Wednesday, January 6, 2016

জঙ্গিবাদী ইসলামটি আত্মাহীন ও জবরদস্তিমূলক

জঙ্গিবাদী ইসলামটি আত্মাহীন ও জবরদস্তিমূলক


যে রাষ্ট্রগুলোতে কথিত ইসলামী ভাবধারার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে সেগুলোতে কেউ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। সুদানের মেয়ে মরিয়মের কথা হয়তো এখনো অনেকেরই মনে আছে। তার বাবা মুসলিম এবং মা খ্রিষ্টান। মরিয়ম নিজেও তার মায়ের ধর্মেই বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ২০১১ সনে একজন আমেরিকান খ্রিষ্টান ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। এটা যখন সুদান সরকার জানতে পারে তখনই মরিয়মকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কারণ শরিয়া আইনের দৃষ্টিতে মরিয়ম পিতার ধর্ম স্বীকার করে মুসলিম হতে বাধ্য আর মুসলিম মেয়ে খ্রিষ্টান ছেলেকে বিয়ে করতে পারে না। কারাগারেই জন্ম নেয় তার একটি সন্তান। ধর্ম ত্যাগ করার অপরাধে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে পাশাপাশি খ্রিষ্টানকে বিয়ে করায় ব্যভিচারের দণ্ড হিসাবে ১১০টি দোররা মারার হুকুম প্রদান করে। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে নি সুদান সরকার কারণ মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর নজিরবিহীন চাপের মুখে মুত্যুদণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে খালাস দিতে বাধ্য হয় সরকার (বিবিসি, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। এটা হচ্ছে অনুরূপ অসংখ্য ঘটনার মাঝে একটি ঘটনা যা আমরা জানতে পারছি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হওয়ায় বদৌলতে। কিন্তু আশির দশক থেকেই সুদানে চলছে এহেন শরিয়াহ শাসন।
প্রশ্ন হচ্ছে এইটা কি আল্লাহ-রসুলের ইসলাম হলো? না। তা কখনোই হতে পারে না। প্রকৃত ইসলাম মানুষকে তার ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের ব্যাপারে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল। যারা ইসলাম ত্যাগের পর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রবল শত্র“তায় লিপ্ত হয়েছে তাদেরকে রসুলাল্লাহ রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করেছেন। কিন্তু মরিয়ম তো এমন কিছু করে নি। তাহলে মানুষের ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতা কোথায় গেল? এটা যদি জবরদস্তি না হয় তাহলে জবরদস্তি কাকে বলে? সুদানের মতো মোটামুটি মধ্যপন্থী দেশেও যদি ধর্মীয় স্বাধীনতার এই অবস্থা হয় তাহলে আই.এস. বা তালেবানের মোল্লাতান্ত্রিক শাসনে মানুষকে কেমন অবরুদ্ধ করা হয় তা সহজেই অনুমেয়। তারাও আদতে সেই ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদীদের মতোই ওপর থেকে একটি জীবনব্যবস্থা বলপূর্বক একটি জনগোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যা গ্রহণ করতে পৃথিবীর মানুষ এমন কি মুসলিমরাও প্রস্তুত নয়।
তালেবান শাসনে প্রাচীন আমলের বৌদ্ধমূর্তিগুলো ধ্বংসের ঘটনা তাদের অন্ধত্বের প্রমাণ। কেননা আফগানিস্তানের বামিয়ান এলাকা ইসলামের আওতায় প্রথম এসেছিল খলিফা ওমরের (রা.) যুগে। তখন রসুলাল্লাহর সাহাবীরা এই মূর্তিগুলোকে ইসলামের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করলে ভেঙ্গে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেন নি। আমর ইবনুল আস (রা.) আলেকজান্ড্রিয়াতে কপটিক খ্রিষ্টানদের আরাধনার জন্য যিশুর (আ.) মূর্তি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। তবে কি তালেবানরা রসুলের আসহাবদের থেকেও বেশি ইসলাম জানেন? না, সেটা সম্ভব নয়। যে জীবনব্যবস্থা তা ধর্মভিত্তিকই হোক বা ধর্মনিরপেক্ষই হোক, মানুষের মন-মানসিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যশীল ও প্রতিকূল হলে, তা যুগের তৃষ্ণা মেটাতে না পারলে, তা যুগের চাহিদা বলে পরিগণিত না হলে সেটা প্রতিষ্ঠিত হলেও শান্তিময় হবে না, টেকসই হবে না। (লেখক: সদস্য, হেযবুত তওহীদ)

No comments:

Post a Comment