Thursday, October 8, 2015

কম্যুনিস্টদের উদ্দেশ্যে দু’টি কথা : ধর্মব্যবসায়ীদের কূপমণ্ডূকতায় ব্যর্থ হল কমরেড লেনিনের পরিকল্পনা


কম্যুনিস্টদের উদ্দেশ্যে দু’টি কথা : ধর্মব্যবসায়ীদের কূপমণ্ডূকতায় ব্যর্থ হল কমরেড লেনিনের পরিকল্পনা

সারা দুনিয়ায় কিছুদিন আগে বাম আদর্শের জয়জয়কার ছিলো, এখনও বিশ্বের অনেক স্থানে বামপন্থীদের নাম সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। পুরো রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, ভারত উপমহাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল, শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে একটি বৃহৎ অংশ বাম ঘরানার। কারও অজানা নয় যে, গণতন্ত্রের পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শ্রেণিহীন মানুষদেরকে চরম দুর্গতি থেকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছিল। তদানীন্তন গণতন্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণিহীন মানুষের দুর্গতির কথা পড়লে চোখের পানি ধোরে রাখতে কষ্ট হয়। এই অবস্থার কারণে ইউরোপের জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবীরা উদ্বিগ্ন হোয়ে পড়লেন যে, কী কোরে এই মানুষগুলোকে মুক্তি দেয়া যায়? সেই জ্ঞানী-গুণী, মুক্তচিন্তার মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলেন কার্ল মার্কস, লেনিন এরা। তারা চেষ্টা কোরলেন মানুষকে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তি দেবার জন্য। কার্ল মার্কস আবিষ্কার করলেন সমাজতন্ত্র। কিন্তু সমাজতন্ত্র হলো মানবজীবনের মাত্র একটি দিক অর্থাৎ অর্থনৈতিক অঙ্গনের সমাধান। কিন্তু মানুষের জীবন কি শুধু অর্থনৈতিক সমস্যাতেই পূর্ণ? নিশ্চয় নয়, অনেক কিছু নিয়েই মানুষ। মার্কসের সমাধান হলো মানুষের জীবনের শুধু একটি অঙ্গনের ভারসাম্যহীন সমাধান, যা আজ কার্যত অচল। এটা প্রয়োগের ফলে আবারও প্রমাণিত হোয়েছে যে, মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত বিধান কখনও মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, তাই সমাজতন্ত্রও মানুষকে শান্তি দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হোল। ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের পাশবিক নিপীড়নের পর বিংশ শতকের গোড়ার দিকে মানবজাতির সামনে আশার বাতি নিয়ে হাজির হয়েছিল যে সমাজতন্ত্র কালের বিবর্তনে এখন তার অসারতা সূর্যের আলোর মতো দীপ্তমান। সমাজতন্ত্র যে স্বপ্ন দেখিয়েছে সেটা বাস্তবতার ঠিক উল্টো। কম্যুনিস্টদের এই নিদারুণ ব্যর্থতার কারণ মানুষের আত্মার চাহিদা পূরণে অকৃতকার্য হওয়া। এ বিষয়টি উপলব্ধি কোরেছিলেন কার্ল মার্কসের তত্ত্বের বাস্তব রূপকার ভ.ই.লেনিন; কিন্তু এর কোন সমাধান কোরে যেতে পারেন নি দু’টি কারণে। প্রথমত ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র, এবং দ্বিতীয়ত বিকৃত এসলামের ধারক-বাহক কূপমণ্ডূক মোল্লাদের এসলাম-পরিপন্থী ফতোয়াবাজি।
সমাজতন্ত্রীরা নিজেদেরকে প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার ধ্বজাধারী মনে করেন এবং পক্ষান্তরে এসলামসহ সকল ধর্মমতকে একচেটিয়াভাবে অবজ্ঞা ও ঘৃণা করেন, সকল ধর্মকে স্থবির, কল্পকাহিনী, জড়তা, কূপমণ্ডূকতা বোলে গালিগালাজ করেন, বিশেষ কোরে মোসলেমদেরকে পশ্চাদপদ, গোঁড়া, মধ্যযুগীয়, অন্ধ বলেন। এটা বলেন কেন? এটা বলার কারণ, আপনারা মসজিদে, মাদ্রাসা, খানকার চার দেয়ালের ভেতরে দাড়িওয়ালা-টুপিওয়ালা, লম্বা পাগড়ীওয়ালা লেবাসধারী মওলানা ও পীর সাহেবদেরকে দেখে মনে করেন এটাই বুঝি এসলাম। কিন্তু না, এটা প্রকৃত এসলাম নয়। গত ১৩০০ বছরে বিকৃত হতে হতে বর্তমানে প্রচলিত এসলাম প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রূপ ধারণ করেছে। ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্র কোরে তাদের সকল উপনিবেশগুলিতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে একেবারে চূড়ান্ত একটা বিকৃত এসলাম শিক্ষা দিয়ে মোসলেম জাতিকে একেবারে বিপরীত দিকে পরিচালিত কোরেছে। এই এসলাম যে কতটা বিকৃত তার একটি প্রমাণ লেনিনের জীবন থেকে দেওয়া যায়। ঘটনাটি আমরা উদ্ধৃত কোরছি মাওলানা শামস নাবীদ উসমানী রচিত Now of Never গ্রন্থ থেকে যা অনুবাদ কোরেছেন স.স.আলম শাহ। অনুবাদ পুস্তক ‘বেদ-কুর’আন ও স্বজাতির বিভেদ’। আরও দেখুন উর্দু পত্রিকা ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ এর ২৮তম সংখ্যা, ১৯৮২, সূত্রঃ জগদগুরু মুহাম্মদ (সাঃ), রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা-২০৯-২১০। ঘটনাটি হোল:
রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিপ্লবের মহানায়ক কমরেড লেলিন বিশ্বধর্মের পর্যালোচনা করার পর এসলামে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তিনি রুশীয় জনগণের এসলাম গ্রহণের আশা পোষণ কোরতেন। কথিত আছে যে, জনৈক বাকরা খাঁন নামক বুযুর্গের সংস্পর্শে আসার পর তিনি এসলামের প্রতি অনুরক্ত হন। তার দ্বারা লেলিন যথেষ্ট প্রভাবিত হন। যাই হোক, লেনিন সচেষ্ট হোয়েছিলেন, কিন্তু মিশরীয় উলামাদের অজ্ঞতা ও অদূরদর্শিতা এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের ষড়যন্ত্রের ফলে এই সুযোগ হাতছাড়া হয়।
রাশিয়ার জার-তন্ত্রের পতনের পর লেনিন হন সর্বময়কর্তা। তিনি কমিউনিস্ট প্রশাসন স্থাপন করেন। একদিন তিনি নিকটতম বন্ধুবর্গের বৈঠক ডাকেন। তাতে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনে সফল হোয়েছি কিন্তু একে সুদৃঢ়, সুবিন্যাস্ত, শাশ্বত ও সার্বজনীন কোরে তোলার জন্য আমাদেরকে এমন এক জীবন ব্যবস্থা দিতে হবে যা হবে মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানুষের শুধুমাত্র অন্নবস্ত্র-ই যথেষ্ট নয়। আত্মার খোরাকও প্রয়োজন। ক্ষুধার্ত মানুষকে রুটি দিয়ে শান্ত রাখা যায় একটা পর্যায় পর্যন্ত। এ পর্যায় অতিক্রান্ত হোলে মানবাত্মা তৃষ্ণার্ত হোয়ে উঠে। এ তৃষ্ণা নিবারণের কোন উপকরণ-ই আমাদের কাছে নেই। আছে ধর্মাচারের মধ্যে। আমি পৃথিবীর সব ধর্ম-ই গভীরভাবে অধ্যয়ন কোরেছি , সবখানে পেয়েছি আফিমের আবেশ। শুধুমাত্র একটি ধর্মকেই পেয়েছি প্রাণবন্ত জীবন ব্যবস্থা হিসেবে। এক অনিরুদ্ধ গতিময়তা এর মধ্যে বিদ্যমান। এটাই আমাদের প্রগতিশীল জীবন ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সহায়ক বোলে আমার কাছে প্রতীয়মাণ হোয়েছে। এখন সে ধর্মের নাম আমি শুধু বলব। এ ব্যাপারে মত প্রতিষ্ঠায় আপনারা তাড়াহুড়ো কোরবেন না। কেননা প্রশ্নটি কমিউনিজমের জীবন মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত (Don’t hasten to form your  own conclusions because this question pertains to the life and death of Communism.) আপনারা সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তা কোরুন। হতে পারে আমার ধারণা ভুল, কিন্তু আমাদের আত্মপ্রশান্তির জন্য ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কোরতে হবে। আমি মনে করি যে, এসলামই একমাত্র ধর্ম যার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমাজতন্ত্রের নিকটতম
(Islam is the only religion closer to the economic programmes of Communism.)”
এ কথা শুনে সমবেত লোকদের মধ্যে হইচই শুরু হোয়ে যায়। তখন লেনিন তাদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কোরতে নির্দেশ দিয়ে বলেন- আজ থেকে পুরো এক বছর পরে পুনরায় আমরা একত্রিত হব। আর তখনই আমরা ঠিক কোরব কমিউনিস্টদের ধর্মাশ্রয়ী হওয়া উচিৎ হবে কি না, যদি গ্রহণ কোরতেই হয় তাহলে সে ধর্ম কোনটি?”
ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর এ সংবাদ অবহিত হোয়ে এটাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের অশনিসংকেত মনে কোরল। তারা ভাবলো, যদি উদীয়মান শক্তি কমিউনিস্ট রাশিয়া এবং বিপন্ন বিপর্যস্ত আধমরা লড়াকু মোসলেম জনগোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হোয়ে যায় , তাহলে ওপনিবেশিক ব্রিটিশদের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবে। সুতরাং ব্রিটিশ কূটনৈতিকরা তৎপর হোয়ে উঠল বিশ্বব্যাপী। মোসলেম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হল এমন এক সংবেদনশীল প্রশ্ন যে কমিউনিজম হলো আল্লাহবিরোধী মতবাদ। এসলামের জন্য আল্লাহদ্রোহী এই মার্কসীয় মতবাদ কি গ্রহণীয় হোতে পারে? ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে মোসলেম বিশ্বের আলেম ওলামার নিকট থেকে ফতোয়া নেয়া হল। একইভাবে এ প্রশ্নে তৎকালিন মোসলেম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ আলেমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল। আলেমগণ এ সংক্রান্ত প্রশ্নের পটভূমি ও এর অর্ন্তনিহিত উদ্দেশ্য অবগত ছিলেন না। ফলে আল-আযহারের ওলামাগণ এরূপ নেতিবাচক বিধান প্রকাশ কোরলেন যা ব্রিটিশ প্রশাসন একান্তভাবে চাইছিল। অতঃপর যা হবার তাই হলো। ব্রিটিশ সরকার এ ফতোয়া ছাপিয়ে সারা বিশ্বে বিলি কোরল। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার মোসলেম অধ্যুষিত অনেক এলাকায় মোসলেমদের অনেকের কাছে এ ফতোয়ার কপি রয়েছে। এ সংবাদ লেনিনও অবগত হলেন। এতে বিস্ময় প্রকাশ কোরে তিনি বলেন- ‘আমার ধারণা ছিল মোসলেমরা কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। কিন্তু বাস্তবে তারা প্রমাণ কোরল, অন্য আর সব ধর্মাবলম্বীদের মত মোসলেমরাও গোঁড়া, তত্ত্বসর্বস্ব ও সংকীর্ণ।’ ফলশ্র“তিতে পরিকল্পনা অপূর্ণ থেকে গেল আর লেনিন বিরোধীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সেদিন লেলিনের এই প্রস্তাব আলেমরা নিতে পারেন নি। কারণ, তখন মদীনা, কায়রো, লাহোর, দিল্লী, কোলকাতা ইত্যাদি জায়গায় যে ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় ব্রিটিশ পণ্ডিতদের তৈরি করা সিলেবাস মোতাবেক যে এসলাম শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছিল (এবং এখনও হোচ্ছে) সেটি আদৌ আল্লাহ-রসুলের এসলাম নয়। সেই ফতোয়া দানকারী ধর্মব্যবসায়ীরা ছিল কূপমণ্ডূক মোল্লা যারা প্রকৃত এসলামের সাথে সম্পর্কহীন। স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান কোরে তারা ব্রিটিশ বেনিয়াদের তৈরি মতবাদ ও সার্বভৌমত্ব তারা মেনে নিয়েছে। আজও পৃথিবীময় ধর্মব্যবসায়ীদের পণ্যরূপী সেই অন্তঃসারশূন্য, স্থবির এসলামকেই আপনারা দেখছেন এবং অনর্থক আল্লাহ-রসুলের প্রতি বিদ্বেষ লালন ও বিস্তার কোরে যাচ্ছেন।
সেদিন মুক্ত চিন্তার ধারক কমরেড লেনিনের পুরো রাশিয়ার জনগোষ্ঠীর জাতীয় জীবনে এসলামকে সহায়ক ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণকে যে ধর্মব্যবসায়ীরা নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যান কোরেছিলেন তাদের মনোভাব ছিলো অনেকটা এমন- ঐ ব্যাটা তো নাস্তিক, কাফের। ওকে এসলাম ধর্মের বিধান ব্যবহার কোরতে দিলে তো এসলামের জাত যাবে। আজও একই ধারণা ধর্মজীবীরা পোষণ করেন। তাদের জানা দরকার আল্লাহর রসুলের সময় রসুল যখন প্রকৃত এসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান কোরেছিলেন তখন তাঁর আহ্বানে ইহুদি, খ্রিস্টান, নাস্তিক, মূর্তিপূজক, অগ্নিপূজক সব জাতির মানুষ এসলামের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হোয়েছিল। এমন কি রসুলাল্লাহ খ্রিস্টান শাসক নাজ্জাশির মৃত্যুর পর সাহাবীদেরকে বোলেছিলেন যে, তোমাদের একজন ভাই মৃত্যুবরণ কোরেছেন। রসুলাল্লাহ নিজে তার জানাজার সালাহ কায়েম কোরিয়েছিলেন। কারণ নাজ্জাশি রসুলাল্লাহর আসহাবদেরকে অকপটে সহযোগিতা কোরেছিলেন। আমরা বিশ্বাস কোরি, যদি মাননীয় এমামুয্যামানের সঙ্গে কমরেড লেনিনের সাক্ষাৎ হোত, আমাদের বিশ্বাস রাশিয়াতে কম্যুনিজমের যাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হওয়ার যে দুর্বিসহ অবস্থা সৃষ্টি হোয়েছিল, সেটা হওয়া সম্ভব হোত না। রাশিয়ার ইতিহাস হোত অন্য।
১৯৯০-তে সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হোয়ে যাওয়ায় মার্কসবাদীদের তীর্থভূমি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায়, তারপরই সারা দুনিয়ায় সমাজতন্ত্র নিক্ষিপ্ত হয় আস্তাকুঁড়ে। সে সময়ের গোঁড়া সমাজতান্ত্রিকরা আজও দুর্বল কণ্ঠে সমাজতন্ত্রের জয়গান করেন কিন্তু বাস্তবে তারা সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা মার্কস লেলিনের আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছেন এবং বর্তমানে তারা চরম পূঁজিবাদী গণতন্ত্রের অনুসারী। আপনারা পুঁজিপতিদের অধীনে মন্ত্রিত্ব কোরছেন, রাজনীতি কোরছেন, শ্রেণিহীন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা বাদ দিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা কোরছেন আর সকল ধর্মের পুরোহিতরা যেমন ধর্মকে বিক্রী কোরে জীবিকা নির্বাহ করেন আপনারাও মার্কস, লেনিন, এঙ্গেলসকে বিক্রী কোরছেন। আপনারা খামোখা মানুষদেরকে সাম্যবাদের কথা বোলে প্রতারণা কোরে যাচ্ছেন। আপনারা জানেন যে, আপনাদের সিস্টেম ব্যর্থ ও অচল। এখন গণতন্ত্রের দিন এসেছে, তাই সেদিকেই এখন ছাতা ধোরে আছেন। এই কথিত পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের অধীনে থাকলে আপনাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত জীবন ঋষ্টপুষ্ট হোচ্ছে।
আপনারা যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন আপনাদের প্রতি আমাদের শেষ কথা হোল, যদি আপনারা সত্যিই মানুষের কল্যাণ চান, তবে আপনাদের উচিত প্রকৃত এসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা যেটা প্রচণ্ড, দুর্দান্ত গতিশীল এক জীবনব্যবস্থা। সেটা মোল্লাদের কাছে নেই, সেটা আছে আমাদের কাছে। সেটা প্রতিষ্ঠিত হোলে পৃথিবীতে থাকবে না কোন ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ, থাকবে না ধর্ম-বর্ণের কোন ভেদাভেদ, শ্রেণীবৈষম্য, পুরো মানবজাতি হবে এক জাতি। মানব সমাজে এমন অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে যে, প্রত্যেকের নিজের মেধা ও পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থের উপর যেমন পূর্ণ অধিকার থাকবে, অপরপক্ষে সমাজের প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে যাবে, মানুষ তো দূরের কথা একটি কুকুরও বুভুক্ষ থাকবে না। ধনীর সম্পদে দরিদ্রের ন্যায্য অংশীদারত্ব থাকবে। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার হাতে মজুরি অর্পিত হবে। মালিক ও শ্রমিক এক টেবিলে বসে খাওয়ার পারিপার্শ্বিকতা সৃষ্টি হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার জন্য লাইসেন্স লাগবে না, মিথ্যা না বোলে যত খুশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা যাবে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের আঞ্চলিক সংস্কৃতি অপরিবর্তিত থাকবে, সঙ্গীত, নাট্য, চিত্রকলায় কোনরূপ বাধা আরোপ করা হবে না, কেবল মাত্র যা কিছু মানুষের ক্ষতির কারণ হয় সেগুলি বর্জনীয় বোলে বিবেচিত হবে। আমরা বোলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হোয়ে যান, মো’মেন হোয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হোয়ে যান। আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে কে আনবে না সেটা তারা আল্লাহর সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ আল্লাহর শেষ রসুলের আনীত আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মত বিশাল, দুর্দান্ত গতিশীল এসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে মানবজাতিকে শান্তিময়, নিরাপদ, ন্যায় ও সুবিচারে পূর্ণ একটি জীবন উপহার দেওয়া। দল, মত, পথ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, আস্তিক, নাস্তিক নির্বিশেষে সকল মনুষ্য সন্তানের প্রতি আমাদের একটিই প্রশ্ন, আপনি মানবজাতির সার্বিক জীবনে সুখ, শান্তি, উন্নতি, প্রগতি ও ন্যায় চান কি না। যদি চান, তাহোলে একটিই পথ- সেই অপার শান্তিময় জীবনব্যবস্থার রূপরেখা আল্লাহ যামানার এমামকে দান কোরেছেন। আমরা তাঁর পক্ষ থেকে সেটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা কোরছি। তাই অন্য কারও কথায় প্রভাবিত না হোয়ে জানুন আমরা কী বোলি।

No comments:

Post a Comment