Friday, June 26, 2015

না জেনে একজন মহান ব্যক্তির সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা উচিৎ নয়

না জেনে একজন মহান ব্যক্তির সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা উচিৎ নয়

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী এসলামের যে প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন, শত শত বছর মিথ্যার চাদরে আবৃত যে সত্য তিনি উদ্ভাসন করেছেন তা আমরা পত্র-পত্রিকা, বই-পুস্তক, হ্যান্ডবিল, সিডিসহ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, সভা, সেমিনারের মাধ্যমে আপামর জনসাধারণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশের এই মহতী উদ্যোগকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন, আমাদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করছেন, সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন। অধিকাংশ মানুষ যামানার এমামের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন। তবে কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আমাদের বই-পত্র না পড়ে, ভালোভাবে না জেনে, না বুঝে মাননীয় এমামুযযামান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। তাদের সম্পর্কে বলতে চাই- কারও সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কোন মন্তব্য করা উচিৎ নয়। তিনি উত্তম কি না সেটা আগে জানুন, তার সম্পর্কে পড়ুন, তিনি কী বলেন সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। তাঁকে সাধারণ আর দশটা মানুষের মতো ভাববেন না, তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটু ভাবুন। তাঁকে কেন মানুষ মহামানব হিসাবে গ্রহণ করছে। তাঁকে জানার মাধ্যমে একটি মানুষের জীবনটাই পাল্টে যাবে, একটা নতুন পথ দেখতে পাবে। আমার পরম সৌভাগ্য যে, এই মহামানবকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি পারাবারিকভাবে ছিলেন অত্যন্ত উচ্চ বংশীয়, টাঙ্গাইলের বিখ্যাত রাজবংশ তথা পন্নী পরিবারের সন্তান। সুলতানী যুগে এবং মুঘল আমলে তাঁর পূর্বপুরুষগণ ছিলেন অত্র এলাকার শাসক। এমন কি তারা দীর্ঘকাল বৃহত্তর বাংলার (তদানীন্তন গৌড়) স্বাধীন সুলতান ছিলেন। আমি করটিয়া গিয়েছি। স্থানীয় মানুষের কাছে তাঁর সম্পর্কে জেনেছি। সেখানে তিনি সেলিম খান পন্নী বা সেলিম সাহেব বলে পরিচিত। তিনি আজীবন সত্যের পক্ষে সংগ্রাম করে গেছেন, লড়াই করে গেছেন। কোন দিন তিনি মিথ্যার সঙ্গে আপস করেন নি। কারও মুখে আমি শুনি নি যে তিনি কখনো মিথ্যা বলেছেন। হিন্দ-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলকেই তিনি সম্মান করতেন, কাউকে আলাদা করে দেখতেন না। তাঁর দ্বারা জীবনে একজন মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন নি। একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম, তিনি জীবনে মানুষকে এত টাকা ধার (বিনা সুদে ঋণ) দিয়েছেন যে সেগুলি যদি ফেরত পেতেন তবে বাকি জীবন সেই টাকায় চলে যেত। আমি নিজেও দেখেছি যে কোন মানুষ তাঁর নিকট সাহায্যের জন্য এলে তিনি কখনো তাকে বঞ্চিত করতেন না। তিনি সাহায্যপ্রার্থীকে কখনো জিজ্ঞাসা করতেন না- তুমি কোন ধর্মের অনুসারী, নামাজ পড় কি না। বরং তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন- কেউ সাহয্য চাইতে আসলে তাকে ফিরিয়ে দিও না, সে যেই হোক না কেন। তিনি অতি সাধারণ মানুষকেও শ্রদ্ধা করতেন। ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড় সকল শ্রেণির মানুষের সাথেই তিনি শ্রদ্ধার সাথে কথা বলতেন। প্রকৃতই যারা আলেম এমন কেউ যখন মাননীয় এমামুযযামানের কাছে আসতেন তখন দেখতাম নানা খাবারের আয়োজন করতে। তাদেরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন। খুবই শ্রদ্ধা করে তাদের সাথে কথা বলতেন। আপনি ছাড়া কোন কথা বলতেন না। আলেম সাহেব কোন কথা বললে তার উপরে কথা বলতেন না। তিনি আলেম সাহেবদের বাড়ির দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন আল্লাহর সত্য দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আলেমদের অগ্রণী ভূমিকা রাখা কর্তব্য। কিন্তু আজ আলেমরা এই জাতিকে বিপদে রেখেছেন। সত্যপথের দিশা দিচ্ছেন না। তিনি আলেমদের এই পরিস্থিতি দেখে প্রথমে ধারণা করতেন তারা আল্লাহর রসুলকে অত্যন্ত ভালোবাসে কিন্তু এখন তারা পরিস্থিতির শিকার, তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হয়ত জাতির জন্য কিছু করতে পারছেন না। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু কিছু ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা না জেনে, বোঝার চেষ্টা না করে অন্ধের মতো এমামুয্যামানের বক্তব্যের বিরোধিতা করে। এতে তিনি অনেকের প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
রসুলাল্লাহ প্রসঙ্গে যখনই কথা উঠত তিনি যেন শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে যেতেন, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে রসুলাল্লাহর নাম উচ্চারণ করতেন। “সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম” ছাড়া কখনো তিনি তাঁর সম্পর্কে কথা বলতেন না। রসুলাল্লাহ সম্পর্কে তিনি আমাদেরকে অনেক কথা বলতেন, এমনভাবে বর্ণনা করতেন মনে হত যেন তিনি তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। রসুলাল্লাহ কিভাবে খেতেন, কিভাবে ঘুমাতেন, তাঁর চোখের রং কেমন ছিল ইত্যাদি থেকে শুরু করে তাঁর ব্যক্তিগত, সামরিক এক কথায় সামগ্রিক জীবনের অত্যন্ত খুঁটিনাটি বিষয়ও আমরা তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি। তাঁর কাছ থেকে জানার পর রসুলাল্লাহ সম্পর্কে আমার ধারণাটাই পাল্টে যায়। আমি এখন রসুলাল্লাহকে অন্যরূপে দেখতে পাই। মহানবীর (সা:) কথা বলার সময় প্রায়ই দেখতাম তাঁর চোখের কোণে জল চলে এসেছে।
একবার আলীয়া মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দেখতে গিয়েছিলাম, টয়লেটে পবিত্র কোর’আন শরীফের পাতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে আমি অত্যন্ত বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছিলাম। যারা কোর’আন শিক্ষা করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে ভবিষ্যতে আলেম হবার জন্য তারা কিভাবে এটা করলো? তারা এটা করতে পেরেছে কারণ তারা তো কোর’আন শেখে ব্যবসা করার জন্য, তাদের কাছে কোর’আন পবিত্র গ্রন্থ নয়। এমামুযযামান আমাদেরকে শিখিয়েছেন পবিত্র কোর’আন হলো মানবজাতির মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য মহান আল্লাহ পাকের বাণী, এটা আত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। এমামুযযামানকে দেখেছি কিভাবে কোর’আনের প্রতি সম্মান দেখাতে হয়। তিনি যখনই সেলফ থেকে কোর’আন শরীফ নামাতেন আগে মাথার উপর রাখতেন, তারপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে চুমু খেতেন। এরপর বেসমেল্লাহ বলে কোর’আন শরীফ খুলতেন। এমামুযযামান আমাদের শিখিয়েছেন- যেখানে কোর’আন তেলাওয়াত হয় সেখানে কেউ কোন কথা বলবে না, কাজ করবে না, মনযোগ দিয়ে তেলওয়াত শুনবে সম্ভব না হলে সেখান থেকে চলে যাবে।
মাননীয় এমামুযযামান পবিত্র কাবা শরীফকে এমনভাবে সম্মান করতেন যা আমি অন্য কাউকে করতে দেখি নি। তিনি কখনো পবিত্র কাবার দিকে পেছন দিক হয়ে বসতেন না। তিনি কখনো জুতা খুলে পবিত্র কাবার দিকে সোজা করে রাখতেন না। তিনি বলতেন, ঐক্যের প্রতীক হলো কাবা। আজ মানবজাতি হাজার হাজার মতবাদে, তন্ত্রে-মন্ত্রে, মাজহাব-ফেরকায়, দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত। একজন আরেকজনকে কুপিয়ে হত্যা করছে, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, একদেশ অন্য দেশের উপর অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, বর্বরোচিতভাবে বোমা মেরে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে মানুষের দেহ, মানুষের আবাসস্থল। এসব দেখে পবিত্র কাবা আজ আমাদের প্রতি ক্ষুদ্ধ, অসন্তুষ্ট। মানবজাতি যখন ঐক্যবদ্ধ হবে সেদিন কাবা হাসবে, সেদিন আমরা কাবায় যাব। কাজেই আজ কাবায় যাওয়া থেকে মানবজাতিকে একজাতিতে পরিণত করে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচর দূর করে ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
মাননীয় এমামুযযামানের এমন একটি বৈশিষ্ট্যও আমার চোখে পড়ে নি যা অনুসরণ করা যায় না, যার সমালোচনা করা সম্ভব। তাঁর প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ ছিল অনুসরণীয়। কাজেই সকলের নিকট বিনীতভাবে অনুরোধ করব আপনারা কারও সম্পর্কেই অনুমাননির্ভর কথা বলবেন না। কারও সম্পর্কে না জেনে, না বুঝে বিরূপ মন্তব্য করা চরম মূর্খতা। আমাদের ফোন নাম্বার, ই-মেইল, অফিসের ঠিকানা সবকিছুই রয়েছে আপনার হাতের নাগালে। কাজেই কারও কথায় প্ররোচিত না হয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন, যামানার এমাম সম্পর্কে জানুন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে সত্যটা জানুন।

No comments:

Post a Comment