Untitled-5

————–
যে সওমে আত্মসংযম সৃষ্টি হয় না সে সওম নিস্ফল বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের কুষ্টিয়া জেলা আমীর মাহবুব আলী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সওম শব্দের অর্থ সংযম, ফারসি ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে যা রোজা নামে অধিক পরিচিত। আরবি বছরের প্রতি রমজান মাসে আল্লাহ মু’মিনদেরকে সওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে মুসলিমদের চরিত্রে সংযমের অনন্য বৈশিষ্ট্য জাহির হয়। সারা বছর যে যা-ই খাক, যতই ভোগ-বিলাসিতা প্রদর্শন করুক, রমজানের এই একটি মাস তার সিয়াম সাধনার সময়। আত্মসংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণ জাগ্রত করার জন্য সওম হচ্ছে অদ্বিতীয় পন্থা। তবে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতাই কেবল এর মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো সওমেরও তাৎপর্য বহুমুখী। এর আছে অর্থনীতিক তাৎপর্যও। অর্থনীতির এক মৌলিক সূত্র হলো- বস্তুর চাহিদা কমে গেলে যোগান বাড়ে এবং দাম কমে, আবার চাহিদা বেড়ে গেলে যোগান কমে এবং দাম বাড়ে। রমজানের একটি মাস যেহেতু আল্লাহ এই জাতিকে সংযম রক্ষা করে চলার বিধান দিয়েছেন, বিশেষত নিত্য আহার্য বস্তুর ব্যবহার এ সময় কমে যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই বস্তুর যোগান বৃদ্ধি ও মূল্যহ্রাস পাবার কথা। সংযমের আধ্যাত্মিক সফলতার পাশাপাশি সমাজে যখন এই অর্থনীতিক পরিবর্তন ঘটবে কেবল তখনই সওমের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু আমরা কি তেমনটা দেখি? কখনই নয়।
তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন সাক্ষ্য প্রদান করে। আমাদের দেশে আমরা বরং সওমের উল্টো ফলাফল প্রত্যক্ষ করি। সওমের মাসে সকলে খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য ভোগ্য-সামগ্রীর ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেয়। সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ম বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য মাসে শাক-সবজি, ফলমূল, তেল-ডাল, লাচ্ছি-সেমাই ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যে দামে বিক্রি হয় রমজান এলে তা দেড় থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতিক উদ্দেশ্যের অবস্থা যখন এই, আধ্যাত্মিক ভাগেরও তেমন দৈন্যদশা। মানুষ না খেয়ে থাকছে ঠিক, কিন্তু সংযম রক্ষা হচ্ছে না। সওম ও উপবাস কেন এক নয়, সওমকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লার কাছে মৃগনাভীর সুগন্ধী অপেক্ষা কেন প্রিয়, বেহেশতের একটি দরজা কেন শুধু সওমকারীদের জন্যই বরাদ্দ তার উত্তর এ জাতির কাছে নেই। এরা সংযমের শিক্ষাগ্রহণ করার মানসে সওম রাখে না, আল্লাহর হুকুম পালন করে মাত্র, যদিও উদ্দেশ্য ছাড়া আল্লাহ কোনো হুকুম দেন নি। ফলে সওম আসছে, সওম যাচ্ছে, কিন্তু আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার চিহ্নমাত্র সমাজে নেই। অর্থাৎ যা হবার ছিল, হচ্ছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। রমজান মাসেই যেন মানুষের সংযমের বাধ ভেঙ্গে যায়। দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়, বৃদ্ধি পায় বকধার্মিকদের আনুষ্ঠানিকতা, এফতার মাহফিল, দোয়া-দরুদ, মিলাদ, জিকির-আজগর। এদেরকে কে বলে দেবে যে, উদ্দেশ্যহীন যে কোনোকিছুই অর্থহীন তা যত আন্তরিকতার সাথেই করা হোক না কেন। যে জাতির জাতীয় জীবন পরিচালিত হয় স্রষ্টাবর্জিত সিস্টেম দিয়ে, তারা আর যা-ই হোক নিজেদের মু’মিন পরিচয় দিতে পারে না। আর যারা মু’মিন নয় তাদের সওম শুধু উপবাস থাকা, তাহাজ্জুদ ঘুম নষ্ট করা- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। তাদের এই মেকি সওম আল্লাহর কাছে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে।
মাহবুব আলী আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য শুধুমাত্র সরকারকে দোষারোপ করার অভ্যাস ছাড়া উচিত। সরকারের ব্যর্থতা থাকতে পারে, কিন্তু সংযমের মাসে ধর্মাশ্রয়ী মানুষগুলো যখন সম্পূর্ণ অসংযমের পরিচয় দিয়ে লোভ-লালসার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে, আরবীয় লেবাস ধারণকারী টুপি-দাড়িওয়ালা ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে চলে, তখন সরকারের খুব বড় কিছু করার থাকে না। সওমের মূল শিক্ষা যতদিন সমাজে বাস্তবায়িত না হবে ততদিন রমজান মাসে দ্রব্য-পণ্যের দাম কেউই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। আবার সওমের মাস শেষে ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ। আনন্দের জন্য প্রয়োজন খরচা। অর্থাৎ সংযমের যা একটু নমুনা ছিল, শেষের দিনগুলোতে তাও উধাও হয়ে যায়। ওদিকে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঝুঁকে পড়ে সিজনাল আয়-রোজগারের দিকে। ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারী, মলমপট্টি, অজ্ঞানপার্টি ও চোর-ডাকাতের উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ব্যবসায়ীদের ঠকবাজী প্রতারণা সীমা ছাড়ে। ফল হয় এই যে, সংযমের মাস জাতির জন্য আশীর্বাদ না হয়ে ক্ষতির কারণ হয়। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ বিধান দিলেন তা ব্যর্থ হয় এবং বক ধার্মিকদের বক ধার্মিকতা আল্লাহর ক্রোধবৃদ্ধি ঘটায়। তাই যারা প্রকৃতই আল্লাহ, আল্লাহর রসুল ও দেশকে ভালোবাসেন তাদের উচিত হবে সওমের প্রকৃত শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করে বক ধার্মিকদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই চালানোর মাধ্যমে জাতির জাতীয় জীবনে সওমের প্রকৃত শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করা। এই লক্ষ্যেই হেযবুত তওহীদ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।