Sunday, June 28, 2015

বিশ্বকবির ঐক্যভাবনা: “মূল ধর্ম এক বটে, বিভিন্ন আধার”

বিশ্বকবির ঐক্যভাবনা: “মূল ধর্ম এক বটে, বিভিন্ন আধার”

022 রিয়াদুল হাসান:
কবিগুরু তার প্রথম জীবনে দেশে ইংরেজরা যেধ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেই পরিবেশ দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিলেন। প্রতিটি মানুষই পরিবেশ দ্বারা কম-বেশি প্রভাবিত হয়, এটা সরল সত্য। কিন্তু যারা অসাধারণ তারা আত্মবলে বলীয়ান হয়ে একটা সময়ে পরিবেশকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। রবীন্দ্রনাথের বেলায় এই কথাটি প্রযোজ্য। তিনিও সত্ত্বর পরিবেশ থেকে পাওয়া সাম্প্রদায়িকতার কুপ্রভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন এবং হিন্দু-মোসলেম নির্বিশেষে ভারতবাসীকে দাস বানিয়ে রাখার জন্য ইংরেজদের সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের ষড়যন্ত্রের রূপ উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি সকল ধর্মের মূল সত্যটি উপলব্ধি করে ঘোষণা করেন:
“স্থির হও ভাই। মূল ধর্ম এক বটে,
বিভিন্ন আধার। জল এক, ভিন্ন তটে
ভিন্ন জলাশয়।”(মালিনী)
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি উপমহাদেশের হিন্দু- মোসলেম সম্প্রীতি ধ্বংসের একটি বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে এ কথা ঐতিহাসিক মাত্রই স্বীকার করবেন। আনন্দমঠে ব্যবহৃত ‘বন্দেমাতারম’ গানটির সুর করে দেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নিজে গেয়ে বঙ্কিমকে শোনান (রবীন্দ্র জীবনী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬)। একসময় এই গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠলো যে গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীরা একে ভারতের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। তিনি পরাধীন ভারতবর্ষের হিন্দু মোসলেমকে আলাদা করে না দেখে সবাইকে এক জাতিতে পরিণত করতে আগ্রহী ছিলেন। যে সময়ের কথা বলছি তখন ভারতবর্ষে ইংরেজদের আনুকূল্য পেয়ে হিন্দু ও ব্রাহ্ম সমাজ বেশ প্রভাবশালী অবস্থানে আছে আর মোসলেমদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। সমাজের মধ্যে এই অনৈক্যের বিষবাষ্প কোন মহৎ মানুষকেই ব্যথিত না করে পারে না। রবীন্দ্রনাথ বুঝলেন, বঙ্কিমের এই গান একটি সাম্প্রদায়িক সঙ্গীত, তাই এটিকে মিলিত হিন্দু-মোসলেম সকলে অন্তর থেকে মেনে নিতে পারে না, তখন কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি স্বয়ং আপত্তি করেছিলেন যাতে ওটা ‘জাতীয় সঙ্গীত’ না হয়। “……. সমগ্র ‘বন্দেমাতরম’ গানটি কংগ্রেসের ‘জাতীয়’ রূপে সর্বজাতির গ্রহণীয় নয় বলে মত প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ উগ্রপন্থীদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এবং তাঁর বিরোধিতা সত্ত্বেও ‘বন্দেমাতরম’ প্রথম স্তবক কংগ্রেসে জাতীয় সঙ্গীতরূপে গৃহীত হয়। (১৯৩৭)।” [অধ্যাপক (ঢাকা বিশ্ব:) ডক্টর মনিরুজ্জামান: আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মোসলেম সম্পর্ক, পৃষ্ঠা ২৬৯-প্রভাত মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র জীবনকথা, পৃষ্ঠা ২৬০-৬১]
মোসলেমদেরকে হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে ঘৃণার চোখে দেখতো তা কবিকে খুব ব্যথিত করেছিল এবং এজন্য তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কেই প্রধানত দায়ী করেন। তিনি নিজের কিশোর বয়সের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ‘হিন্দু মোসলেম’ প্রবন্ধে বলেন, ‘…আমি হিন্দুর তরফ থেকেই বলছি, মোসলেমের ত্র“টিবিচারটা থাক — আমরা মোসলেমকে কাছে টানতে যদি না পেরে থাকি তবে সেজন্যে যেন লজ্জা স্বীকার করি। অল্পবয়সে যখন প্রথম জমিদারি সেরেস্তা দেখতে গিয়েছিলুম তখন দেখলুম, আমাদের ব্রাহ্মণ ম্যানেজার যে-তক্তপোষের গদিতে বসে দরবার করেন সেখানে এক ধারে জাজিম তোলা, সেই জায়গাটা মোসলেম প্রজাদের বসবার জন্যে; আর জাজিমের উপর বসে হিন্দু প্রজারা। এইটে দেখে আমার ধিক্কার জন্মেছিল।’
তিনি মোসলেম জাতির বৈশিষ্ট্য ও ভারতবর্ষে তাদের অধিকার হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন এবং সে সঙ্গে ইংরেজের প্রকৃত চরিত্রও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি লিখেছেন: “হিন্দু মোসলেমের সম্বন্ধ লইয়া আমাদের দেশে একটা পাপ আছে। এ পাপ অনেকদিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। ইহার যা ফল তাহা না ভোগ করিয়া আমাদের কোন মতেই নিস্তার নাই।”
রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছেন: “তর্ক করিবার বেলায় বলিয়া থাকি কি করা যায়, শাস্ত্র তো মানিতে হইবে। অথচ শাস্ত্রে হিন্দু-মোসলেম সম্বন্ধে পরস্পরকে এমন করিয়া ঘৃণা করিবার তো কোন বিধান দেখি না। যদি বা শাস্ত্রের সেই বিধানই হয়, তবে সে শাস্ত্র লইয়া স্বদেশ-জাতি-স্বরাজ্যের প্রতিষ্ঠা কোনদিন হইবে না। মানুষকে ঘৃণা করা যে দেশে ধর্মের নিয়ম, প্রতিবেশীর হাতে পানি খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয়, পরকে অপমান করিয়া যাহাদের জাতি রক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই, তাহারা যাহাদিগকে ¤ে¬চ্ছ বলিয়া অপমান করিতেছে সেই ¤ে¬চ্ছের অবজ্ঞা তাহাদিগকে সহ্য করিতে হইবে।’ (‘রবীন্দ্র রচনাবলী ১০ম খণ্ড, ৬২৮- ২৯ পৃষ্ঠায়)
রবীন্দ্রনাথ আরও বুঝতে পারলেন এবং স্বীকার করে তার নিজের ভাষায় বললেন-“যে একদেশে আমরা জন্মিয়াছি সেই দেশের ঐক্যকে খণ্ডিত করিতে থাকিলে ধর্মহানি হয়, এবং হইলে কখনই স্বার্থ রক্ষা হইতে পারে না তখনই আমরা উভয়ই ভ্রাতায় একই সমচেষ্টার মিলনক্ষেত্রে আসিয়া হাত ধরিয়া দাঁড়াইব।” (রবীন্দ্র রচনাবলী, ১০ম পৃষ্ঠা ৫০২)
১৯২০-২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে মাওলানা মহম্মদ আলী ও গান্ধীজীর নেতৃত্বে হিন্দু-মোসলেমের পূনর্মিলনের প্রচেষ্টা দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন যে মিলন স্থায়ী হবে না। কারণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ষড়যন্ত্রে মোসলেমদেরকে উন্নতির ধাপ হতে চরম অবনতিতে নামান হয়েছে। তাই কবি ‘সমস্যা’ নামে একটি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ লিখলেন। তাতে তিনি জানালেন-হিন্দু-মোসলেমের ‘মিলন’ অপেক্ষা ‘সমকক্ষতা’ প্রয়োজন আগে (তথ্য: রবীন্দ্র রচনাবলী, ২৪শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৩-৫৮, ৩৬২)।
কবি মোসলেমদের শক্তি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা অনুভব করে লিখেছেন: “বাংলাদেশের পূর্বভাগে মোসলেমের সংখ্যাই অধিক। ধর্মগত ও সমাজগত কারণে মোসলেমের মধ্যে হিন্দুর চেয়ে ঐক্য বেশি-সুতরাং শক্তির প্রধান উপকরণ তাহাদের মধ্যে নিহিত হইয়া আছে…”। (‘রবীন্দ্র রচনাবলী’র দশম খণ্ডের ৫২৩ পৃষ্ঠা)।
বিশ্বকবি তার প্রতিভায় ও গুণে ইংরেজকে নয় কেবল মানবজাতিকে মুগ্ধ করতে পেরেছিলেন তা প্রমাণিত হয়েছে। তবে তিনি এও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ইংরেজের বিচার মানে অবিচার; আর হিন্দুু-মোসলেমের মিলিত নেতৃত্ব ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। মি: ডায়ারের নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজদের গুলিতে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছিল তাতে কবি ব্যথিত হয়েছিলেন। আর তারই প্রমাণ দিতে ইংরেজ প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট ‘অবস্থা ও ব্যবস্থা’ নামক নিজের লেখা যে প্রবন্ধটি কলকাতার টাউন হলে পড়েছিলেন তার একটু অংশ উদ্ধৃতি করলাম-“ দেশের কর্মশক্তিকে একটি বিশেষ কর্তৃসভার মধ্যে বদ্ধ করিতে হইবে। অন্তত একজন হিন্দু ও একজন মোসলেমকে আমরা এই সভায় অধিনায়ক করিব-তাঁদের নিকট নিজেকে সম্পূর্ণ অধীন, সম্পূর্ণ নত করিয়া রাখিব-তাঁহাদিগকে সম্মান করিয়া দেশকে সম্মানিত করিব।” (দ্রষ্টব্য রবীন্দ্র রচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড, ১৩৭১, পৃষ্ঠা ৬১২)
ভারতে অনেক জাতি ও উপজাতি আছে। এখন যদি রবীন্দ্রনাথের সত্য-ভক্তদের প্রশ্ন করা যায়-বিশ্ববিখ্যাত রবিবাবু কি ভারতের নানাজাতি, নানামত, নানা পরিধানের কথা জানতেন না? তবুও কেন তিনি ‘হিন্দু-মোসলেম’ নিয়ে এত লেখালেখি করলেন? আর কোন জাতিকে কেন লিখলেন না? এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয় যে, তিনি অন্য সব জাতির কথাও লিখেছেন এবং তাদের প্রাপ্য গুরুত্ব তাদেরকে দিয়েছেন।
কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য হেথায় দ্রাবিড়, চীন–
শক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন।
সুতরাং তিনি সবার অংশগ্রহণে গঠিত যে মহান ‘সভ্যতা’র উল্লেখ করেছেন তার দেহ ও আত্মায় হিন্দু ও মোসলেম এই দু’টি জাতি সত্ত্বার গুরুত্ব ও ভূমিকাই মুখ্য। এজন্যই তিনি মোসলেম জাতির মর্যাদা, অধিকার ও প্রকৃত মূল্যায়নকে তাঁর লেখনী প্রতিভায় ফুটিয়ে তুলেছেন এবং এই দু’টি জাতিসত্ত্বার মিলনকে এত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে জাতির অস্তিত্বের স্বার্থে হিন্দু সমাজকে তা বোঝাতে চেয়েছেন। এখানেও প্রমাণস্বরূপ তাঁর ভাষাতেই বলা যায়- “এ দিকে একটা প্রকাণ্ড বিচ্ছেদের খড়গ দেশের মাথার উপর ঝুলিতেছে। এই দুর্বলতার কারণ যতদিন আছে ততদিন আমাদের দেশের কোন মহৎ আশাকে সম্পূর্ণ সফল করা সম্ভব হইবে না … আমরা (হিন্দু) গোড়া হইতে ইংরেজদের স্কুলে বেশি মনোযোগের সাথে পড়া মুখস্থ করিয়াছি বলিয়া গভর্নমেন্টের চাকরি ও সম্মানের ভাগ মোসলেম ভ্রাতাদের চেয়ে আমাদের অংশে বেশি পড়িয়াছে সন্দেহ নেই। এইটুকু (পার্থক্য) কোন মতে না মিটিয়া গেলে আমাদের ঠিক মনের মিলন হইবে না। ”
রবীন্দ্রনাথ আরও জানালেন: “আমরা যে মোসলেমদের অথবা আমাদের দেশের জনসাধারণের যথার্থ হিতৈষী তাহার কোন প্রমাণ দিই নাই। অতএব তাহারা আমাদের হিতৈষিতায় সন্দেহ বোধ করিলে তাহাদিগকে দোষী করা যায় না। ….. আমরা যে দেশের সাধারণ লোকের ভাই তাহা দেশের সাধারণ লোক জানে না এবং আমাদের মনের মধ্যেও যে তাহাদের প্রতি ভ্রাতৃত্বভাব অত্যন্ত জাগরুক-আমাদের ব্যবহার এখনও তাহারে কোন প্রমাণ নাই।”
রবীন্দ্রনাথ মোসলেমদের গুরুত্ব এত বেশি অনুভব করেছিলেন যে তা তিনি তাঁর লেখায় সুস্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: “স্বদেশীযুগে আমরা দেশের মোসলেমদের কিছু অস্বাভাবিক উচ্চস্বরেই আত্মীয় বলিয়া, ভাই বলিয়া ডাকাডাকি শুরু করিয়াছিলাম। সেই স্নেহের ডাকে যখন তাহার অশ্রু গদগদ কণ্ঠে সাড়া দিল না তখন আমরা তাহাদের উপর ভারী রাগ করিয়াছিলাম। ভাবিয়াছিলাম এটা নিতান্তই ওদের শয়তানি। একদিনের জন্যও ভাবি নাই, আমাদের ডাকের মধ্যে গরজ ছিল কিন্তু সত্য ছিল না…..। বাংলার মোসলেম যে এই বেদনায় আমাদের সাথে সাথে এক হয় নাই তাহার কারণ তাহাদের সাথে আমরা কোনদিন হৃদয়কে এক হইতে দিই নাই”।
ডা: কালিদাস নাগ বিলেত থেকে পত্র-মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন-‘হিন্দু-মোসলেম সমস্যার সমাধান কী? সেটা ছিল ১৯২২ সাল। পত্রোত্তরে কবি লিখেছিলেন: “খিলাফত উপলক্ষ্যে মোসলেম নিজের মসজিদে এবং অন্যত্র হিন্দুকে যত কাছে টেনেছে, হিন্দু মোসলেমকে তত কাছে টানতে পারেনি। আচার হচ্ছে মানুষের সম্বন্ধের সেতু, সেখানেই পদে পদে হিন্দু নিজেদের বেড়া তুলে রেখেছে। ……অন্য আচার অবলম্বীদের অশুচি ব’লে গণ্য করার মতো মানুষের মিলনের এমন ভীষণ বাধা আর কিছুই নেই।” চিঠির শেষে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, “আমরাও মানসিক অবরোধ কেটে বেরিয়ে আসবো।”(শ্রী সত্যেন সেন: পনেরই আগস্ট, পৃষ্ঠা ১১০-১১৪)
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি দেখাশোনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে মোসলেম প্রজাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে হয়েছে। তিনি সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন হিন্দু মোসলেম প্রবন্ধে, ‘আমার অধিকাংশ প্রজাই মোসলেম। কোরবানি নিয়ে দেশে যখন একটা উত্তেজনা প্রবল তখন হিন্দু প্রজারা আমাদের এলাকায় সেটা স¤পূর্ণ রহিত করবার জন্য আমার কাছে নালিশ করেছিল। সে নালিশ আমি সংগত বলে মনে করি নি, কিন্তু মোসলেম প্রজাদের ডেকে যখন বলে দিলুম কাজটা যেন এমনভাবে সম্পন্ন করা হয় যাতে হিন্দুদের মনে অকারণে আঘাত না লাগে তারা তখনই তা মেনে নিল। আমাদের সেখানে এ-পর্যন্ত কোন উপদ্রব ঘটে নি। আমার বিশ্বাস তার প্রধান কারণ, আমার সঙ্গে আমার মোসলেম প্রজার সম্বন্ধ সহজ ও বাধাহীন। এ কথা আশা করাই চলে না যে, আমাদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন সমাজের মধ্যে ধর্মকর্মের মতবিশ্বাসের ভেদ একেবারেই ঘুচতে পারে। তবুও মনুষ্যত্বের খাতিরে আশা করতেই হবে, আমাদের মধ্যে মিল হবে।’
আজকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যে সঙ্কট তা হচ্ছে মনুষ্যত্বের সঙ্কট। এই সঙ্কট থেকে মানবজাতিকে উদ্ধার পেতে হলে যে পদ্ধতি কবিগুরু বাতলে গেছেন তা হচ্ছে:
এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মোসলেম।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খ্রিস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার,
এসো হে পতিত করো অপনীত সব অপমানভার।
মা’র অভিষেকে এসো এসো ত্বরা,
মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,
সবারে-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে।
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।

No comments:

Post a Comment