Sunday, December 20, 2015

সৌদি সরকার মার্কিন সরকারের প্রতিবিম্ব

সৌদি সরকার মার্কিন সরকারের প্রতিবিম্ব। প্রতিবিম্বের নিজেস্ব কোনো সিদ্ধান্ত থাকে না, প্রসঙ্গবস্তুর ইচ্ছাতেই প্রতিবিম্বের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। সেই সৌদি সরকার যখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মুসলিম বিশ্বের ৩৪ টি দেশ নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠন করল- তখন এটা কি পরিষ্কার নয় যে পরিকল্পনাটি মার্কিন সরকারেরই?


                        ইসলামের অনুসারীদের আস্থার প্রতীক। সেই বিশ্বাসকে ব্যবহার করা হয়েছে ভূল খাতে

৬ ডিসেম্বর-২০১৫, রোববার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে চাই, তাহলে অবশ্যই মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শক্তিশালী জোট গঠন করতে হবে।” (সূত্র: রয়টার্স)। এর ঠিক দশ দিন পর সৌদি সরকারের নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বের এই সামরিক জোট গঠন কি মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনারই অংশ নয়?

বড় কোনো যুদ্ধের পূর্বে প্রস্তুতির প্রয়োজন থাকে। নতুন নতুন অস্ত্র নির্মাণের পাশাপাশি সৈন্য সংগ্রহও যুদ্ধপ্রস্তুতির অন্যতম অংশ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সামনে রেখে তাই প্রধান দুই পক্ষ আমেরিকা ও রাশিয়া মুসলমানদেরকে নিজেদের পক্ষে টানার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকেই। গত ঈদুল আযহার আগের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন করেন, উদ্বোধনের পরদিনই এ মসজিদের অনুষ্ঠিত হয় রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার জামাত। মস্কোর এই কেন্দ্রীয় মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদটি মস্কোর ক্যাথেড্রল মস্ক ও জুমা মসজিদ নামেও পরিচিত।
বিষয়টি অবাক করার মতো।  কারণ এই মস্কোতে কি-না এক সময় নিষিদ্ধ ছিল ধর্ম-কর্ম! সেই মস্কোর মসজিদ উদ্বোধন করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। তার কিছুদিন পর পুতিন ফিলিস্তিনের মুসলমানদের পাশে থাকার কথাও বলেন যদিও যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালানো হলেও সে ব্যাপারে রাশিয়া কখনোই কিছু বলেনি। আর সিরিয়া ইস্যুতে তো আইএসের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে, আসাদ সরকারের পাশে থেকে ইতোমধ্যে মি. পুতিন হিরো বনে গেছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব তাকে বেশ বাহ্বা দিচ্ছিল। আর ইরাক, সিরিয়া, ইরান প্রভৃতি শিয়া অধ্যুষিত মুসলিম দেশগুলো তো রাশিয়ার সাথে একাত্ম হয়েছে ভালোভাবেই। সব মিলিয়ে আমেরিকা সম্ভবত একটু ঘাবড়েই গিয়েছিল, তারা একটা চাল চালার জন্য সুযোগ খুঁজছিল। তারই প্ররিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবকে দিয়ে খেলাটা খেলল। এভাবে সৌদি সরকার মার্কিন সরকারের প্রতিবিম্ব । আমেরিকা সুন্নি মুসলিম দেশগুলোকে সাথে নেওয়ার জন্যই এই জোট গঠন করালো।
এই ছবি কেবল ইতিহাস

এখন কথা হচ্ছে মুসলমানদের দলে টানার এ প্রয়াস কেন? এর কারণ এই নয় যে, মুসলিমরা বিরাট শক্তি বরং তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চায় এবং একই সাথে তারা এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারতে চায়। মুসলিমদের দিয়েই তারা মুসলিম নিধন করতে চায় আর নিজেরা পৃথিবীর আধিপত্য ধরে রাখতে চায়। মুসলিমরা যেহেতু বিরাট একটা জনসংখ্যা এবং যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের একটা ধর্মীয় প্রেরণা রয়েছে তাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদের পক্ষে নেওয়াটা জরুরি।
.
এর মাধ্যমে মুসলমানদের কোনো লাভ হবে না, কেবল জাতি ধ্বংস হবে। নিজেদের শহর, নগর, স¤পদ ধ্বংস হবে। জাতির মধ্যে বিভেদ বাড়বে, জঙ্গিবাদ আরো বেশি বিস্তৃত হবে বিশ্বব্যাপী।
আপাত সৌদি সরকার মার্কিন সরকারের প্রতিবিম্ব
রহস্যময় মধ্যপ্রাচ্য
.
মার্কিনী বলয়ে থাকছে সুন্নি মুসলিম আর রাশিয়া বলয়ে থাকছে শিয়া মুসলিম। ফিল্ড বাছাই করা হয়েছে মুসলমানদের দেশ। ধ্বংস যা হবার মুসলমানদেরই হবে। আফগান যুদ্ধে যেমন লক্ষ লক্ষ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে, মুসলমানদের শহর, নগর, গ্রাম ধ্বংস হয়েছে এবারও তাই হবে। এ যুদ্ধ কেবল পশ্চিমাদের স্বার্থের যুদ্ধ, কিন্তু অকারণে প্রাণ ঝরবে মুসলিমদের। তবে এটাকে যেহেতু সকলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধরূপে আখ্যায়িত করছে সেহেতু এটা মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা সহ নানা অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োগ ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর সেটা যদি হয় তবে মানবজাতির জন্য এটা এক মহাদুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হবে।
.
এই জোট আপাতত আইএস বিরোধী যুদ্ধের জন্য গড়া হলেও মূলত পশ্চিমাদের মূল উদ্দেশ্য মুসলিমদেরকে ধ্বংস করা। এখন এই ধ্বংসক্রিয়াই যারা অংশ নিচ্ছে তারা কতটুকু চিন্তা করে নিচ্ছে তা বিবেচনার বিষয়। বাংলাদেশও এই জোটে নাম লিখিয়েছে। বলা হচ্ছে এটা কেবল তথ্য আদান-প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, সেটা যদি থাকে তবে ভালো। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই গভীরভাবে বিবেচনা করা উচিত।

No comments:

Post a Comment