Thursday, August 6, 2015

দোয়া কেন ব্যর্থ হোচ্ছে? (পর্ব-১)

দোয়া কেন ব্যর্থ হোচ্ছে? (পর্ব-১)

মোহাম্মদ আসাদ আলীঃ

হেদায়াহ (সঠিক পথ নির্দেশনা) ও সত্যদ্বীন দিয়ে আল্লাহ আখেরী নবী বিশ্বনবী মোহাম্মদ (স:) কে পাঠিয়েছেন তিনি যেন এটাকে অন্য সমস্ত দ্বীনের, জীবনব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠা করেন। (তওবা, ৩৩, ফাতাহ ২৮, সফ ৯)। এই হেদায়াহ হলো আল্লাহর তওহীদ, আল্লাহর সাবভৌমত্ব, লা এলাহা এল্লাাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া জীবনের সর্ব অঙ্গনে অন্য কারো হুকুম না মানা। আর দ্বীনুল হক (সত্য জীবনব্যবস্থা) হোল ঐ হেদায়াহর উপর প্রতিষ্ঠিত, আইন, বিধান, হারাম-হালাল, বৈধ-অবৈধ, জায়েজ-নাজায়েজ ইত্যাদি। মানুষকে আল্লাহ সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে সৃষ্টি কোরেছেন, তাই তার পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি সামষ্টিক ক্ষেত্র পরিচালনা করার জন্য একটা জীবনব্যবস্থা অতি অবশ্যই প্রয়োজন। এই জীবনব্যবস্থা প্রধানত দু’রকমের হতে পারে- ক) যিনি সৃষ্টি কোরেছেন অর্থাৎ স্রষ্টার দেওয়া, খ) মানুষের নিজের তৈরি এক কথায় সৃষ্টির তৈরি করা।
এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ কোরবে স্রষ্টার, আল্লাহর নাকি মানুষের নিজেদের তৈরি। যদি তারা স্রষ্টার দেওয়া পথ গ্রহণ করে তবে তারা হবে মো’মেন, সেটার ফল হবে দুনিয়াময় শান্তি, ন্যায়, সুবিচার এবং এই জীবনের পরের জীবনে জান্নাত। আর যদি মানুষের তৈরি পথ, ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে এই জীবনে নেমে আসবে অন্যায়, দুঃখ, কষ্ট, অভাব, দাঙ্গা, মারামারি, রক্তপাত- এক কথায় অশান্তি আর পরজীবনে আরও ভয়াবহ শাস্তি জাহান্নাম। যাহোক মহান আল্লাহ আখেরী নবীকে পাঠালেন, এমন একটা জীবনব্যবস্থা দিয়ে যেটা সমস্ত মানব জীবনে কার্যকরী হবে, এই জন্য এসলামের আকীদা উদ্দেশ্য, হলো সমস্ত বনী আদম হবে একটা জাতি। তাদের জীবনব্যবস্থা হবে একটা আল্লাহর দেওয়া দ্বীনুল হক, তাদের অনুসারীদের অনুসরণীয় ব্যক্তি হবেন একজন ‘অর্থাৎ আখেরী নবী (দ:)। এই উদ্দেশ্যে অর্থাৎ মানব জাতির সামগ্রিক জীবনে অন্যায়, সুবিচার, এককথায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী তাঁর আসহাবদের নিয়ে সংগ্রাম শুরু কোরলেন তাঁর জীবদ্দশায় সমস্ত জাজিরাতুল আরবে আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন কায়েম হোল। তিনি এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর সংগ্রাম কোরে এই সত্যদীনকে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব এসে পড়লো তাঁর উম্মাহর উপর। উম্মতে মোহাম্মদী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য অর্থাৎ আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার লক্ষ্যে নিজেদের বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি, স্ত্রী-পুত্র, ক্ষেত-খামার ইতাদি বিসর্জন দিয়ে দুনিয়ার দিকে বেরিয়ে পড়লো। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরল, মোটামুটি ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত চোলল এক অখণ্ড জাতি হোয়ে মানবজীবন থেকে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার দূর কোরে ন্যায় সুবিচার অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এর পরই সংগ্রাম ত্যাগ করা হোল। দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগ কোরে অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরল। এই সংগ্রাম- যেটা করার জন্যই এই উম্মতে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করা হোয়েছিলো এবং যা হোচ্ছে রসুলাল্লাহর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ এবং যা ত্যাগ কোরলে কেউ প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী থাকেন না সেই জেহাদ ত্যাগ করার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো আকীদার বিকৃতি। আর আকীদার বিকৃতি হোলে ঈমানেরও কোন দাম থাকে না। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হলো এই যে, মহানবীর (দ:) পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত ঐ সংগ্রাম ‘জেহাদ’ চলেছিলো এবং তারপর তা বন্ধ করা হয় এবং উমাইয়া খলিফারা নামে খলিফা থেকেও আসলে পৃথিবীর আর দশটা রাজা-বাদশাহর মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করা আরম্ভ করেন। যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তার সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ রসুলকে (দ:) পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, যে আদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য সেই রসুল (দ:) এবং আসহাব (রা:) অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেন, জীবনের সমস্ত কিছু কোরবান কোরে তাদের নেতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে জেহাদ করেন, আহত হন, প্রাণ দেন- সেই আদর্শকে ত্যাগ করার অনিবার্য পরিণতি কি হলো তা ইতিহাস। লক্ষ্যবিচ্যূত হওয়ার যে সব ফল হলো তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক) ঈমানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আকীদা বিকৃত হোয়ে গেলো। (খ) আল্লাহ ও রসুল (দ:) যে কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছিলেন সেই কাজ, দীনের সংবিধান কোর’আন হাদিসের অতি বিশ্লেষণ অর্থাৎ দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি জোরে-শোরে ধুমধামের সাথে আরম্ভ করা হলো। ফলে লক্ষ্যচ্যূত জাতি বহু মাযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে শুধু শক্তিহীন হোয়েই পড়লো না, নিজেরা নিজেরা বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নির্জীব হোয়ে গেলো। (গ) এরপর ভারসাম্যহীন সুফীবাদ এই খণ্ড-বিখণ্ড ও নির্জীব জাতির মধ্যে প্রবেশ কোরে এর বহির্মুখী দৃষ্টি ও চরিত্রকে উল্টো কোরে অন্তর্মুখী কোরে দিলো। এরপর এ জাতি, যে জাতি পৃথিবীর সমস্ত অন্যায়কারী- সমস্ত নির্যাতক- সমস্ত অবিচারক ও অত্যাচারী ব্যবস্থার ত্রাসে পরিণত হোয়েছিলো- জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর শিক্ষক হোয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের দুয়ার পৃথিবীর মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিলো- নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ কোরেছিলো, তা একটি অশিক্ষিত অজ্ঞ, প্রায় পশু পর্যায়ের জনসংখ্যায় পর্যবসিত হোয়ে গেলো এবং পরিণামে ইউরোপের বিভিন্ন খ্রিস্টান জাতিগুলির গোলামে পরিণত হলো।
কয়েকশ’ বছর ঘৃণ্য দাসত্বের পর কিছুদিন থেকে প্রকাশ্যভাবে স্বাধীনতা পেলেও এই জনসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আজও আদর্শগত ও মানসিকভাবে সেই গোলামই আছে অর্থাৎ প্রভুদের তৈরি করা আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি সবই চালু আছে। ফলে গোলামি যুগের চেয়েও এখন বেশিভাবে গোলামি চোলছে।
এখন এই গোলামদের কাজ হোল প্রার্থনা করা
আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিশাল এই শক্তিহীন অক্ষম ব্যর্থ জাতির এখন একমাত্র কাজ হোচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া। এর ধর্মীয় নেতারা, আলেম, মাশায়েখরা এই দোয়া চাওয়াকে বর্তমানে একটি আর্টে, শিল্পে পরিণত কোরে ফেলেছেন। লম্বা সময় ধোরে এরা লম্বা ফর্দ ধোরে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরতে থাকেন, যেন এদের দোয়া মোতাবেক কাজ করার জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কোরে বোসে আছেন। মাঝে মাঝে বিশেষ (ঝঢ়বপরধষ) দোয়া ও মোনাজাতেরও ডাক দেওয়া হয় এবং তাতে এত লম্বা সময় ধোরে মোনাজাত করা হয় যে হাত তুলে রাখতে রাখতে মানুষের হাত ব্যথা হোয়ে যায়। কিছুদিন আগে লাউড স্পিকারে এক ‘ধর্মীয় নেতার’ বাদ ওয়াজ দোয়া শুনছিলাম। তিনি আল্লাহর কাছে লিষ্ট মোতাবেক দফাওয়ারী (ওঃবস নু রঃবস) বিষয় চাইতে লাগলেন। বেশির ভাগ বিষয়ই তাসাওয়াফের ব্যাপারে, তবে ইসরাইল রাষ্ট্রকে ধ্বংস কোরে বাইতুল মোকাদ্দাসকে মোসলেমদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার একটা দফা ছিলো, এবং দুনিয়ার মোসলেমের ঐক্যও একটা দফা ছিলো। ছত্রিশটা দফা গোনার পর আর গোনার ধৈর্য ছিলো না। তবে ওর পরও যতক্ষণ দোয়া চলেছিলো, তাতে মনে হয় মোট কমপক্ষে শ’খানেক বিষয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হোয়েছিলো। অর্থাৎ আল্লাহ- ঐ শ’খানেক বিষয় তুমি আমাদের জন্য কোরে দাও। অজ্ঞানতা ও বিকৃত আকীদার কারণে এরা ভুলে গেছেন যে কোন জিনিসের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না কোরে শুধু তার কাছে চাইলেই তিনি তা দেন না, ওরকম দোয়া তার কাছে পৌঁছে না। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ নবী (দ:) তার হাবিব কে যে কাজের ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সে কাজ সম্পন্ন কোরতে তাকে কি অপরিসীম পরিশ্রম কোরতে হোয়েছে, কত অপমান-বিদ্রুপ-নির্যাতন-পীড়ন সহ্য কোরতে হোয়েছে- যুদ্ধ কোরতে হোয়েছে, কত দিন রাত না খেয়ে কাটাতে হোয়েছে, আহত হোতে হোয়েছে। তিনি ওসব না কোরে বোসে বোসে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরলেই তো পারতেন আমাদের ধর্মীয় নেতাদের মত। আল্লাহর কাছে বিশ্বনবীর (দ:) দোয়াই বড়, না আমাদের আলেম মাশায়েখদের দোয়াই বড়? দোয়াতেই যদি কাজ হতো তবে আল্লাহর কাছে যার দোয়ার চেয়ে গ্রহণযোগ্য আর কারো দোয়া নেই- সেই রসুল (দ:) ঐ অক্লান্ত প্রচেষ্টা (জেহাদ) না কোরে শুধু দোয়াই কোরে গেলেন না কেন সারাজীবন ধরে? তিনি তা করেন নি, কারণ তিনি জানতেন যে প্রচেষ্টা (আমল জেহাদ) ছাড়া দোয়ার কোন দাম আল্লাহর কাছে নেই।
প্রতিপক্ষ শত্র“র বিরুদ্ধে এরা ঐক্যবদ্ধভাবে জানের বাজি রেখে সম্পদ বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করে না। করার সাহসও পায় না। এক জায়গায় একত্রিত হোয়ে আসমানের দিকে হাত তুলে শত্র“র জন্য গজব কামনা করে যেন আল্লাহ গজব দিয়ে শত্র“বাহিনীকে ধ্বংস কোরে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হোল, আল্লাহ এদের দোয়া মোতাবেক শত্র“দের আজাব আর গজব দিয়ে ধ্বংস কোরে দিয়ে এই দুনিয়া কার হাতে তুলে দিবেন? ধর্মব্যবসায়ী, কুপমণ্ডুক আলেম মোল্লাদের কাছে? আত্মার ঘষামাজা নিয়ে ব্যস্ত খানকার গুহাভ্যন্তরে বসে বসে জিন্দেগি পার কোরছেন তাদের কাছে? সামান্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাস কোরে মত, পথ, তরিকা সৃষ্টি কোরে যারা ঐক্যহীন, শৃঙ্খলাহীন, আনুগত্যহীন হোয়ে নিজেরা নিজেরা নিত্য কোন্দলে লিপ্ত তাদের কাছে? আল্লাহ অত বে-হিসাবী নন, কাজেই আল্লাহ তাদের দাবি মোতাবেক শত্র“দের উপর গজব ও লানত না দিয়ে বরং যারা কোন ত্যাগস্বীকার না কোরে, জীবন-সম্পদ নিজের কাছে মজুদ রেখে কাপুরুষের মত অতি সন্তর্পণে সংগ্রাম ত্যাগ কোরে, আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান কোরে ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’, দাজ্জালের তৈরি ব্যবস্থাগুলিকে গ্রহণ কোরে নিয়েছে তাদের উপরই গজব ও লানত দিবেন এবং গত কয়েক শতাব্দী ধোরে দিয়েও চোলেছেন।
আসল কথা হোচ্ছে এই যে, আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এমন কিছু নেই যা তিনি কোরতে পারেন না। কিন্তু তিনি দেখতে চান আমরা কি করি। তার সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে (দ:) তিনি যে কাজে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সেই কাজ কোরতে সেই নবীকে (দ:) তার সারা জীবন ধোরে কি অপরিসীম কষ্ট, কি অক্লান্ত পরিশ্রম, কি নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য কোরতে হোয়েছিলো, তা তার পবিত্র জীবনী যিনি একবারও পড়েছেন তিনি জানেন। আল্লাহর রসুল (দ:) তার জীবনে কতখানি কষ্ট সহ্য কোরেছেন, তা তার একটি কথায় কিছুটা আঁচ করা যায়। তার উম্মাহর মধ্যে যারা জীবনে অত্যন্ত কষ্টে পড়বেন, অসহনীয় দুঃখে যাদের জীবন ভারাক্রান্ত হবে তাদের উদ্দেশ্য কোরে তিনি বোলেছেন তারা যেন তাঁর (দ:) জীবনের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট-বিপদ মনে কোরে নিজেরা মনে সাহস-সান্ত্বনা আনেন। মানব জাতির শ্রেষ্ঠ, আল্লাহর প্রিয় বন্ধুকে যেখানে জীবনভর এত কষ্ট-সংগ্রাম কোরতে হলো, সেখানে আমরা বসে বসে দোয়া কোরেই পার পেয়ে যাবো? আল্লাহ আমাদের লিষ্ট মোতাবেক দোয়ার ফল দিয়ে দেবেন? কখনোই দেবেন না। কারণ এটা আল্লাহর সুন্নাহ নয়। তবে এটাও সত্য যে আল্লাহই তাঁর কাছে দোয়া কোরতে বোলেছেন, সাহায্য চাইতে বোলেছেন- আল্লাহর রসুলও আল্লাহর কাছে দোয়া কোরেছেন। প্রশ্ন হোল:
আল্লাহর রসুল (দ:) কখন দোয়া কোরেছেন?
সেই সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (দ:) দোয়া যে করেন নি তা নয়; তিনি কোরেছেন, কিন্তু যথা সময়ে কোরেছেন অর্থাৎ চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পর, সর্বরকম কোরবানির পর, জান বাজী রাখার পর যখন আমলের আর কিছু বাকি নেই তখন। বদরের যুদ্ধ শুরু হবার ঠিক আগের মুহূর্তে যখন মুজাহিদ আসহাব তাদের প্রাণ আল্লাহর ও রসূলের জন্য কোরবানি করার জন্য তৈরি হোয়ে সারিবদ্ধ হোয়ে দাঁড়িয়েছেন, এখনই যুদ্ধ আরম্ভ হবে, শুধু সেই সময় আল্লাহর হাবিব আল্লাহর কাছে দোয়া কোরলেন তার প্রভুর সাহায্য চেয়ে।
দ্বিতীয় হেজরী সনের ১৭ই রমযান তিনশতের চেয়ে সামান্য অধিক মোজাহেদ অস্ত্রশস্ত্রে সহস্রাধিক মক্কার নগররাষ্ট্রের কাফের সৈন্যকে মোকাবেলা করেন। মোসলেম সৈনিকদের এক পঞ্চমাংশের কিঞ্চিত অধিক লোক লৌহবর্ম পরিহিত ও উটের উপর সওয়ার ছিলেন। অবশিষ্ট মোজাহেদ ছিলেন পদাতিক এবং বর্মহীন। অনেকের কাছেই তলোয়ারও ছিল না। তাদের হাতে ছিল খেজুরের ডাল দিয়ে তৈরি লাঠি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হোচ্ছিল আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য পাগলপারা কিছু মানুষ জেনে বুঝে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে, যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের জীবন্ত ফিরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ কঠিন বিপদের সময় রসুলাল্লাহ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আল্লাহর দরবারে দু’আ কোরলেন : হে আল্লাহ! এ দিকে কোরায়েশরা নিজেদের অহংকারের যাবতীয় আয়োজনসহ উপস্থিত হোয়েছে। তারা তোমার রসুলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য এসেছে। হে আল্লাহ! তুমি তোমার অঙ্গীকার স্মরণ করো। এখন আসুক সেই সাহায্য, যার ওয়াদা তুমি আমার সাথে কোরেছিলে। হে আল্লাহ! আজ যদি এ মুষ্ঠিমেয় লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাহোলে দুনিয়ার বুকে তোমার এবাদত করার মত কেউ থাকবে না। এ সময় আবু বকর (রা:) বোললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কম দোয়া কোরুন। কারণ আল্লাহ আপনাকে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা তিনি অবশ্যই পূরণ কোরবেন।’ দোয়া করার সময় রসুলাল্লাহ (দ:) এতটা আকুল-হৃদয় হোয়ে পড়েন যে তিনি তাঁর তাবুর মধ্যে প্রায় চেতনালুপ্ত হোয়ে যান (ওহী আসার সময় এমনটা হোত)। এরপর তিনি জাগ্রত হোয়ে বলেন, ‘হে আবু বকর! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহর সাহায্য এসে গেছে। এই তো জিব্রাঈল। তিনি ঘোড়ার লাগাম ধোরে আছেন, আর তাঁর ঘোড়ার সামনের দাঁতগুলো ধূলা ময়লাযুক্ত।” (সিরাতুন্নবী (সা:)- ইবনে হিশাম)।
রসুলাল্লাহ যে দোয়া কোরলেন তার পেছনে কি ছিলো? ঐ দোয়ার পেছনে ছিলো আল্লাহর নবীর (দ:) চৌদ্দ বছরের অক্লান্ত সাধনা, সীমাহীন কোরবানি, মাতৃভূমি ত্যাগ কোরে দেশত্যাগী হোয়ে যাওয়া, পবিত্র দেহের রক্তপাত ও আরও বহু কিছু এবং শুধু তার একার নয়। ঐ যে তিনশ’ তের জন ওখানে তাদের প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য সালাতের মত সারিবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ানো ছিলেন তাদেরও প্রত্যেকের পেছনে ছিলো তাদের আদর্শকে, দীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা, বাড়ি-ঘর, স্ত্রী-পুত্র সহায়, সম্বল, ব্যবসা বাণিজ্য এক কথায় পার্থিব সমস্তকিছু নির্দ্বিধায় কোরবানি করা এবং নির্মম নির্যাতন সহ্য করা। প্রচেষ্টার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে শেষ সম্বল প্রাণটুকু দেবার জন্য তৈরি হোয়ে ঐ দোয়া কোরেছিলেন মহানবী (দ:)। ঐ রকম দোয়া আল্লাহ শোনেন, কবুল করেন, যেমন কোরেছিলেন বদরে। কিন্তু প্রচেষ্টা নেই, বিন্দুমাত্র সংগ্রাম নেই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত তুলে দোয়া আছে অমন দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। বদরের ঐ দোয়ার পর সকলে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, অনেকে জান দিয়েছিলেন, আমাদের ধর্মীয় নেতারা দোয়ার পর পোলাও কোর্মা খেতে যান, আর পকেট ভর্তি কোরে টাকা পয়সাও নিয়ে আসেন। ঐ দোয়া ও এই দোয়া আসমান যমীনের তফাৎ। (চোলবে…)
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান করেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।

No comments:

Post a Comment