Sunday, June 28, 2015

অসাধ্য সাধনের পথিকৃৎ হেযবুত তওহীদ

অসাধ্য সাধনের পথিকৃৎ হেযবুত তওহীদ

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
বর্তমান মানবজাতি প্রধান যে কয়টি ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী জাতিগুলো আজ একে অপরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানিতে লিপ্ত। সামান্য ইস্যুতে বেঁধে যায় রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির প্ররোচণায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের উপর উন্মত্ত রোষে ঝাঁপিয়ে পড়ে, নৃশংসভাবে হত্যা করে, পুড়িয়ে মারে, বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে। এটা যে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীরাই করে- তা নয়। সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই এই অসহিষ্ণুতার নজির রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে হেযবুত তওহীদই একমাত্র আন্দোলন যারা সকল ধর্মের মানুষকে ন্যায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এটা কোনো সহজ কাজ নয়। করতে হয় নি। তবে শেষ নবীর উপরে এই কাজের দায়িত্ব আল্লাহ দিয়েছিলেন, যে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন এবং উম্মতে মোহাম্মদী নামক একটি জাতি সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পর তাঁর অনুসারীরা এই কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেও শেষ পর্যন্ত যেতে পারে নি। কার্যত এর চেয়ে কঠিন কোন কাজ হতে পারে না। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে এসে মানবজাতি অনৈক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভৌগোলিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং সর্বপরি ধর্মীয়ভাবে পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষ এখন লক্ষ ভাগে বিভক্ত। এক ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে ফেরকা-মাজহাব, জাত-পাতের হাজারো দেয়াল। তাদেরকে এক ছাতার নীচে এনে দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
খ্রিস্টানরা প্রধান দুই ভাগ- প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিকে বিভক্ত; এর বাইরেও আছে আরো বহু বিভক্তি, এগুলির ভিতরেও আছে অসংখ্য ভিন্ন মতাবলম্বী চার্চ। উইকিপিডিয়ার ‘অসম্পূর্ণ’ তালিকা অনুযায়ী খ্রিস্টধর্মের মোট উপদলের সংখ্যা ৪১,০০০ টি। হিন্দুরা বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, গানপত্য ইত্যাদি বহুভাগে বিভক্ত। এদিকে মোসলেমরা বিভক্ত শিয়া-সুন্নি, হানাফি, হাম্বলী, মালেকী, শাফেয়ী, আহমদী, আহলে হাদীস ইত্যাদি শত শত সর্বনাশা ফেরকা-মাজহাবে। এই উপদলগুলোর একে অপরের সাথে ঠিক ততটাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে যতটা দূরত্ব এক ধর্মের সাথে অপর একটি ধর্মের। মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব কত নির্মম আকার ধারণ করেছে তা সকলেরই অবগত আছেন। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে প্রায় প্রতিদিনই চলছে শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা, প্রাণহানী, রক্তপাত। কোথাও কোথাও এই বিরোধ যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। একই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিরাজিত এই সংঘাত থেকে কিছুটা অনুমান করা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাত কতটা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে।
পৃথিবীতে এক ধর্মের সাথে আরেক ধর্মের শত্র“তা হাজার বছরব্যাপী চলে আসছে। কয়েক শতাব্দী ধরে খ্রিস্টানদের সাথে মুসলিমদের ক্রুসেড হয়েছে। এই ক্রুসেড নিয়ে এখনও মুসলিম সমাজে ও খ্রিস্টান সমাজে গাল-গল্পের অন্ত নেই। যদিও ক্রুসেড ছিল পুরোটাই রাজনৈতিক, তথাপি উভয় ধর্মের মানুষই ধর্মীয় বিবেচনায় ক্রুসেডকে নিয়ে গর্ব করে। নতুন প্রজন্মকে ক্রুসেডের মাহাত্ম বর্ণনা করে শোনায়, তৈরি করা হয় ক্রুসেড নিয়ে চলচ্চিত্র। প্রায়ই খ্রিস্টান জগত থেকে তৈরি করা হয় এসলাম বিদ্বেষী চলচ্চিত্র, আঁকা হয় মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মব্যাপী এ জাতি দু’টির মধ্যে শত্র“তা দানা বেধে থাকে। সেই শত্র“তার আগুন আজও জ্বলছে।
একইভাবে আমাদের ভারতবর্ষে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলছে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। এটা শুরু হয়েছে ব্রিটিশদের আসার পর থেকে। ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র ও হিন্দু-মুসলিম উভয় জাতির অভ্যন্তরস্থ ধর্মব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় হিন্দু ও মোসলেম জাতির মধ্যে বহু শতাব্দীব্যাপী বিরাজিত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয়। আর সেখান থেকেই জন্ম হয়েছিল হিন্দু-মুসলিম শত্র“তার। এদের হৃদয়ের মধ্যে এখনও কঠিন শত্র“তার আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলছে। এই শত্র“তার মাত্রা কতখানি তা আমরা (অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ) খুব কাছে দেখতে পেয়েছি। কারণ আমরা ছাড়া অন্য কেউই এই দু’পক্ষের কাছে যায় নি। আমরা যাচ্ছি এবং দেখতে পাচ্ছি- তাদের পরস্পরের মধ্যে কতখানি শত্র“তা দানা বেঁধে আছে। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ (আ:) কে নবী বলার কারণেই আমরা ধর্মান্ধ মুসলমানদের দ্বারা যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছি তা মোটেও নগণ্য নয়। অথচ আমাদের পূর্বেও অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব এটা লিখে গেছেন। আমরা তাদের কথাগুলোকে উল্লেখ করছি মাত্র।
কাজেই এটা স্বীকার করতেই হবে যে, বর্তমান মানবজাতিকে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করা মোটেও সহজসাধ্য নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠিন ত্যাগ, মানবতার কল্যাণে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া। হেযবুত তওহীদ সেটা করছে। এখন শুধু প্রয়োজন সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যে সচেতন ব্যক্তিগণ আছেন, ভালো মনের মানুষ যারা আছেন, যারা প্রকৃতপক্ষেই সত্যের ধারক-বাহক, যারা মানবতার কল্যাণ চান, মানুষের শান্তি চান, হিংসা-বিদ্বেষের সমাপ্তি চান, অহিংসার বিকাশ চান তাদের যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার। আপনারা আর নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবেন না, যামানার এমামের অনুসারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসুন। এই প্রথমবারের মতো মানবজাতি একজাতি হবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, অনৈক্য, বৈষম্য লোপ পাবে। প্রকৃত মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে। ন্যায়, সুবিচার এক কথায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ইতিহাসের পট পরিবর্তনে অবদান রাখুন। আমরা প্রতিটি ধর্মে উল্লেখিত চিরসত্য-শাশ্বত বিষয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাচ্ছি। সকল ধর্ম এসেছে এক স্রষ্টার পক্ষ থেকে। প্রতিটি ধর্মের যে মহামানব অর্থাৎ নবী-রসুল বা অবতার আছেন, তারা সেই একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানবজাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আদিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, মানবজাতি একই পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার সন্তান, তাদের একের সঙ্গে অপরের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। তাহলে কেন এই অনর্থক রক্তপাত, বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রতিপালন? এখন সময় এসেছে এক পিতা মাতার সন্তান, একই স্রষ্টার সৃষ্টি মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হবার। সময় এসেছে ভাইয়ে ভাইয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করার পথে যে অনৈক্যের প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে তা চূর্ণ করার। এই কাজটিই করছে যামানার এমামের অনুসারী হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদ পথ দেখিয়েছে, লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে; এখন সে পথের পথিক হয়ে সে লক্ষ্যে অর্জনের দায়িত্ব সকলের, সমগ্র মানবজাতির। লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ; রাজশাহী অঞ্চল।

No comments:

Post a Comment