Thursday, December 3, 2015

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় গতানুগতিক কৌশল পরিবর্তন জরুরি

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় গতানুগতিক কৌশল পরিবর্তন জরুরি -রিয়াদুল হাসান



১৭ আগস্ট ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায় বিশিষ্ট সাংবাদিক এম. আবুল কালাম আযাদের একটি লেখা আমার কাছে অত্যন্ত সময়পোযোগী মনে হয়েছে। একটু দেরিতে হলেও এ সম্পর্কে আমার মতামত নিবেদন করতে চাচ্ছি। লেখাটির শিরোনাম ছিল গরষরঃধহঃ পযধহমব ঃধপঃরপং, নঁঃ মড়াঃ রহ ইধহমষধফবংয ংঃরপশ ঃড় ড়ষফ ংঃৎধঃবমু অর্থাৎ জঙ্গিরা কৌশল পরিবর্তন করেছে কিন্তু সরকার আদিম কৌশলেই আটকে আছে। এতে কয়েকজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির মতামত উল্লেখ করে প্রতিপাদন করা হয়েছে যে শক্তি প্রয়োগ তথা গ্রেফতার, জেল ইত্যাদি পন্থায় জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে সরকার উপর্যুপরিভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। তথাপি কার্যকর কোনো কৌশল অবলম্বন না করায় জঙ্গিবাদ জাতির অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আসতে পারে। এর সমর্থনে একজন পুলিশ কর্মকর্তার উক্তি তিনি উল্লেখ করেছেন যিনি বলেছেন, ‘একের পর এক ব্লগার হত্যার পরও হত্যাকারীদেরকে পাকড়াও করতে আমাদের ব্যর্থতা এটাই প্রমাণ করে যে তারা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। জঙ্গিবাদ এখন সত্যিকারের হুমকি (অ ৎবধষ ঃযৎবধঃ)।
বিগত এক দশকে জেএমবি বা হরকাতুল জেহাদকে নির্মূলের যে প্রচেষ্টায় যেভাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে তাতে দলগুলোর কর্মকাণ্ড কিছুটা স্তিমিত মনে হলেও জঙ্গিদের একটি নতুন প্রজন্ম পুরাতনদের জায়গা নিয়ে নিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধেও সরকার সেই পুরাতন অকার্যকর কৌশলই চালিয়ে যাচ্ছেন। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ২০০৯ সনেই এ বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারকে শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি আদর্শিক লড়াইয়ের কৌশল প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, জঙ্গিরা পার্থিব স্বার্থে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে না, এই পথকে তারা পরকালীন মুক্তির পথ বলে বিশ্বাস করেন। তাই জঙ্গিবাদের নির্মূল চাইলে সর্বাগ্রে তাদের এই বিশ্বাসকেই ভুল প্রমাণ করতে হবে। শক্তি প্রয়োগে তাদের চেতনা বা উগ্রতা যেটাই বলি তা বৃদ্ধি পাবে। কোর’আন, হাদীস থেকে যুক্তি তুলে ধরে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হবে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে পথ বেছে নিয়েছেন তা আল্লাহ-রসুলের সমর্থিত পথ নয়। ও পথে চললে ইহকাল-পরকাল দুটোই যাবে। এটা প্রমাণ করার মতো তথ্য, উপাত্ত হেযবুত তওহীদের কাছে আছে যা দিয়ে হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক মাদ্রাসায় ছাত্রদেরকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা গিলিয়ে দেওয়া হয় যা তাদেরকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দেয়।’ আমি তার সঙ্গে এটুকু যোগ করতে চাই যে, প্রকৃতপক্ষে মাদ্রাসাগুলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের ফসল যেখানে বিকৃত ইসলামই শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমরা আমাদের ছাত্রদেরকে যদি রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ফতোয়াবাজি, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, কুসস্কার আর কূপমণ্ডূকতা শিক্ষা দেই আর লক্ষ লক্ষ ধর্মজীবীর জন্ম দেই যাদের মধ্যে দেশপ্রেম বা মানবকল্যাণের কোনো প্রেরণাই থাকে না, তাহলে কি আমরা নিজেরাই জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছি না? এরপর আহাজারি করে কী ফল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের একটি মন্তব্যও প্রতিবেদনে এসেছে। তিনি বলেন, শুধু গ্রেফতার দ্বারা জঙ্গিবাদ বিদূরিত হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালিত করতে হবে এবং সুচিন্তিতভাবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষাক্রমে সংস্কার সাধন করতে হবে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার জনাব মাহফুজুর রহমানের একটি বক্তব্য প্রতিবেদনে এসেছে। তিনি বলেছেন, “আমাদের উচিত সুসমন্বিত একটি পদ্ধতির দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করা। উগ্রপন্থা থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে (ঘবঁঃৎধষরুব) এবং তরুণদেরকে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হওয়া থেকে ফেরাতে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের বিকল্প নেই। এই উদ্যোগ হতে হবে সামাজিক, রাজনীতিক এবং ধর্মীয়ভাবে।”
আমিও মনে করি, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে ধর্মীয় যুক্তি দিয়েই প্রতিহত করতে হবে। জঙ্গিবাদকে কোর’আন হাদীস দিয়ে ভ্রান্ত প্রমাণ করার দায়িত্ব সরকার দিয়ে রেখেছেন মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেমদের উপর এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপর যা সর্ববিচারে যুক্তিহীন। কারণ-
(১) জঙ্গিবাদীদের অধিকাংশই মাদ্রাসারই ফসল এবং মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মৌন বা সক্রিয় সমর্থন জঙ্গিদের দিকেই থাকবে- এটা সাধারণ জ্ঞান।
(২) এক অন্ধ আরেক অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না। যারা নিজেরই বিকৃত ইসলামের মধ্যে নিমজ্জিত তারা অন্যকে সঠিক পথ কীভাবে দেখাবে?
(৩) যারা টাকার বিনিময়ে ধর্মপ্রচার করে, ধর্মের কাজ করে তাদের নৈতিক মেরুদণ্ড টাকার কাছেই বিক্রয় হয়ে যায়। তাদের কথার কোনো গ্রহণযোগ্যতা মানুষের কাছে থাকে না, বিশেষ করে নিঃস্বার্থভাবে যারা ভুল পথে হলেও নিজেদের জীবন ইসলামের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে, তারা ভাড়াটে মোল্লাদের কথায় আদর্শ ত্যাগ করবে না।
এ কাজ করতে পারে শুধু হেযবুত তওহীদ, কারণ আমাদের কাছে সেই আদর্শ আছে যা আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে জাতির সামনে তুলে ধরছি। গত দুই বছরে আমরা পঁয়ত্রিশ হাজারের অধিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, বই, হ্যান্ডবিল, পত্রিকা প্রকাশ করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এতে আমাদের কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থ নেই, রাজনীতিক অভিপ্রায়ও নেই। আমরা এমামুয্যামানের উপস্থাপিত অকাট্য, অখণ্ডনীয় মহাসত্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে মানবতার কল্যাণে কাজ করছি। একটি শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণ করতে পারলেই আমাদের জীবন সার্থক হবে।
পরিশেষে আযাদ সাহেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই জাতীয় সংকটের বিষয়টি নিয়ে গঠনমূলক লেখাটির জন্য। তিনি আদর্শিকভাবে মোকাবেলাকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হিসাবে তুলে ধরেছেন। আমরা হেযবুত তওহীদ দেশের কর্ণধারদের বলছি, জঙ্গিবাদ নির্মূলের উপায় আছে আমাদের কাছে, তবে আপনাদের সদিচ্ছা জাতিকে এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে অপরিহার্য।

No comments:

Post a Comment