Friday, October 16, 2015

জাহান্নামে শাস্তিভোগের পরে জান্নাতে যাওয়া যাবে- এই ধারণা কি ঠিক???

জাহান্নামে শাস্তিভোগের পরে জান্নাতে যাওয়া যাবে- এই ধারণা কি ঠিক?



আমাদের অনেকেরই বিশ্বাস যে, দুনিয়ায় ভাল কাজ, সওয়াবের বা খারাপ কাজের মাধ্যমে মানুষের জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। যে বেশি আমল করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যার পাল্লা খারাপের দিকে ঝুলে যাবে সে জাহান্নামে প্রেরিত হবে। কিন্তু আসলে কী তাই? না, মানুষের স্থান জান্নাতে না জাহান্নামে হবে তা নির্ভর করে ঈমান, কলেমা অর্থাত তওহীদের উপর। কেউ যদি তওহীদে থাকে তাহলে সে পাশ নাম্বার পেল। পাশ নাম্বার পাওয়ার মানেই সে জান্নাতের টিকিট পেয়ে গেলো। আর যদি সে তওহীদে না থাকে তাহলে তার সমস্ত ভাল কাজসহ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।  এবার জান্নাতী ব্যক্তির আমল যদি বেশি হয় তাহলে সে পাবে উচু স্তরের জান্নাত। আর আমল কম হলে তার স্থান হবে নিচু স্তরের জান্নাত। অপর দিকে সেই যদি কলেমায়, ঈমানে না থাকে তাহলে তার ভালকাজ খারাপ কাজের পরিমাপ করে সেই মানের জাহান্নাম দেওয়া হবে।  কিন্তু অনেকেরই বিশ্বাস যে, ঈমানদারদেরকে মন্দ কাজের পর  'কি পরিমান গুনাহ করেছেন, সেই অনুপাতে দোজখের শাস্তি দিয়ে,
'আজদাহার কামড় আর দোজখের আগুন দহনের পরে বেহেশতে পাঠানো হবে, অন্তত একটা ফোকলা হুরিও হল্পেও দেওয়া হবে।'
  কিন্তু  ঈমানদার ব্যক্তি জাহান্নামের স্বাদ ভোগ করবে তেমন কোন উল্লেখ কোরান হাদিসে পাওয়া যায় কি? কোথাও কি দেখানো যাবে যে আল্লাহ মোমেনদেরকে শাস্তি দিবেন এই কথা বলা আছে?
তাহলে আমাদের আলেম সমাজ এমন কথা কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন?
  কোরান ও হাদিসে একথা বহুবার আছে যেখানে দেখানো যাবে যে আল্লাহ মোমেনদের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
হাশরের ময়দানে প্রথমত একটি আদেশের মাধ্যমেই সমস্ত মানুষ দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে (সূরা ইয়াসীন ৫৯)। একদিকে জান্নাতী আর অন্যদিকে জাহান্নামী। তাহলে প্রশ্ন আসে মীযান কী, বিচার দিবস কিসের? মিযান হচ্ছে ঐ বিষয় যা দিয়ে পরিমাপ করা হবে আপনি সওয়াব করলে কতটুকু করেছেন অথবা পাপ করলে তাও কতুটুকু করেছেন। আপনি জান্নাতী হলে কোন স্তরের, কোন মানের জান্নাতে যাবেন তা এবং যারা জাহান্নামী হবে তাদেরও কোন মানের জাহান্নাম হবে তা নির্ধারণ করা হবে। এই জন্যই জান্নাত এবং জাহান্নামের এত স্তর এবং এই স্তরেও আরো বহু উপস্তর রয়েছে। এখানে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, মোমেনগণ কী গোনাহ করতে পারেন? হ্যা, অবশ্যই। মোমেনরা অবশ্যই গোনাহ করতে পারেন। মোমেনদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার আশ্বাস। আল্লাহ মোমেনদের গোনাহকে মাফ করে দিয়ে পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে সেটা কোন গোনাহ? অবশ্যই সেটা শিরক ব্যতীত গোনাহ। কারণ কেউ যদি শিরক করে তাহলে সে মোশরেক হয়ে যায়। আর আল্লাহ কখনোই তার সাথে শরিক করার গোনাহকে ক্ষমা করবেন না (সুরা নেসা: ৪৮)।
  এখন প্রশ্ন সে কোন তওহীদ, কোন ঈমান যা থাকলে মানুষের জন্য জান্নাত নির্ধারিত? আল্লাহর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস? যদি আল্লাহ আছেন, তিনি একজন এই বিশ্বাসই ঈমান হয় তাহলে শুধু মুসলমানরাই নয়, একমাত্র নাস্তিকরা ছাড়া সবাই জান্নাতে যাবে। কিন্তু না, তা নয়। জান্নাতে যাবে তারাই যারা আল্লাহর প্রকৃত কলেমায় বিশ্বাস করে। আল্লাহ আছেন এই বিশ্বাস প্রায় সবাই করে, আরবের মোশরেক আবু জাহেল, আবু লাহাবসহ সবাই বিশ্বাস করতো। তারা আমার আপনার চেয়ে অনেক অনেক ভাল কাজও করতো। তারা আমাদের মতই বেসমেকা আল্লাহুম্মা বলে কাজ শুরু করতো, আমরা যেমন করি। তারাও হজ্ব করতো, খাতনা করাতো। হয়তো এবাদতের পদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য ছিল (তারা উলংগ হয়ে হজ্ব করতো)। শেষ রসুল আসার আগে যারা নবী-রসুল হিসেবে এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকের এবাদত পদ্ধতিতেই ভিন্নতা ছিল। এটাই স্বাভাবিক। ততকালীন আরবের লোকজন কেন জাহান্নামী হয়েছে? তারা মুর্তিপূজা করতো বলে? হ্যা, তারা মুর্তিপূজা করতো। তবে তাও কিন্তু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই। তারা ঐ মূর্তিসমূহকে স্রষ্টা হিসেবে মানত না।  তারা  ঐসব মূর্তিকে পূজা করতো  যেন তারা  আল্লাহর কাছে তাদের হয়ে শুপারিশ করে (ইউনুস-১৮, যুমার-৩)। তবে তাদের সবচাইতে বড় অপরাধ হচ্ছে তারা শেষ রসুলের আহ্বানে তওহীদকে, আল্লাহর সার্বভেৌমত্বকে মেনে নেয়নি। অথচ আমরা কিন্তু সবাই সেই তওহীদ অর্থাত কলেমাকে মেনে নিয়েছি। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে জান্নাতি! কিন্তু না। আমরা সে তওহীদকে প্রকৃত অর্থে মেনে নেইনি। এইভাবে মেনে নিলেই যদি জান্নাতে যাওয়া যেত তাহলে সম্ভবত আবু জাহেলরা তওহীদের বিরোধিতা করতো না, রসুলের আনা দীনের বিরোধিতাও করতো না। তাদের সাথে সংঘাত বেধেছিলো এইখানেই যে, তারা আল্লাহর হুকুমকে, সার্বভৌমত্বকে নিরংকুশভাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল।
বাস্তবতায় আমরা কি করছি? একদিকে মুখে স্বীকার করছি যে আমরা ঈমান রাখি। ব্যক্তিগত জীবনে নামায, রোযা করছি। কিন্তু সমষ্টিগত জীবনে সবকিছুকেই অস্বীকার করে সেখানে মানছি মানব রচিত হুকুম। আমরা তাদের চাইতেও একধাপ নিচে কি না তাই ভেবে দরকার। কারণ, আমরা মোনাফেকি করছি। মুখে বলছি আমরা লা এলাহ ইল্লাল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা অস্বীকার করছি। তাহলে হাশরে যখন দুইভাগে ভাগ হয়ে যাব তখন আমরা কোনভাগে পড়বো? অবশ্যই জাহান্নামীদের ভাগে। বরং সেই ভাগের সর্বনিম্ন কাতারে। কারণ আমরা মোনাফেকি করছি। যারা মনে করছেন শাস্তি ভোগ করার পর আবার অন্তত বুড়ো ফোকলা হুর পাব তাদের আশার গুড়ে বালি। যারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে  (আবাদান খালে দিনা ফি হা), তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।।  যারা জান্নাতী হবে তারাও সেখানে চিরস্থায়ী হবে। তাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শও করবে না।

No comments:

Post a Comment