Tuesday, June 30, 2015

অস্তিত্বহীন মাদ্রাসা-এতিমখানার নামে প্রতারণা!

অস্তিত্বহীন মাদ্রাসা-এতিমখানার নামে প্রতারণা!
ফার্মগেট সিগনালে থেমেছে বাস। পাঞ্জাবি-টুপি পরা এক ব্যক্তি উঠেই দান-খয়রাতের মাহাত্ম্য বয়ান শুরু করলেন। পরে আহ্বান জানালেন মোহাম্মদপুরের একটি এতিমখানা-মাদ্রাসায় দান করার। সরলমনা অনেকেই হাত ঢোকালো পকেটে। এক ফাঁকে কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে। নাম হাফেজ রকিকুদ্দিন। জানালেন, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের দারুল আহসানুল উলুম হেফজখানার শিক্ষক তিনি। মাদ্রাসার আরও কয়েকজন শিক্ষক তার মতো এতিম ছাত্রদের জন্য টাকা তোলেন। তবে তারা শুধু রমজান মাসেই টাকা তোলেন মাদ্রাসার জন্য। তার তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি দারুল আহসানুল উলুম নামের কোনও হেফজখানা।
রমজানকে কেন্দ্র করে মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য অনুদান সংগ্রহের নামে নিজেদের পকেট ভরতে মাঠে নেমেছে প্রতারক চক্র। অবশ্য সারা বছরই এরা ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য অনুদানের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে রমজানকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যস্ততা বরাবরই বেশি।
জনবহুল রাস্তার পাশে, বাস, ট্রেন, লঞ্চে এ তৎপরতা দেখা যায় বেশি। কেউ কেউ বাসা-বাড়ি ও দোকানেও মসজিদ-মাদ্রাসার নামে টাকা তোলে। রমজানে দান করলে বেশি সওয়াব- এমনটা বলেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। কেউ আবার নিজেদের প্রতারণাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে অনুদান আদায়ের রশিদও ধরিয়ে দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মসজিদ বা মাদ্রাসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায়ের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল রয়েছ‌‌‌ে। সাধারণত দু-চারজনের একটি দল ব্যস্ত সড়কের পাশে টেবিল চেয়ার বসিয়ে মাইকে মসজিদে দান করার কথা বলেন। পাশাপাশি চলে ধর্মীয় বয়ান। রমজানের সময় ফেতরার টাকা দানের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয় বেশি বেশি।
রাজধানীর বনানী, মিরপুর, আজীমপুর, যাত্রাবাড়ী, হাতিরঝিল, মগবাজার এলাকায় দেখা গেছে এমন অনেক অনুদান সংগ্রহকারী। এরা দলবদ্ধ হয় কম। আলাদাভাবে কাজ করে। সিগনালে থেমে থাকা বাস, ট্রেন-লঞ্চ, দোকানে গিয়ে টাকা তোলে।
আজীমপুরে ফুটপাতের একটি দোকানে মসজিদের জন্য টাকা চাইছেন আহমদ আলী নামের এক ব্যক্তি। তার হাতেও যথারীতি রশিদ। মসজিদ কমিটির সভাপতির নাম্বার চাইলেই কেটে পড়তে চান তিনি। পরে আহমদ আলী জানান, তিনি দীর্ঘদিন জুরাইনের একটি মসজিদের খাদেম ছিলেন। সেখানেও অনুদান সংগ্রহ করতেন। এখন বেকার থাকায় মসজিদের নামে টাকা তুলছেন। দিনে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় তার।
প্রতারণা হোক বা না হোক, এভাবে মসজিদ-মাদ্রাসার নামে অনুদান সংগ্রহ অনুচিত বলে মনে করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মসজিদ-মাদ্রাসা মানুষের দান-খয়রাতে চলে। তাই বলে এভাবে রাস্তাঘাটে টাকা তোলা ঠিক নয়। মসজিদ-মাদ্রাসা সাধারণত এলাকাভিত্তিক অনুদানে চলে। তাই সন্দেহ হয় এরা আসলে কারা। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে এমনভাবে প্রতারণা গর্হিত কাজ। এ বিষয়ে সরকারের খোঁজ খবর রাখা উচিত।’

No comments:

Post a Comment