Friday, December 4, 2015

আর ধর্ম নিয়ে ব্যবসা নয়, আসুন ধর্মবিশ্বাসকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করি

যে কোনো জিনিসেরই দু রকম ব্যবহার হতে পারে – কল্যাণকর অথবা অকল্যাণকর। ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণার্থে। অথচ এই ধর্মকেও মানুষের অকল্যাণে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা করছে বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ীরা। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ধর্মবিশ্বাসী। মানব ইতিহাসের বড় বড় সহিংস কর্মকাণ্ডের পেছনে ধর্মকে ইস্যু করা হয়েছে। ধর্মীয় দাঙ্গায় কোটি কোটি মানুষ প্রাণ দিয়েছে, উদ্বাস্তু, সর্বহারা হয়েছে। আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে সহিংস রাজনীতিক কর্মসূচি ও জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, মানুষের ঈমানকে ভুল পথে পরিচালিত করে রাজনীতি ও ব্যবসার পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নামায পড়ানো, ওয়াজ করা থেকে শুরু করে ধর্মের কোনো কাজ এমনকি মুর্দা দাফনও এখন টাকা ছাড়া হয় না। পরকালের ওসিলা সেজে বহু মানুষ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে ধর্মের অপব্যবহার; তাহলে ধর্মের সঠিক ব্যবহার কোনটি? যে কোনো বস্তুকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে আগে সেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হয়। ধর্মের সঠিক ধারণা থেকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত রাখার কারণেই আজ ধর্মের কল্যাণ থেকে মানবজাতি বঞ্চিত হচ্ছে। যেমন ধর্মব্যবসা যে হারাম, ধর্মীয় কাজের বিনিময়ে পার্থিব মূল্য গ্রহণ করাকে আল্লাহ আগুন খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন (সুরা বাকারা ১৭৪), এই সত্যটি গোপন করা হয়। ফলে ধার্মিকগণ মাদকব্যবসায়ীকে ঘৃণা করলেও ধর্মব্যবসায়ীকে তাজিম করেন। এই সুযোগে ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত দুটোকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ধর্মকে ভারসাম্যহীন করে সম্পূর্ণ আখেরাতকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়েছে, যেন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধানে ধর্মের কোনো ভূমিকাই নেই। অথচ যে ধর্ম মানুষকে ইহজগতে শান্তি দিতে সক্ষম নয়, সে ধর্ম তাকে পরকালেও জান্নাত দিতে পারবে না। ধর্ম কী, কোন এবাদতের জন্য আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, কোন কাজের বিনিময়ে তিনি জান্নাত দেবেন, আল্লাহর নবী-রসুলগণ কী কাজে জীবন ব্যয় করে গেছেন – এ প্রশ্নগুলো করা হলে আজ হাজার হাজার রকমের উত্তর পাওয়া যাবে। আমরা যদি ধর্মকে আমাদের পার্থিব ও পারলৌকিক মুক্তির পাথেয় করতে চাই তবে এ মৌলিক প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাদের সবাইকে জানতে হবে। ধর্ম কী? ধার্মিক কারা? ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা। কোনো বস্তু, প্রাণি বা শক্তি যে বৈশিষ্ট্য বা গুণ ধারণ করে সেটাই হচ্ছে তার ধর্ম। আগুনের ধর্ম পোড়ানো। পোড়ানোর ক্ষমতা হারালে সে তার ধর্ম হারালো। মানুষের ধর্ম কী? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ-কষ্ট হৃদয়ে অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামায-রোযা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। এটা সঠিক ধারণা নয়। এবাদত কী? এবাদত হচ্ছে যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজটি করা। গাড়ি তৈরি হয়েছে পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য, এটা করাই গাড়ির এবাদত। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে (সুরা বাকারা-৩০)। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিকে আল্লাহ যেভাবে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ রেখেছেন ঠিক সেভাবে এ পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখাই মানুষের এবাদত। ধরুন আপনি গভীর রাত্রে প্রার্থনায় মগ্ন। হঠাৎ পাশের বাড়িতে আগুন লাগলো। আপনি কী করবেন? দৌড়ে যাবেন সাহায্য করতে, নাকি চোখ-কান বন্ধ করে প্রার্থনা চালিয়ে যাবেন। যদি আগুন নেভাতে যান সেটাই হবে আপনার এবাদত। আর যদি ভাবেন- বিপন্ন ব্যক্তি অন্য ধর্মের লোক, তাহলে আপনি ধর্মহীন, আপনার সমস্ত আমলই পণ্ডশ্রম। আজ ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষকে কেবল সেগুলোই করতে বলেন যেগুলোতে তাদের স্বার্থ জড়িত। তারা মসজিদে-মাদ্রাসায় দান করতে ওয়াজ করেন, কিন্তু ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, বাসগৃহ ইত্যাদি নির্মাণ অর্থাৎ মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন না। এই আত্মাহীন ধর্মশিক্ষার কারণে নির্যাতিতের হাহাকার, ক্ষুধার্তের ক্রন্দন এ জাতির মহা ধার্মিকদের কানেও প্রবেশ করে না। সেগুলোকে দুনিয়াবি কাজ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পাশবিক মনোবৃত্তি তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। দেশ-জাতি রসাতলে গেলেও তারা নিরাপদে যিকির, তসবিহ, তাহলিল করে যেতে পারলেই খুশি। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি নামায, রোযা, হজ্ব করতে হবে না? হ্যাঁ, অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু উদ্দেশ্য বুঝে। মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার শারীরিক সক্ষমতা ও আত্মিক শক্তি সৃষ্টির প্রশিক্ষণই হচ্ছে নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি। যে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ঘোঁচাতে সংগ্রাম ও ব্যয় করবে না, তার তাহাজ্জুদ হবে ঘুম নষ্ট করা, রোযা হবে না খেয়ে থাকা। আল্লাহর রসুল ও তাঁর সাহাবীরা আজীবন মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাঁদের কাজের ফলে আরবের হানাহানি, রক্তপাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত, অশিক্ষা, কুসংস্কারে নিমজ্জিত একটি জাতি অল্প কিছুদিনের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামরিক ও আর্থিক শক্তিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিল। এমন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে একজন যুবতী অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ অতিক্রম করত, তার মনে কোনো ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা জাগ্রত হতো না। মাসের পর মাস আদালতে কোনো অভিযোগ আসতো না। এই শান্তির নামই এসলাম আর এই শান্তির জন্য কাজ করাই হচ্ছে আল্লাহর এবাদত বা আমল। একটি জাতির ধর্মবিশ্বাস তথা ঈমান তাদেরকে সঠিক পথে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং মানুষের কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যোগাতে পারে। কেননা সব ধর্মেই আছে ঐক্য প্রতিষ্ঠার নির্দেশ এবং জাতির স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা। বর্তমানের রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর ভোট দিয়েই জনগণ মনে করে যে তাদের দায়িত্ব শেষ। এ রাষ্ট্রব্যবস্থায় যারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা চোখের সামনে অপরাধ হতে দেখলেও বাধা দেন না, ভাবেন, ‘এগুলো দেখার দায়িত্ব তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমি কেন খামাখা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাবো।’ আজকে আমাদের যে জাতীয় সংকট, তা এই আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার ফল, কারণ এই ধর্মহীন ব্যবস্থাকে আমরাই টিকিয়ে রেখেছি। ধর্মবিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় কল্যাণে সম্পৃক্ত না করে এই সংকট থেকে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা এ যামানা এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হেযবুত তওহীদ বলছি, সকল ধর্মের শিক্ষা হচ্ছে, মানুষের কল্যাণের জন্য যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারে শুধু তারাই পাবে আল্লাহর সান্নিধ্য ও জান্নাত। তাই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কাজ করাও ধর্মেরই কাজ। মসজিদ নির্মাণ যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি মানুষের উপকারের জন্য ব্রিজ, কালভার্ট, হাসপাতাল, শিক্ষালয়, বাসগৃহ নির্মাণ করাও এবাদত। পক্ষান্তরে রাস্তাঘাট অবরোধ করা, অন্যায়ভাবে বৃক্ষ কর্তন করা, জাতীয় সম্পদ, মানুষের সম্পদ ধ্বংস করা ধর্মবিরোধী কাজ। যে কোনো যুগে, যে কোনো দেশে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তাকে যারাই বিনষ্ট করবে তারাই আল্লাহর শত্র“, ইসলামের শত্র“, সকল ধর্মের শত্র“। এদেরকে প্রতিরোধ করা এবাদত। আমরা যদি এই এবাদত থেকে বিরত থাকি, তাহলে পার্থিব জীবনে আরো মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হবো এই নিষ্ক্রীয়তার কারণে পরকালে জান্নাতও হারাবো। এখন বাঁচার একটাই পথ, ধর্মবিশ্বাসী মানুষদেরকে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদি আমরা সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, নিজেরাই নিজেদের পরিবেশকে নিরাপদ রাখার জন্য অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হই তাহলে আমাদের দেশ থেকে এই অভিশাপ দূর হতে বাধ্য হবে। সহিংসতা, মানুষ হত্যা এখন আমাদের রাজনীতিক সংস্কৃতি। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো দল নয়, দায়ী প্রচলিত সিস্টেম। প্রত্যেক দলের কর্মকাণ্ডই এ জাতি বার বার দেখেছে, ঘুরে ফিরে একই দৃশ্য। এটা সবারই জানা যে, বর্তমানে মানবতার কল্যাণে রাজনীতি করা হয় না, রাজনীতি এখন একটি লাভজনক ব্যবসা বা পেশা। ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্ম বিক্রি করে সংসার চালান, আর এক শ্রেণির রাজনীতিকরা দেশপ্রেম, চেতনা, গণতন্ত্র ইত্যাদি ভাবাদর্শ বিক্রি করে পুঁজিপতিতে পরিণত হন। আজকে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার সুযোগ নিতে বহিঃশত্র“ও বসে আছে। ভুললে চলবে না, সরকার ও সরকার বিরোধীদের দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে গিয়ে সিরিয়ায় বিগত দু বছরে নিহত হয়েছে দু লক্ষ মানুষ যাদের অধিকাংশই বেসামরিক জনগণ, নারী ও শিশু। আহত, বাস্তুহারার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। সুতরাং জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব কেবল সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অর্পণ করে বসে থাকা অযৌক্তিক। কারণ প্রথমত তারা সর্বত্র থাকেন না, দ্বিতীয়ত তারা এই সংকট মোকাবেলার জন্য যে শক্তিপ্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছেন, আমরা মনে করি, তাতে স্থায়ী সমাধান আসবে না। পৃথিবীর কোথাও কেবল জোর করে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয় নি, হবেও না। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে জনগণের ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মাত্র গুটি কতক লোকের কারণে ষোল কোটি মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে, এই ষোল কোটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে কি ঐ গুটি কয়েক মানুষ তাদের জীবনকে এভাবে বিপন্ন করে তুলতে পারত? কখনোই পারত না। কিন্তু ষোল কোটি মানুষের অনৈক্যের সুযোগেই তারা এই অন্যায় ঘটাতে পারছে। জনগণ নি®কৃয় দর্শকের ভূমিকা নিলে সমাজ থেকে অন্যায়, অপরাধ, স্বার্থবাজদের রাজনীতিক হানাহানি দূর করা কোনোকালেই সম্ভব হবে না। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমরা যদি নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, আমরা যদি জাতীয় সম্পদকে নিজের সম্পদের মত পাহারা দেই, আমরা যদি যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রত্যয়ী হই তাহলে আমাদের জীবনকে নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। এবং এই ঐক্য আমাদের দুনিয়ার জীবনকে করবে নিরাপদ ও শান্তিময়, তেমনি এই শান্তি-প্রচেষ্টার বিনিময়ে আমরা আল্লাহর সান্ন্যিধ্য ও পুরস্কার লাভ করব।


[যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ০১৭৩০০১৪৩৬১, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১৮৫৩৯৯৩২২২, ০১১৯১৩৬৭১১০, ০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৫৫৯৩৫৮৬৪৭]

No comments:

Post a Comment