Sunday, December 20, 2015

সকলেই চান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা, কিন্তু কী দিয়ে???

সকলেই চান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা, কিন্তু কী দিয়ে? -রিয়াদুল হাসান


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ধ বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে, এমন বিষয় স্বীকার করে নিতে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ আছে। কিন্তু বিষয়টি স্বীকার করে নিলে বাংলাদেশের অবস্থা সিরিয়া কিংবা পাকিস্তানের মতো হবে এবং বাংলাদেশে ওপর হামলে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। এটা যাতে না হয়, সেজন্যে জাতি হিসেবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। (বিবিসি বাংলা ০৮/১১/২০১৫)
ধসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরিয়ে দেওয়া, আইনের হাতে সোপর্দ করা এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা লাগবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও শক্তিশালী করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের মানুষকে সচেতন করা। সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলেই দেশকে আরও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব। (দৈনিক প্রথম আলো ১৭/১১/২০১৫)
ধসাংবাদিকদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লেখনির মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। (দৈনিক সমকাল, ০১/০৭/১৫)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ধ শক্তি প্রয়োগ না করে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স¤পৃক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মসজিদে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। এ জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। (দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ১০/০৪/২০১৪)
ধজঙ্গিদের পুরোপুরি প্রতিহত করতে সরকারের সঙ্গে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। (লেটেস্ট বিডি নিউজ ১০/১১/২০১৫)
ধযে কোনো মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে। (দৈনিক ইত্তেফাক ১৩/১১/২০১৫)
আই.জি.পি এ কে এম শহীদুল হক
ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে চার-পাঁচটি ছেলে দুই-তিনটা মেয়েকে শ্লীলতাহানি করল। যাদের সামনে এই ঘটনা ঘটাল, সেই পাবলিকরা তাদের কেন ধরল না। পাবলিকই তো তাদের শায়েস্তা করতে পারত। প্রত্যেক নাগরিকের আইনগত অধিকার আছে, তাদের সামনে অপরাধ ঘটলে তারাই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। এতে পুলিশের গ্রেপ্তার করা লাগত না। (দৈনিক প্রথম আলো- ১৪/০৫/২০১৫)
র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ
ধ দেশে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। দেশে আইএস এর কোন অস্তিত্ব নেই। সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী আইএস এর অস্তিত্ব আছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ ৯/১১/২০১৫)
ধ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করবে র‌্যাব। (দৈনিক যুগান্তর ১৮/০২/২০১৫)
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম
ধ দেশের চলমান সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ দমনে দেশের জনগণের সহযোগিতারও দরকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান যাতে রোধ করা যায় তার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ রোধে আরেকটি বড় সমস্যা হলো, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে তারা এর থেকে আর ফিরে আসতে পারে না। কারণ তারা মনে করে, এটা তাদের ঈমানি দায়িত্ব। আর এ কারণেই তাদের অনেকে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে পুরনো কাজে ফিরে যায়। তবে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কঠোর আইনেরও প্রয়োজন আছে। (এটিএন- টক শো – নিউজ আওয়ার এক্সট্রা, দৈনিক কালেরকণ্ঠ ৩ মার্চ ২০১৫)
ধ ঞবৎৎড়ৎরংস এর পিছনে একটি ওফবড়ষড়মু থাকে। ওফবড়ষড়মু-কে ওফবড়ষড়মু দিয়ে ফাইট করতে হবে। এটাকে বলা হয় ডধৎ ড়ভ ওফবধং। তারা যে ওফবড়ষড়মু প্রচার করছে যেমন কোর’আনের আয়াত কিম্বা কোন হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা কোরে মানুষকে আকৃষ্ট কোরছে। এটার সঠিক ব্যাখ্যা জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। মোদ্দাকথা অধিৎবহবংং একটি বড় ব্যাপার। অধিৎবহবংং এর কাজটা পুলিশ বা খধি ঊহভড়ৎপরহম অমবহপু করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু অন্যদেরও এগিয়ে আশা দরকার। (টকশো- মাছরাঙা টেলিভিশন, ২৮/০৮/২০১৩)
বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট নাগরিক
ধ এখন যে সংকট বাংলাদেশের জনগণ মোকাবিলা করছে, তাকে শুধু রাজনৈতিক বললে হবে না। এটাকে আদর্শিকভাবেও মোকাবিলা করতে হবে। (জুলফিকার আলী মানিক, সাংবাদিক, ঢাকা ট্রিবিউন, এটিএন- টক শো – নিউজ আওয়ার এক্সট্রা, দৈনিক কালেরকণ্ঠ ৩ মার্চ ২০১৫)
ধএ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ হবে, উভয় দেশের (পাকিস্তান ও মিয়ানমার) জনগণকে এই জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে স¤পৃক্ত করা। জঙ্গিরা যাতে ইসলামের নামে সাধারণ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগকে বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে উভয় দেশের সরকারকেই। একই সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে সচেতন জনগোষ্ঠীকেও। (দৈনিক কালেরকণ্ঠ সম্পাদকীয় ২২ নভেম্বর ২০১৪)
ধদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ এতোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যে তা বর্তমানে জঙ্গিবাদে রূপ নিয়েছে। এই জঙ্গিবাদ রুখতে বিকল্প হিসেবে জনগণের শক্তি গড়ে তোলার সময় হয়েছে। (রাশেদ খান মেনন, ৮/০৮/২০১৫)
ধ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে মতাদর্শভিত্তিক সন্ত্রাস নির্মূল অথবা স্থায়িভাবে দমন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সমাজকে এ ধরনের হুমকি থেকে নিরাপদে রাখতে হলে বহুমুখী তৎপরতার প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন রয়েছে একটি জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই কালো থাবাকে প্রতিহত করা। (ব্রিগেডিয়ার অব. সাখাওয়াত হোসেন, প্রথম আলো, ১২/১১/১৪)
ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর কু-আদর্শকে পরাজিত করতে হলে সু-আদর্শের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দরকার। (মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.), দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২২/০৭/১৫)
ধবাংলাদেশের ৮৯-৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাদের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে অহেতুক ধর্মকে টেনে আনেন, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করতেও দ্বিধা করেন না। এসব বক্তৃতা-বিবৃতিতে যে ধর্মপ্রাণ মানুষ আহত হতে পারেন, তাও মনে রাখেন না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্মান্ধ নন। তবে ধর্মপ্রাণ মানুষ আহত হন এমন কিছু করলে জঙ্গিবাদীরা সেই সুযোগ নিতে পারে (এম সাখাওয়াত হোসেন, দৈনিক যুগান্তর ৪/০৩/২০১৪)।
ধবাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূূল হয়েছে, এমন কথা আমরা কখনো বলি নি। যদি কেউ বলে থাকেন, তাঁরা সত্য বলেন নি। কাউন্টার টেররিজম ও অ্যান্টি টেররিজম দুটি আলাদা বিষয়। অ্যান্টি টেরোরিজম বা সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের নির্মূল করা যায়, তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু তাদের যে আদর্শ বা দর্শন জঙ্গিবাদ তা নির্মূল করতে হবে উন্নত রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে (শাহেদুল আলম খান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, দৈনিক প্রথম আলো ২৬/০২/২০১৪)।
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত মন্তব্যগুলোর মধ্যে খেয়াল করুন কয়েকটি বিষয় বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে:
১. শুধু শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না
২. কারণ জঙ্গিবাদের সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ জড়িত
৩. তাই একে মোকাবেলা করতে একটি সঠিক ধর্মীয় আদর্শ লাগবে
৪. তা দিয়ে জনগণকে সচেতন/উদ্বুদ্ধ/সম্পৃক্ত করতে হবে
৫. বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে
৬. এর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে
৭. এই কাজে দেশের সমস্ত জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে
বলা হচ্ছে যে জনগণকে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং এজন্য জনগণকে একটি ধর্মীয় আদর্শ দ্বারাই প্রণোদিত (গড়ঃরাধঃব) করতে হবে। এই আদর্শটি কোথায় পাওয়া যাবে? এটা কি মাদ্রাসায় শেখানো হয়? এটা কি আলেমদের কাছে আছে? না।
মাদ্রাসায় শেখানো হয় সুরা কেরাত, কোরান-হাদীসের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, আরবি ব্যকরণ, মাসলা-মাসায়েল ইত্যাদি। মাদ্রাসায় জীবনমুখী কোনো শিক্ষা না থাকায় বাধ্য হয়ে ধর্মীয় শিক্ষাকেই জীবিকার মাধ্যম হিসাবে তারা গ্রহণ করেন। তাদেরকে ঐ ত্র“টিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে প্রায় অন্ধ বানিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকায় জঙ্গিবাদের প্রতি তারা অনেকেই মৌন সমর্থন পোষণ করেন, হয়তো সুযোগের অভাবে যোগদান করতে পারেন না। এক কথায় মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কোনো শিক্ষা সেখানে নেই, সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় তো নেই-ই। সেখানে শুধু একচেটিয়াভাবে জঙ্গিবাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে, কিন্তু পাল্টা কোনো আদর্শ সেখানে শেখানো হচ্ছে না। ফলে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে মানুষ বের হচ্ছে।
আল্লাহ সেই সঠিক ইসলাম যা জঙ্গিবাদসহ ধর্মের নামে চলা যাবতীয় বিকৃতিকে অপনোদন করতে সক্ষম তা দয়া করে হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। সেই যুক্তি তথ্য প্রমাণগুলো উপস্থাপন করে যদি এই জাতির ষোল কোটি মানুষকে সচেতন করে তোলা যায় তাহলে জঙ্গিবাদের সংকট থেকে আমরা রক্ষা পাবো ইনশা’আল্লাহ।

No comments:

Post a Comment