Thursday, December 3, 2015

স্রষ্টার হুকুম পরিত্যাগ করে কখনো শান্তি আসবে না

স্রষ্টার হুকুম পরিত্যাগ করে কখনো শান্তি আসবে না



রাকীব আল হাসান:
——————
তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেড়িয়ো না যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়, কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হবে। তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, এস, তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্য ¯পষ্ট দেখতে পাবে। (বাইবেল: মথি-৭: ১-৫)।
আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ অন্যের দোষ-ত্র“টি অন্বেষণে পটু। নিজের হাজারো দোষ থাকা সত্ত্বেও সেটা তাদের দৃষ্টিতে পড়ে না কিন্তু অন্যের অতি ক্ষুদ্র দোষও খুঁজে খুঁজে বের করে তা প্রচার করে। এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। সমস্ত ধর্মেই অন্যের অগোচরে তার সমালোচনা, অন্যের দোষ-ত্র“টি খুঁজে বেড়ানো, অন্যের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা ইত্যাদি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
পবিত্র কোর’আনে বলা হয়েছে, “আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না, কারো অগোচরে তার নিন্দা করবে না। (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত-১২)”। এছাড়াও কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যের সামনে তুলে ধরা ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য ইসলামে ধ্বংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। (মুসলিম)।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গন পর্যন্ত একই দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সামষ্টিক জীবন থেকে ধর্মকে তো বাদই দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে ধর্মের যে প্রভাব তাও বাদ দেওয়ার বা মুছে ফেলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চলছে। যা কিছু ধর্মের শিক্ষা তা অমান্য করা, তার সমালোচনা করা, তা প্রত্যাখ্যান করবার প্রবণতা দেখা যায় সকল অঙ্গনেই। ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করবার কারণেই আজ পৃথিবীব্যাপী এত অন্যায়, অবিচার আর অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।
ধর্মের প্রতিটি হুকুম মানবসমাজের শান্তির জন্য। সেটা অমান্য করা মানেই অশান্তি ডেকে আনা। তবু হুকুমগুলোর যৌক্তিকতা বিচার অবশ্যই করতে হবে, না হলে ধর্মের নামে অনেক অধর্ম আমাদের মাঝে চালিয়ে দেওয়া হবে। অন্যের দোষ-ত্র“টি খুঁজে বেড়ানো ও অগোচরে তার সমালোচনা করতে এজন্য নিষেধ করা হয়েছে যে- এতে ঐক্য নষ্ট হয়, ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, সমাজে কলহ-বিবাদ, বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে। আর সকল অশান্তির মূলই হলো অনৈক্য। আজ আমাদের পরিবার থেকেই শুরু হয় পরষ্পরের দোষ ধরা ও অগোচরে মানুষের সমালোচনা করা। জাতীয় পর্যায়ে আমরা দেখি যাদেরকে জাতি পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে তারা সংসদে দাঁড়িয়ে শুরু করেন অন্যের দোষারোপ, সমালোচনা আর নিজের গুণগান। স্টেজে বক্তব্য দিতে উঠেই শুরু করেন অপরপক্ষের নেতৃবৃন্দের গালমন্দ করতে, নানাভাবে দোষারোপ করতে। আজ পর্যন্ত একটি নেতাকেও দেখলাম না যে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের ত্র“টির কথা বলেছে বা বিরোধী পক্ষের কোনো ভালো কাজের প্রশংসা করেছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ তাদের কাছ থেকে এগুলিই শেখে। আমাদেরকে আজ এগুলি ত্যাগ করতে হবে, সত্যের পথে ফিরে আসতে হবে, সকলে সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

No comments:

Post a Comment