Monday, December 14, 2015

স্বার্থপরের নামাজ নাই সমাজও নাই


স্বার্থপরের নামাজ নাই সমাজও নাই




-রিয়াদুল হাসান

স্বার্থপরের নামাজ নাই, সমাজও নাই। স্বার্থপর মানুষ আল্লাহর নিকটও পরিত্যাজ্য, মানুষের কাছেও ঘৃণ্য। কিন্তু আজ আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর হয়ে গেছে। আমাদের চোখের সামনে মানুষ দগ্ধ হয়, জাতির সম্পদ ধ্বংস হয় আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি, কোনো পদক্ষেপ নেই না। আমরা ভাবি আমার তো কিছু হয় নি। এর চেয়ে স্বার্থপরোতা আর কিছু হতে পারে না। গতকাল গণমিলনায়তন চৌমুহনী, নোয়াখালীতে “ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান” শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ অন্যায়, অবিচার, পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম। সেদিন আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে সকল ষড়যন্ত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা সংখ্যায় ষোল কোটি হলেও নানা দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছি, নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে চলেছি। আজ আমাদের দেশে যে রাজনীতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা নিয়ে আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এখন আর নিশ্চুপ বসে থাকা উচিত হবে না, কারণ সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই আমাদের ভাবতে হবে। রাজনীতিক যে দ্বন্দ্ব, হানাহানি বর্তমানে চলছে, তা একসময় হতো রাজায় রাজায়। সৈন্যসামন্ত মারা যেত যুদ্ধ ক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষ যুদ্ধ শেষে ফলাফল জানত। কিন্তু এখন মানুষ মরে রাস্তায়, যারা মরে তারা প্রায় সকলেই সাধারণ নাগরিক। এই যে সংস্কৃতিটা শুরু হয়েছে এটা কিন্তু সংক্রমিত হয়ে পুরো জাতি নিঃশেষ করে দেবে। এই রাজনীতিক সংস্কৃতি আমাদের দেশে ছিল না। আমাদের দেশের মানুষগুলি ছিল শান্তিপ্রিয় শান্ত প্রকৃতির, তাদের মধ্যে ছিল অতিথি পরায়নতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, মায়া, মমতা আর ভালোবাসায় পূর্ণ হৃদয়। মাটি যেমন শান্ত প্রকৃতির তেমন ছিল। এই রাজনীতিক সংস্কৃতি আমরা পেয়েছি ব্রিটিশদের থেকে। ব্রিটিশরা ২০০ বছর শাসন করে আমাদেরকে একদম নিঃশেষ করে দিয়ে গেছে। যাবার সময় তারা উরারফব ধহফ ৎঁষব নীতি চালু করে দিয়ে গেছে। আমাদের রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য, আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি সমস্ত কিছু ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদেরটা নিয়েছেন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এখন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হুমকির মুখে। আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা এটা অনুধাবন করে এগিয়ে এসেছি। আমরা মনে করি এই ষোল কোটি বাঙালিকে অন্যায়, অবিচার, সহিংসতা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটা শ্রেণি আছে যারা আমাদের ধর্মবিশ্বাসকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। কূপমণ্ডূক ধর্মান্ধ লোক বলে গালাগালি করে। আমরা মনে করি আমাদের এই ধর্মব্শ্বিাস এক মহামূল্যবান সম্পদ। এই ঈমান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা যা করি তা কোনো পার্থিব স্বার্থের জন্য করি না, এটা করি আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব থেকে, এর বিনিময়ে আমরা জান্নাতে যেতে চাই, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই। এখন আমাদের বুঝতে হবে আসল ধর্ম কী, ইসলাম শব্দের অর্থ কী। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। আর ধর্ম হলো সেই গুণ বা বৈশিষ্ট্য যা ধারণ করলে আমি মানুষ হব, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তথা আশরাফুল মখলুকাত হব। আগুনের ধর্ম পোড়ানো আর মানুষের ধর্ম মানবতা, এটি একজন ধারণ করলেই কেবল সে মানুষ হতে পারে। কাজেই অন্য মানুষকে অন্যায়-অবিচার অশান্তি থেকে মুক্ত করে শান্তি, ন্যায়-সুবিচারের মধ্যে রাখাই আমার প্রধান ধর্ম। এটাই আমার কাজ। এবাদত কী? আমাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে কাজ করাই হলো আমার এবাদত। এই ঘড়িটা বানানো হয়েছে সময় দেয়ার জন্য। সময় দেয়াটাই হচ্ছে তার এবাদত। আমাদের এবাদত কী? মানুষ যেন সুখে শান্তিতে থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করাই হলো আমাদের এবাদত। আপনি মসজিদের নামাজ পড়তে গেছেন, হঠাৎ করে চিৎকার আসল আগুন! আগুন! তখন আপনি কী করবেন? তখন আগুন নিভাতে যাওয়াই আপনার এবাদত। নামাজ পড়া যেমন সওয়াব তেমনি আগুন নেভানো বড় সওয়াব। তখন এ প্রশ্নও তোলা যাবে না যে, যে ব্যক্তি আগুনে দগ্ধ হচ্ছে সে কি হিন্দু, না মুসলমান। এখন আমাদের কাছে এবাদতের মানে পাল্টে গেছে। ধর্ম বলতে আমরা লেবাস-সুরত বুঝি। দাড়ি রেখে, টুপি পরে আমরা ধার্মিক হই। কিন্তু না, মানবতাকে সমুন্নত রাখার জন্য যারা চেষ্টা করে তারাই ধার্মিক। আমরা মনে করি মসজিদে পড়ে থাকবো, এটাই এবাদত। এজন্য আমাদের সামনে দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা করা হয়, আমরা চোখ তুলে তাকাই না। বোমা মেরে মানুষ উড়িয়ে দেওয়া হয়, আস্ত বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আমরা তাকাই না। আমাদের সম্পদ ধ্বংস করে দেয়া হয় আমরা ভ্রুক্ষেপও করি না। আমাদের চোখের সামনে লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান শেষ হয়ে গেছে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের এখনও বোধ হয় না। হাশরের দিন আল্লাহ আমাদের এই নামায রোযার দিকে তাকাবেন না, যদি আমরা মানুষের অশান্তি থেকে মুক্তির জন্য কাজ না করি। এবং সেটা হতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। কোনো স্বার্থ থাকবে না।
দুই হচ্ছে আমাদের সামাজিক কর্তব্য। আমরা এই সমাজের মানুষ। এখানে আমরা বড় হয়েছি এখানের আলো বাতাসে আমরা বড় হয়েছি এখানের স্কুল কলেজে আমরা পড়েছি। এই সমাজের প্রতি এই দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক কষ্ট করে এ দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এটা আমাদের ভূখণ্ড। এখন আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হবে এই সমাজকে এই দেশকে রক্ষা করা। আমাদের প্রধান কাজ হবে সমাজে যেন কেউ বিশৃঙ্খলা করতে না পারে ঐক্য নষ্ট করতে না পারে সেই চেষ্টা করা। কারণ ঐক্য অনৈক্যের উপরে বিজয় লাভ করে। আমি যদি আমার প্রতিবেশি দ্বারা আক্রান্ত হই আমার প্রতিবেশিও যদি আমার ষড়য্েন্ত্রর শিকার হয় তাহলে আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এই সমাজকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি থেকে উদ্ধার করা আমাদের প্রত্যেকের এখন্সামাজিক কর্তব্য। আমরা যদি মনে করি ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি বাকরি যার যার মতো করব, আমার তো কিছুই হয় নি। তাহলে এটা হবে চরম আত্মকেন্দ্রীকতা, স্বার্থপরতা। এরকম চিন্তা যারা করে তাদের ইহকাল এবং পরকাল দুইই শেষ হয়ে যায়। স্বার্থপরের কোনো নামায নাই, স্বার্থপরের কোনো সমাজ নাই। যেকোনো কাজের জন্য কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হয়। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, কাজ করবেন আপনারা। আপনারা এই সমাজের মানুষ, কাজেই সমাজ পরিচালনা করবেন আপনারাই। আপনাদেরকে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা আল্লাহ দান করেছেন। এখন শুধু ডাইরেকশন। সঠিক দিক-নির্দেশনা থাকলে সব ঠিক। এখানে যারা সমাজ পরিচালক আছেন, যারা এই জেলার নেত্রীবৃন্দ আছেন আমি মনে করি যথেষ্ট যোগ্যতা আছে আপনাদের।
তিনি সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্তব্য হিসাবে আপনাদের এ কাজ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment