Friday, December 18, 2015

মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সামরিক জোট, নেপথ্যে কী?


মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সামরিক জোট, নেপথ্যে কী?





মো. আশেক মাহমুদ: ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’ করতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪ টি মুসলিমপ্রধান দেশের সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ বলতে নির্দিষ্ট করে আইএসকে না বোঝালেও বলা হচ্ছে, এই সামরিক জোট ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, মিশর ইত্যাদি দেশের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। জোটের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেনিন, চাদ, কোমোরোস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিশর, গ্যাবন, গায়েনা, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। তবে এ জোটে ইরাক, ইরান, সিরিয়া ইত্যাদি শিয়াপ্রধান দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।
যেহেতু এই জোট সিরিয়া, ইরাক, মিশর ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাস মোকাবেলায় কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে, সুতরাং প্রধানত জোটটিকে আইএস জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে হবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের শিরোমণি ‘আইএস’ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বহু পূর্বেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট গঠিত হয়েছিল। তাতে সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রও অংশ নেয়। আইএসবিরোধী ওই জোট জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি না করে যদি ঠিকমতো ব্যবস্থা নিতো, তাহলে বর্তমানে আইএসের প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্ধেকে নেমে আসার কথা ছিল। সন্ত্রাসবাদ এত বিস্তৃত হবার সুযোগ পেত না। কিন্তু বাস্তবে ওই জোটের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে যা দেখা গেছে, তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে যে তারা প্রকৃতপক্ষে আইএস নির্মূল করতে চায় কিনা। এ সন্দেহ আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে আইএসকে লক্ষ্য করে রাশিয়া বিমান হামলা শুরু করলে। তাতে অল্প দিনের ভেতরে আইএস কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ফলে প্রশ্ন ওঠে- তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট এতদিন কী করল, তারা আদৌ আইএসকে নির্মূল করতে চেয়েছিল কিনা ইত্যাদি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ হিসেবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সৌদি আরবও। এছাড়াও সৌদি আরব ও তুরস্কের বিরুদ্ধে সুন্নি আইএসকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা করার বহুল পুরোনো অভিযোগ তো রয়েছেই। যাই হোক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘সন্ত্রাসবাদ’ ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। অথচ সেই সৌদি আরবের নেতৃত্বেই কিনা গঠিত হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামরিক জোট। তাই বিশেষজ্ঞরা দেশটির এই উদ্যোগকে সাদামাটা দৃষ্টিতে না দেখে তার পেছনের রহস্য খুঁজতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম দেশগুলোকে একত্র করে বাস্তবে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই।

No comments:

Post a Comment