত করে দেব। গইমদের বিশ্বজোড়া শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে তোমরা বুঝতে পারবে যে, রাষ্ট্র সংক্রান্ত ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী বিপুল জনতা অবান্তর কল্পনা বিলাসী ও অবাঞ্ছিত নাগরিক (Utopian dreamers and bad subjects) সৃষ্টি করে মাত্র। আমরা ক্ষমতা লাভ করার পর পাঠ্যতালিকা থেকে গোলযোগ সৃষ্টিকারী সকল বিষয় (Disturbing subjects) বাদ দিয়ে দেব এবং যুবসমাজকে শাসন কর্তৃপক্ষের অনুগত সন্তানে পরিণত করবো। আমরা ইতিহাসকে পাল্টে দেব। পূর্ববর্তী শতাব্দীগুলোর যেসব ঘটনা আমাদের জন্য অবাঞ্ছিত সেগুলোর স্মৃতি মানুষের স্মৃতিপট থেকে মুছে দেব। শুধু গইম সরকারের ভুল-ভ্রান্তির ইতিহাস তাদের স্মৃতিপটে জাগ্রত করে রাখার ব্যবস্থা করবো। আমরা শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় স্বাধীনতা বিলোপ করে দেব।
এক কথায় আমরা শত শত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পেরেছি যে, মানুষ কোনো না কোনো খেয়াল বা হুজুগ (Ideas) দ্বারা পরিচালিত হয় ও খেয়ালের নেশায়ই জীবনযাপন করে আর এসব খেয়াল মানুষের মন-মগজে শিক্ষার মাধ্যমেই বদ্ধমূল হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রময় পদ্ধতিতে আমরা মানুষের স্বাধীন চিন্তার শেষ বিন্দুটুকু পর্যন্ত তাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মানুষগুলোকে আমাদের কাজে প্রয়োগ করবো। এটা করার উদ্দেশ্য হলো, গইম সমাজকে চিন্তাশক্তিহীন অনুগত পশুর (Unthinking submissive brutes) স্তরে নামিয়ে আনা যেন তাদের চোখের সামনে কোন কিছু পেশ না করা পর্যন্ত তারা নিজস্ব চিন্তার সাহায্যে কোন ধারণাই পোষণ করতে না পারে।

প্রকৃত ইসলামে কোনো জঙ্গিবাদ নেই

প্রকৃত ইসলামে কোনো জঙ্গিবাদ নেই


রাকীব আল হাসান
পৃথিবীব্যাপী জঙ্গিবাদ এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যে ব্যাধির সংক্রমণে প্রতিনিয়ত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে শত-সহস্র আদম সন্তান; ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও জনপদ। সব থেকে ভয়ের বিষয় হচ্ছে দিন দিন জঙ্গিদের সংখ্যা, সামর্থ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ বেড়েই চলছে। এমতবস্থায় এদেরকে এ পথ থেকে সরাতে হলে সর্বপ্রথম তাদের কর্মকাণ্ড যে ভুল অর্থাৎ ইসলামবিরোধী তা বোঝাতে হবে। এখানে আমি মাত্র দু’টি উপায়ে জঙ্গিদের আদর্শের অসারতা প্রমাণ করব-
জঙ্গিদের দু’টি ভুল
(১) ইসলাম সম্পর্কে তাদের সম্পূর্ণ ধারণা (আকিদা) ভুল ও বিকৃত। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে তাকে তাঁর খলিফা, প্রতিনিধি কেন নিযুক্ত করলেন; মানুষের মধ্যে তাঁর নিজের আত্মা কেন ফুঁকে দিলেন; পৃথিবীতে পাঠিয়ে মানুষের দেহ-আত্মার মধ্যে কেন ইবলিসকে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন; আবার নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াহ অর্থাৎ দিক নির্দেশনা দিয়ে কী দায়িত্ব আল্লাহ দিলেন; এক কথায় মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী, ইসলাম কী এ সম্বন্ধে এই ক্ষুদ্র দলটির সঠিক আকিদা (Comprehensive Concept) নেই। অথচ তারা আল্লাহকে, তাঁর রসুলকে ও দীনুল ইসলামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, আর তাই তারা ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র দাবি মোতাবেক গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্বকে মানতে রাজী নন, তারা চান পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু যেটাকে তারা ইসলাম বলে ভাবছেন সেটা আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামই নয়। গত ১৩০০ বছরে আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম বিকৃত হতে হতে আজ সেটা একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। তাই এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করে আল্লাহর দীনের কোন ‘খেদমত’ হবে না, এজন্য আল্লাহর কাছ থেকে বিনিময় আশা করাও অর্থহীন।
(২) তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে পথ বেছে নিয়েছেন তাদের সে পথ ভুল। তারা যে সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছেন সেই পথে চললে দুনিয়াও পাবেন না, আখেরাতও পাবেন না অর্থাৎ দুই কূলই হারাবেন। আগে বুঝতে হবে ইসলাম অর্থাৎ সত্যদীন (দীনুল হক) কী এবং এর প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রক্রিয়া কী। তাদের বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে পৃথিবীতে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার একমাত্র সঠিক নীতি, পথ ও প্রক্রিয়া হচ্ছে শুধু সেইটা যেটা আল্লাহর রসুল নিজে করেছেন এবং আমাদের শিখিয়ে গেছেন। ঐ পথ ছাড়া আর কোনও পথে, কোনও প্রক্রিয়ায় তারা আল্লাহর সাহায্য পাচ্ছেন না এবং পাবেন না, ফলে তারা সফলও হচ্ছেন না এবং হবেন না। বিশ্বব্যাপী তাদের পরাজয় ও দুরাবস্থা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাদেরকে মুমিন হিসাবেও স্বীকার করেন না। কেননা তিনি বলেছেন, “মুমিনরা যখনই কাফেরদের সঙ্গে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হবে, কাফেররা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্য পাবে না। এটা আল্লাহর অপরিবর্তনীয় সুন্নাহ (রীতি) যা পূর্বকাল থেকে চলে আসছে। নিশ্চয়ই আল্লাহর সুন্নাতে কোন পরিবর্তন নেই (সুরা ফাতাহ ২২-২৩)।
রসুলাল্লাহ কি মক্কার ১৩ বছর কোন যুদ্ধ করেছেন? তিনি ও তাঁর আসহাবগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে শুধু তওহীদের বালাগ করে গেছেন। মদীনার মানুষগুলি যখন রসুলাল্লাহকে তাদের নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছে তখন একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন তিনি কিন্তু আর ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নন তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক। কাজেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তখন অস্ত্র হাতে নিলে সেটা হয় সেনাবাহিনীর কাজ, সেটা সন্ত্রাস হয় না, জঙ্গিবাদ হয় না। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি বা দল বা গোষ্ঠী হিসাবে অস্ত্র-ধারণ করা যায় না, এটা হবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদের কোন স্থান ইসলামে নেই। আল্লাহ এবং তাঁর রসুল এ সুযোগ দেন নি কাওকে। কাজেই ইসলামে কোন জঙ্গিবাদ নেই।

সত্যের আঘাতই চরম আঘাত


সত্যের আঘাতই চরম আঘাত


রুফায়দাহ পন্নী
হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অনেকের মাঝে যে বিরূপ মনোভাব রয়েছে তার একমাত্র কারণ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য তারা ভালো করে শোনেন নি, কিন্তু বিরুদ্ধ বক্তব্য অনেক শুনেছেন। আমার বিশ্বাস, যে কোনো বিবেকবান ‘শিক্ষিত মনের’ অধিকারী মানুষ যদি মনোযোগ দিয়ে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য শোনেন, হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জানেন তাহলে তার মনে এই আন্দোলনের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে।
আমাদের সমাজের সচেতন মানুষ বলতে যাদেরকে বোঝানো হয়, তারা হেযবুত তওহীদের বক্তব্য ভালো করে জানেন না, জানার জন্য আমাদের প্রকাশনা, দৈনিক পত্রিকা, ওয়েবসাইটে থাকা বিপুল তথ্য ও ভিডিও বক্তব্য ইত্যাদি দেখার জন্য যে সময় ও মেধা নিয়োগ করা প্রয়োজন সেটুকু তারা এ কাজে ব্যয় করতে আগ্রহী নন। তারা সকল ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে গড়পড়তা একটা ধারণা করেন এবং সেটাকেই সঠিক মনে করে হেযবুত তওহীদকেও সেই পাল্লায় মাপেন।
পাশাপাশি তাদের কানে বিভিন্ন মহল থেকে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অনেক বিরূপ মন্তব্য আসে। যুগের ধর্ম হচ্ছে মানুষ নিন্দাবাদ করতেই সমাজে বেশি অভ্যস্ত আর খারাপ ধারণাগুলোই দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আবার নামের মধ্যে ‘হিজবুত’ শব্দটি আছে- এমন নামের অনেক দলই সন্ত্রাসী বে-আইনী কাজ করে। সুতরাং যত দলের নামের মধ্যে এই শব্দটি থাকবে সবাই খারাপ হবে এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বসে থাকাও নিশ্চয় ঠিক হবেনা।
আমি অবাক হই এই সচেতন মানুষ যারা সব বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন, কিন্তু যে আন্দোলনটি গত ২১ বছর ধরে একটি অনন্য আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছে, যাদের নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনাও চলছে, ফতোয়াবাজরা যাদেরকে খ্রিস্টান, কাফের ফতোয়া দিয়ে বার বার হত্যা করছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি, পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে। সেই হেযবুত তওহীদ কী কথাটা বলতে চায় সেটা একটা ঘণ্টা সময় নিয়ে পড়ার বা জানার প্রয়োজন বোধ করছেন না? এ কেমন সচেতনতা?
একটি আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে তাদের আদর্শ জানতে হবে তাদের প্রকাশনা ও বক্তব্য থেকে, অন্যের মুখ থেকে নয়- এটা কমন সেন্স। অন্যের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে সেটা সম্পর্কে আন্দোলনের ব্যাখ্যাটাও শুনতে হবে। উভয়পক্ষের বক্তব্য না শুনে একটি সিদ্ধান্ত নেয় অসচেতন মানুষ। আমি সেই সব সাংবাদিকদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই যারা উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন অপপ্রচার করেছে তার বিপরীতে আমাদের কথাটা কী সেটা তারা জাতির সামনে তুলে ধরছেন।
জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা বা ফতোয়া কারা ছড়াচ্ছে? সেই ধর্মের ধ্বজাধারী শ্রেণিটি যারা যুগে যুগে সকল সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, সকল নবী রসুলদের পর্যন্ত হত্যা করতে চেয়েছে, হত্যা করেছে। সকল দার্শনিক যাদের বক্তব্য কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে আঘাত করেছে তাদেরকে কারা পুড়িয়ে মেরেছে? গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস, সক্রেটিসের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনাকে কারা ব্যবহার করেছে, কারা মধ্যযুগে ইনকুইজিশান করেছে, জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি ফতোয়া দিয়ে পুড়িয়েছে কারা?
সুতরাং বিরূপ ধারণা থাকাটাই চূড়ান্ত নয়, কারা সেটা সেটা ছড়ালো, কেন ছড়ালো সেটাও মুক্তমনের মানুষ বিবেচনা করেন। তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন যে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে সেই পুরাতন সাপ। এই ভয়ঙ্করতম সাপের ছোবলে অতীতে যারাই বিষাক্রান্ত হয়েছেন, সেই মহামানবদের আজ সবাই শ্রদ্ধা করে, তাদের ব্যাপারে তদানীন্তনকালের সব বিরূপ ধারণার কবর হয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে; তাদের বিরোধীরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আমাদের সম্পর্কে অনেক বিরূপ ধারণা মানুষের মনে ছিল, যা অনেকাংশেই অপসৃত হয়েছে। এখনো অনেকের মনে বিরূপ ধারণা রয়েছে যেটা অজ্ঞতাপ্রসূত। অচিরেই তার কবর হবে যখন মানুষ আমাদের মুখ থেকে আমাদের কথা জানতে পারবে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সত্যের জয় অনিবার্য। লেখিকা: উপদেষ্টা, দৈনিক বজ্রশক্তি।

Saturday, April 16, 2016

ইসলামের নামধারীরা নিয়ে আসিতেছে ধ্বংসলীলা- সাধু সাবধান।

ইসলামের নামধারীরা নিয়ে আসিতেছে ধ্বংসলীলা- সাধু সাবধান।





এদের অস্ত্রের গায়ে  Made in USA.  শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করলে শত্রু অস্ত্র দেবেনা।আর অস্ত্র না থাকলে যুদ্ধ বন্ধ।মুলত আই এস একটা বাহানা। অস্ত্রের বাজার তুঙ্গে তুলার জন্য দাজ্জাল!  ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতার ফন্দি এটা। নামে মাত্র দমন আর অস্ত্র বেচন। আল কায়দা রাশিয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন কে পররাস্ত করার জন্য দাজ্জালই বানিয়েছিলো এটা সকলেই  জেনে গেছে। তারা বেতনও পেতো দাজ্জালের কাছ থেকে। সেই আল কায়েদা কে কায়দা করে আই এস বানিয়ে দাজ্জালের অনুসারীরা ধ্বংসলীলা চেয়ে চেয়ে দেখে দাত হিটকাচ্ছে আর সেগুলো দমনের নামে লোক দেখানো নাটক করে একেক দেশ দখলে নিচ্ছে।আরো কিভাবে বললে এই জাতির কালঘুম ভাঙবে?

যে প্রার্থনা স্রষ্টা কবুল করেন না

যে প্রার্থনা স্রষ্টা কবুল করেন না



বর্তমানে ধার্মিক ব্যক্তিদের একটি বিশেষ কাজ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করা, দোয়া করা। এর ধর্মীয় নেতারা, আলেম, মাশায়েখ, পুরোহিতরা এই দোয়া চাওয়াকে বর্তমানে একটি আর্টে, শিল্পে পরিণত করে ফেলেছেন। লম্বা ফর্দ ধরে লম্বা সময় নিয়ে স্রষ্টার কাছে এরা দোয়া করতে থাকেন। যেন এদের দোয়া মোতাবেক কাজ করার জন্য স্রষ্টা অপেক্ষা করে বসে আছেন। ইসলাম ধর্মের আলেম সাহেবরা মাঝে মাঝে বিশেষ (Special) প্রার্থনা বা মোনাজাতেরও ডাক দেন এবং তাতে এত লম্বা সময় ধরে মোনাজাত করা হয় যে হাত তুলে রাখতে রাখতে মানুষের হাত ব্যথা হয়ে যায়। অজ্ঞানতা ও বিকৃত আকীদার কারণে সকল ধর্মের অনুসারীরাই ভুলে গেছেন যে কোনো জিনিসের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না করে শুধু তাঁর কাছে চাইলেই তিনি তা দেন না, ওরকম প্রার্থনা তাঁর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ নবীকে (সা.), যাঁকে তিনি প্রিয়তম বন্ধু বলে ডেকেছেন তাঁকে যে কাজের ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সে কাজ সম্পন্ন করতে তাঁকে কী অপরিসীম পরিশ্রম করতে হয়েছে, কত অপমান-বিদ্রুপ-নির্যাতন-পীড়ন সহ্য করতে হয়েছে- যুদ্ধ করতে হয়েছে- আহত হতে হয়েছে। তিনি ওসব না করে বসে বসে আমাদের ধর্মীয় নেতাদের মতো আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই তো পারতেন। আল্লাহর কাছে বিশ্বনবীর (সা.) দোয়াই বড়, না আমাদের আলেম মাশায়েখ, পুরোহিতদের দোয়া বড়? দোয়াতেই যদি কাজ হতো তবে আল্লাহর কাছে যার দোয়ার চেয়ে গ্রহণযোগ্য আর কারো দোয়া নেই- সেই রসুল (সা.) ঐ অক্লান্ত প্রচেষ্টা (জেহাদ) না করে সারাজীবন ধরে শুধু দোয়াই করে গেলেন না কেন? তিনি তা করেন নি, কারণ তিনি জানতেন যে প্রচেষ্টা (সর্বাত্মক সংগ্রাম) ছাড়া দোয়ার কোন দাম আল্লাহর কাছে নেই। তাঁর আগেও বহু নবী রসুল গত হয়েছেন যাঁদের সকলকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সঙ্কটের প্রবলতায় কম্পমান হতে হয়েছে। মুসাকে (আ.) আমালেকা, মাদায়েন প্রভৃতি জনপদবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে, ঈসাকে (আ.) সম্মুখীন হতে হয়েছে ধর্মব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণির নির্যাতনের। কৃষ্ণ (আ.) কে যুদ্ধ করতে হয়েছে আপন মামার বিরুদ্ধে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের (আ.) পক্ষের প্রায় সকল সৈন্যের বিনাশ ঘটেছিল। পঞ্চপা-ব ও কৃষ্ণ (আ.) জীবন বাজি রেখে এই যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত অধর্মকে বিনাশ করার প্রয়াস করেছেন এবং সফল হয়েছেন, তাঁরা প্রচেষ্টা না করে প্রার্থনা করেন নি। প্রচেষ্টাহীন দোয়া দিয়ে যদি কাজ হতো তাহলে ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠায় এই যুদ্ধ ও রক্তপাত ঘটানোর কী প্রয়োজন ছিল?
তবে সেই নবী রসুলগণ যে দোয়া করেন নি তা নয়, শেষ নবীও দোয়া করেছেন কিন্তু যথা সময়ে করেছেন অর্থাৎ চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পর, সর্বরকম কোরবানির পর, জান বাজি রাখার পর যখন আমলের আর কিছু বাকি নেই তখন। বদরের যুদ্ধ শুরু হবার ঠিক আগের মুহূর্তে যখন মোজাহেদ আসহাব তাদের প্রাণ আল্লাহ ও রসুলের তরে কোরবানি করার জন্য তৈরি হয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, যুদ্ধ আরম্ভ হবার প্রাক্কালে, শুধু সেই সময় আল্লাহর হাবিব আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন তাঁর প্রভুর সাহায্য চেয়ে। ঐ দোয়ার পেছনে কী ছিল? ঐ দোয়ার পেছনে ছিল আল্লাহর নবীর (সা.) চৌদ্দ বছরের অক্লান্ত সাধনা, সীমাহীন কোরবানি, মাতৃভূমি ত্যাগ করে দেশত্যাগী হয়ে যাওয়া, পবিত্র দেহের রক্তপাত ও আরও বহু কিছু এবং শুধু তাঁর একার নয়। ঐ যে তিনশ’ তের জন ওখানে তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য নামাজের মতো সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান ছিলেন তাদেরও প্রত্যেকের পেছনে ছিল তাঁদের আদর্শকে, দীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা, দ্বিধাহীন কোরবানি, নির্মম নির্যাতন সহ্য করা। প্রচেষ্টার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে শেষ সম্বল প্রাণটুকু দেবার জন্য তৈরি হয়ে ঐ দোয়া করেছিলেন মহানবী (সা.)। ঐ রকম দোয়া আল্লাহ শোনেন, কবুল করেন, যেমন করেছিলেন বদরে। কিন্তু প্রচেষ্টা নেই, বিন্দুমাত্র সংগ্রাম নেই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত তুলে দোয়া আছে অমন দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। বদরের ঐ দোয়ার পর সকলে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, অনেকে জান দিয়েছিলেন, আমাদের ধর্মীয় নেতারা দোয়ার পর পোলাও কোর্মা খেতে যান। খেয়ে আসার সময় পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে আসেন। ঐ দোয়া ও এই দোয়া আসমান জমিনের তফাৎ।
আল্লাহ বলেছেন, “যে যতখানি চেষ্টা করবে তার বেশি তাকে দেয়া হবে না (কোর’আন, সুরা নজম, আয়াত-৩৯)।” মসজিদে, বিরাট বিরাট মাহফিলে, লক্ষ লক্ষ লোকের এজতেমায় যে দফাওয়ারী দোয়া করা হয়, যার মধ্যে মসজিদে আকসা উদ্ধার অবশ্যই থাকে- তাতে যারা দোয়া করেন তারা দোয়া শেষে দাওয়াত খেতে যান, আর যারা আমীন আমীন বলেন তারা যার যার ব্যবসা, কাজ, চাকরি ইত্যাদিতে ফিরে যান, কারোরই আর মসজিদে আকসার কথা মনে থাকে না। ওমন দোয়ায় বিপদ আছে, হাত ব্যথা করা ছাড়াও বড় বিপদ আছে, কারণ অমন দোয়ায় আল্লাহর সাথে বিদ্রƒপ করা হয়। তার চেয়ে দোয়া না করা নিরাপদ। যে পড়াশোনাও করে না পরীক্ষাও দেয় না- সে যদি কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে যেয়ে ধর্ণা দেয় যে, আমার ডিগ্রী চাই, ডিগ্রী দিতে হবে। তবে সেটা প্রিন্সিপালের সঙ্গে বিদ্রƒপের মতই হবে। আমাদের দোয়া শিল্পীরা, আর্টিস্টরা লক্ষ লক্ষ লোকের এজতেমা, মাহফিলে দোয়া করেন- হে আল্লাহ! তুমি বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদিদের হাত থেকে উদ্ধার করে দাও এবং এ দোয়া করে যাচ্ছেন ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম থেকে, ঐ সময়ে যখন দোয়া করা শুরু করেছিলেন তখন দোয়াকারীরা আজকের চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম ছিলেন এবং ইসরাইল রাষ্ট্রের আয়তনও এখনকার চেয়ে অনেক ছোট ছিল। যেরুজালেম ও মসজিদে আকসা তখন ইসরাইল রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই মহা মুসলিমদের প্রচেষ্টাহীন, আমলহীন দোয়া যতোই বেশি লোকের সমাবেশে এবং যতোই বেশি লম্বা সময় ধরে হতে লাগল ইহুদিদের হাতে আরবরা ততই বেশি মার খেতে লাগল আর ইসরাইল রাষ্ট্রের আয়তনও ততোই বাড়তে লাগল। আজ শুনি কোন জায়গায় নাকি ২০/২৫ লক্ষ মুসলিম একত্র হয়ে আসমানের দিকে দু’হাত তুলে দুনিয়ার মুসলিমের ঐক্য, উন্নতি ইত্যাদির সাথে তাদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের মুক্তির জন্য দোয়া করে। আর আজ ইসরাইল রাষ্ট্রের আয়তন প্রথম অবস্থার চেয়ে তিন গুণ বড় এবং পূর্ণ যেরুজালেম শহর বায়তুল মোকাদ্দাসসহ মসজিদে আকসা তাদের দখলে চলে গেছে এবং মুসলিম জাতির ঐক্যের আরও অবনতি হয়েছে এবং সকল জাতির হাতে আরও অপমানজনক মার খাচ্ছে। অর্থাৎ এক কথায় এরা এই বিরাট বিরাট মাহফিলে, এজতেমায়, মসজিদে, সম্মেলনে যা যা দোয়া করছেন, আল্লাহ তার ঠিক উল্টোটা করছেন। যত বেশি দোয়া হচ্ছে, ততো উল্টো ফল হচ্ছে। সবচেয়ে হাস্যকর হয় যখন এই অতি মুসলিমরা গৎ বাঁধা দোয়া করতে করতে ‘ফানসুরনা আলাল কওমেল কাফেরিন’-এ আসেন। অর্থ হচ্ছে “হে আল্লাহ! অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে (সংগ্রামে) আমাদের সাহায্য কর (সুরা বাকারা-২৮৬)।” আল্লাহর সাথে কি বিদ্রƒপ। অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লেশমাত্র নেই, দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নেই, যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে তাতে যোগ দেয়া দূরের কথা, তাতে কোন সাহায্য পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা নেই, শুধু তাই নয় গায়রুল্লাহর, দাজ্জালের তৈরি জীবনব্যবস্থা জাতীয় জীবনে গ্রহণ করে নিজেরা যে শেরক ও কুফরীর মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে আছেন, এমন কি তার বিরুদ্ধে যেখানে সংগ্রাম নেই সেখানে কুফরের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে? এ শুধু হাস্যকর নয়, আল্লাহর সাথে বিদ্রƒপও। তা না হলে দোয়ার উল্টো ফল হচ্ছে কেন? যারা দোয়া করাকে আর্টে পরিণত করে, কর্মহীন, প্রচেষ্টাহীন, আমলহীন, কোরবানিহীন, সংগ্রামহীন দোয়া করছেন তারা তাদের অজ্ঞতায় বুঝছেন না যে তারা তাদের ঐ দোয়ায় আল্লাহর ক্রোধ উদ্দীপ্ত করছেন, আর তাই দোয়ার ফল হচ্ছে উল্টো। তাই বলছি ঐ দোয়া করার চেয়ে দোয়া না করা নিরাপদ।
মহাভারতে একটি কথা আছে, “গৃহে যখন আগুন লাগে যজ্ঞে আহুতি দিয়ে তখন পুন্যলাভ হয় না”। অর্থাৎ গৃহে আগুন লাগলে প্রথম কর্তব্য সেই আগুন নিভিয়ে গৃহের সকলকে রক্ষা করা। আর সেই আগুন নিভানোর জন্য প্রার্থনা নয় প্রচেষ্টাই আগে প্রয়োজন, এর পর প্রার্থনা। আপনি যদি প্রচেষ্টা ত্যাগ করে শুধু প্রার্থনা করতে থাকেন তবে আগুনে পুড়ে গৃহের সকলেই মারা যেতে পারে এবং এর জন্য দায়ী থাকবেন আপনিই।
দাজ্জালের বিধান মেনে নেওয়ার ফলে সমগ্র মানবজাতি যখন অন্যায়, অবিচার, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, রক্তপাত, হত্যা, ধর্ষণ তথা চরম অধর্মে লিপ্ত তখন আমাদের প্রধান কর্তব্যই হলো মানবজাতিকে এই চরম অশান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। প্রচেষ্টা না করে শুধু প্রার্থনা করলে এই কাজে সফলতা আসবে না।

Thursday, April 14, 2016

এক মহাসত্যের আহ্বান

এক মহাসত্যের আহ্বান


হেযবুত তওহীদ

যারা দুনিয়ার কিছুমাত্র খবরও রাখেন তাদের বলতে হবে না যে, এই পৃথিবীতে মুসলিম বলে পরিচিত ১৬০ কোটির এই জনসংখ্যাটির কী করুণ অবস্থা। পৃথিবীর অন্য সব জাতিগুলি এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে পরাজিত করছে, হত্যা করছে, অপমানিত করছে, লাঞ্ছিত করছে, তাদের মসজিদগুলি ভেংগে চুরমার করে দিচ্ছে বা সেগুলিকে অফিস বা ক্লাবে পরিণত করছে। এই জাতির মা-বোনদের তারা ধর্ষণ করে হত্যা করছে। অথচ আমরা এক সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি ছিলাম। পৃথিবীর অন্যান্য সব জাতি সভয় সম্ভ্রমসহ আমাদের পানে তাকিয়ে থাকতো। এই পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় শাসন ক্ষমতা এই মুসলিম বলে পরিচিত জাতির হাতে ছিলো। তারা ঐ ক্ষমতাবলে ঐ বিশাল এলাকায় আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন পৃথিবীতে সামরিক শক্তিতে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সভ্যতায়, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে, Technology-তে, আর্থিক শক্তিতে এই জাতি সমস্ত পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ ছিলো; তাদের সামনে দাঁড়াবার, তাদের প্রতিরোধ করার মতো কোন শক্তি পৃথিবীতে ছিলো না। এরপর তাদের ওপর নেমে এলো আল্লাহর গযব। কয়েক শতাব্দী আগে আল্লাহ ইউরোপের খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম, দাস বানিয়ে দিলেন। এই সামরিক পরাজয়ের পর থেকে এই শোচনীয় পতনের কারণ কী? অনেক চিন্তাশীল লোকই অনেক রকম কারণের কথা বলেছেন; আমাদের ঈমান দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই, শিক্ষা নেই ইত্যাদি নানা প্রকার কারণ তারা পেশ করেছেন। আমাদের হেযবুত তওহীদের ইমাম ইমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী বলেছেন – ওগুলো আসল কারণ নয়, ওগুলো ফল মাত্র। আসল কারণ হলো মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটি কলেমা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। তিনি আল্লাহর কোর’আন থেকে প্রমাণ করেছেন যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কলেমা ইসলামের আত্মা, ভিত্তি, মূলমন্ত্র। এই কলেমা ছাড়া কোন ইসলাম নেই। এই কলেমা সঠিক অর্থে অন্তরে বিশ্বাস না করে, মুখে প্রচার না করে এবং এর উপর আমল না করে অর্থাৎ একে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম (জেহাদ) না করে কেউ মো’মেন বা মুসলিম হতে পারে না। আমাদের ইমাম বলছেন, পৃথিবীময় কলেমার আজ ভুল অর্থ করা হয়। আজ সর্বত্র শেখানো হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য অর্থাৎ মা’বুদ নাই। ইমাম বলছেন, কলেমা হচ্ছে – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ইলাহ অর্থ মা’বুদ নয়। ইলাহ হচ্ছেন তিনি সেই সত্তা যার আদেশ শুনতে হবে, মানতে হবে, পালন করতে হবে অর্থাৎ সার্বভৌম। আর উপাস্য, মা’বুদ হচ্ছেন তিনি সেই সত্তা যাকে উপাসনা করা হয়। দু’টো ভিন্ন অর্থ। ইসলামের কলেমার সঠিক অর্থ হচ্ছে শুধু আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে, একমাত্র আদেশদাতা হিসাবে বিশ্বাস করা, মেনে নেওয়া অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য সকল হুকুম বিধান প্রত্যাখ্যান করা।
যামানার ইমাম বলছেন, কলেমার এই ভুল অর্থের পরিণাম হয়েছে এই যে, পৃথিবীর মুসলিম বলে পরিচিত এই জনসংখ্যা অর্থাৎ আমরা আল্লাহকে হুকুমদাতা, আইনদাতা হিসাবে ভুলে গিয়ে তাঁকে শুধু উপাস্য, মা’বুদ বিশ্বাস করে আপ্রাণ তাঁর উপাসনা করে, নামাজ, যাকাত, হজ্ব, রোযা করে আসমান জমিন ভর্তি করে ফেলছি, কিন্তু আমাদের সমষ্টিগত জীবনে কেউ তাঁর আদেশ, হুকুম শুনি না, পালন করি না। আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা (দীন) কে বাদ দিয়ে আমরা সমষ্টিগত জীবনে ইহুদি খ্রিষ্টানদের তৈরি জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ থেকে অর্থাৎ কলেমা থেকে বের হয়ে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হয়ে গেছি। আজ জাতীয় জীবনে, সমষ্টিগত জীবনে, রাষ্ট্র্রীয় জীবনে পৃথিবীর কোথাও আল্লাহর আদেশ পালন করা হচ্ছে না, মুসলিম বলে পরিচিত দেশগুলোতেও না। সর্বত্র মানুষের নিজেদের তৈরি এবং ইহুদি, খ্রিষ্টানদের তৈরি জীবন-ব্যবস্থাকে মেনে নেয়া হয়েছে আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে। এই কাজ করে আমরা কলেমা থেকে, ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছি। আজ পৃথিবীর ‘অতি মুসলিমরা’ নামাজে, রোযায়, হজ্বে, তাহাজ্জুদে, তারাবীতে, দাড়ি, টুপি-পাগড়িতে, পাজামায়, কোর্তায় নিখুঁত। শুধু একটিমাত্র ব্যাপারে তারা নেই, সেটা হলো তওহীদ, কলেমা–একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে সামগ্রিক জীবনের বিধানদাতা, আদেশদাতা হিসাবে মানি না। যে আংশিক অর্থাৎ ব্যক্তিগত ঈমান (যা প্রকৃতপক্ষে শেরক) তাদের মধ্যে আছে তা আল্লাহ আজও যেমন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে রেখেছেন, হাশরের দিনেও তেমনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।
একেবারে কলেমা থেকে বিচ্যুতি ছাড়াও আমরা এ সত্য যামানার ইমামের কাছ থেকে বুঝেছি যে, আল্লাহ তাঁর শেষ নবীর মাধ্যমে যে ইসলাম পৃথিবীর মানুষের জন্য পাঠিয়েছিলেন তা নানা কারণে ক্রমে ক্রমে বিকৃত হয়ে বর্তমানে যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তাতে এই ইসলাম আর সেই ইসলামই নেই। আল্লাহর সেই প্রকৃত ইসলাম যেটা আল্লাহ নবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন যারা সেটা গ্রহণ কোরল তাদের উপর তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে তারা কঠিন জেহাদের (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম) মাধ্যমে সেটাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করবে। এবং এও তিনি সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, (সুরা তওবা-৩৮-৩৯)। এই জাতি ৬০/৭০ বছর আল্লাহর আদেশ মোতাবেক সংগ্রাম চালিয়ে অর্ধেক পৃথিবীতে এই সত্যদীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর দুর্ভাগ্যক্রমে আকিদার বিকৃতির কারণে আল্লাহর সাবধানবাণী অগ্রাহ্য করে জেহাদ পরিত্যাগ করে অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মত রাজত্ব বাদশাহী উপভোগ করতে আরম্ভ কোরল। আল্লাহর সাবধানবাণী কখনও মিথ্যা হতে পারে? পারে না। তাই তিনি ইউরোপের খ্রিষ্টান জাতিগুলি দিয়ে মুসলিম জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম বানিয়ে দিলেন। সেই গোলামি আজও চোলছে।
পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমে তাঁর প্রকৃত ইসলাম, যে ইসলাম তিনি ১৪০০ বছর আগে তাঁর শেষ রসুলের মাধ্যমে মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছিলেন সেটা আবার হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম, ইমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী বুঝতে পেরেছেন। তিনি হেযবুত তওহীদ নামে একটি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে এর মাধ্যমে মানুষকে আহ্বান করেছেন খ্রিষ্টানদের তৈরি করা বর্তমানে প্রচলিত বিকৃত, বিপরীতমুখী ইসলাম ত্যাগ করে আল্লাহ- রসুলের প্রকৃত ইসলামে ফিরে যেতে। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই বিকৃত ইসলাম ত্যাগ করে, এ থেকে হেজরত করে যারা হেযবুত তওহীদে যোগ দিয়ে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামে ফিরে যাচ্ছেন তারা অর্থাৎ আমরা সৌভাগ্যবান। আল্লাহ তাঁর অশেষ দয়ায় এই অমানিশার ঘোর অন্ধকারে তাঁর এই বান্দাকে রসুল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেই সঠিক, প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান দান করেছেন। আমরা পথহারা, গোমরাহ ছিলাম, আমরা খ্রিষ্টানদের তৈরি করা বিকৃত, বিপরীতমুখী ধর্মটাকেই সঠিক ইসলাম মনে করে সেটাকেই প্রাণপণে পালন করছিলাম, সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করছিলাম। আজ আমরা আমাদের সাংঘাতিক ভুল বুঝতে পেরেছি। আল্লাহর এই বান্দার মাধ্যমে আজ আমরা বুঝেছি প্রকৃত ইসলাম কি, ইসলামের সঠিক আকিদা কি, তওহীদ কি, ঈমান কি, এবাদত কি, মো’মেন কি, মুসলিম কি, উম্মতে মোহাম্মদী কি, হেদায়াহ কি, তাকওয়া কি, সালাতের (নামাজ) সঠিক উদ্দেশ্য কি, দীন প্রতিষ্ঠার তরিকা, কর্মসূচি কি এবং কিভাবে তাকে প্রয়োগ করতে হয়। বুঝেছি কেন সংখ্যায় মাত্র পাঁচ লাখ উম্মতে মোহাম্মদী অশিক্ষিত, চরম দরিদ্র, অস্ত্রহীন হওয়া সত্ত্বেও ৩০ বছরের মধ্যে অর্ধেক পৃথিবীর কর্তৃত্ব পেয়েছিলেন, দু’টি বিশ্ব-শক্তিকে (Super Power) একটা একটা করে নয়, এক সাথে সামরিকভাবে পরাজিত, ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলেন, কেন উম্মতে মোহাম্মদীর নাম শুনলে শত্রুর অন্তরাত্মা ভয়ে কেঁপে উঠত এবং কেন আজ এ জাতি সংখ্যায় ১৬০ কোটি হওয়া সত্ত্বেও, এদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ফকিহ, মোহাদ্দেস, মোফাস্সের, মুফ্তি, আলেম, লক্ষ লক্ষ পীর দরবেশ থাকা সত্ত্বেও, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের এক বিরাট অংশের মালিক হওয়া সত্ত্বেও, অন্য সব জাতির লাথি খাচ্ছে। আমরা আরও বুঝেছি আল্লাহর রসুল ১৪০০ বছর আগে যে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন আখেরী যামানায় দাজ্জাল আবির্ভূত হবে সেই দাজ্জাল আসলে কি? বুঝেছি যে, দাজ্জাল ইতিমধ্যেই আবির্ভূত হয়েছে এবং বিশ্বনবীর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক সমস্ত পৃথিবী দাজ্জালের করতলগত হয়ে গেছে এবং মুসলিম নামধারী এই জাতিসহ সমস্ত পৃথিবীর মানুষ দাজ্জালকে প্রভু বা রব স্বীকার করে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সাজদায় অবনত হয়ে আছে। তারা আল্লাহ প্রদত্ত সংজ্ঞা মোতাবেক মোমেন নয়। আল্লাহ কোর’আনে মো’মেনের সংজ্ঞা দিচ্ছেন- “প্রকৃত মো’মেন শুধু তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে, তারপর (ঈমান আনার পর) আর তাতে কোন সন্দেহ করেনা, এবং তাদের জান ও সম্পত্তি দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে” (সুরা হুজরাত ১৫)। আল্লাহর দেয়া মো’মেনের সংজ্ঞায় দু’টি শর্ত দেয়া হলো; প্রথম শর্ত হচ্ছে আল্লাহ ও রসুলের ওপর ঈমান, অর্থাৎ তওহীদ, যার অর্থ হচ্ছে জীবনের সর্বাঙ্গনে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে, আইন-কানুন, দ-বিধি, অর্থনীতি যাই হোক না কেন, যে বিষয়ে আল্লাহ বা তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য আছে, কোন আদেশ-নিষেধ আছে সে বিষয়ে আর কাউকে না মানা। দ্বিতীয় শর্ত হলো ঐ তওহীদকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা। বর্তমানে মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটিতে এ দু’টি শর্তের একটিও নেই। তাহোলে প্রশ্ন হচ্ছে- আল্লাহর দেয়া এই সংজ্ঞা মোতাবেক এই জাতি কি মো’মেন? অবশ্যই নয়। আর মো’মেন না হওয়ার অর্থ হয় মোশরেক না হয় কাফের। তাছাড়াও আল্লাহ কোর’আনে কাফেরের যে সংজ্ঞা দিচ্ছেন তা হলো – আল্লাহ যে আইন, বিধান নাযেল করেছেন তা দিয়ে যারা হুকুম করে না অর্থাৎ শাসনকার্য, বিচার ফায়সালা পরিচালনা (এখানে বিচার অর্থে আদালতের বিচার, শাসনকার্য সব বুঝায়, কারণ শব্দটা হুকুম) করে না তারাই কাফের, জালেম, ফাসেক (সুরা মায়েদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এখানে আল্লাহ-রসুলের প্রতি বিশ্বাস ও কোন প্রকার এবাদত করা বা না করার শর্ত রাখা হয় নি। অর্থাৎ যারা আল্লাহর কোর’আনে দেওয়া আইন, বিধান দিয়ে শাসনকার্য ও বিচার ফায়সালা সম্পাদন করে না তারা যতো বড় মুসুল্লিই হন, যতো বড় মুত্তাকি, আলেম, দরবেশ, পীর-মাশায়েখ হোন না কেন কার্যতঃ কাফের। এই আয়াতের অর্থে সমস্ত পৃথিবীর মুসলিম বলে পরিচিত এই জনসংখ্যা কার্যতঃ কাফের, যালেম এবং ফাসেক।
এখন এ জাতির সামনে একটি মাত্র পথ খোলা আছে, তা হলো এ যামানার ইমাম (The Leader of the Time) জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর এই ডাক গ্রহণ করে বর্তমানের প্রচলিত বিকৃত ও বিপরীতমুখী ইসলাম ত্যাগ করে প্রকৃত ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। কলেমার সাক্ষ্য দিয়ে পুনরায় তওহীদের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে হুকুমদাতা, আইনদাতা অর্থাৎ সার্বভৌম হিসাবে অস্বীকার করতে হবে এবং এই তওহীদকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জেহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম) করতে হবে।

ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসুন

ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসুন


রাকীব আল হাসান
অন্ধত্ব বা দৃষ্টিহীনতা (Blindness) কী? অন্ধত্ব হলো না দেখা, না বোঝা, নির্দিষ্ট একটা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা, এর বাইরে চিন্তা না করা, গবেষণা না করা। পৃথিবীতে শুধু আমিই ঠিক। কাজেই এর বাইরে আর কোনো কিছুই দেখবো না, জানবো না, শুনবো না। পৃথিবীতে শুধু ধর্মের জ্ঞানই প্রয়োজনীয়, আর আমার সে ব্যাপারে যথেষ্ট পাণ্ডিত্য আছে, কাজেই এর বাইরে অন্য কোনো জ্ঞানের দরকার নেই। আমি যা জানি তাই সত্য, পৃথিবীতে আর কোনো সত্য নেই। স্বর্গে শুধুমাত্র আমিই যাব, আর কেউ যাবে না- এসবই হলো অন্ধত্ব। প্রতিটি ধর্মের অনুসারীরাই মনে করেন যে তাদের ধর্মই সঠিক, একমাত্র তারাই সঠিক পথে আছে। স্বর্গে, জান্নাতে, হ্যাভেনে যাবার পথ শুধু তাদেরই জানা, কাজেই মুক্তির জন্য সকলকেই তাদের স্মরণাগত হতে হবে। বাকি সকল ধর্মই ভ্রান্ত, অসত্য। সুতরাং যে যত ধর্মই পালন করুক অন্য ধর্মের অনুসারী মাত্রই বিধর্মী অর্থাৎ জাহান্নামী। বিকৃত ইসলামের মুসলিমরা মনে করছে জান্নাতে যাবার অধিকার একমাত্র তাদের। জান্নাতে যাবার পূর্ব শর্তই হলো বর্তমানে ইসলাম নামে যে ধর্মটি চালু আছে তা গ্রহণ করা। অন্য যেকোনো ধর্ম যত যতœসহকারেই পালন করা হোক তাকে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আবার হিন্দুরা ভাবছেন হিন্দুধর্মই স্বর্গলাভের একমাত্র পথ। হিন্দুরা ছাড়া কেউই স্বর্গে পৌঁছতে পারবে না। খ্রিস্টানরা ভাবছে স্বর্গের ‘ঊঃবৎহধষ ষরভব’ এ শুধুই তাদেরই একচেটিয়া অধিকার। এই মানসিকতাগুলি নিছক ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছাড়া কিছু নয়। প্রত্যেক ধর্মেই নিজেদের স্বার্থে ধর্মের ধারক বাহক সেজে একটি ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি তাদের এই সংকীর্ণ মানসিকতা দিয়ে সাধরণ মানুষকে প্রভাবিত করে অব্যাহতভাবে জগৎসংসারের অকল্যাণ করে চলেছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা, দাঙ্গা, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ। ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে বিকৃত করে তারা ধর্মকে বানিয়ে নিয়েছে বাণিজ্যের মূলধন, স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। তারা নানা ইস্যুতে অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলে, অন্য ধর্মের নবী-রসুল, অবতার, মহামানবদের ব্যাপারে অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ায়। সাধারণ মানুষ ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য, ধর্মীয় নানা কার্য সম্পাদনের জন্য এই শ্রেণিটির স্মরণাপন্ন হয়। এরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজেদের মনগড়া কথা ধর্মের নামে চালিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ তাদের কথায় প্রভাবিত হয়। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পেছনে এরাই মূলত রসদ যুগিয়েছে। এদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অন্য ধর্মকে ভ্রান্ত, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক জ্ঞান করে মহামানবদের ব্যাপারে যখন অসত্য, মন্দ বাক্য বিনিময় করে তখনই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। আল্লাহ বলেছেন- ‘যাহারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে এবং উহার মধ্যে যাহা উত্তম তাহা গ্রহণ করে। উহাদিগকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং উহারাই বোধশক্তি সম্পন্ন।’ (সুরা জুমার-১৮)। আল্লাহ মনোযোগ সহকারে সব বিষয় শুনতে বলেছেন, যাচাই করতে বলেছেন, অতঃপর যেটা উত্তম সেটা গ্রহণ করতে বলেছেন। কিন্ত এই ধর্ম ব্যবসায়ীগুলো আল্লাহর এই কেতাবগুলোকে সংকীর্ণ, কূপমণ্ডুক দৃষ্টিহীন করে ফেলেছে। আল্লাহ সকলকে জ্ঞান দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, বিবেক দিয়েছেন তাই প্রতিটা বিষয় আমাদের পড়ে দেখা উচিত, যদি বিষয়টি উত্তম এবং যৌক্তিক মনে হয় তাহলে সেটা গ্রহণ করাই জ্ঞানীর কাজ হবে। সাধারণ মানুষকে আজ ধর্ম ব্যবসায়ীরা অন্ধ করে রেখেছে। ধর্মব্যবসায়ীরা কোনো কথা বললে সেটা সত্য কি মিথ্যা সাধারণ জনগণ তা যাচাই করে না। কিন্তু বিবেকবান ও দৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের অবশ্যই সেটা যাচাই করা উচিত। কারণ এটা স্রষ্টার নির্দেশ।
একটা বিষয় সকলকে অনুধাবন করতে হবে- এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা নিশ্চয় সংকীর্ণ নন। যাঁর সৃষ্টি এত অসীম, তাঁর নিজের বিরাটত্ব কতটা অসীম এবং নিখুঁত! কাজেই তাঁর নিকট থেকে আগত ধর্মও বিশাল, উদার, ত্র“টিমুক্ত। সকল ধর্মই সেই মহান স্রষ্টার নিকট থেকে আগত। সকল ধর্মের মূল বাক্য একই, মৌলিক শিক্ষাগুলি অভিন্ন। আপনি কোন ধর্মের অনুসারী এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, আপনি আপনার ধর্মের মূল বাক্যে, মৌলিক শিক্ষার মধ্যে আছেন কি না সেটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে চান, পৃথিবীকে স্বর্গরাজ্য তথা কিংডম অব হ্যাভেন বানাতে চান, সত্যযুগ ফিরিয়ে আনতে চান, পৃথিবীকে জান্নাতে পরিণত করতে চান মৃত্যুর পরও যদি জান্নাত, স্বর্গ তথা হ্যাভেনে যেতে চান তবে আপনাদেরকে নিজ নিজ ধর্মের মৌলিক শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে হবে। আপনাকে জানতে হবে সেই মৌলিক শিক্ষাগুলি কী? মূল বাক্য কোনটি? এক কথায় স্বর্গে, জান্নাতে তথা হ্যাভেনে যাবার প্রকৃত উপায় কী?
সকল ধর্মের মূল বাক্য হলো জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্রষ্টা ঈশ্বর তথা আল্লাহর হুকুমের যথাযথ বাস্তবায়ন। মানবরচিত ভোগবাদী, জড় ও বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন সকল তন্ত্র-মন্ত্র প্রত্যাখ্যান করে স্রষ্টার দেওয়া বিধান সার্বিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করাই হলো মুক্তির একমাত্র পথ। এটাই সকল ধর্মের মূল বাক্য। অর্থাৎ জান্নাতে যাবার পূর্ব শর্তই হলো জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে স্রষ্টার হুকুমের যথাযথো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, যুলুম, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি, রক্তপাত, অশান্তি দূর করে অনাবিল শান্তি ও পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। স্বর্গে কারা যাবে এর এক কথায় উত্তর হোল, যারা একমাত্র স্রষ্টার ইবাদত করবে। আর স্রষ্টার ইবাদত হচ্ছে মানবজাতির শান্তির জন্য সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই কাজ না করে যত উপাসনার আনুষ্ঠানিকতা, পূজা, অর্চনা, নামাজ রোযাই করা হোক না কেন সেগুলি কোনটাই ইবাদত হিসাবে কবুল হবে না, মানুষকে স্বর্গে নিতে পারবে না।
আর সকল ধর্মের মৌলিক শিক্ষা হলো মানুষের অভ্যন্তরস্থ মানবীয় গুণাবলীকে জাগ্রত করা। দয়া, মায়া, ভালোবাসা, মনুষ্যত্ব, মানবতা, সৌহার্দ্যতা, বিবেক, সহমর্মিতা, ঐক্য, শৃঙ্খলা, অপরকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি হলো মানবীয় গুণাবলি, এই বৈশিষ্ট্যগুলো যখন হারিয়ে যায় তখন সে আর মানুষ থাকে না। তার কোনো ধর্ম থাকে না। সে তখন ধর্মহীন হয়ে যায়। সে তখন পশুতে পরিণত হয়। সে যে ধর্মের ধ্বজাধারীই হোক না কেন এই গুণাবলি যদি তার মধ্যে না থাকে তবে সে মনুষ্য রূপধারী পশু।

আবারো শুরু হয়েছে অপপ্রচার

আবারো শুরু হয়েছে অপপ্রচার



আবারো শুরু হয়েছে অপপ্রচার
------------মসীহ উর রহমান, আমীর হেযবুত তওহীদ
হেযবুত তওহীদ একটি সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন যারা ইসলামের প্রকৃত রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরছে এবং কলেমা তওহীদের ভিত্তিকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সকল ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়াই হচ্ছে তওহীদের দাবি।
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে একদিকে স্বার্থের রাজনীতি, অপরদিকে সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ধর্মানুভূতিকে উত্তেজিত করে তা-ব সৃষ্টি করা, ধর্মের নামে ব্যবসা, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি ইত্যাদি।
এগুলোকে ইস্যু করেই বিশ্বে আজ একটার পর একটা দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশটিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র চলছে বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বহুবার জাতিকে সতর্ক করেছেন, সকলকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আমরা ২০০৯ সনেই বাংলাদেশ সরকারকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাবনা পেশ করেছিলাম। আমরা শুরু থেকে জাতিকে সকল প্রকার ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দেশের সকল আন্দোলনের থেকে হেযবুত তওহীদের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ আন্দোলন বিগত ২১ বছরে একটিও আইন ভঙ্গ করে নি, একটিও অপরাধ করে নি। এটি আমাদের মৌখিক দাবি নয়, এটি আদালতের রেকর্ড।
হেযবুত তওহীদ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে আইন-শৃঙ্খলা মান্য করে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যপ্রতিষ্ঠার কাজ করছে। মো’মেন হিসাবে, দেশের নাগরিক হিসাবে এটা আমাদের দায়িত্ব, এ কাজে আমাদের আর্থিক বা রাজনৈতিক বা কোনো প্রকার বৈষয়িক স্বার্থ নেই।
তথাপি আন্দোলন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে বহুমুখী অপপ্রচার চালানো হয়েছে। চিরকালই অপপ্রচারের প্রধান হাতিয়ার হয়েছে মিথ্যা কথা, অপবাদ আরোপ আর গুজব রটনা ইত্যাদি।
সত্য নিয়ে কাজ করলে মিথ্যাশ্রয়ীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করবে এটা স্বাভাবিক। যারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত করে এতদিন আমাদেরকে কাফের, খ্রিষ্টান ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে জনগণকে আমাদের বক্তব্য জানতে দেয় নি।
আর গণমাধ্যমগুলো গত বাঁধা নিয়মে ইসলামের কথা বললেই জঙ্গি - এই নীতি অনুসরণ করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজারবার জঙ্গি, নিষিদ্ধ, উগ্রপন্থী ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার করেছে যেগুলো সর্বাংশে মিথ্যা।
এই উভয়মুখী মিথ্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সরকার-প্রশাসনের অনেক ব্যক্তি। ফলে আমাদের সদস্যরা নির্মম সামাজিক ও প্রশাসনিক হয়রানি, নির্যাতন, জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। কিন্তু আইনী প্রক্রিয়ার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ নির্দোষ, এর কোনো আইনপরিপন্থী বা জঙ্গি কর্মকাণ্ড নেই।
সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ তারা দেখছে যে হেযবুত তওহীদ যে সত্য প্রচার করছে তাতে তাদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগবে, তাদের মুখোস খুলে যাবে।
তাই তারা মনগড়া ফতোয়া প্রচার করতে আরম্ভ করেছে যে হেযবুত তওহীদ ইসলামবিরোধী, কুফরি সংগঠন, জিন্দিকি সংগঠন ইত্যাদি। তারা পত্র পত্রিকায়, বিভিন্ন বইয়ে আমাদের বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ তুলে ধরে তার উদ্দেশ্যমূল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
দেশের সকল ধর্মবিশ্বাসী সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান, আপনারা কারো প্ররোচনায় কান দিবেন না। মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টি করে এই গোষ্ঠীটি সারা দেশে এমন ভয়াবহ তাণ্ডব বহুবার ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি নোয়াখালীতে তারা আমাদের নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে অপপ্রচার করে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হেযবুত তওহীদের দুজন সদস্যকে হাত পায়ের রগ কেটে জবাই করে হত্যা করেছে, তাদের চোখ তুলে নিয়েছে, তারপর তাদের দেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু জনগণ সচেতন হলে মিথ্যা ফতোয়ার অভিশাপ থেকে আমাদের দেশটা জঙ্গিবাদীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারে। আমরা যেমন প্রকৃত মোমেন মুসলিম উম্মতে মোহাম্মদী হতে চাই, অন্যদিকে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সুনাগরিক হয়ে দেশের জন্য, ইসলামের জন্য, মানবতার মুক্তির জন্য আমাদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করতে চাই।