Friday, August 7, 2015

দামি জোব্বার অন্তরালে আরবদের কুৎসিত চেহারা

দামি জোব্বার অন্তরালে আরবদের কুৎসিত চেহারা

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
এসলামী সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের দিক দিয়ে আরব বিশ্ব খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এসলামের শেষ যে সংস্করণ আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার যাত্রা শুরু আরবেই। একটা সময় ছিলো যখন আরবরা ছিল সমস্ত বিশ্বের জন্য মডেল। অর্ধপৃথিবীর নেতৃত্বের ভার ছিল তাদের। এসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছিল আরবরা। তাদেরই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফলে তৎকালীন অর্ধপৃথিবী শান্তিপুরীতে রূপান্তরিত হোয়ে গিয়েছিল। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, সামরিক শক্তিতে তারা ছিল একক পরাশক্তি। তাদের মোকাবেলা করাতো পরের কথা তাদের নাম শুনলেই শত্র“র অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠত। হয়তবা ভাবছেন হঠাৎ আরবদের এত প্রশংসা কেন? না, আমি আরবদের প্রশংসা কোরছিনা। আমি প্রশংসা কোরছি প্রকৃত এসলামের অনুসারীদের যারা নিজেরা আরব হবার কারণে কোন গর্ববোধ কোরত না আবার অনারবদের ঘৃণাও কোরত না। যাদের কাছে বংশ, গোত্র, ভাষা, ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে কোন বিভেদ ছিলো না। যাদের কাছে ভালো মন্দের একটাই মাপকাঠি ছিলো আর তা হল কে কত ভালো মোসলেম। কে কত বেশি আল্লাহকে ভয় করে। যেই জাতির নেতারা খুব অনাড়ম্বর জীবন যাপন কোরতেন। যারা অর্ধ পৃথিবী শাসন কোরেছেন খেজুর পাতার চাটাইয়ে বোসে। যাদের মাঝে না ছিলো স্বজনপ্রীতি, না ছিলো ক্ষমতাপ্রীতি। যারা পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় কোরতেন। তারা এতো কিছু কোরতেন কারণ তারা নিজেদের মো’মেন, মোসলেম, উম্মতে মোহাম্মদী দাবি কোরতেন। আর আজকের যে আরবরা নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী দাবী করে তারা কি কোরছেন? আসুন আজকের আরবদের সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানি।
ইউরোপের বিভিন্ন জাতি যখন মরক্কো থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত এই বিরাট মোসলেম দুনিয়াটা সামরিক শক্তিবলে অধিকার কোরে নেয় তখন আরবের বেশ কিছু জায়গা তাদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলো। তবে এর মানে এই নয় যে তারা যুদ্ধ কোরে নিজেদের রক্ষা কোরেছিল, কারণ নিজেদের কৃতকার্যের ফলে একদা অপরাজেয় সেই যোদ্ধা জাতিটি তখন পৃথিবীর দুর্বলতম শত্র“র বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষা করার জন্য অসমর্থ। বোধ হয় আল্লাহ তাঁর ঘর এবং তাঁর হাবিবের রওযা মোবারকের সম্মানে তা নিজে রক্ষা কোরেছিলেন। ফলে ঐ আরব এলাকাটি পাশ্চাত্যের সরাসরি দাসত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তাই পূর্ব থেকেই এসলামী শরীয়াহর যে আইন-কানুন, শাসন ও দণ্ডবিধি চালু ছিলো খ্রিস্টান শক্তিগুলি তা বোদলিয়ে নিজেদের, গায়রুল্লাহর আইন ও দণ্ডবিধি প্রতিষ্ঠা কোরতে পারে নি। তাই ঐ আরব দেশগুলোতে এসলামের জাতীয় শরীয়াহ ও দণ্ডবিধি আংশিকভাবে কার্যকর আছে কিন্তু ঐ পর্যন্তই। দীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি এ সমস্ত ব্যবস্থা অন্যান্য ভাগের মতোই পরিত্যক্ত হোয়েছে এবং প্রাক এসলামীক যুগের মতো রাজতন্ত্র, বংশতন্ত্র, গোষ্ঠিতন্ত্র ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠা করা হোয়েছে। যেহেতু তারা গোষ্ঠিতন্ত্র, বংশতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরেছে সুতরাং স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেখানে অচল হোয়ে পোড়েছে, কারণ ঐসব তন্ত্রে জাতীয় সম্পদের, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মালিক হোল রাজা বাদশাহরা। আর এসলামে সরকারি কোষাগারের মালিক হলো সমস্ত জাতি। খলিফা শুধু রক্ষক, তত্ত্বাবধানকারী ও এই জীবনব্যবস্থার নিয়মানুসারে ব্যবহারকারী। অর্থাৎ , শুধু দন্ডবিধি ছাড়া এই আরবরা অন্যান্য জাতীয় ব্যাপারে গায়রুল্লাহর অনুসারী অর্থাৎ মোশরেক। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই ভাগটি পৃথিবীর যে অংশে বাস কোরতো তা ছিলো অতি গরীব। মাটির নিচ থেকে তেল বের হওয়ার পর থেকে হঠাৎ ধন-দৌলত ও সম্পদে পৃথিবীর অন্যতম ধনী জাতিতে পরিণত হোয়েছে। এখন এদের সম্পদ রাখবার জায়গা নেই। এই সম্পদ তারা কিভাবে ব্যবহার কোরছে? এর একটা অংশ এরা ব্যয় কোরছে পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে দেশের রাস্তাঘাট, পুল, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, বিরাট বিরাট প্রাসাদ, হোটেল, ফ্লাইওয়ে ইত্যাদি তৈরি কোরে। অঢেল টাকা ব্যয় কোরে এগুলো এমনভাবে তৈরি কোরছে যে, ইউরোপের, আমেরিকার মানুষরাও দেখে আশ্চর্য হোচ্ছে, হিংসা কোরছে। অগুনতি রাজকীয় প্রাসাদ, হোটেল, ইমারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শাদ্দাদ আল্লাহর সঙ্গে নাকি পাল্লা দিয়ে জান্নাত বানিয়েছিলো। সে আজ কবর থেকে উঠে এসে এদের শহর, নগর, পথ-ঘাট, হোটেল আর প্রাসাদগুলি দেখলে বোলবে- আমি আর কি বানিয়েছিলাম। সম্পদের অন্যভাগ তারা ব্যয় কোরছে অবিশ্বাস্য বিলাসিতায়, স্থূল জীবন উপভোগে, ইউরোপে, আমেরিকায়, জাপানে। দৈহিক ভোগে এরা কি পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে তা আমাদের মতো গরীব দেশগুলির মোসলেমরা ধারণাও কোরতে পারবে না, লক্ষ লক্ষ ডলার তাদের কাছে কিছু নয়। তাদের ঐ অঢেল সম্পদের একটা মোটা ভাগ চলে যায় ঐ ইউরোপ, আমেরিকায়, জাপান ইত্যাদি দেশের কাছে, বিলাসিতার সামগ্রীর দাম হিসাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাড়িগুলো কেনে এরাই। শুধু তাই নয়, রোলস, মার্সিডিস, আলফা-রোমিও, সিট্রন, ক্যাডিলাক ইত্যাদি গাড়ি শুধু কিনেই তারা খুশী নয়, এই গাড়িগুলির বাম্পার লাইনিং ইত্যাদি তারা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দেয়। এদের বিলাসিতার বীভৎসতার সম্বন্ধে লিখতে গেলে আলাদা বই হোয়ে যাবে। কাজেই একটা ধারণা দেবার জন্য একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ কোরছি। কিছুদিন আগে তেল সমৃদ্ধ একটি দেশের বাদশাহ অবসর যাপনের জন্য কয়েক দিনের জন্য ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় শহর ‘নীসে’ গিয়েছিলেন। এই শহরে তিনি এর আগেই একটি প্রাসাদ তৈরি কোরেছেন। এতে কামরা আছে একশতটি এবং কামরাগুলি ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান আসবাব দিয়ে সজ্জিত। এই প্রাসাদ তৈরি কোরতে খরচ হোয়েছে মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা (আমাদের টাকার হিসাব)। এই বাদশাহর সোনার পাত মোড়ানো রোলস গাড়িগুলির এক একটি দাম এক কোটি বিশ লাখ টাকা। তার নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য যে বিমানগুলি আছে তার এক একটির দাম সাতচল্লিশ কোটি টাকা। এদের মধ্যে তাসাওয়াফের কিছুমাত্র প্রভাবও থাকলে এরা এমন কদর্য বিলাসিতায় নিজেদের ডুবিয়ে দিতে পারতেন না। নিজেদের অতি উৎকৃষ্ট মোসলেম বোলে মনে কোরলেও এবং তা প্রচার কোরলেও আসলে ইউরোপ, আমেরিকার বস্তুতান্ত্রিকদের সাথে তাদের কার্যতঃ কোন তফাৎ নেই। এরা এই উম্মাহর কেন্দ্র কাবা এবং নেতার (দ:) রওযা মোবারকের হেফাযতকারী হোলেও এই উম্মাহর জন্য তাদের মনে কিছুমাত্র সহানুভূতি নেই। তার প্রমাণ হোচ্ছে এই যে, নিজেদের ঘৃণ্য বিলাসিতার সামগ্রী কিনতে তাদের বিপুল সম্পদ চলে যায় ইউরোপ, আমেরিকা আর জাপানে। তারপরও যে বিরাট সম্পদ তাদের থেকে যায় তা বিনিয়োগ করেন সেই ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত আর জাপানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে, শিল্পে। টাকা জমা রাখেন ঐসব দেশের ব্যাংকেই যা থেকে লাভবান হয় ঐসব অমোসলেম দেশ ও জাতিগুলিই। এসলাম ও মোসলেম জাতির প্রতি তাদের কিছুমাত্র ভালোবাসা যদি থাকতো তবে ঐ বিরাট সম্পদ তারা অমোসলেম দেশগুলিতে বিনিয়োগ না কোরে গরীব মোসলেম ভৌগোলিক রাষ্ট্রগুলিতে বিনিয়োগ কোরতেন। এতে অন্ততঃ পার্থিব দিক দিয়ে এই হতভাগা জাতির কিছু অংশ উপকৃত হোতে পারতো। অন্যান্য অতি দরিদ্র মোসলেম দেশগুলির জন্য তারা কিছু কিছু মাঝে মাঝে খয়রাত করেন যখন কোন দেশে বন্যা, ঝড় বা প্লাবনের মতো প্রাকৃতিক কারণে মহাক্ষতি হয়। এইসব দেশগুলির মানুষকে তারা ডাকেন মিসকীন বোলে। যে ঐক্য ছাড়া শক্তি নেই, জাতির সেই ঐক্য সুদৃঢ় রাখার জন্য রসুলাল্লাহ (দ:) তাঁর জীবনের শেষ জনসমাবেশে বিদায় হজ্বে¡ বোলে গেলেন আরবের মানুষের উপর অনারব মানুষের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই যেমন নেই অ-আরব মানুষের উপর আরবের মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, অর্থাৎ সবাই সমান। মানুষে মানুষে প্রভেদের একটিমাত্র সংজ্ঞা দিয়ে গেলেন, কে কত ভাল মোসলেম। ঐ ‘উৎকৃষ্ট মোসলেমদের’ আজ মহানবীর (দ:) ওসব কথা কিছুই মনে নেই। থাকলেও ওসব কথার কোন গুরূত্ব তারা দেয়না। তারা আরব, সবার শ্রেষ্ঠ এই অহংকারে স্ফীত হোয়ে অন্যকে অনুকম্পার পাত্র মনে কোরছে। অবশ্য এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিকে এড়াতে পারছেনা। এসলাম দীনে ফিতরাত, প্রাকৃতিক আইন, নিয়মের ধর্ম, সেই নিয়ম মোতাবেকই বিপুল সম্পদ ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে বলীয়ান ত্রিশ কোটি আরবের পেটের হালুয়া বের হোয়ে যাচ্ছে এক কোটি ক্ষুদ্র ইসরাইলীদের লাথি খেতে খেতে। তবুও তারা অহংকারী, কারণ বাকি অনারব মোসলেমদের মতো তাদেরও অপমানবোধ লোপ পেয়েছে।
এই আরব দেশ ও আমীরাতগুলির বাদশাহ ও আমীরদের এলাহ হলো তাদের যার যার সিংহাসন ও আমীরত্ব। এই সিংহাসন ও আমীরত্বের নিরাপত্তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের ও ইউরোপের কথায় ও আদেশে উঠেন বসেন, অন্য মোসলেম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন। মুখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লোক দেখানো চিৎকার কোরলেও কার্য্যতঃ ইসরাইলের ক্ষতি হবে এমন কোন কাজ করেন না, ঐক্যবদ্ধ হোয়ে ইসরাইলকে ধ্বংস করেন না, কারণ তা করতে গেলে প্রভু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিরক্ত হবে এবং তাতে তাদের সিংহাসন ও আমীরত্ব হারাতে হোতে পারে। যদি এমন কোন পরিস্থি’তি কখনও হয় যে তাদের সিংহাসন বা আমীরত্ব এবং কাবা ধ্বংস করা এ দু’টোর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে, তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তারা কাবা ধ্বংসকেই বেছে নেবেন।
আশা করি এই আরবদের দামি জোব্বার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা পুরোপুরি না হোলেও কিছুটা আপনাদের সামনে প্রকাশ কোরতে সক্ষম হোয়েছি। এগুলো হল আরবদের অতীত কার্যকলাপ। হয়তবা এই কথাগুলো শুনে তাদের প্রতি আপনাদের মনে ঘৃণা জন্মাতে শুরু কোরেছে, কিন্তু এটা তাদের কাছে তেমন কোন বিষয় নয়। যারা আল্লাহর ঘর কাবাকে তত্ত্বাবধান করে, রসূুুুলের রওযা মোবারককে তত্ত্বাবধান করে সেই তারা যদি আল্লাহর পাঠানো সামষ্টিক জীবনব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ইহুদি খ্রিস্টানদের অনুসরণ কোরতে পারে তাহলে এই সামান্য বিলাসিতা ,অহংকার এতো অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাম্প্রতিক মিশর এবং সিরিয়াতে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ কোরছে তার জন্য এককভাবে দায়ী এই সিংহাসনলোভী মোনাফেকরা। তাদের সামান্য স্বার্থের বেদীতে বলী হোচ্ছে হাজার হাজার মিসরীয়, সিরিয়ান মোসলেমরা। এরা নিজের জাতির লোককে মারার জন্য বিজাতিদের হাতে হাত মিলিয়েছি। এই মোসলেম নামধারী বিশ্বাসঘাতক মোনাফেকরা ইহুদি খ্রিস্টানদের চাপ দিচ্ছে তাদের পার্শ্ববতী রাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলা চালাতে। শুধু তাই নয় , এই হামলায় যে পরিমাণ অস্ত্র এবং অর্থ প্রয়োজন তাও দেবে এই মোনাফেকরা। কারণ সোজা, তাদের সিংহাসন পাকাপোক্ত কোরতে হবে। এতে যদি হাজারটা সিরিয়াতে হামলা চালাতে হয়, লক্ষ লক্ষ মোসলেমকে হত্যা কোরতে হয় তা তারা নির্দ্বিধায় কোরতে প্রস্তুত, কিন্তু সিংহাসন থেকে একচুলও নোড়তে রাজি নন। কারণ এর আগেই বোলে এসেছি তাদের এলাহ হোল যার যার সিংহাসন। আমরা ফেরাউনকে দেখিনি, নমরুদকে দেখিনি, আবু জাহেল-আবু লাহাবকেও দেখি নি তবে তাদের উত্তরসূরীদের দেখছি। আল্লাহ এই নব্য ফেরাউনদের কবল থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।

No comments:

Post a Comment