Tuesday, June 23, 2015

যদি প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী এ যুগে আসতেন

যদি প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী এ যুগে আসতেন

এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী:
কল্পনা করা যাক যে ছোট্ট জাতিটি, যার মোট জনসংখ্যা চার পাঁচ লাখের বেশি হবে না, বিশ্বনবীর (দ:) সঙ্গে থেকে তাঁকে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন কোরতে জানমাল দিয়ে সাহায্য কোরল তাঁর সঙ্গে থেকে তাঁর কাছ থেকে সরাসরি এই দীন শিক্ষা কোরল, ঐ দীনের প্রাণ কোথায়, দেহ কোথায়, উদ্দেশ্য কী, সেই উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কী এসব বুঝলো এবং হৃদয়ঙ্গম কোরল এবং তাঁর (দ:) পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর তাদের নেতার আনা জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সব কিছু ছেড়ে বের হোয়ে পড়লো ও তদানীন্তন দুনিয়ার দুইটি মহাশক্তিকে এক এক কোরে নয়, একই সঙ্গে পরাজিত কোরে আটলান্টিকের উপকূল থেকে চীন সীমান্ত পর্যন্ত এই দীন প্রতিষ্ঠা কোরে মানুষের জীবনে নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরল, এক মহা সভ্যতার জন্ম দিলো- এই জাতিটাকে যদি কোন মন্ত্র বলে আজকের পৃথিবীকে কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়ে আনা যায় তবে কি হবে? ঠিক কি হবে তা সম্পূর্ণ কোরে কেউ বোলতে পারবে না, তবে কয়েকটি জিনিস যে হবে তা অনুমান করা যায়।
প্রথমত: তারা বিস্ময় বিস্ফোরিত চোখে বর্তমান পৃথিবীটাকে দেখবেন এবং আমাদের যখন তাদের সঙ্গে পরিচয় কোরিয়ে দেয়া হবে তাদের উত্তরসূরী বোলে তখন আমরা বর্তমান দুনিয়াটা তাদের ঘুরিয়ে দেখাবো। আমাদের কোটি কোটি টাকার জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদগুলো দেখে তারা চোখ বড় বড় কোরে বোলবেন, সোবহান আল্লাহ, আমাদের খেজুর পাতার ছাদ আর মাটির মেঝের মসজিদগুলোর চেয়ে তোমাদের মসজিদগুলি কত সুন্দর, কত শান-শওকতওয়ালা, রাজপ্রাসাদকেও হার মানায়। তারা প্রশ্ন কোরবেন, তোমরা এখন পৃথিবীতে সংখ্যায় কত? আমরা বুক ফুলিয়ে জবাব দেবো তা প্রায় একশ’ ষাট কোটির মতো। তারা বিস্মিত হোয়ে বোলবেন, মাশা’আল্লাহ, কিন্তু আমরা চার পাঁচ লাখ হোয়ে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া দীন প্রতিষ্ঠা কোরেছিলাম আর চৌদ্দশ’ বছর হোয়ে গেলো তোমরা একশ’ ত্রিশ কোটি হোয়েও তার চেয়ে বেশি এগুতে পারনি দেখছি। আমরা তাদের সামনে গত বারশো’ বছরে যে সব জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বই কেতাব লিখেছি তা রাখতে আরম্ভ কোরব। ক্রমে ক্রমে তা পর্বতের চেয়ে উঁচু হোয়ে যাবে। শেষে ঐ চার পাঁচ লাখ মানুষ ঢাকা পড়ার উপক্রম হোলে তারা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠবেন, থামো থামো। এগুলো কিসের বই? আমরা আবারও বুক ফুলিয়ে জবাব দেবো, এক কথায় এর জবাব দেয়া সম্ভব নয়। একটা পাহাড় সমান কেতাবের স্তূপ দেখিয়ে বোলব- এগুলো হোচ্ছে ফেকাহ। তারা বিস্মিত হোয়ে বোলবেন ফেকাহ? এ এত বিরাট হোল কি কোরে? ফেকাহকে আমরা কেমন কোরে কত পরিশ্রম কোরে এত বিরাট কোরেছি তা তাদের ভাল কোরে বুঝিয়ে দেবার পর তারা প্রশ্ন কোরবেন, ঐ স্তূপগুলো কি? আমরা বুঝিয়ে দেব ওগুলো হাদিসের কেতাব। তারা আবার বিস্মিত হোয়ে বোলবেন, মাশা’আল্লাহ! এতো হাদিস তোমরা সংগ্রহ কোরেছো। আমাদের তো হাদিসের কোন বইই ছিলো না। ঐগুলি কি? আমরা তাদের অজ্ঞতা দেখে করুণা কোরে তাদের বুঝিয়ে দেবো, ঐ বইয়ের পর্বত হোচ্ছে কোর’আনের তফসীরের, ঐ পর্বত হোচ্ছে দীনিয়াতের, ঐ পাহাড় উসুলে ফেকাহর, ঐ পাহাড় উসুলে হাদিসের, ঐ পর্বত মসলা মাসায়েলের, ঐ পর্বত তাসাওয়াফের, ঐ পাহাড় কিয়াসের, ঐ পর্বত ইজমার, এই পাহাড়… এই পর্যন্ত বোলতেই তারা ভয় পেয়ে বোলবেন, ব্যস! আর দরকার নেই। আমরা এগুলোর কোনটা সম্বন্ধে জীবনেও শুনি নাই। আমাদের মাত্র একটা বইই ছিলো কোর’আন, তাও মাত্র কয়েকটি কপি। আর আমাদের মধ্যে পড়তে পারতেন মাত্র কয়েকজন, তারা পড়তেন আমরা শুনতাম আর তা কাজে পরিণত কোরতাম। যাই হোক, তোমরা আমাদের বেশ ভালো কোরে বুঝিয়ে দিলে যে, ফেকাহ কী জিনিস, কোর’আনের আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। এতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমরা করিনি। কারণ এতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা আল্লাহর রসুল (দ:) নিষেধ কোরে দিয়েছেন, বোলেছেন এ কোর’আন মুবিন, পরিষ্কার, সকলের সহজবোধ্য। রসুলাল্লাহও (দ:) কোর’আনের ব্যাখ্যা নিয়ে মতান্তরকে একেবারে কুফর বোলে সতর্ক কোরে দিয়েছেন। যাই হোক, এত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা আর পাণ্ডিত্যের পর তোমাদের জীবনে তাহলে কোর’আনের আইন আমাদের জীবনের চেয়ে আরও ভালো প্রভাব প্রতিফলন নিশ্চয়ই হোয়েছে? তোমরা আমাদের চেয়ে আরও ভালো মোসলেম হোতে পেরেছো। কিন্তু তাহলে এ দেড় হাজার বছর পরেও কেন তোমরা সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা কোরতে পার নি? ও ভালো কথা! এ পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখছি তোমরা নিকৃষ্টতম জাতি, অন্যান্য জাতির ঘৃণা ও অবজ্ঞার পাত্র। ওদের ধার, ঋণ, আর খয়রাতের উপর তোমরা বেঁচে আছো। সারা পৃথিবীজুড়ে তোমরা অন্যান্য সকল ধর্মের অনুসারীদের দ্বারা মার খাচ্ছ। এত কিছু আছে তোমাদের, তাহোলে তোমরা এত মার খাচ্ছো কেন? বসনিয়া হারজেগোভেনায়, সুদান, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে মার খাচ্ছ খ্রিস্টানদের হাতে; পশ্চিম এশিয়া, ফিলিস্তিনে, সিরিয়াতে মার খাচ্ছ ইহুদিদের হাতে; মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কমপুচিয়া, চীনে, ভিয়েতনামে মার খাচ্ছ বৌদ্ধদের হাতে; সমস্ত ভারত ও কাশ্মিরে মার খাচ্ছ হিন্দুদের হাতে। সকল ধর্মের মানুষ তোমাদের কুকুরের মতো পেটাচ্ছে, পাখির মতো গুলি কোরে মারছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে, ট্যাংক দিয়ে পিষে মারছে, তোমাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তোমাদের মেয়েদের ধোরে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হোচ্ছে, বেশ্যালয়ে বিক্রি করা হোচ্ছে। শুধু যে পৃথিবীর বড় বড় জাতিগুলোই এরকম কোরছে তাই নয়, ভারতের আসামের গাছ পাথরের উপাসক একটি পাহাড়ী উপজাতিও তোমাদেরকে গুলি কোরে, তীর মেরে, কুপিয়ে হত্যা কোরছে, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ কোরছে। সমস্ত পৃথিবীজুড়ে তোমরা এরকম লা’নতের পাত্র হোলে কেন? আল্লাহ তোমাদেরকে হেফাজত কোরছেন না কেন? আল্লাহ বোলেছেন আমরা যদি তাকে একমাত্র প্রভু স্বীকার কোরে তাঁর আদেশ নিষেধকে, তাঁর দীনকে পৃথিবীর মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি তবে তিনি আমাদের পৃথিবীতে সবার উপর আধিপত্য দেবেন, আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি কোরে রাখবেন (কোর’আন সুরা আন-নূর-৫৫)। আমরা সরাসরি তাই কোরেছিলাম, কোন ব্যাখ্যায় যাইনি। কারণ তাঁর দেখানো পথ সেরাতুল মোস্তাকীম- সহজ, সরল। তাঁর প্রতিশ্র“তি যে সত্য তাতো আমরা দেখলামই। আমাদের তিনি শ্রেষ্ঠ জাতিতেই পরিণত কোরেছিলেন। কিন্তু আমরা একটা কথা বুঝতে পারছি না তোমরা এত উন্নতি কোরে এত ভালো মোসলেম হোলে কিন্তু পৃথিবীতে তোমাদের এ অবস্থা কেন?
এইবার আমাদের ফুলানো বুকগুলি চুপসে যাবে। মুখগুলি কাচুমাচু হোয়ে যাবে। আমতা আমতা কোরে বোলব, যদিও কোর’আনের হাদিসের আইন শরিয়াহ নিয়েই আমরা এতো সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কোরেছি, এ বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি কোরে বিরাট শাস্ত্র গড়ে তুলেছি, ওটা কোরে আমাদের মধ্যে বহু মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়েছে এবং তাদের মধ্যে মারামারিও হোচ্ছে। কিন্তু সত্যি বোলতে কি, ও আইন, শরিয়াহ আমরা জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়েছি, জাতীয় জীবনে আমরা এখন পাশ্চাত্যের আইন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধি গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরেছি। আপনারা কিছু মনে কোরবেন না, জাতীয় জীবনে আল্লাহর আইন ইত্যাদি চালু কোরলে পাশ্চাত্যের সভ্য জাতিরা হাসবে, আমাদের অসভ্য ভাববে। কিন্তু তাই বোলে আমাদের খারাপ মোসলেম ভাববেন না, আমরা খুব নামাজী, আমাদের মসজিদে জায়গা পাওয়া যায় না, আমাদের মধ্যে বহুলোক নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন, আমরা রমজানের রোজা রাখি, হজ্ব করি এবং অনেকেই যাকাত দেই। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে বড় বড় পীর ফকীর আছেন, তারা তাসাওয়াফের কঠিন রেয়াযত করেন এবং আমাদের কোটি কোটি লোক তাদের মুরীদ আছেন। শুধু তাই নয়, আমরা লক্ষ লক্ষ লোকের বিশ্ব এজতেমা করি। জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ রসুলের আইন-কানুন বাদ দিলেও ব্যক্তি জীবনে আমরা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করি। আমাদের বক্তব্য শোনার পর তারা বোলবেন, এইবার আসল কথা বুঝলাম। আমরা তো তোমাদের অসংখ্য বই পত্তর, আলিশান মসজিদ, তোমাদের বিরাট বিরাট মাহফিল এজতেমা দেখে ভেবেছিলাম মোসলেম জাতি আমাদের সময়ের চেয়ে কতো প্রগতি কোরেছে, আমাদের তো তোমাদের সামনে নিজেদের মোসলেম বোলতে লজ্জাই কোরছিল। কিন্তু এখন বুঝলাম তোমরা আর আমরা এক জাতি, এক উম্মাহই নই। যে আল্লাহর আইন, জীবনব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবীতে অন্যায়, অশান্তি, অবিচার, রক্তপাত বন্ধ কোরতে, এবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী কোরতে আল্লাহর রসুল (দ:) ও আমরা স্বর্বস্ব ত্যাগ কোরে সংগ্রাম কোরেছিলাম, আল্লাহর সেই আইনকেই, সেই জাতীয় জীবন ব্যবস্থাকেই তোমরা বর্জন কোরে ইহুদি-খ্রিস্টানদের তৈরি আইন ও জীবন ব্যবস্থা তসলিম কোরে নিয়েছো। তোমরা তো মোশরেক- আল্লাহর অংশীবাদী। জানিনা, কোন্ মন্ত্রবলে আমাদের তোমরা ক্ষণকালের জন্য তোমাদের এই যুগে নিয়ে এসেছো। কিন্তু নিঃসন্দেহে একথা বোলতে পারি যে, আমাদের সঙ্গে যদি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বিশ্বনবীকে (দ:) আনতে পারতে তবে তিনি এখনই আমাদের আদেশ দিতেন তোমাদের বিরুদ্ধে জেহাদ কোরতে। ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ বিশ্বাসীতো আরবের মোশরেকরাও ছিলো, খ্রিস্টান আর ইহুদিরাও ছিলো তোমাদের মতো। জেহাদ কোরেছিলাম তো জাতীয় জীবনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য। চোল্লাম, আল্লাহ তোমাদের মাফ কোরুন একথাও বোলতে পারছি না। কারণ আল্লাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, তিনি ইচ্ছা হোলে সমস্ত রকম গুনাহ মাফ কোরবেন কিন্তু শেরক ক্ষমা কোরবেন না (কোর’আন সুরা আন-নিসা-৪৮)। তোমরা বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো দিচ্ছো আল্লাহ তোমাদের পথ প্রদর্শন কোরুন, হেদায়েত কোরুন।

No comments:

Post a Comment