Thursday, December 31, 2015

ঈসা (আ.) কেন সেদিন প্রচলিত শরিয়ত ‘লংঘন’ করলেন? -রাকীব আল

ঈসা (আ.) কেন সেদিন প্রচলিত শরিয়ত ‘লংঘন’ করলেন? -রাকীব আল হাসান



পৃথিবীতে প্রায় দু’শ কোটির অধিক খ্রিস্টধর্মের অনুসারী রয়েছেন। তারা যদি সত্যিকার অর্থেই যিশু খ্রিস্টের প্রদত্ত শিক্ষাকে অনুধাবন করে কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারতেন তাহলে পৃথিবীর অশান্তি অনেকাংশেই কমে যেত।
একদিন পথ দিয়ে যাবার সময় ঈসা (আ.) একজন অন্ধ লোককে দেখতে পেলেন। অন্ধ ব্যক্তিটি জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলেন। তাকে দেখে ঈসা (আ.) মাটিতে থুথু ফেলে কাদা করলেন। তারপর সেই কাদা তিনি অন্ধ লোকটির চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যাও শীলোহের পুকুরে গিয়ে ধুয়ে ফেল।’
অন্ধ লোকটি তখন পুকুরে গিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলল। সে অভিভূত হয়ে গেল কারণ, সে চোখে দেখতে পাচ্ছিল। তার দৃষ্টিশক্তি তৈরি হওয়ায় সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে গেল। কেউ কেউ বলল, এ কি সেই লোক, যে কিছুক্ষণ পূর্বে ভিক্ষা করছিল? দৃষ্টি ফিরে পাওয়া ব্যক্তিটি বললেন, হ্যাঁ, আমি সেই লোক ঈসা (আ.) যার দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।
কথা হচ্ছে এখানে উম্মতের জন্য কী শিক্ষা? উম্মত তো আর মো’জেজা দেখিয়ে অন্ধের দৃষ্টি ফেরত দিতে পারবে না। হ্যাঁ, উম্মতের জন্য বড় শিক্ষা আছে। বস্তুত দিনটি ছিল ইহুদিদের বিশ্রামবার বা স্যাবাথ। ইহুদি ধর্মের অন্যতম প্রধান বিধান হলো সপ্তাহে একদিন, শনিবার, জাগতিক কোনো কাজকর্ম না করে শুধু ধর্ম-কর্ম করা এবং সিনাগগে যেয়ে উপাসনা করা। ঈসা (আ.) দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টিশক্তি দান করে সেই স্যাবাথের নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন। এতে ইহুদি ধর্মীয় নেতারা প্রচণ্ড রেগে যায় এবং দৃষ্টি ফিরে পাওয়া ব্যক্তিকে সমাজ থেকে বের করে দেয়।
ঐ জন্মান্ধটি তো সারা বছরই ঐ সিনাগগের সামনে বসে ভিক্ষা করত। জন্মান্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়াই বা অলৌকিক শক্তি (মো’জেজা) দেখানোই যদি নবীর একমাত্র উদ্দেশ্য হতো তবে তিনি শনিবার ছাড়া অন্য যে কোনোদিন কি তা করতে পারতেন না? পারতেন, কিন্তু তিনি বেছে বেছে ঐ স্যাবাথের দিনটাতেই ঐ কাজ করলেন।
ঈসা (আ.) কর্তৃক সেদিনের বিধান ভঙ্গের কারণ ছিল এটা বোঝানো যে, ‘মানবিক কাজ বা মানবতার কল্যাণ সাধিত হয় এমন কাজ ঐ স্যাবাথের অর্থাৎ আইনের দোহাই দিয়ে বাদ দেয়ার অর্থ হলো ধর্মের আÍাকেই বিসর্জন দেওয়া। বস্তুত মানবতার জন্যই ধর্ম, কাজেই ধর্মের আইন-অনুশাসন কোনোভাবেই মানবতার কল্যাণের পথে বাধা হতে পারে না। যে ধর্ম মানবতার বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেটা ধর্ম নয়, অধর্ম। সেটা পালন করে স্বর্গে আরোহণ করা যায় না।

No comments:

Post a Comment