Thursday, November 26, 2015

সত্য এসে গেছে মিথ্যা বিদূরিত হবেই

সত্য এসে গেছে মিথ্যা বিদূরিত হবেই -রাকীব আল হাসান



আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শুধু মুসলিমই নয় বিরাট একটা জনসংখ্যা সনাতন ধর্মের অনুসারীও রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। আমরা বিশ্বাস করি সকল ধর্মই একই স্রষ্টা মহান আল্লাহ পাকের নিকট থেকে আগত। প্রতিটি ধর্মই মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করে, মানবতা ও শান্তির কথা বলে। কাজেই আমরা সকল ধর্মের অনুসারীদের উদ্দেশ্যেই তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু সত্যবাক্য তুলে ধরে আলোচনা করবার চেষ্টা করব এই কলামে। আজ আলোচনা করব পবিত্র বাইবেল থেকে।
এই দুনিয়াতে তোমরা নিজেদের জন্য ধন-সম্পদ জমা করো না। এখানে মরচে ধরে ও পোকায় নষ্ট করে এবং চোর সিঁদ কেটে চুরি করে। কিন্তু বেহেশতে মরচেও ধরে না, পোকায় নষ্টও করে না এবং চোর সিঁদ কেটে চুরিও করে না। তাই বেহেশতে নিজেদের জন্য ধন জমা কর, কারণ তোমার ধন যেখানে থাকবে তোমার মনও সেখানে থাকবে। (মথি- ৬:১৯-২২)। এই পবিত্র বাণী যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করতাম তবে কি অর্থের জন্য, স্বার্থের জন্য হানাহানিতে লিপ্ত হতাম? এই নশ্বর পৃথিবীতে আমরা স্বার্থের জন্য কি-না করছি। সকল ধর্মেই এভাবে দানের কথা বলা হয়েছে, সঞ্চয়ের কথা বলা হয়নি, নিজেকে অন্যের তরে বিলিয়ে দেবার কথা বলা হয়েছে। যে অন্যের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেবে, ভোগের পরিবর্তে ত্যাগ করবে সে তা জান্নাতে গিয়ে, স্বর্গে গিয়ে, হ্যাভেনে গিয়ে অবশ্যই পাবে। প্রতিটা মানুষের মধ্যে যদি ধর্মের এই শিক্ষাটি অর্থাৎ ত্যাগের মানসিকতা থাকত তবে আমাদের পৃথিবীর রূপ আজ অন্য হতো। কিন্তু আমরা সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে গ্রহণ করে নিয়েছি ধর্মহীন, স্রষ্টাহীন, আত্মাহীন এক বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতাকে। সেটা হলো পাশ্চাত্য সভ্যতা। এর ফল কী হয়েছে?
মানুষ আজ সভ্যতার চূড়ায় বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে তার লক্ষ লক্ষ বছরের অস্তিত্বের মধ্যে আজকের মতো সার্বিক সফলতা তার আর কখনো হয় নি। তার পেছনের লক্ষ বছরের অতীতের দিকে সে কৃপা আর অনুকম্পার দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে দেখছে। আকাশের বিদ্যুৎকে সে বেঁধে চাকরের মতো কাজ করাচ্ছে, নদীর গতিকে সে মোড় ফিরিয়ে ফসল ফলাচ্ছে, তার গতি রুদ্ধ করে বিদ্যুত তৈরি করছে, সে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরের চাঁদে গিয়ে ফিরে এসেছে। শুধু তাই নয়, সে জানে আর কিছু দিন পর সে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু এর পরও পৃথিবীর মানুষ আজ বিক্ষুদ্ধ। বাইরে যত সফলতার অহংকার থাকুক মনের গভীরে মানুষ আজ দেউলিয়া, দিশাহারা। যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুলুন, দেখবেন পৃথিবীময় অশান্তি, ক্রোধ, রক্তারক্তি, অন্যায়, অবিচার আর হাহাকারের বর্ণনা। রাষ্ট্রগতভাবে যুদ্ধ, দলগতভাবে হানাহানি, ব্যক্তিগতভাবে সংঘাত আর রক্তারক্তির হৃদয়বিদারী বর্ণনা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে, বিশেষ করে যে সব দেশ এই যান্ত্রিক সভ্যতাকে গ্রহণ করেছে, সে গুলোতে প্রতি বছর খুন, যখম, ডাকাতি, ধর্ষণ, বোমাবাজি আর অপহরণের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। এমন কি বেগুনাহ, নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত এই মানুষরূপী শয়তানদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এক দিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্য দিক দিয়ে ঠিক তেমনিভাবে সে সব রকমের অন্যায়ের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছুচ্ছে। মানুষের আত্মা আজ ত্রাহী সুরে চিৎকার করছে কেন? কেন মানুষ তার জ্ঞান আর বিজ্ঞানের প্রগতিকে মনুষ্যত্বের উন্নতির পরিবর্তে তাকে অবনতির গভীর অতলে নিয়ে যাচ্ছে? তার যে অতীত ইতিহাসের দিকে মানুষ কৃপার দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে তার যে কোন বিশেষ মুহূর্ত আজকের যে কোন বিশেষ মুহূর্তের সঙ্গে তুলনা করলে সে দেখবে যে, মানুষ হিসাবে সে বর্তমানে কত নিচুতে নেমে গেছে।
এই যে আত্মিক অধঃপতন এর কারণ হলো খ্রিষ্টানরা যিশুর শিক্ষা তথা বাইবেলের শিক্ষা পরিত্যাগ করেছে, সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বেদের শিক্ষা, গীতার শিক্ষা, মহাভারতের শিক্ষা পরিত্যাগ করেছে, বৌদ্ধরা পরিত্যাগ করেছে মহামতী গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা আর মুসলিমরা রসুলাল্লাহর (সা.) এর আদর্শ আর পবিত্র কোর’আনের শিক্ষা ত্যাগ করেছে। সকল জাতিই জাতিগতভাবে ধর্মের শিক্ষা ত্যাগ করে পদে পদে পাশ্চাত্যদের অনুকরণ করে চলেছে।
পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে- “চোখ শরীরের বাতি। সেইজন্য তোমার চোখ যদি ভাল হয় তবে তোমার সমস্ত শরীরই আলোতে পূর্ণ হবে। কিন্তু তোমার চোখ যদি খারাপ হয় তবে তোমার সমস্ত শরীর অন্ধকারে পূর্ণ হবে। তোমার মধ্যে যে আলো আছে তা যদি আসলে অন্ধকারই হয় তবে সেই অন্ধকার কি ভীষণ!” (মথি- ৬:২৩-২৪)।
একইভাবে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা তথা সত্যবাণী, সত্যজ্ঞান আমাদের জীবনের বাতি। এই বাতি যখন আমরা হারিয়ে ফেলেছি তখন আমাদের জীবন হয়ে গেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমরা এখন সেই অন্ধকারকেই আলো বিবেচনা করছি। ধর্মের বিকৃত শিক্ষা আরও ভয়ানক অন্ধকার। সেই ভয়ানক অন্ধকারেই আমরা নিমজ্জিত। এখন সবারই উচিত তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করা, সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।
হেযবুত তওহীদ সেই সত্যের দিকে, আলোর দিকে আহ্বান করছে। হেযবুত তওহীদ সকল ধর্মেরই প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরে মানুষকে মানবতার দিকে, ঐক্যের দিকে আহ্বান করছে। অতি শীঘ্রই সমগ্র মানবজাতি আবার সত্যকে গ্রহণ করবে আর মিথ্যাকে পরিত্যাগ করবে। সকল অন্ধকার দূরীভূত হবে। এই সত্য যে যত আগে গ্রহণ করবে সে তত সম্মানিত হবে। হেযবুত তওহীদ সকল ধর্মের মানুষকে আহ্বান করছে ধর্মের সেই প্রকৃত শিক্ষার দিকে যা শাশ্বত, চিরন্তন। যে শিক্ষাগুলোর কথা সকল ধর্মেই বলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment