Thursday, November 26, 2015

গণতন্ত্র: কেতাবে কতটা আর গোয়ালে কতটা? -রিয়াদুল হাসান

গণতন্ত্র: কেতাবে কতটা আর গোয়ালে কতটা? -রিয়াদুল হাসান


পশ্চিমাদের কাছ থেকে কথা শিখে (ষবধঢ় ৎবধফরহম) আমরাও একটি কথা বলতে দারুণ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, গণতন্ত্রের সঠিক চর্চাই সকল সমস্যার সমাধান। এই কথাকে আশ্রয় করে গণতান্ত্রিক দলগুলো একে অপরকে গণতন্ত্রের অধিকতর চর্চা করার উপদেশ প্রদান করে থাকে। কেতাবে যাই লেখা থাক বাস্তবে গণতন্ত্রের যে করাল রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি তা বড়ই আতঙ্কজনক। দুনিয়াময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়। এদেশেও তা হয়। গণতন্ত্রের নামে অন্যের অধিকার হরণ করা হয়, অধিকার আদায়ের জন্য কথায় কথায় হরতাল ডাকা হয়, সাধারণ মানুষকে নাস্তানাবুদ করা হয়, যাবতীয় সহিংস কর্মাকাণ্ড চালানো হয়, কার্যালয় ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ, কারখানায় লক আউট করা হয়। এভাবে গণতন্ত্রের নামে বহু অপকর্ম জায়েজ করা হয়। রাজনীতিক নেতারা গণতন্ত্রের নামে সব রকম অপকর্ম করে সেটার দায় চাপিয়ে দেয় জনগণের উপর যে জনগণ মেনে নেবে না, জনগণ প্রতিরোধ করেছে ইত্যাদি। গণতন্ত্র যখন প্রতারণার হাতিয়ার সেই গণতন্ত্রকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ওষুধ বলে বিষ খাওয়ানো আর চলবে না।
কোনো সভ্য মানুষ এই জাতীয় গণতন্ত্র মানতে পারে না এবং এ জাতীয় গণতন্ত্র দিয়ে কোনো দেশ সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নতি করতে পারে না। যে গণতন্ত্রের কারণে গত ৪৪ বছরে জাতিটি একদিনের জন্যও স্বস্তি পায় নি, যার দ্বারা প্রতিটি বিষয়ে জাতি বিভাজিত হয়ে যায়, সর্বদা দাঙ্গা-বিবাদ করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়, জাতীয় স্বার্থেও জাতি এক হতে পারে না, অবান্তর বিষয় নিয়ে হানাহানি হয়, একটা জাতি টুকরো টুকরো হয়ে যায়, নিজের দলের লোকেরা পদের জন্য নিজেদের হত্যা করে, এ জাতীয় গণতন্ত্র দিয়ে পুরো দেশ, জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এটাই সেই ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি যার দাসত্ব আমরা স্বেচ্ছায় করে চলছি।
আশা করি এ সহিংসতা জাতিবিনাশী গণতন্ত্রের কথা আমাদের সংবিধানে লেখা নেই। সেখানে যে গণতন্ত্রের কথা লেখা আছে তা হলো, ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীলতা, অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সকলের বাক স্বাধীনতা, গবেষণার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, কাউকে আঘাত না করে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন দিয়ে সরকার গঠনের স্বাধীনতা, সরকারকে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের মতামত প্রদানের স্বাধীনতা ইত্যাদি। এই যদি গণতন্ত্র হয়ে থাকে তবে আমরা এই সব নীতিকে অবশ্যই সমর্থন করি, এগুলোর বাস্তবায়ন চাই। কিন্তু গরু তো শুধু কেতাবে থাকলে হবে না, গোয়ালেও থাকা চাই।
দাজ্জাল অর্থাৎ পশ্চিমা ভোগবাদী সভ্যতার সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হাদীসে এবং বাইবেলে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তার নাম। দাজ্জাল শব্দের অর্থ হচ্ছে চাকচিক্যময় প্রতারক। তার প্রতিটি জিনিসের বাইরেটা খুবই মনোহর, আকর্ষণীয় কিন্তু ভিতরটা মিথ্যা আর প্রতারণা দিয়ে পূর্ণ। অপর একটি হাদীসে তাকে মসীহ আল কায্যাব বা মিথ্যা দিয়ে আবৃতকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার উদ্ভাবিত কয়েকটি প্রতারণামূলক শব্দ হচ্ছে: ১. গণতন্ত্র, ২. সাম্যবাদ, ৩. মানবাধিকার, ৪. আইনের শাসন, ৫. বিশ্বায়ন, ৬. অবাধ তথ্যপ্রবাহ, ৭. নারীর ক্ষমতায়ণ, ৮. বাক-স্বাধীনতা, ৯.মুক্তচিন্তা, ১০. ধর্ম-নিরপেক্ষতা, ১১. অ-সাম্প্রদায়িকতা, ১২. উন্নত বিশ্ব- অনুন্নত বিশ্ব, উন্নয়নশীল বিশ্ব। প্রতিটি শব্দের অর্থ একরকম আর বাস্তবায়ন তার উল্টো। প্রতিটি শব্দ একেকটি মরিচিকা

No comments:

Post a Comment