Wednesday, December 23, 2015

*বরাবর আইজিপি* প্রকৃত ইসলামের কথা ধর্মব্যবসায়ীরাকী করে বলবেন???

*বরাবর আইজিপি* প্রকৃত ইসলামের কথা ধর্মব্যবসায়ীরাকী করে বলবেন?- রিয়াদুল হাসান


২০০৯ সন থেকে একটি কথা হেযবুত তওহীদ ক্রমাগত বলে যাচ্ছে, তা হলো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত লড়াইটা হতে হবে ‘আদর্শ’ দিয়ে। শুধু শক্তিপ্রয়োগ জঙ্গিদের ‘জজবা’ আরো বৃদ্ধি করবে, তারা আরো উদ্দীপ্ত হবে শহীদ হওয়ার জন্য। তাদের আক্রমণ আরো কৌশলী হবে, শানিত হবে, বেপরোয়া হবে। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এবং বর্তমান সরকারকেও লিখিত প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, তাঁকে সুযোগ দেওয়া হলে তিনি জঙ্গিবাদের ভুলগুলো কোর’আন, হাদীস, ইতিহাস থেকে যুক্তি, তথ্য, উপাত্ত উল্লেখ করে এই মতবাদের অসারতা প্রমাণ করে দিতে সক্ষম হবেন। অতঃপর সরকার যদি সেই যুক্তি-তথ্য, উপাত্তগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করে তাহলে গণসচেতনতা সৃষ্টি হবে, ফলে নতুন করে আর কেউ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকবে না। বাংলাদেশের মানুষের জঙ্গিবাদের দিকে ঝোঁকার একটিই কারণ (চংুপযড়ষড়মু), আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আখেরাতে মুক্তি। তারা চান সশস্ত্র পন্থায় প্রচলিত বিকৃত ইসলামটাকে রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে। যদি মানুষকে ইসলাম থেকে যুক্তি তুলে ধরে দেখানো যায় যে ঐ পথটি সত্যিই ইসলাম-সম্মত নয়, তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের মুক্তি ঐ পথে আসবে না এবং জঙ্গিরা যেটাকে ইসলাম বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেটা ইসলামই নয়- অন্য কিছু, তাহলে যারা ইতোমধ্যেই জঙ্গিবাদের দ্বারা প্রভাবিত তারাও তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তাদের নৈতিক শক্তি হারাবে।
দুঃখ লাগে যখন চোখের সামনে আমার নিজের জাতি বিপথে চলে যায় আর তাকে সঠিক পথ দেখানো হলেও যারা জাতির কর্ণধার তারা পুরো জাতিকে নিয়ে ধ্বংসের পথেই অগ্রসর হতে থাকেন। ফেরারও একটি সময় থাকে, সেই সময় পার হয়ে গেলে আর ফেরাও সম্ভব হয় না। ২০০৯ থেকে ২০১৬ এর দ্বারপ্রান্তে আমরা উপস্থিত। এই সাতটি বছর আমরা কতভাবেই না জাতির কর্ণধারদেরকে বলছি, জাতিকে বলছি যে, আপনারা ভুল করছেন। আমরা সারা দেশে গত তিন বছরে ৪০ হাজারেরও বেশি পথসভা, সেমিনার, আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে মানুষের কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। লক্ষ লক্ষ হ্যান্ডবিল, বই, পুস্তিকা প্রকাশ করে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ছোট হলেও একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করছি যার নাম দৈনিক বজ্রশক্তি। এর আগে দৈনিক দেশেরপত্র ও দৈনিক নিউজে আমাদের বক্তব্য মুক্তভাবে প্রকাশ করেছি। আমাদের এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় সকল এদেশের বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সাংসদ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পি, সমাজকর্মীসহ আপামর জনগণ আমাদেরকে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু যারা জাতির কর্ণধার তাদেরকে যতই বলছি যে, জঙ্গিবাদের সমাধান আছে আমাদের কাছে, দেখুন-শুনুন-বিবেচনা করুন। কিন্তু তারা যেন বধির, দৃষ্টিহীন। আমার এই কথায় কেউ যদি মনক্ষুণœ হন তাহলে আমি দুঃখিত নই, বরং একটু স্বস্তি পাবো এই ভেবে যে তাদের এই অনুভূতিটুকু এখনও আছে।
দিন দিন জঙ্গিবাদ ভয়াল রূপ নিচ্ছে, জাতীয় সংকট ছিল তা এখন আন্তর্জাতিক সংকটের সঙ্গে একীভূত হয়ে দেশের অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলার দ্বারা ইসলাম-বিদ্বেষী লেখক, বিদেশী, মিশনারী, শিয়া, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে। এতদিন যারা উটপাখির মতো চোখ বালুর নিচে গুঁজে ছিল তারাও এখন স্বীকার করছেন যে, হ্যাঁ, সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে। আজ ২০১৬-র দ্বারপ্রান্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হচ্ছে, যদিও অন্ধরা এখনও দেখছে না। তারা সেদিনই দেখবে যেদিন তাদের বাড়ির ছাদে বোমা পড়বে। আমরা সেই ২০১৪ সনে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদচিত্রের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনিবার্য পদধ্বনির আওয়াজ এ জাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং সেই থেকে নিয়মিত বজ্রশক্তি পত্রিকায়, ফেসবুকে, ডকুমেন্টারি চিত্র তৈরি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব বোঝাচ্ছি। না, কোনো আধ্যাত্মিক শক্তিবলে নয়, জাগতিক হিসাব-নিকাশের সমীকরণ দিয়ে। স্বার্থান্ধ মানুষ বিশ্ব নিয়ে ভাবে না, আর পশ্চিমা জীবনব্যবস্থা জাতির রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে প্রান্তিক মানুষটিকেও নৈতিকতা-বিবর্জিত ও আত্মকেন্দ্রিক হতে শিখিয়েছে। দাসের চাহিদা থাকে দু মুঠো অন্নের আর শোবার একটি ঘরের। তেমনি আমাদের জাতির গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবাই এই নিজের গ্রাসাচ্ছদনের ঊর্ধ্বে উঠে কিছু ভাবতে পারে না। আর যা থাকে তা হচ্ছে সাধ্যমত জীবন উপভোগ আর সৌখিনতা। এভাবেই চলছে সবাই। গাড়ির যাত্রীরা ঘুমিয়ে গেছে, গাড়ির চালকও ঘুমিয়ে গেছে, ধ্বংস হবে না কেন? চালককে ডেকে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা কারণ আমরা নিজেরা বাঁচতে চাই, চালক, যাত্রী সবাইকেও বাঁচাতে চাই।
আমাদের কথা হচ্ছে, গত সাত বছরে যদি সরকার আমাদের বক্তব্য আমলে নিতেন দেশের এই পরিস্থিতি হতো না। জঙ্গিবাদের পক্ষে কোনো কথা বাংলাদেশে কেউ বলতে পারত না, জনগণই তাদের কণ্ঠরোধ করতো। কোনো ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি লেবাস সুরত ধরে আলেম সেজে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বিপথে চালিত করে তাদেরকে দিয়ে দেশ ও জাতির অকল্যাণের জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ডেকে আনতে পারত না। যাহোক, যা হয় নি তা বলা বাতুলতা। এখন দেরিতে হলেও ঠিকই সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলছেন যে, আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে, কোর’আন হাদীস দিয়ে বোঝাতে হবে। কেউ দেখে শেখে কেউ ঠেকে শেখে। ৬ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দফতরে মতবিনিময় সভায় ওলামা মাশায়েখদের নিয়ে যে বৈঠক হয় সেখানে বক্তারা সমবেতভাবে বলেন, “জঙ্গিবাদের মুখোশ খুলতে হবে কোর’আন-হাদীসের আলোকে”। ওদিকে প্রভুদের দেশে অনুষ্ঠিত ওয়াশিংটন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সেমিনারে বক্তারা বলেন, “আইএসকে পরাজিত করতে বোমা বর্ষণ নয়, প্রয়োজন আদর্শগত যুদ্ধ”। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সেই ২০১৩ সনেই ‘ডধৎ ড়ভ ওফবধং’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি একটি টকশোতে বলেছিলেন, ‘একটি ভ্রান্ত আদর্শের বিপরীতে সঠিক আদর্শ দিয়ে লড়াই করতে হবে। কোর’আন হাদীস থেকে জঙ্গিবাদের বিষয়গুলোর সঠিক ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরতে হবে। পুলিশ যদি এটা করতে পারে ভালো, তবে অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
এই অন্যরা কারা? এটা সুপ্রতিষ্ঠিত ধারণা যে, কোর’আন হাদীসের কর্তৃপক্ষ ইসলামিক ফাউন্ডেশন আর মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম-ওলামা, মাশায়েখরা। সুতরাং তারাই এখন সরকারের একমাত্র ভরসা। তাই সরকার তাদেরকে ডেকে খোতবায়, ওয়াজে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য দায়িত্ব দিচ্ছেন। তাদের পেছনে বিরাট বাজেট করছেন। সরকারের এই কাজ দেখে সুকান্তের দুটো লাইন মনে পড়ছে,
জীবন ললিত নয় আজকে, ঘুঁচেছে সকল নিরাপত্তা,
বিফল স্রোতের পিছুটানকে, শরণ করেছে ভীরু সত্তা।
সরকারকে বলছি, আপনারা আলেম-ওলামাদের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন মানেই ‘বিফল স্রোতের পিছুটানে’ ভেসে যাওয়ার পন্থা গ্রহণ করেছেন। অতীত ও বর্তমান থেকে শিক্ষা নিন, সতর্ক হোন। এর আগে আমরা দেখেছি যে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মওলানা আবুল কালাম আজাদ সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে টিভিতে প্রোগ্রাম করে, পোস্টারিং করে, বায়তুল মোকাররমে খোতবায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করছেন। তিনি এখন ফাঁসির আসামী হয়ে দেশান্তরী। একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদারদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের কাজে তিনি স্বেচ্ছাসেবক (রাজাকার) হিসাবে সহযোগিতা করেছেন। এই রকম আলেম, মওলানারাই তো আজ ধর্মের কর্তৃপক্ষ। একটি জিনিস সরকার কীভাবে বিস্মৃত হয় আমরা বুঝি না, ইংরেজিতে একটি কথা আছে – গড়হবু যধং হড় সড়ৎধষ ড়ঢ়রহরড়হ – টাকার কোনো নৈতিক মতামত থাকে না। একজন বিচারক যখন টাকা খায় তখন তার উপর ফরিয়াদীর আস্থা থাকে কি? তেমনি জনগণের চোখে ধর্মব্যবসায়ীদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা আপনারা অবশ্যই বিচার করবেন। একজন রাজাকারের গাওয়া জাতীয় সঙ্গীত যেমন চেতনার বদলে ধিক্কার জাগায়, একজন ধর্মব্যবসায়ীর মুখে ধর্মের কথাও তেমনি অসার, প্রাণহীন ও ধিক্কারযোগ্য। তারা বড়জোর যেটা পারেন সেটা হলো লক্ষ লক্ষ মানুষকে অমুক কাফের, তমুক নাস্তিক-মুরতাদ ইত্যাদি ফতোয়া দ্বারা উত্তেজিত করে বিধ্বংস ঘটাতে। ৫ মে এর বড় উদাহরণ। সেদিন কতজন মানুষ মারা গেছে জানি না, একজনও যদি গিয়ে থাকে সেই প্রাণের বিনিময়ে দেশ-জাতি বা ইসলামের কোনো কল্যাণ কি সাধিত হয়েছে? যারা তাদের ডেকে এনেছিল তারা তো সেই আগের ব্যবসাতেই ফিরে গেছেন, হয়তো নিজেদের ইসলামপ্রীতি ও দাপট দেখানোর জন্য নতুন কোনো সুযোগের অপেক্ষা করছেন।
এই হলো আলেম-ওলামাদের নৈতিক অবস্থানের দিকটি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, যে কোনো লড়াইয়ে অস্ত্র প্রয়োজন হয়। আদর্শিক লড়াইয়ের অস্ত্র হচ্ছে যথাযথ (অঢ়ঢ়ৎড়ঢ়ৎরধঃব), সঠিক (ঈড়ৎৎবপঃ), অকাট্য (ওৎৎবভঁঃধনষব) যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ যা শত্র“র নৈতিক মনোবলকে ও প্রত্যয়কে (গড়ৎধষব) ধ্বংস করে ফেলবে, তার মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে। আলেম ওলামাদের কাছে এমন অস্ত্র কি আছে? নেই।
তথাপি আইজিপি সাহেব আলেম-ওলামাদের বললেন মানুষকে প্রকৃত ইসলামের কথা শোনাতে। ভালো লাগলো কথাটা শুনে কারণ এখানে অন্তত একটি ইতিবাচক দিক আছে যে তিনি অর্থাৎ সরকার আদর্শিক লড়াইয়ের গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি সবিনয়ে তার উদ্দেশে বলতে চাই, প্রকৃত ইসলাম তাদের কাছে থাকলে তো তারা শেখাবে? যা তাদের কাছে নেই তা তারা কীভাবে শেখাবে? আপনার গন্তব্য সঠিক কিন্তু পথটি ভুল। ঐ পথে যতক্ষণ চলবেন ততক্ষণ আপনার সরকারের সময়, শ্রম, অর্থ অপচয় হবে আর সবচেয়ে বড় কথা ব্যর্থতার হতাশাও আপনাকে ঘিরে ধরবে। দেরি হয়ে যাবে। আপনি এক অন্ধকে দিয়ে আরেক অন্ধকে পথ দেখাতে চান? ধর্মব্যবসা আল্লাহ হারাম করেছেন আর এই শ্রেণিটি ধর্মব্যবসা করেই চলেন। ধর্মব্যবসা ইসলামকে ধ্বংস করে, জাতিকে বিপথগামী করে। ধর্মব্যবসায়ীদের কাজের ফলেই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি হতে পেরেছে। আর আপনারা এক দুর্নীতিবাজকে দায়িত্ব দিচ্ছেন আরেক দুর্নীতিবাজের মুখোস খুলতে? তারা যে একে অপরের মাসতুতো ভাই হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার গোড়াটা কোথায় আর ফলটা কী একটু খেয়াল করুন।
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা একটি ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা যা ইসলামকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে, ব্যক্তিগত মাসলা-মাসায়েল, দাড়ি-টুপি, টাখনু, ঢিলা কুলুখ, হায়েজ-নেফাস ইত্যাদি বিষয়ের মধ্যে মুসলিম জাতির দৃষ্টিকে সেঁধিয়ে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার সবচেয়ে ধুরন্ধর ভাইসরয় ওয়ারেন হেস্টিংস। মাদ্রাসার সিলেবাস ও কারিকুলাম তৈরি করেছিলেন ইউরোপের ক্ষুরধার মেধাবিশিষ্ট প্রাচ্যবিদগণ (ঙৎরবহঃধষরংঃং) যাদের লক্ষ্যই ছিল মুসলিমদেরকে ব্রিটিশরাজের পদানত গোলাম বানিয়ে রাখা, বীর্যবান শাসক জাতিকে বীর্যহীন খোজা গোলামে পরিণত করা। এই শিক্ষাব্যবস্থা সৃষ্টি করছে লক্ষ লক্ষ ধর্মব্যবসায়ী যাদের না আছে প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান, না আছে জাগতিক জ্ঞান, না আছে অন্য কর্মমুখী (ঠড়পধঃরড়হধষ) শিক্ষা। তারা সেই বিকৃত ইসলামটাই সুরেলা ওয়াজ করে আরো বহুভাবে মানুষকে শিক্ষা দিয়ে জাতির মনে মগজে গেড়ে দিয়েছেন। তারা ধর্মকে বিক্রি করেই খেতে বাধ্য, তাই ধর্মকে বিকৃত করেন প্রতিনিয়ত। এ কারণে আমাদের দেশের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে গেছে, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি ও জ্ঞানের সংকীর্ণতা সম্পর্কে মানুষ সচেতন। মানুষ এও বলে যে, দুজন আলেম এক বিছানায় থাকতে পারেন না। তাদের প্রত্যেকের অন্তকরণ জ্ঞান ও আমলের অহঙ্কার, পারস্পরিক বিদ্বেষ দিয়ে ভরপুর। তারা যে সরকারের ডাকে একটি সেমিনারে এসে পাশাপাশি বসেন, তাদের এই সাময়িক সহাবস্থানের কারণ স্বার্থ। তারা আশা করেন সরকারের নতুন কোনো উদ্যোগ হয়তো তাদের আর্থিকভাবে লাভবান করবে।
তারা এতটাই অনুদার যে, শুরুতেই তারা দাবি জানালেন পিস টিভি বন্ধ করার। আমরা বলি না যে, পিস টিভিতে প্রকৃত ইসলাম শেখানো হয়। প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে রসুলাল্লাহর দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পরই। তাই এখন কারো কাছেই প্রকৃত ইসলাম নেই। সেটা আল্লাহ দয়া করে হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। এখানে আমি শুধু তাদের দৃষ্টির সংকীর্ণতা ও পারস্পরিক মতবিরোধের কথা বলছি। আসলে জঙ্গিবাদের বিস্তার পিস টিভি থেকেও হয় না, আলেম ওলামাদের দেওয়া জুমার খোতবা থেকেও হয় না। জঙ্গিবাদের বিস্তারের স্বতন্ত্র পথ আছে। আফগানফেরত যোদ্ধারা আরব ধর্মব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জঙ্গিবাদের তালিম নিয়ে এসেছেন এটা সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন। বাংলাদেশের পলিটিক্যাল ইসলামিস্টরাও মসজিদ ভিত্তিক প্রচারণার কাজ বাদ দিয়ে দিয়েছে সে এক যুগের বেশি পার হয়ে গেছে। সরকার যাদেরকে নিয়ে বসছেন তারা তো আর মক্কার গ্র্যান্ড মুফতির চেয়ে বড় আলেম নয়, দিল্লি-লাহোরের, আল আজহারের বড় বড় স্কলাররা যেখানে জঙ্গিবাদী পণ্ডিতদের যুক্তি খণ্ডাতে খাবি খাচ্ছেন সেখানে পরান্নভোজী ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে জাতিরক্ষার এত বড় দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দ্বারা সরকারের বিচারবুদ্ধির দেউলিয়াত্বই প্রমাণিত হচ্ছে। সত্য তিতাই হয়, তবে তিতায় আরোগ্য থাকে।
তারা কী বলতে পারবেন আমরা জানি। তারা বলতে পারবেন, “বোমা মারা, গুলি করা, মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করা ইসলামে নেই (দৈনিক ইত্তেফাক ৬/১২/২০১৫)।” আইএস-কে বলা হয় তাকফিরি গোষ্ঠী। এর মানে তারা নিজেদের ছাড়া অন্য সবাইকে কাফের মনে করে। সুতরাং তারা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোমা মারা, গুলি করে হত্যা করাকে জেহাদ মনে করে। বিশেষ করে শিয়াদের বা খ্রিষ্টান মিশনারীদেরকে তো কথাই নেই। সুতরাং এ যুক্তি আইএস-পন্থীদের কাছে ধোপে টিকবে না। তাছাড়া আল্লাহর রসুল ও তাঁর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদ অসংখ্য যুদ্ধ করেছেন যাতে তারা নিজেরা শহীদ হয়েছেন, বিপক্ষ শক্তি নিহত হয়েছে। ইসলামের সর্বোচ্চ সম্মান শহীদের জন্য। কোর’আনে শত শত আয়াতে যুদ্ধ করার, কাফেরদেরকে হত্যা করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এখানে বড় কথা কে কাফের, কে মুমিন এই প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। সেটা কি আলেম সাহেবরা করতে পারবেন? পারবেন না। কারণ তারা নিজেরাই হাজার ফেরকা, মাজহাবে বিভক্ত। শিয়ারা বলছে সুন্নী কাফের, সুন্নীরা বলছে শিয়া কাফের।
কোর’আন, হাদীস, ইসলামের ইতিহাস যুদ্ধে পূর্ণ। এখন সেগুলো দিয়ে জঙ্গিবাদীরা যখন মানুষকে বোঝায় তখন মানুষ তাদের কথা অস্বীকার করতে পারে না, তাদের অনেকেই তাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়। আলেমরা যতই বলুক যে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সেটা জেহাদ নয় জঙ্গিরা বা সাধারণ মুসলমান কি সেটা নতশিরে গ্রহণ করে নেবে? নেবে না। তারা বলবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ইরাকে ১০ লক্ষ নির্দোষ মুসলমানকে হত্যা করেছে, সিরিয়াতে যুদ্ধ বাধিয়ে আড়াই লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে, আফগানিস্তানে সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে সেগুলো কি ন্যায়সঙ্গত? সেগুলো কি সন্ত্রাস নয়? আর সেই সর্বহারা নির্যাতিত মুসলিমরা যদি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তখন সেটাকে সন্ত্রাস বলা হবে এ কেমন অবিচার? সারা পৃথিবীতে জঙ্গিবাদীরা টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর থেকে আজ পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার মানুষও হত্যা করেছে কিনা সন্দেহ। এ যুক্তিসংগত প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন আলেম সাহেবরা।
সুতরাং কোনটি সন্ত্রাস, কোনটি জেহাদ, কোনটি কেতাল, ইসলাম বিদ্বেষীদের ক্ষেত্রে রসুলাল্লাহর পদক্ষেপ ও দণ্ডবিধির প্রেক্ষিত কী ছিল- এ কথায় ইসলাম কী, কেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠা কীভাবে করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা (ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ঈড়হপবঢ়ঃ) না থাকলে একজন মানুষ জঙ্গিদের যুক্তির ভুলগুলো ধরতে পারবে না। সেই শিক্ষা আলেম সাহেবদেরও দেওয়া হয় নি। তাই মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম সাহেবরা যতই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আজ কথা বলুন, জঙ্গিবাদীদের দলে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারাই আফগানিস্তানের যুদ্ধে যোগদানের জন্য গলার রগ ফুলিয়ে ওয়াজ করেছেন, এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ওসামা বিন লাদেন তাদের অনেকের কাছেই পরম শ্রদ্ধেয় কিন্তু পাছে কেউ জঙ্গি বলে এজন্য তা প্রকাশ করেন না। এদেশে ‘শায়খ’ আর ‘মুফতি’-রাই যে জঙ্গিবাদের পুরোধা ছিলেন তা নিশ্চয়ই স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।
যারা প্রশাসনের সঙ্গে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে বলছি, আপনারা দয়া করে রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে দেখার চেষ্টা করবেন না। রাজনৈতিক নেতারা ধর্মব্যবসায়ীদের তোয়াজ করেন কারণ তাদের ভোটাররা ধর্মবিশ্বাসী। আলেম-ওলামাদের কোপে পড়লে ক্যারিয়ার শেষ। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে ধর্মবিদ্বেষী হয়েও অনেক রাজনৈতিক নেতা ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে রাখার জন্য বিপুল পয়সা কড়ি খরচ করেন, লোক দেখানো আচার-অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু আপনারা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে আছেন, দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি নাটকের রঙ্গমঞ্চ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য আপনারা সবার আগে দায়বদ্ধ। আর আপনারা ভোটব্যবসাও করেন না। তাই আপনারা রাজনৈতিক নেতাদের মতো চিন্তা করবেন না, শুধু দেশের স্বার্থ দেখবেন।
যাহোক, যারা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাদের প্রতি শেষ কথা হচ্ছে, জঙ্গিবাদকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্য অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সরকার বার বার বলছে, দেশ সংকটে, জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এই আহ্বানে এগিয়ে এসেছি। আমাদের বই-পত্রিকা, হ্যান্ডবিল, ডকুমেন্টারি সব নিজেরা দেখুন, অন্যের কথা হেযবুত তওহীদকে জীবনেও বুঝতে পারবেন না। আল্লাহ আপনাদেরকে বুদ্ধি দিয়েছেন, চক্ষু দিয়েছেন, সেই এই ক্ষেত্রে কাজে লাগান। যদি ধর্মব্যবসায়ীদের মুখে ঝাল খেতে চান তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, ফেরাতে পারবেন না। নিজেরা দেখুন, বিচার করুন। তারপর যদি যুক্তিসংগত মনে হয়, প্রয়োজনীয় মনে হয় তা জাতির সামনে প্রচারের ব্যবস্থা করুন। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি যা অত্যন্ত অপ্রতুল। তবু চালিয়ে যাচ্ছি কারণ আমরা অন্তত চেষ্টা করতে চাই জাতিটিকে বাঁচানোর। আমাদের কোনো অর্থ, স্বার্থ, কৃতিত্ব কিছুরই প্রয়োজন নেই, শুধু দেশের কাজে লাগতে চাই। সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না এই আশাবাদ ২০টি বছর ধরে বক্ষে ধারণ করে আছি

No comments:

Post a Comment